Samakal:
2025-06-25@02:16:10 GMT

আন্দোলনের শহরে

Published: 24th, June 2025 GMT

আন্দোলনের শহরে

অন্তবর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই নানামুখী আন্দোলন ও দাবিদাওয়া মোকাবিলা করছে। ৮ আগস্ট এ সরকার শপথ নেয়। নানা পেশাজীবী, শিক্ষাসংশ্লিষ্ট আন্দোলন, শ্রমিকদের দাবি এমনকি সরকারি কর্মচারীরাও বাদ যাচ্ছে না। ক্রিয়াশীল সব রাজনৈতিক দলের সমর্থনপুষ্ট হলেও রাজনৈতিক আন্দোলনও এ সময়ে চলছে। সরকার নানাভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও এসব আন্দোলন যেন কমছেই না। এসব সামাল দিতে গিয়ে সরকার যেমন হাঁপিয়ে উঠছে তেমনি অনেক সময় রাজধানীবাসীকেও পড়তে হচ্ছে বিপদে। নগরবাসীকে জিম্মি করেও আন্দোলন করেছে বিভিন্ন গ্রুপ। এমনিতেই যানজটের কারণে রাজধানীর মানুষ অবর্ণনীয় ভোগান্তিতে পড়ে। বৃষ্টিতে তাদের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। এর মধ্যে আন্দোলনের কারণে সড়ক বন্ধ থাকলে সে দুর্ভোগ হয় বহু গুণ। 

রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস হিসেবে এদিন সম্ভবত আন্দোলন সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। চলতি সপ্তাহের আন্দোলনের চিত্র প্রকাশিত হয়েছে সমকালের শেষ পাতায়। সেদিন রাজধানীর পাঁচ স্থানে সাতটি দলের আন্দোলনের বর্ণনা এসেছে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে আন্দোলন করেছেন ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা এবং তথ্য আপা প্রকল্পের নারীরা। গুলিস্তানের নগর ভবনে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা। মিন্টো রোডে বিক্ষোভ করেছেন জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতে আন্দোলন করে গ্রেপ্তার হওয়া প্রবাসীদের মুক্তির দাবিতে জেলফেরত প্রবাসীরা। একই জায়গায় আন্দোলন করেছেন কভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স প্রকল্পের কর্মীরা। তিন দফা দাবিতে শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ করেছেন প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (জাতীয়করণকৃত) এবং শহীদ মিনার থেকে হাইকোর্ট এলাকায় যাওয়ার সময় পুলিশের বাধার মুখে পড়েন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা। 

এখানে কারও দাবিই অস্বীকার করার সুযোগ নেই। অর্থাৎ সবার আন্দোলনেরই যৌক্তিকতা আছে; কিন্তু সময়টা গুরুত্বপূর্ণ। অন্তর্বর্তী সরকার একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দায়িত্ব পালন করছে এবং ইতোমধ্যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। অল্প সময়ের জন্য দায়িত্ব পালনকারী এই সরকারের পক্ষে সবার দাবি পূরণ করা সম্ভব নয়। তার পরও সরকার উল্লেখযোগ্য দাবি মেনে নিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে গত সাড়ে ১০ মাসে চার শতাধিক আন্দোলন মোকাবিলা করতে হয়েছে। কিছু আন্দোলন ঠেকাতে সরকারকে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। সরকার এভাবে আন্দোলনের কারণে যদি তার অগ্রাধিকারগুলোতে নজর দিতে না পারে, তা নিশ্চয় দুঃখজনক। 
প্রশ্ন হলো, দাবি-দাওয়ার জন্য সড়কে কেন নামতে হবে? এর মধ্যে অনেক দাবি নিয়ে নিশ্চয় যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সেগুলো যথাসময়ে পূরণ হয়নি বলেই তাদের রাস্তায় নামতে হয়েছে। আবার এমনও হতে পারে, যখন এক দল দেখছে, অন্যরা আন্দোলন করছে; সুযোগ বুঝে তারাও নেমে পড়ছে। রাস্তায় নামার আগে অন্তত কর্তৃপক্ষকে যথেষ্ট সময় দেওয়া এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নীতিনির্ধারকদের কাছে দাবির যৌক্তিকতাও তুলে ধরা উচিত।  

দুঃখজনক হলেও সত্য, দাবি-দাওয়া পেশ ও তা মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে আগে থেকেই এক ধরনের অপসংস্কৃতি চালু আছে। অনেক সময় কর্তৃপক্ষ কিংবা সরকার সুন্দরভাবে দাবি করলেও তা মেনে নেয় না। রাস্তায় আন্দোলন গড়ানোর পরই তাদের টনক নড়ে। আবার সুযোগ সন্ধানী দল আছে; কিছু হলেই রাস্তায় নেমে পড়ে।
অন্তর্বর্তী সরকারের বাস্তবতা আন্দোলনকারীদের বোঝা উচিত। সরকারেরও উচিত আন্তরিকতার সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দাবি শোনা এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের উচিত প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসা। সরকারের বাস্তবতা তুলে ধরে তারা দাবি পূরণের আশ্বাস দিতে পারেন কিংবা পরবর্তী সরকারকে পরামর্শ দিতে পারেন। তবে অন্তর্বর্তী সরকারকে এই মুহূর্তে নির্বাচনকেন্দ্রিক কাজেই মনোনিবেশ করা উচিত। এর আগে সংস্কার এবং বিচারের যে দাবি আছে, তাও একটা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার বিকল্প নেই।

মাহফুজুর রহমান মানিক: জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, সমকাল
mahfuz.

manik@gmail.com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র র কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

গলের অতৃপ্তি দূর হবে কি কলম্বোতে

নাজমুল হোসেনের আঙুলের চোটের সর্বশেষ কী অবস্থা?

সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব (এসএসসি) মাঠের উইকেট দেখে কেমন মনে হচ্ছে বাংলাদেশের?

আজ থেকে শুরু কলম্বো টেস্টে মেহেদী হাসান মিরাজ খেললে কেমন হবে একাদশ?

বোলিং আক্রমণটাই বা কেমন হতে পারে?

গলের পর কলম্বোতেও ব্যাটিং উইকেটেই হবে খেলা। পরের দুটি প্রশ্নের উত্তর তাই অনুমান করে নিতে অসুবিধা হয় না। আঙুলে বয়ে বেড়ানো চোট অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের খেলা নিয়েও কোনো সংশয় তৈরি করছে না। তবু সংবাদ সম্মেলনে যেহেতু এসেছেন, কাল দুপুরে কোচ ফিল সিমন্সের কাছ থেকে উত্তরগুলো মিলিয়ে নিলেন সাংবাদিকেরা।

না, নতুন কিছু বলেননি কোচ সিমন্সও। একাদশ বা বোলিং আক্রমণ নিয়ে ধারণা দেবেন না স্বাভাবিক। তবে সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠের উইকেট ব্যাটিং–বান্ধব হবে বলেছেন মানে তো দলটাও গড়া হবে সেভাবেই।

সিমন্সের আগে কাল শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা এসেও এসএসসির ব্যাটিং উইকেটের গুণগানই গেয়েছেন। স্পিনাররা সহায়তা পেলেও সেটা হয়তো টেস্টের শেষ দুই–এক দিনই পাবেন। এসএসসিতেও গলের পুনরাবৃত্তি দেখা গেলে তাই অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

সেটা মাথায় রেখে সিমন্সও চান, গলের ক্রিকেটটাই ক্রিকেটাররা খেলুক কলম্বোতে, ‘আমরা গলে যেভাবে লড়াই করেছি, এখানেও তেমনই খেলতে চাই। কিছু ছোটখাটো জায়গায় উন্নতির সুযোগ আছে, সেটা করাটা জরুরিও। যেভাবে প্রথম টেস্টে খেলেছি, সেই মান ধরে রাখা কিংবা আরও ভালো কিছু করা দরকার।’

গল টেস্ট ড্র করলেও বাংলাদেশ দল কলম্বোতে এসেছে একটু অতৃপ্তি নিয়ে। টেস্টটা জিততে না পারার অতৃপ্তি। নইলে ওই ম্যাচের সব দিক দিয়ে তো বাংলাদেশই এগিয়ে ছিল! প্রথম ইনিংসে ৪৯৫ রান করে ১০ রানের লিড, দুই ইনিংস মিলিয়ে তিনটি সেঞ্চুরি, নাঈমের পাঁচ উইকেট এবং শেষ দিনে শ্রীলঙ্কার সামনে ২৯৬ রানের লক্ষ্য দিয়ে দিন শেষ হওয়ার আগেই তাদের ৪ উইকেট ফেলে দেওয়া। তবে এটাও ঠিক যে গলে বৃষ্টি বাংলাদেশের পরিকল্পনায় বড় বাধা ছিল এবং সেই শঙ্কা আছে কলম্বোতেও।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, আজ শুরু হওয়া টেস্টের প্রতিদিনই আছে বৃষ্টির শঙ্কা।
তারপরও গলে বাংলাদেশ দল অনেক কিছুই করতে পেরেছে। যেটুকু পারেনি, সেই মধুরেণ সমাপয়েৎও হতে পারত মেহেদী হাসান মিরাজ টেস্টটা খেললে। সেই বিশ্বাস থেকে গলে জিততে না পারার অতৃপ্তি তাঁকেও বেশ আক্রান্ত করছে বলে খবর। তবে অসুস্থতা কাটিয়ে ওঠা মিরাজের কলম্বো টেস্টের একাদশে থাকা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। তাঁর নিজেরও মাঠে নামতে তর সইছে না।

মিরাজকে নিয়ে সিমন্সের আশা, টেস্টে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ অলরাউন্ডারের প্রত্যাবর্তন কলম্বোয় বাংলাদেশ দলকে ভালো কিছু এনে দেবে, ‘মিরাজ এখন বিশ্বের ২ নম্বর র‍্যাঙ্কে (টেস্ট অলরান্ডর) রয়েছে। সে ব্যাটিং ও বোলিং দুই ক্ষেত্রেই দলে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।’

সঙ্গে অবশ্য অন্যদেরও জাগিয়ে দিতে যোগ করেছেন, ‘শুধু তার ওপর নির্ভর করলেই হবে না, প্রত্যেককে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। মিরাজ তার কাজ করবে, কিন্তু বাকিদেরও এগিয়ে আসতে হবে।’

মিরাজ খেললে গলে ৫ উইকেট পাওয়া আরেক অফ স্পিনার নাঈম খেলবেন কি না, সে প্রশ্ন আসেই। জবাবটা একটু ‘যদি’–‘কিন্তু’ রেখেই দিয়েছেন কোচ, ‘সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কঠিন। গলে নাঈম অসাধারণ খেলেছে, তাকে বাদ দেওয়া কঠিন হবে। কিন্তু সবাই জানে, দলে থাকা না-থাকা নির্ভর করে কন্ডিশনের ওপর এবং দলের প্রয়োজনের ওপর।’

শ্রীলঙ্কায় দ্রুতই খেলার মধ্যে ঢুকে যাওয়ার মানসিকতা বাংলাদেশ দল ঢাকা থেকেই নিয়ে এসেছিল। গল টেস্টের ড্র সেই মানসিকতাকে আরও ইতিবাচক করে তুলেছে। কোচ তো সরাসরিই বলে দিয়েছেন, কলম্বোতে বাংলাদেশের লক্ষ্য জয়, ‘শ্রীলঙ্কা ভালো ক্রিকেট খেলছে, তাদের হারানো সহজ হবে না। কিন্তু গলের মতো এখানেও আমরা জয়ের লক্ষ্যে খেলতে নামব। আমার মানসিকতা সব সময়ই এমন—কীভাবে জেতা যায়, সেটা খুঁজে বের করতে হবে।’

কলম্বো টেস্টের আগে অধিনায়ক নাজমুল হোসেনের আঙুলের আঘাত কিছুটা চিন্তার কারণ হয়েছে। কালও ফিল্ডিং অনুশীলনের সময় বল লেগেছে সে জায়গায়। পরে নেটে গিয়ে স্পিনারদের বলে ব্যাটিং অনুশীলন করেছেন। দ্বিতীয় টেস্টে তাঁর খেলা নিয়ে সংশয় দূর করেছেন কোচ, ‘ও ঠিক আছে। আঙুলে হালকা ব্যথা পেয়েছে, টেপ পেঁচিয়ে খেলতে পারবে। খেলতে কোনো সমস্যা হবে না।’

টেস্টের আগপর্যন্ত সব তো নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে। গলের অসমাপ্ত কাজটা কি তবে কলম্বোতে করতে পারবে বাংলাদেশ দল? অবশ্য গলের মতো কলম্বোর আকাশও কাঁদতে থাকলে ভিন্ন ব্যাপার। ওই একটা বিষয় তো কারও নিয়ন্ত্রণেই নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ