গোপনে ইরানে ঢুকে যেভাবে হামলা করেছিল ইসরায়েল
Published: 27th, June 2025 GMT
১২ দিন ধরে চলা সংঘাতে শত শত যুদ্ধবিমান, সশস্ত্র ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তবে এ সংঘাতে ইসরায়েলকে সবচেয়ে বেশি সাফল্য এনে দিয়েছে অভিনব একটি কৌশল। আর তা হলো, গোপনে ইরানের অভ্যন্তরে ঢুকে সেখান থেকে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করা।
১৩ জুন ভোরের আলো ফোটার আগে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ইরানে হামলা শুরু করে। এর কয়েক ঘণ্টা পর এমন কিছু ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে, যেগুলো দেখে মনে হচ্ছিল, ইরানের বিভিন্ন অজ্ঞাত স্থান থেকে রাতের বেলা এসব ধারণ করা হয়েছে।
একটি ঝাপসা ভিডিওতে দেখা যায়, ক্যামোফ্লজ পোশাক, নাইট-ভিশন চশমাসহ সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন সরঞ্জামসজ্জিত মোসাদ সদস্যরা মরুভূমির মতো জায়গায় বসে অস্ত্র স্থাপন করছেন। ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করার জন্য এসব অস্ত্র বসানো হয়, যাতে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে হামলা চালাতে পারে।
অন্যান্য ভিডিওতে দেখা যায়, ক্যামেরা লাগানো ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যাটারি ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্ল্যাটফর্মে আছড়ে পড়ছে। আঘাত হানা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো স্পাইক ক্ষেপণাস্ত্র বলে মনে হয়েছে। এগুলো অপেক্ষাকৃত ছোট ও নির্ভুলভাবে লক্ষ্যভেদী। শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে এগুলো ব্যবহৃত হয়। এসব ক্ষেপণাস্ত্র দৃষ্টিসীমার বাইরে থাকা লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
সংঘাতে ছোট ড্রোনগুলো ব্যাপক মনোযোগ আকর্ষণ করে। এগুলো নিষ্ক্রিয় করতে ইরানি কর্তৃপক্ষ বড় পরিসরে তল্লাশি চালাতে বাধ্য হয়। অল্প সময়ের মধ্যেই কর্তৃপক্ষ এমন কিছু পিকআপ ট্রাক খুঁজে পায়, যেগুলো ছোট ড্রোন বহনের উপযোগী করে বিশেষভাবে তৈরি। কর্তৃপক্ষ জানায়, এসব ট্রাকে করে লক্ষ্যবস্তুর কাছাকাছি নিয়ে ড্রোনগুলো ছোড়া হতো।ইরানের কর্তৃপক্ষও এসব অস্ত্র ব্যবহারের কথা স্বীকার করেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম একটি খোলা জায়গা থেকে পাওয়া স্পাইক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপকের ধ্বংসাবশেষের ছবি প্রকাশ করেছে। বলা হয়েছে, এসব অস্ত্রে ‘ইন্টারনেটভিত্তিক স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা ও দূরনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা’ সংযুক্ত ছিল। এগুলো পরিচালনা করছিলেন মোসাদ সদস্যরা।
এ ধরনের হামলার সঙ্গে ২০২০ সালের নভেম্বরে চালানো একটি ইসরায়েলি অভিযানের মিল পাওয়া যায়। ওই অভিযানে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির শীর্ষ ব্যক্তি মোহসেন ফাখরিজাদেহকে তেহরানের কাছে একটি চলন্ত গাড়িতে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় তাঁর স্ত্রী ও দেহরক্ষীরাও নিহত হন।
ওই সময় ইরানি কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে যে দূরনিয়ন্ত্রিত ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে এ হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল, এক টন ওজনের একটি বন্দুক খণ্ড খণ্ড করে ইরানে পাচার করে মোসাদ। বন্দুকটি ছোট ট্রাকের পেছনে বসানো হয়। পরে ফাখরিজাদেহ নিহত হওয়ার পর ট্রাকটিও বিস্ফোরিত হয়।
ইরান দেশটির উত্তর–পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ পশ্চিম আজারবাইজানে গত বুধবার তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে। তাঁদের বিরুদ্ধে ফাখরিজাদেহ হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য গুপ্তহত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল।
সাম্প্রতিক সংঘাতে ইরানের ভূপাতিত করা একটি ইসরায়েলি ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে
প্রযুক্তির উৎকর্ষের মধ্যেও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে প্রায়ই বিকৃতভাবে বা ভুলভাবে উপস্থাপন করছে। গুগলে ‘ইনডিজেনাস পিপল’ লিখে খোঁজা হলে মাঝেমধ্যে এমন ছবি দেখানো হয়, যা তাদের ‘আদিম’, ‘বন্য’, ‘বর্বর’, ‘জংলি’ ও ‘হিংস্র’ আকারে উপস্থাপন করে।
সোমবার রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এমন অভিযোগ করেন। ‘আদিবাসী নারীর অধিকার রক্ষা ও ভবিষ্যৎ গড়ার লড়াইয়ে আধুনিক প্রযুক্তির ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক।
আলোচনা সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী ত্রিপুরা। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের ঘিরে এমন উপস্থাপনের প্রভাব নারীদের ওপরও পড়বে।
মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির বলেন, দেশে জাতিসংঘের অনেকগুলো দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হলেও আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন করা হয় না। তিনি বলেন, বুঝুক আর না বুঝুক বাংলাদেশ জাতিসংঘের বিভিন্ন কনভেনশনকে তড়িঘড়ি করে সমর্থন করে। কিন্তু এই কনভেনশনকে সমর্থন করেনি। সরকার বুঝেশুনেই সমর্থন করেনি। আগের সরকার বলেছে, বাংলাদেশে আদিবাসী নেই, এই সরকারও আদিবাসীদের স্বীকৃতি দিচ্ছে না।
একটাই ধর্ম ও জাতিসত্তা থাকবে, এমন মনোভাব কাম্য নয় উল্লেখ করে এই মানবাধিকারকর্মী বলেন, ‘কিসের ভয়ে আমরা দেশে ভিন্ন ধর্ম, চিন্তা ও জাতিসত্তার মানুষকে থাকতে দেব না? কে অধিকার দিয়েছে যে একটি মাত্র মতবাদ, চিন্তা, ভাষা জাতি ও ধর্ম থাকবে? রাষ্ট্রের জন্য এটা কাম্য হতে পারে না।’
চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে সমতল ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নারীদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখ করে খুশী কবির বলেন, অভ্যুত্থানের পরে আর নারীদের কোনো অংশগ্রহণ নেই। নারী কমিশন গঠন করা হয়। কিন্তু কমিশনের কোনো কিছু গ্রহণ করা হয়নি। এর অর্থ সরকার নারীদের ভয় পায়। এই অবস্থা টিকে থাকার জন্য অভ্যুত্থান হয়নি। তাই অধিকার আদায়ে নারীদের শক্ত ভূমিকা রাখতে হবে। এখনই উত্তম সময়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির ছবি: প্রথম আলো হেডিং: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে