‘ইসলামি শাসনে’ নিজামুল মুলকের ব্যবস্থাপত্র
Published: 22nd, June 2025 GMT
আজকের অনেক মুসলিম মনে করেন, ইসলামি শাসনব্যবস্থা আর বাস্তবসম্মত নয়। আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর ব্যর্থতা দেখে তাঁরা ধরে নেন, আমাদের ঐতিহ্যে কোনো সমাধান নেই। ফলে অজ্ঞাতসারে তাঁদের মধ্যে হীনম্মন্যতা জেঁকে বসে। মুসলিমদের নিজস্ব রাজনৈতিক মাস্টারপিস—নিজামুল মুলকের সিয়াসাতনামার কথা ভুলে যান। যে বই শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে উজির, সুলতান এবং রাষ্ট্রনায়কদের দ্বারা অধ্যয়ন করা হয়েছে।
এটি কেবল কৌশলই নয়, নীতি, ন্যায়বিচার এবং দূরদর্শিতাও প্রদান করেছে। আমরা আমাদের মডেল ভুলে গেছি। কেউ কেউ তুর্কি ধারাবাহিকের মাধ্যমে নিজামুল মুলকের নাম শুনেছেন, কিন্তু তাঁর অবদানের গভীরতা খুব কমই বোঝেন। এখন সময় এসেছে টেলিভিশনের বাইরে গিয়ে আমাদের হারানো উত্তরাধিকার পুনরুদ্ধারের।
নিজামুল মুলক কে ছিলেন?নিজামুল মুলক (মৃত্যু: ১০৯২) কোনো সাধারণ উজির ছিলেন না। তিনি সেলজুক শাসক আলপ আরসালান ও মালিক শাহের অধীনে কাজ করেছেন এবং ইতিহাসের অন্যতম শক্তিশালী মুসলিম সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। তিনি কেবল রাজদরবার পরিচালনা করেননি, একটি সভ্যতা নির্মাণ করেছেন।
তাঁর সিয়াসাতনামা (শাসনের গ্রন্থ) কর, বিচার এবং সামরিক শৃঙ্খলার মতো বিষয়ে শাসকদের জন্য নির্দেশিকা। নিজাম প্রতিটি ধারণাকে আল্লাহর ভয় এবং ন্যায়বিচারের সঙ্গে যুক্ত করেছেন। তিনি শাসনকে আল্লাহর আমানত হিসেবে দেখতেন, ক্ষমতা দখলের খেলা হিসেবে নয়। তিনি বুঝতেন, শাসক জনগণের পাশাপাশি স্রষ্টার কাছেও জবাবদিহি করবেন।
আরও পড়ুন ইমাম গাজালি ও তাঁর শিক্ষাদর্শন১২ এপ্রিল ২০২৫মুসলিমদের নিজস্ব রাজনৈতিক মাস্টারপিস—নিজামুল মুলকের সিয়াসাতনামার কথা ভুলে যান। যে বই শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে উজির, সুলতান এবং রাষ্ট্রনায়কদের দ্বারা অধ্যয়ন করা হয়েছে।নিজাম কেবল বই লিখেই থেমে থাকেননি। তিনি প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত নিজামিয়া মাদ্রাসাগুলো ছিল ইসলামি বিশ্বের শীর্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এগুলো কেবল ধর্মতত্ত্ব নয়, ইসলামি বিজ্ঞান, দর্শন, রাষ্ট্রকৌশল ও তাসাউফ শিক্ষা দিত। ইমাম গাজ্জালি এই ব্যবস্থার একজন স্নাতক ও বাগদাদের নিজামিয়া মাদ্রাসার সেলিব্রিটি অধ্যাপক ছিলেন।
এই ব্যবস্থা এমন প্রজন্ম তৈরি করেছে, যারা আইনি দক্ষতা, আধ্যাত্মিক শৃঙ্খলা এবং মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যের সমন্বয় করেছে। সালাহউদ্দিন আইয়ুবি পরোক্ষভাবে এই বুদ্ধিবৃত্তিক ঐতিহ্যের সুবিধাভোগী ছিলেন। তিনি এবং তাঁর সামরিক ও প্রশাসনিক অভিজাতরা নিজামিয়া দৃষ্টিভঙ্গি—ইসলামি ঐক্য, আধ্যাত্মিক পরিশীলন এবং উম্মাহর সেবা—দ্বারা গঠিত হয়েছিলেন।
নিজাম একটি গোয়েন্দা নেটওয়ার্কও গড়ে তুলেছিলেন, যা বাতিনি ইসমাইলি গোষ্ঠী ‘হাশাশিন’ থেকে সাম্রাজ্যকে রক্ষা করত। তিনি নৃশংসতার পরিবর্তে কৌশল ব্যবহার করে মুসলিম উম্মাহকে পতনের হাত থেকে রক্ষা করেন। তিনি ছিলেন সেলজুক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার স্থপতি, সুলতানদের পরামর্শদাতা এবং জ্ঞান ও ক্ষমতার ঐক্যের প্রতীক।
১৮৯১ সালে ইরানে প্রকাশিত সিয়াসতনামার প্রচ্ছদ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন জ ম ল ম লক র ব যবস থ শত ব দ ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
গল টেস্টে ড্র বাংলাদেশের জন্য ‘মোরাল ভিক্টরি’
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চতুর্থ চক্রের সফর বাংলাদেশ শুরু করেছে ড্র করে। ৪ পয়েন্ট বাংলাদেশের নামের পাশে যুক্ত হয়ে গেছে। অথচ সুযোগ ছিল শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে গল টেস্টে ম্যাচ জেতার।
সেজন্য একটু হিসাব কষা, ঝুঁকি নেওয়া ও সাহসিকতা দেখাতে হতো। সেদিকে না গিয়ে বরং নিরাপদ ক্রিকেটকেই বেছে নিয়েছে বাংলাদেশ। ফলাফল: ম্যাচ ড্র। যা শ্রীলঙ্কার জন্য স্বস্তিদায়ক হলেও বাংলাদেশের জন্য উল্টো হওয়ার কথা—জয়ের সুযোগ হাতছাড়া! তবুও এই ড্র-টিকেই হাবিবুল বাশার ‘মোরাল ভিক্টরি’ বলছেন। কেন?
উত্তরটা তার মুখ থেকেই শুনুন, ‘‘তৃপ্তি তো ছিলই। আমার মনে হয় সন্তুষ্টির জায়গাও ছিল। আমার সন্তুষ্টির জায়গা হচ্ছে, এরকম উইকেটে আমরা ওদেরকে অলআউট করতে পেরেছি (প্রথম ইনিংসে)। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের পর শ্রীলঙ্কা যেভাবে শুরু করেছিল, ওরা যদি সাড়ে পাঁচশ বা ছয়শ করে ফেলত, উল্টো তখন আমরা চাপে পড়ে যেতাম। এরকম উইকেটে একটা দলকে অলআউট করাও বড় ব্যাপার। আমরা সেটা করতে পেরেছি, যেটা ভালো দিক। শেষের দিকে (দ্বিতীয় ইনিংসে) ৪ উইকেট নেওয়াও আমাদের জন্য মোরাল ভিক্টরি। এজন্য বলব, আমি সন্তুষ্ট এবং এই টেস্ট ম্যাচটা বাংলাদেশ ভালো খেলেছে।’’
আরো পড়ুন:
আগামী বছরে রাজশাহীতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ঘোষণা
বিশ্বকাপের টিকিট পেলো কানাডা
তবে শ্রীলঙ্কা ফল হওয়ার মতো উইকেট না বানানোয় অবাক হয়েছেন হাবিবুল, ‘‘আমার প্রত্যাশা ছিল, গলে ওরা স্পোর্টিং উইকেট বানাবে, যেখানে ফল আসতে পারে। যেহেতু টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ, আমার মনে হয় সবাই চাইবে ঘরের মাঠে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সুযোগটা নিতে। এই উইকেটে যদি ছয় দিন খেলা হতো, তাহলে হয়তো ফল হতো। পাঁচ দিনে আসলে এরকম উইকেটে ফল আসা কঠিন।’’
শেষ দিনে বাংলাদেশ ১৮৭ রানের লিড নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামে। আগের দিনের অপরাজিত দুই ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটিংয়ে আক্রমণাত্মক ভাব ছিল না। বরং দেখে শুনে, স্বস্তিতে খেলার মানসিকতা ছিল। মুশফিকুর ৪৯ রানে আউট হলে বৃষ্টির বাগড়ায় ম্যাচ বন্ধ থাকে। এরপর শান্তর সেঞ্চুরির অপেক্ষায় ছিল দল। অথচ তখনও বাংলাদেশের লিড আড়াই শ’ পেরিয়ে। দেড় সেশন বাকি ছিল খেলা। আগেভাগে ডিক্লেয়ার করলে বোলাররা অন্তত বাড়তি ১৫-২০ ওভার বোলিংয়ের সুযোগ পেতেন। কেন বাংলাদেশ এই সুযোগটি নিল না, সেটাই অবাক করছে অনেককে।
অন্তত ২০ ওভার আগে ডিক্লেয়ার করলে বাংলাদেশের পক্ষেই ফল আসত, জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হতো। হাবিবুলের কাছে এমনটা মনে হচ্ছে না, ‘‘শেষ দিনে ৪ উইকেট পাওয়ার পর আমাদের হয়তো মনে হয়েছে, বাংলাদেশ আগেভাগে ডিক্লেয়ার করলে জেতার সম্ভাবনা তৈরি করতে পারত। আমার তা মনে হয়। কারণ পঞ্চম দিনে উইকেট ততটা ব্রেক করেনি। উইকেট ফ্ল্যাট ছিল সকাল থেকে—খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেন শান্ত যখন ব্যাটিং করছিল, তখন কিন্তু দেখা গেছে উইকেট একদম ফ্ল্যাট। সেখানে আসলে কত রানে ছেড়ে দেওয়া যায়, সেই ঝুঁকিটা নিলে কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারত।’’
‘‘ওই সময়ে শান্ত কিংবা মুশফিকুর রহিম আউট হয়ে যেত, তাহলে আমরা চাপে পড়ে যেতাম। এখন হয়তো ভাবছি, সুযোগটা নিতে পারতাম। তারা চেষ্টা করেছে, আমার কাছে মনে হয়। আগে ডিক্লেয়ার করলেও খুব বেশি পরিবর্তন হতো বলে মনে হয় না,’’—যোগ করেন হাবিবুল।
ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল