‘দয়া করে কেউ নিয়ে যাবেন’ লিখে রেখে যাওয়া নবজাতকের অভিভাবক হতে কয়েক শ ফোনকল
Published: 8th, November 2025 GMT
কেউ এসেছেন সৈয়দপুর থেকে, কেউ–বা নওগাঁ থেকে। কেউ নিঃসন্তান, কারও আবার ছেলেসন্তান থাকলেও মেয়ে নেই। দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিরকুট লিখে এক মায়ের রেখে যাওয়া বাচ্চার অভিভাবক হতে আগ্রহী তাঁরা। কর্তৃপক্ষের পরামর্শে তাঁরা আবেদনও করেছেন। এ ছাড়া বাচ্চাটির অভিভাবক হওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাসপাতালের পরিচালকসহ কর্মকর্তাদের কাছে কয়েক শ ফোনকল এসেছে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাসপাতালের পঞ্চম তলায় শিশু ওয়ার্ডের শয্যায় এক নবজাতক কন্যাসন্তান রেখে যান তাঁর স্বজনেরা। শয্যার পাশে একটি বাজারের ব্যাগে একটি চিরকুট পাওয়া যায়। শিশুটির মা চিরকুটে লিখেছেন, ‘পরিস্থিতির শিকার হয়ে বাচ্চা রেখে গেলাম, দয়া করে কেউ নিয়ে যাবেন।’ এরপর এ নিয়ে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তারপর থেকে বাচ্চাটির অভিভাবক হতে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন হাসপাতালে ছুটে আসছেন এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ শিশুবিশেষজ্ঞ শেখ সাদেক আলী বলেন, ‘বাচ্চাটির আজ একটু খিঁচুনির মতো দেখা দিয়েছে। দুধ পান করছে কম। অন্য সবকিছু স্বাভাবিক আছে। একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, সবার আগে বাচ্চাটির সুস্থতা। পরে অন্য সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
আজ শনিবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শিশু ওয়ার্ডের সামনে মানুষের ভিড়। কেউ বাচ্চাটির দত্তক নিতে, কেউ–বা একনজর দেখতে এসেছেন। হাসপাতাল সূত্র জানায়, বাচ্চা রেখে যাওয়ার বিষয়টি জানাজানির পর হাসপাতালের পরিচালক, ওয়ার্ড মাস্টারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে তিন শতাধিক ফোন এসেছে।
দুপুর সাড়ে ১২টায় হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার সুমন কুমারের কক্ষে বাচ্চা নিতে আসেন মুনিরা-আনোয়ার দম্পতি। তাঁদের বাড়ি জেলার বিরামপুর উপজেলায়। মুনিরা জানান, তাঁদের দুই ছেলে আছে। কিন্তু মেয়ে নেই। তাঁর একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। কিন্তু ছেলেরা তাঁদের একটি বোন চায়।
বাচ্চাটির অভিভাবক হওয়ার জন্য হাসপাতালের পরিচালক বরাবর অনেকে আবেদন করেছেন। পেশায় ব্যবসায়ী এক ব্যক্তি আবেদনপত্রে লিখেছেন, বিয়ের ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও তিনি এখনো বাবা হতে পারেননি। আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তিনি বাচ্চাটির অভিভাবক হতে চান।
দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ফজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমত শিশুটির সুস্থতা। এরপর সমাজসেবা অধিদপ্তরের শিশুকল্যাণ বোর্ড আছে। বোর্ডের সদস্যরা বসে যাঁরা আবেদন করেছেন, সেগুলো পর্যালোচনা করা হবে। এ ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে সচ্ছল নিঃসন্তান দম্পতিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে।’
সমাজসেবা কার্যালয়ের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) হাবিবা আক্তার বলেন, বাচ্চাটির দায়িত্ব নিতে আগ্রহী অনেক দম্পতি ইতিমধ্যে যোগাযোগ করেছেন। কেউ কেউ হাসপাতালের পরিচালক বরাবর আবেদনও করেছেন। তবে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের শিশুকল্যাণ কমিটি আছে। বাচ্চাটির সুস্থতা সাপেক্ষে ওই কমিটি আবেদনপত্রগুলো যাচাই-বাছাই করবে। বিভিন্ন শর্তসাপেক্ষে রেজল্যুশনের পর বাচ্চা হস্তান্তর হবে।
বাচ্চাটির জন্য তারেক রহমানের উপহারএদিকে নবজাতক শিশুটির জন্য উপহারসামগ্রী পাঠিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ দুপুরে তারেক রহমানের পক্ষে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক এবং নিপীড়িত নারী-শিশু আইনি ও স্বাস্থ্যসেবা সহায়তা সেলের প্রধান সমন্বয়কারী রফিকুল ইসলাম হাসপাতালের পরিচালকের হাতে উপহারসামগ্রী তুলে দেন। এতে বাচ্চাটির জন্য পোশাক ও নগদ কিছু অর্থ আছে।
এ সময় বিএনপির নিপীড়িত নারী-শিশু আইনি ও স্বাস্থ্যসেবা সহায়তা সেলের দিনাজপুর শাখার সদস্য চিকিৎসক মাসতুরা বেগম, জিয়াউল হক, নুর জামান সরকার, তামান্না নুসরাত, হাফিজুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন‘পরিস্থিতির শিকার হয়ে বাচ্চা রেখে গেলাম, দয়া করে কেউ নিয়ে যাবেন’০৭ নভেম্বর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর ছ ন র জন য সন ত ন রহম ন
এছাড়াও পড়ুন:
মিস মেক্সিকোকে কটাক্ষ, বেরিয়ে গেলেন মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগীরা
আগামী ২১ নভেম্বর থাইল্যান্ডে বসতে যাচ্ছে মিস ইউনিভার্সের ৭৪তম আসর। তার আগে বিতর্কে জড়িয়েছে প্রতিযোগিতাটি। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) ব্যাংককে আয়োজিত প্রি-পেজেন্ট অনুষ্ঠানে এক প্রতিযোগীকে ‘ডামি’ বলে মন্তব্য করেন থাই বিচারক নাওয়াত ইতসারাগ্রিসিল। এরপর মেক্সিকোর ওই প্রতিনিধি ফাতিমা বোসসহ কয়েকজন প্রতিযোগী অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।
প্রি-পেজেন্ট অনুষ্ঠানটি ফেসবুকে লাইভ চলছিল। এ ভিডিওতে দেখা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরী প্রতিযোগীরা নাওয়াত ইতসারাগ্রিসিলের সামনে সারিবদ্ধভাবে বসে আছেন। মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে তিনি বলেন, “সব প্রতিযোগীকে আয়োজক দেশের প্রচার করতে হবে।”
আরো পড়ুন:
হাসপাতালে জিতু কমল
‘ফ্যামিলি ফিউড বাংলাদেশ’ নিয়ে ফিরছেন তাহসান
সতর্ক বার্তা উচ্চারণ করে নাওয়াত বলেন, “সাবধান থাকবেন, আপনারা এখন থাইল্যান্ডে আছেন। আপনারা একটি খেলার মধ্যে আছেন।” এরপর মিস মেক্সিকো ফাতিমা বোসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তার ভাষ্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারের উদ্দেশ্যে আয়োজিত একটি ফটোশুটে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ফাতিমা। মেক্সিকোর পেজেন্ট পরিচালক তাকে কোনো কিছু পোস্ট না করার নির্দেশ দিয়েছেন।
মেক্সিকোর প্রতিযোগী ফাতিমা দাঁড়িয়ে এই অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু নাওয়াত তাকে বাধা দিয়ে বলেন, “সে (ফাতিমা) যেন মৌখিকভাবে নিশ্চিত করেন যে, থাইল্যান্ড সম্পর্কে পোস্ট দিতে রাজি।”
এরপর অন্য এক প্রতিযোগী প্রশ্নটি আবার বলার অনুরোধ করেন। কিন্তু তা বলতে অস্বীকৃতি জানান। নাওয়াত বলেন, “আমি শুধু মিস মেক্সিকোকেই প্রশ্নটি করেছি। কারণ তার কর্মকাণ্ড নিয়ে অভিযোগ পেয়েছি।” ফাতিমা এই অভিযোগ অস্বীকার করলেও নাওয়াত আবারো একই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, “ফাতিমা তার দেশের পেজেন্ট পরিচালকের নির্দেশে কাজ করছেন এবং সে একজন ‘ডামি’ (পুতুল)।”
নাওয়াত যখন এভাবে কথা বলে যাচ্ছেন তখনো দাঁড়িয়ে ফাতিমা। ফলে নাওয়াত জানতে চান সে কেন এখনো দাঁড়িয়ে আছেন। জবাবে ফাতিমা বলেন, “কারণ আমারও একটি কণ্ঠ আছে। আপনি আমাকে একজন নারী হিসেবে সম্মান দিচ্ছেন না।”
এরপর নাওয়াত নিরাপত্তা কর্মীদের ডেকে পাঠান। এসময় অন্যান্য প্রতিযোগীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ফাতিমা অডিটোরিয়াম ত্যাগ করার সময়ে বলেন, “নারী হিসেবে আমাদের প্রতি আপনাদের সম্মান প্রদর্শন করা উচিত। আমি একটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি, এটি আমার দোষ নয়। আপনারা আমার সংগঠনের সঙ্গে সমস্যা করছেন।” তারপর অন্য প্রতিযোগীরাও ফাতিমার সঙ্গে উঠে দাঁড়ান। তখন নাওয়াত বলেন, “যারা প্রতিযোগিতা চালিয়ে যেতে চান, তারা বসেন।” এতে মেয়েরা বিভ্রান্ত হয়ে পরস্পরের দিকে তাকাতে থাকেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে ফাতিমা ও আয়োজক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম পিপল। কিন্তু তারা কেউই মন্তব্য করতে রাজি হননি। ঘটনার পরের দিন আয়োজক কর্তৃপক্ষ ইনস্টাগ্রামে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়েছে, “আমরা সমস্ত অংশগ্রহণকারী, কর্মী এবং সংশ্লিষ্টদের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান, নিরাপত্তা ও সততা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “মিস গ্র্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (এমজিআই) এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মি. মারিও বুকারোর নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল থাইল্যান্ডে যাচ্ছেন। এই আয়োজনের লক্ষ্য, সমন্বিত প্রচেষ্টা চালানো, সকল প্রতিনিধির জন্য নিরাপদ ও পেশাদার পরিবেশ নিশ্চিত করা।”
ঢাকা/শান্ত