নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচনে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর জন্য নগর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে মুদিদোকান চালানো, বিনা মূল্যে গণপরিবহন এবং শিশু পরিচর্যার মতো নীতির প্রচার চালিয়ে ডেমোক্রেটিক পার্টির জোহরান মামদানি মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।

জোহরান মামদানির এই প্রগতিশীল কর্মসূচি থাকা সত্ত্বেও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ধনী কিছু ব্যক্তির নিশানায় পড়ে গিয়েছিলেন। ফোর্বসের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ২৬ জন ধনকুবের এবং ধনী পরিবার সম্মিলিতভাবে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্বাচনী প্রচারে ব্যয়ের জন্য ২ কোটি ২০ লাখ ডলার (প্রায় ২৬৮ কোটি টাকা) দিয়েছে।

বিলিয়নিয়ারদের বিপুল অর্থায়ন

জোহরানের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে অর্থদাতাদের মধ্যে ছিলেন ব্লুমবার্গ এলপির সহপ্রতিষ্ঠাতা মাইকেল ব্লুমবার্গ, হেজ ফান্ড ম্যানেজার বিল অ্যাকম্যান, এয়ারবিএনবির সহপ্রতিষ্ঠাতা জো গেবিয়া এবং এসটি লডারের উত্তরাধিকারী লডার পরিবারের সদস্যরা। এঁরা প্রত্যেকে অ্যান্ড্রু কুমোর প্রচার শিবিরকে কমপক্ষে ১ লাখ ডলার করে দিয়েছিলেন।

মাইকেল ব্লুমবার্গ একাই ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিসহ পুরো নির্বাচনে কুমোর প্রচাররের জন্য ৮৩ লাখ ডলার দিয়েছিলেন। অন্যদিকে অ্যাকম্যান ১৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার এবং লডার ৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার দান করেছিলেন।

মোট অনুদানের অর্ধেকের বেশি প্রায় ১ কোটি ৩৬ লাখ ডলার ২৪ জুন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারি অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেই এসেছিল। দলীয় প্রাইমারিতে কুমোকে হারিয়ে মামদানি মনোনয়ন নিশ্চিত করেন।

অন্যান্য বড় দাতার মধ্যে ছিলেন নেটফ্লিক্সের সহপ্রতিষ্ঠাতা রিড হেস্টিংস এবং গণমাধ্যম উদ্যোক্তা ব্যারি ডিলার। তাঁরা প্রত্যেকে ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার করে দিয়েছিলেন।

ক্যাসিনো ব্যবসায়ী স্টিভ উইন অক্টোবরে ৫ লাখ ডলার এবং তেল ব্যবসায়ী জন হেস কয়েক মাসে ১০ লাখ ডলার দেওয়ার মাধ্যমে রক্ষণশীল দাতারাও এই লড়াইয়ে অংশ নেন।

জোহরানের প্রতিক্রিয়া

ফোর্বস অনুসারে, ১৩ অক্টোবর এক জনসভায় ধনকুবেরদের বিরোধিতার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে জোহরান মামদানি বলেছিলেন, ‘বিল অ্যাকম্যান এবং রোনাল্ড লডারের মতো ধনকুবেরেরা এই নির্বাচনে কোটি কোটি ডলার ঢেলেছেন। কারণ তাঁরা বলেন, আমরা অস্তিত্বের হুমকি তৈরি করছি। আমি এখানে একটি কথা স্বীকার করছি, তাঁরা ঠিকই বলছেন।’

ফোর্বস এমন ২৬ জন ধনকুবেরের নাম পেয়েছে, যাঁরা জোহরানের প্রতিদ্বন্দ্বীকে নির্বাচনী প্রচারের জন্য অর্থ দিয়েছেন। এঁদের মধ্যে ১৬ জনই নিউইয়র্ক নগরের বাসিন্দা।

জোহরানবিরোধী প্রচারে অর্থদাতা অন্যান্যের মধ্যে রয়েছেন জো গেবিয়া (৩০ লাখ ডলার), উইলিয়াম লডার ও পরিবার (২৬ লাখ), ব্যারি ডিলার (৫ লাখ), রিড হেস্টিংস (২ লাখ ৫০ হাজার), অ্যালিস ওয়ালটন (২ লাখ)।

জয়ের পর সমর্থনের প্রস্তাব

মজার বিষয় হলো, ফরচুন-এর খবর অনুযায়ী, প্রথমে জোহরান মামদানির বিরোধিতা করা কিছু ওয়াল স্ট্রিট ব্যক্তিত্ব জয়ের পর তাঁকে সমর্থনের প্রস্তাব দিয়েছেন। অ্যাকম্যান এক্সে এক পোস্টে জোহরানকে অভিনন্দন জানিয়ে লেখেন, ‘এখন আপনার একটি বড় দায়িত্ব। আমি নিউইয়র্ক নগরকে সাহায্য করতে পারি। আমাকে শুধু জানাবেন, আমি কী করতে পারি।’

জেপি মরগান চেজের সিইও জেমি ডিমন আগে ফরচুনকে বলেছিলেন, জোহরান মামদানি ‘সমাজতান্ত্রিকের চেয়ে বেশি মার্ক্সবাদী’।

অবশ্য জোহরানের মামদানির জয়ের পর ৫ নভেম্বর সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডিমন বলেন, তিনি যোগাযোগ বজায় রাখতে আগ্রহী। ডিমন বলেন, ‘যদি আমি এটিকে ফলপ্রসূ মনে করি, তবে আমি তা চালিয়ে যাব। যেকোনো মেয়র, যেকোনো গভর্নরকে সহায়তা করতে প্রস্তুত।’
জোহরান ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি মেয়রের দায়িত্ব নেবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল খ ৫০ হ জ র অ য কম য ন ম মদ ন র ধনক ব র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যায় ভারত বিশ্বে দ্বিতীয়

কিডনি রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যার দিক থেকে ভারত বিশ্বে দ্বিতীয়। এই তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে চীন। দ্য ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত একটি বিশ্বব্যাপী সমীক্ষার বরাত দিয়ে শনিবার প্রেস ট্রাস্প অব ইন্ডিয়া এ তথ্য জানিয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ভারতে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ১৩ কোটি ৮০ লাখ। একই সময়ে, যেখানে চীনের পরে ১৫ কোটি ২০ লাখ।

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন (আইএইচএমই) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের অন্যান্য ইনস্টিটিউটের গবেষকদের নেতৃত্বে এই রোগটি মৃত্যুর নবম প্রধান কারণ ছিল। একই বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৫ লাখ মানুষ কিডনি রোগে মারা গেছে।

উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে সর্বোচ্চ প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। এই দুই অঞ্চলে ১৮ শতাংশ করে, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় ১৬ শতাংশ এবং সাব-সাহারান আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ১৫ শতাংশেরও বেশি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত।

দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ হৃদরোগের একটি প্রধান কারণ এবং ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে হৃদরোগজনিত মৃত্যুর প্রায় ১২ শতাংশের জন্য দায়ী। ডায়াবেটিস ও স্থূলতার পরে এটি হৃদরোগজনিত মৃত্যুর সপ্তম প্রধান কারণ হিসাবে স্থান পেয়েছে।

গবেষণায় দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের জন্য ১৪টি ঝুঁকির কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং স্থূলতা স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনের সিনিয়র লেখক ও আইএইচএমই এর ইমেরিটাস অধ্যাপক থিও ভোস বলেছেন, “দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ স্বাস্থ্য ক্ষতির অন্যান্য প্রধান কারণগুলোর জন্য একটি প্রধান ঝুঁকির কারণ এবং এটি নিজেই একটি উল্লেখযোগ্য রোগের বোঝা। তবুও, অন্যান্য অ-সংক্রামক রোগের তুলনায় এটি এখনো অনেক কম নীতিগত মনোযোগ পাচ্ছে, যদিও এর প্রভাব ইতিমধ্যেই সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য বৈষম্যের মুখোমুখি অঞ্চলগুলিতে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।”

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ