Samakal:
2025-11-09@07:22:52 GMT

আন্দোলনের শহরে

Published: 24th, June 2025 GMT

আন্দোলনের শহরে

অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই নানামুখী আন্দোলন ও দাবিদাওয়া মোকাবিলা করছে। ৮ আগস্ট এ সরকার শপথ নেয়। নানা পেশাজীবী, শিক্ষাসংশ্লিষ্ট আন্দোলন, শ্রমিকদের দাবি এমনকি সরকারি কর্মচারীরাও বাদ যাচ্ছে না। ক্রিয়াশীল সব রাজনৈতিক দলের সমর্থনপুষ্ট হলেও রাজনৈতিক আন্দোলনও এ সময়ে চলছে। সরকার নানাভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও এসব আন্দোলন যেন কমছেই না। এসব সামাল দিতে গিয়ে সরকার যেমন হাঁপিয়ে উঠছে তেমনি অনেক সময় রাজধানীবাসীকেও পড়তে হচ্ছে বিপদে। নগরবাসীকে জিম্মি করেও আন্দোলন করেছে বিভিন্ন গ্রুপ। এমনিতেই যানজটের কারণে রাজধানীর মানুষ অবর্ণনীয় ভোগান্তিতে পড়ে। বৃষ্টিতে তাদের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। এর মধ্যে আন্দোলনের কারণে সড়ক বন্ধ থাকলে সে দুর্ভোগ হয় বহু গুণ। 

রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস হিসেবে এদিন সম্ভবত আন্দোলন সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। চলতি সপ্তাহের আন্দোলনের চিত্র প্রকাশিত হয়েছে সমকালের শেষ পাতায়। সেদিন রাজধানীর পাঁচ স্থানে সাতটি দলের আন্দোলনের বর্ণনা এসেছে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে আন্দোলন করেছেন ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা এবং তথ্য আপা প্রকল্পের নারীরা। গুলিস্তানের নগর ভবনে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা। মিন্টো রোডে বিক্ষোভ করেছেন জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতে আন্দোলন করে গ্রেপ্তার হওয়া প্রবাসীদের মুক্তির দাবিতে জেলফেরত প্রবাসীরা। একই জায়গায় আন্দোলন করেছেন কভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স প্রকল্পের কর্মীরা। তিন দফা দাবিতে শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (জাতীয়করণকৃত) এবং শহীদ মিনার থেকে হাইকোর্ট এলাকায় যাওয়ার সময় পুলিশের বাধার মুখে পড়েন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা। 

এখানে কারও দাবিই অস্বীকার করার সুযোগ নেই। অর্থাৎ সবার আন্দোলনেরই যৌক্তিকতা আছে; কিন্তু সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। অন্তর্বর্তী সরকার একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করছে এবং ইতোমধ্যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। অল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব পালনকারী এই সরকারের পক্ষে সবার দাবি পূরণ করা সম্ভব নয়। তার পরও সরকার উল্লেখযোগ্য দাবি মেনে নিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে গত সাড়ে ১০ মাসে চার শতাধিক আন্দোলন মোকাবিলা করতে হয়েছে। কিছু আন্দোলন ঠেকাতে সরকারকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। সরকার এভাবে আন্দোলনের কারণে যদি তার অগ্রাধিকারগুলোতে নজর দিতে না পারে, তা নিশ্চয় দুঃখজনক। 
প্রশ্ন হলো, দাবি-দাওয়ার জন্য সড়কে কেন নামতে হবে? এর মধ্যে অনেক দাবি নিয়ে নিশ্চয় যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সেগুলো যথাসময়ে পূরণ হয়নি বলেই তাদের রাস্তায় নামতে হয়েছে। আবার এমনও হতে পারে, যখন এক দল দেখছে, অন্যরা আন্দোলন করছে; সুযোগ বুঝে তারাও নেমে পড়ছে। রাস্তায় নামার আগে অন্তত কর্তৃপক্ষকে যথেষ্ট সময় দেওয়া এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নীতিনির্ধারকদের কাছে দাবির যৌক্তিকতাও তুলে ধরা উচিত।  

দুঃখজনক হলেও সত্য, দাবি-দাওয়া পেশ ও তা মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে আগে থেকেই এক ধরনের অপসংস্কৃতি চালু আছে। অনেক সময় কর্তৃপক্ষ কিংবা সরকার সুন্দরভাবে দাবি করলেও তা মেনে নেয় না। রাস্তায় আন্দোলন গড়ানোর পরই তাদের টনক নড়ে। আবার সুযোগ সন্ধানী দল আছে; কিছু হলেই রাস্তায় নেমে পড়ে।
অন্তর্বর্তী সরকারের বাস্তবতা আন্দোলনকারীদের বোঝা উচিত। সরকারেরও উচিত আন্তরিকতার সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দাবি শোনা এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের উচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসা। সরকারের বাস্তবতা তুলে ধরে তারা দাবি পূরণের আশ্বাস দিতে পারেন কিংবা পরবর্তী সরকারকে পরামর্শ দিতে পারেন। তবে অন্তর্বর্তী সরকারকে এই মুহূর্তে নির্বাচনকেন্দ্রিক কাজেই মনোনিবেশ করা উচিত। এর আগে সংস্কার এবং বিচারের যে দাবি আছে, তাও একটা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই।

মাহফুজুর রহমান মানিক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমকাল
mahfuz.

manik@gmail.com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র র কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মাথায় রেখে নকশায় গুরুত্ব প্রদান

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবকে মাথায় রেখে স্থাপনার নকশা প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম। স্থাপত্য শাখার নোবেল হিসেবে খ্যাত আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার বিজয়ী এই স্থপতি বলেছেন, “একজন শিল্পী একটি দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন, আর তার শিল্পকর্ম তাকে সারা জীবন বাঁচিয়ে রাখে।”

শনিবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে ‘সিরামিক বাংলাদেশ ম্যাগাজিন’ আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধে তিনি এসব কথা বলেন। 

‘বিটুইন ইরোশন অ্যান্ড ইমারজেন্সি’ শিরোনামে উপস্থাপনায় মেরিনা তাবাসসুম তার দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “স্থাপত্য কেবল ভবন নির্মাণ নয়, এটি সংস্কৃতি, সমাজ ও মানুষের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত একটি জীবন্ত শিল্প। একজন স্থপতির দায়িত্ব শুধু কাঠামো তৈরি নয়, বরং এমন কিছু সৃষ্টি করা যা মানুষের জীবন, পরিবেশ ও সময়ের সঙ্গে কথা বলে।”

মেরিনা তাবাসসুম বলেন, “আমাদের কাজ যেন এই মাটির বাস্তবতার সঙ্গে মিশে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তন, নগরায়ণ এবং মানুষের জীবনধারার পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্থাপত্যের ভাষা বদলাতে হবে।”

তিনি যোগ করেন, “চরাঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে বাঁচে। তাদের জীবনযাপন ও বাসস্থানকে টেকসইভাবে গড়ে তুলতে স্থাপত্যের নতুন ধারণা প্রয়োগ জরুরি।”

মেরিনা তাবাসসুম জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং পুনর্বাসনযোগ্য ঘর তৈরিতে তার দল ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করছে। এসব প্রকল্পে স্থানীয় মানুষকে যুক্ত করে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী নকশা তৈরি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধু স্থাপনা নির্মাণ নয়, বরং মানুষের সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য সৃষ্টি করা। চরাঞ্চলের মানুষকে আত্মনির্ভর করে তুললেই প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব।”

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন- সিরামিক বাংলাদেশ ম্যাগাজিনের সিনিয়র অ্যাডভাইজর, আরকিকানেক্টের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্থপতি জালাল আহমেদ। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের স্থাপত্য আজ বিশ্বে নিজস্ব অবস্থান তৈরি করেছে। মেরিনা তাবাসসুমের মতো স্থপতিরা আমাদের গর্ব এবং নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।”

পুরো অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন স্থপতি মৌসুমী আহমেদ। স্থপতি মাহমুদুল আনোয়ার রিয়াদের সঞ্চালনায় পরে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন প্রফেসর জয়নাব ফারুকী আলী, স্থপতি নাহাস আহমেদ খলিল ও প্রফেসর ফুয়াদ হাসান মল্লিক।

সমাপনী বক্তব্যে বিসিএমইএ প্রেসিডেন্ট ও মুন্নু সিরামিকের ভাইস চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম বলেন, “দেশের স্থাপত্য ও সিরামিক শিল্প একে অপরের পরিপূরক। শিল্প, শিক্ষা ও গবেষণার সমন্বয় ঘটিয়ে এই খাতকে আরও এগিয়ে নিতে হবে।”

অনুষ্ঠানে দেশের প্রখ্যাত স্থপতি, প্রকৌশলী, সিরামিক শিল্প উদ্যোক্তা, শীর্ষ কর্মকর্তা ও সিনিয়র সাংবাদিকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ