শতাধিক রকমের ফল আছে বাংলাদেশে। এগুলোর মধ্যে কাঁঠাল কেন জাতীয় ফল হলো?
বিশ্বে দুটি দেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল—বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার এবং তিনটি দেশের জাতীয় ফল আম—পাকিস্তান, ভারত ও ফিলিপাইনের। যে ফলের জন্ম যে দেশে, সে দেশই সে ফলের জন্মস্বত্ব দাবি করে তাকে জাতীয় ফল ঘোষণা করতে পারে। যদি তা করা হতো, তাহলে কাঁঠাল না হয়ে আমই হতো আমাদের জাতীয় ফল আর কাঁঠাল হতো ভারতের। কেননা আমের জন্মভূমি বা আদিনিবাস বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এবং কাঁঠাল জন্মেছে ভারতের ওয়েস্টার্ন ঘাটে বা পশ্চিম ঘাট পর্বতমালার অরণ্যে, সেখানে কাঁঠাল এখনো বন্যরূপে জন্মায়, সেসব অরণ্যে রয়েছে কাঁঠালের বহু বুনো জাত। সেদিক থেকে ভারতই কাঁঠালকে জাতীয় ফল করার প্রথম দাবিদার। তবে ভারত সে দাবি একেবারে পরিত্যাগ করেনি, কাঁঠালকে করেছে কেরালা ও তামিলনাড়ুর রাজ্য ফল।
কাঁঠালকে আমাদের জাতীয় ফল করার প্রধান কারণ দুটি। প্রথম কারণ হলো, কাঁঠাল চেনে না এমন লোক এ দেশে নেই, কাঁঠাল পাওয়া যায় না এমন জায়গায়ও নেই। এটি বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান জনপ্রিয় ফল। সহজলভ্য ও জনপ্রিয়তার কারণেই এটি আমাদের জাতীয় ফল। দ্বিতীয় কারণ হলো, কাঁঠালের আদিনিবাস এ অঞ্চল তথা ভারতবর্ষ। এ ছাড়া কাঁঠাল বাংলাদেশের মানুষদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে। অনেক অনুষ্ঠান, পূজা-পার্বণ, উৎসব, সাহিত্য ইত্যাদির সঙ্গে জড়িয়ে আছে কাঁঠাল। প্রাচীনকালে খনার বচনেও কাঁঠালের উল্লেখ পাওয়া যায়, ‘আমের বছর বান/কাঁঠালের বছর ধান।’
রসালো পাকা কাঁঠাল.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নতুন দল নিবন্ধনে আবেদনের সময় শেষ হচ্ছে আজ
আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করার সময় শেষ হচ্ছে আজ রোববার। এরপর আবেদনগুলো প্রাথমিক বাছাইয়ের কাজ শুরু করবে ইসি।
কোনো দলকে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে হলে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হতে হয়। এ নিবন্ধন পেতে কিছু শর্ত পূরণ করার বিধান আছে। গণ–অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন এসব শর্ত কিছুটা সহজ করার সুপারিশ করেছে। তবে সে সুপারিশ এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। বিদ্যমান আইনে অর্থাৎ আগের শর্তেই নিবন্ধনের আবেদন চেয়েছে ইসি।
গত ১০ মার্চ নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ইসি। প্রথমে আবেদনের শেষ সময় ছিল ২০ এপ্রিল। বিভিন্ন দলের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে পরে আবেদনের সময় ২২ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারীদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আজ নিবন্ধনের জন্য ইসিতে আবেদন করার কথা রয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, গত ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ৬৫টি দল নিবন্ধনের জন্য ইসিতে আবেদন করে। এর বাইরে ৪৬টি দল নিবন্ধনের আবেদন জমা দেওয়ার সময় বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়ে ইসিকে চিঠি দিয়েছিল। সময় বাড়ানোর পর অনেকগুলো দল আবেদন করেছে। তবে এখন পর্যন্ত মোট কতটি দল আবেদন করেছে, তার চূড়ান্ত হিসাব করা হয়নি।
এখন ইসিতে নিবন্ধিত দল আছে ৫০টি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত আছে। এখন পর্যন্ত যেসব দল ইসিতে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে, তার বেশির ভাগই নামসর্বস্ব। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ৯৩টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। তবে বেশির ভাগই ছিল নামসর্বস্ব দল। প্রাথমিক নথিপত্র বাছাইয়েই বাদ পড়েছিল ৮১টি দলের আবেদন। শেষ পর্যন্ত নিবন্ধন পেয়েছিল নামসর্বস্ব দুটি দল।
জাতীয় নির্বাচন–সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য কিছু শর্তের উল্লেখ আছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, অন্তত এক–তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কার্যালয় ও অন্তত ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন (মহানগর) থানায় কার্যালয় এবং প্রতিটি কার্যালয়ে ন্যূনতম ২০০ ভোটার তালিকাভুক্ত থাকতে হবে।
এর বাইরে নিবন্ধনের জন্য দলের গঠনতন্ত্রে সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয়ে বিধান থাকতে হয়। যেমন কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা, সব পর্যায়ের কমিটিতে অন্তত ৩৩ শতাংশ সদস্যপদ নারীদের জন্য নির্ধারিত রাখা এবং পর্যায়ক্রমে ২০৩০ সালের মধ্যে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী বা শ্রমিক ও অন্য কোনো পেশার সদস্যদের সমন্বয়ে অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন না থাকা ইত্যাদি।
সাধারণত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন আহ্বান করে ইসি। নির্ধারিত সময়ে যারা আবেদন করে, প্রথমে তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই করা হয়। আইন ও বিধিমালা মেনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করা না হলে বাছাইয়ে আবেদন বাতিল করে দেওয়া হয়। বাছাইয়ে যেসব দলের আবেদন টেকে, তাদের বিষয়ে মাঠপর্যায়ে তথ্য যাচাই-বাছাই করেন ইসির কর্মকর্তারা। সেখানে মূলত দলের মাঠপর্যায়ের কার্যালয় আসলেই আছে কি না, তা যাচাই করে দেখা হয়। যাচাই–বাছাই শেষে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয় নির্বাচন কমিশনে। পরে কমিশন নিবন্ধনের অনুমোদন দিয়ে থাকে।