চট্টগ্রামে করোনায় একজনের মৃত্যু, মোট আক্রান্ত ৬২
Published: 21st, June 2025 GMT
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (২১ জুন) চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
মারা যাওয়া নারীর বয়স ৭১ বছর। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদনে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্ত নারী গত তিনদিন ধরে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তিনি ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। শনিবার তার মৃত্যু হয়। এ নিয়ে গত ১৫ দিনে চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে দুইজনের মৃত্যু হলো।
আরো পড়ুন:
কিশোরগঞ্জে নদীতে ডুবে মাদ্রাসাছাত্রের মৃত্যু
যশোরে করোনায় আরো একজনের মৃত্যু
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে নতুন করে আরো ৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ল্যাবে পরীক্ষায় একজন, শেভরন ল্যাবে তিনজন এবং এপিক হেলথ কেয়ার ল্যাবে দুইজনের করোনা শনাক্ত হয়। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬২ জন।
ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
চাকসু নির্বাচন: প্যানেলে ভিপি-জিএস পদে নারী শুধু একজন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে অংশ নিতে ১০টি প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু শীর্ষ দুই পদ—সহসভাপতি (ভিপি) ও সাধারণ সম্পাদকে (জিএস) ৯টি প্যানেল কোনো ছাত্রীকে মনোনয়ন দেয়নি। কেবল একটি প্যানেল জিএস পদে এক ছাত্রীকে প্রার্থী করেছে।
প্যানেলগুলো শীর্ষ পদে নারী প্রার্থী না দেওয়ার কারণ হিসেবে বলছে, প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া, জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ ও সাংগঠনিক দুর্বলতা। তবে ছাত্রীরা মনে করছেন, মূল সমস্যা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ঘাটতি এবং সব সময় নারীকে পিছিয়ে রাখার প্রবণতা।
যে প্যানেল থেকে একমাত্র নারী প্রার্থী হয়েছেন, তা হলো ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সংগঠন স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি (স্যাড) ও ছাত্র ফেডারেশন একত্র হয়ে এ প্যানেল দিয়েছে। তাদের প্যানেল থেকে জিএস পদে নির্বাচন করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাসনীম জাহান শ্রাবণ। তিনি পদার্থবিদ্যা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী।
ক্যাম্পাসে বিগত সময়ে নারীদের ওপর নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি প্রশাসনের কেউ কেউ নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। এসব করা হয়েছে মূলত নারীদের মনে ভীতির সঞ্চার করতে। এ জন্য শীর্ষ পদে নির্বাচন করার জন্য নারীদের উৎসাহ দিয়ে এগিয়ে আনা দরকার ছিল।মোশরেকা অদিতি হক, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগতাসনীম জাহান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নিরাপদ নয়। এখানে ছাত্রীদের নিয়মিত বুলিং, শেমিং ও মোরাল পুলিশিংয়ের মতো ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়। অনলাইন ও সরাসরি—দুই ক্ষেত্রেই ছাত্রীরা এসব ঘটনার শিকার হন। তাই অনেকেই রাজনীতিতে যুক্ত হতে চান না।’
আগামী ১২ অক্টোবর সপ্তম চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। চাকসুর মোট ২৮ পদের মধ্যে নির্বাচিত হবেন ২৬ জন। পদাধিকারবলে সভাপতি থাকবেন উপাচার্য। আর কোষাধ্যক্ষ পদে সভাপতিই একজন শিক্ষককে মনোনীত করবেন।
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ভোট হচ্ছে এ সংসদে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিভিন্ন আন্দোলনে সামনে থাকা ছাত্রীরা শীর্ষ পদে প্রার্থী না হওয়ায় বিস্ময় তৈরি হয়েছে। চাকসু নিয়ে আশা-আকাঙ্ক্ষা সব সময়ই বেশি। সংগঠনগুলো যদি নারী প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দিত, তবে নির্বাচনী প্রচারণায় নতুন সুর শোনা যেত। এখন আলোচনায় নারী প্রার্থীর সংখ্যা নয়, বরং তাঁদের অনুপস্থিতিই বেশি আলোচিত হচ্ছে। নির্বাচনে অংশ নেওয়া ১০টি প্যানেলের মধ্যে ২৬০ পদের মধ্যে নারী প্রার্থী আছেন ৩৭ জন।
যে প্যানেল থেকে একমাত্র নারী প্রার্থী হয়েছেন, তা হলো ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী জোট’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সংগঠন স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি (স্যাড) ও ছাত্র ফেডারেশন একত্র হয়ে এ প্যানেল দিয়েছে।মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাদিয়া নাসরিন বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম অন্তত দু-তিনটি প্যানেলে ভিপি বা জিএস পদে নারী থাকবে। শেষ পর্যন্ত কেবল এক প্যানেল রাখল। এটা হতাশাজনক।’
শীর্ষ পদে নারী না থাকার বিষয়ে বড় ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি নারীদের এগিয়ে নিতে। এ কারণে দুজনকে সম্পাদক পদে রাখা হয়েছে। আর ভিপি ও জিএস পদে যাঁদের মনোনীত করা হয়েছে, তাঁদের আমরা বেশি যোগ্য মনে করেছি।’
ছাত্রদলের সভাপতি আলাউদ্দিন মহসিন নিজেদের দুর্বলতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, গত প্রায় এক দশক ক্যাম্পাসে ছাত্রদল সক্রিয়ভাবে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারেনি। ৫ আগস্টের পরও ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির চর্চা করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। তবে শীর্ষ একটি পদে একজন ছাত্রীকে মনোনয়ন করার বিষয়ে প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নিরাপদ নয়। এখানে ছাত্রীদের নিয়মিত বুলিং, শেমিং ও মোরাল পুলিশিংয়ের মতো ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়। অনলাইন ও সরাসরি—দুই ক্ষেত্রেই ছাত্রীরা এসব ঘটনার শিকার হন। তাই অনেকেই রাজনীতিতে যুক্ত হতে চান নাতাসনীম জাহানসাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে শীর্ষ পদে কোনো ছাত্রী রাখা সম্ভব হয়নি বলে জানান দ্রোহ পর্ষদের ভিপি প্রার্থী ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ। তিনি জানান, সাংগঠনিকভাবে তাঁরা দুর্বল অবস্থায় আছেন। সংগঠনের বর্তমান আহ্বায়ক ইসরাত হক সম্প্রতি পড়াশোনা শেষ করেছেন। এ কারণে তিনি নির্বাচন করতে পারেননি।
নারীদের শীর্ষ পদে নির্বাচন করতে উৎসাহ দেওয়া দরকার ছিল বলে মনে করেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোশরেকা অদিতি হক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ক্যাম্পাসে বিগত সময়ে নারীদের ওপর নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। এমনকি প্রশাসনের কেউ কেউ নারীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। এসব করা হয়েছে মূলত নারীদের মনে ভীতির সঞ্চার করতে। এ জন্য শীর্ষ পদে নির্বাচন করার জন্য নারীদের উৎসাহ দিয়ে এগিয়ে আনা দরকার ছিল।