গুরুতর অসুস্থ হয়ে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ভর্তি আছেন অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনের মা বেগম তাহুরা আলী। সামাজিক মাধ্যমে মায়ের অসুস্থতার কথা জানিয়েছেন অভিনেত্রী নিজেই।
 
‎রোববার রাতে ফেসবুক পোস্টে শাওন লেখেন, ‘আমাদের প্রিয় মা বেগম তাহুরা আলী। আমার আম্মু ইউনাইটেড হাসপাতালের হৃদযন্ত্রের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (সিসিইউ)-তে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।’

১৫ ঘণ্টায় তিনি দুইবার বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছেন বলেন জানান শাওন।

তিনি বলেন, ‘১৫ ঘণ্টায় তিনি দুইবার বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছেন! আমরা তাকে প্রায় হারিয়ে ফেলেছিলাম। কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন (সিসিআর) দিয়ে হৃদযন্ত্র সচল করা হয়েছে।’

অভিনেত্রী আরও জাানন, এখন তার মা লাইফ সাপোর্টে আছেন। ভেন্টিলেশন টিউব দিয়ে শ্বাস নিচ্ছেন। আর ওষুধ দিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছে। তিনি এখনও জীবনের সঙ্গে লড়াই করছেন। তিনি আবারও সুস্থ হয়ে ফিরবেন, সেই আশা ব্যক্ত করে অনুরাগীদের কাছে মায়ের সুস্থতা কামনায় দোয়া প্রার্থনা করেছেন। 

শেষে তিনি লিখেছেন, ‘যে এ পোস্টটি পড়ছেন আপনাদের কাছে বিনীত অনুরোধ দয়া করে আম্মুর জন্য দোয়া করুন। তাকে (বেগম তাহুরা আলী) আপনাদের প্রার্থনায়  রাখুন।’

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

৪ কোটি শিশুকে শরণার্থী বানিয়েছে যুদ্ধ আর সংঘাত

সামীর- যদিও এটি তার আসল নাম নয়; যখন তার বয়স মাত্র ১৭ বছর তখন সে আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে এসেছিল ব্রিটেনে।

তালেবানরা প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে, যে সরকারে সামীরের বাবা কাজ করতেন। ফলে তার পরিবার বিপদের মধ্যে পড়ে যায়।

আলজাজিরাকে সামীর বলেন, “আমার জীবন ভালোই চলছি; নিয়মিত অনুশীলন করতাম, শরীরচর্চা করতাম।” 

আরো পড়ুন:

সিরিয়ায় নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে ৭৪৫ জন নিহত

ফের উত্তাল সিরিয়া, নিহত ৩১১

সমীর মার্শাল আর্টস (এমএমএ) ফাইটার হতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেন, “কিন্তু যখন তালেবান ক্ষমতায় এল, তখন পরিস্থিতি খুব কঠিন হয়ে পড়ল, আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করল।”

পরিস্থিতি সমীরকে শিশু শরণার্থীতে পরিণত করে এবং অন্যান্য শিশু শরণার্থীর মতোই একটি কষ্টকর যাত্রা পাড়ি দিতে হয় তাকেও।

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ৪ কোটি ১০ লাখ শরণার্থীর মধ্যে ১ কোটি ৩৩ লাখই শিশু। অর্থাৎ শিশু শরণার্থীর সংখ্যা বেলজিয়াম, সুইডেন, পর্তুগাল ও গ্রিসের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি।

এর মানে, প্রতি ১০০ জন শরণার্থীর মধ্যে ৩৩ জনই শিশু, যারা সবাই আন্তর্জাতিক সুরক্ষার প্রয়োজনের মধ্যে রয়েছে।

শরণার্থী শিশুদের জীবন, তাদের চ্যালেঞ্জ, দুর্বলতা এবং সহনশীলতা বোঝার জন্য যদি আমরা কল্পনা করি পৃথিবীতে মাত্র ১০০ জন শরণার্থী রয়েছে; যার মধ্যে ৫১ জন ছেলে এবং ৪৯ জন মেয়ে।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শিশু শরণার্থীদের ৬৮ লাখ (৫১ শতাংশ) ছেলে এবং ৬৫ লাখ (৪৯ শতাংশ) মেয়ে।

যদিও এই সংখ্যাগত ভাগ মোটামুটি সমান, তবুও ছেলে ও মেয়ে শিশু শরণার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। যেমন, মেয়েরা যৌন নির্যাতন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঝুঁকিতে থাকে বেশি, অন্যদিকে ছেলেরা ভিন্ন ধরনের শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে পারে। যেসব শিশু একা থাকে তাদের ক্ষেত্রে এসব নির্যাতন ও সহিংসতা সবচেয়ে বেশি ঘটে।

সামীরের ক্ষেত্রে এটি ঘটেছে, সে সীমান্তে পুলিশের মারধরের শিকার হয়েছে।

সামীর বলেন, “সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা বা দিক ছিল যখন আমরা সীমান্ত পার হতাম। বিভিন্ন দেশের পুলিশ আমাদের থামাত বা ধরত এবং সবার সামনে আমাদের মারত।” 

“না শিশু, না প্রাপ্তবয়স্ক; তারা কাউকেই ছাড়ত না,” বলেন তিনি।

এক-চতুর্থাংশ শিশু পাঁচ বছরের কম বয়সি
২০২৪ সালে শিশু শরণার্থীদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ (৫৯ লাখ) ছিল ৫-১১ বছর বয়সি। এরপর ৩২ শতাংশ (৪২ লাখ) ছিল ১২-১৭ বছর বয়সি এবং ২৪ শতাংশ (৩২ লাখ) ছিল ০-৪ বছর বয়সি।

শিশু বয়সের প্রতিটি পর্যায়েই স্বাস্থ্যকর বিকাশের পথে বিভিন্ন এবং একাধিক ঝুঁকি কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, ছোট শিশুদের অভিভাবকদের ওপর নির্ভরতা বেশি এবং তারা অপুষ্টি, অসুস্থতা ও রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে বেশি থাকে। স্কুল-পার হওয়া যেকোনো শিশু শরণার্থীর শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত হয়, কারণ শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সহজলভ্য হয় না।

তবে কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে ট্রমার প্রভাব আরো গভীর হতে পারে, কারণ তারা তখন কৈশোরের পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। এ সময়েই মানসিক অসুস্থতার লক্ষণগুলো বেশি দেখা দিতে শুরু করে।

যুক্তরাজ্যের ট্রমা কাউন্সিলের সহ-পরিচালক এবং মনোবিজ্ঞানী ডেভিড ট্রিকি আলজাজিরাকে বলেন, “সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিশুরা তাদের মনের যন্ত্রণা বা সাহায্যের প্রয়োজন প্রকাশ করতে শেখে।”

“ছোট শিশুরা অভিভাবক বা আশেপাশের মানুষকে বলতে পারে না যে তারা ভেতরে ভেতরে কী অনুভব করছে,” বলেন তিনি।

কোন দেশের শিশু শরণার্থী বেশি?
২০২৪ সালে শিশু শরণার্থীদের দুই-তৃতীয়াংশই সৃষ্টি হয়েছে মাত্র চারটি দেশ থেকে। এর মধ্যে ২১ শতাংশ (২৮ লাখ) আফগানিস্তান থেকে, ২০ শতাংশ (২৭ লাখ) সিরিয়া থেকে, ১৪ শতাংশ (১৮ লাখ) ভেনিজুয়েলা থেকে এবং ১০ শতাংশ (১৩ লাখ) দক্ষিণ সুদান থেকে শিশুরা শরণার্থী হয়েছে।

১৯৫১ সালে জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশন গৃহীত হওয়ার সময় বিশ্বজুড়ে শরণার্থীর সংখ্যা ছিল মাত্র ২১ লাখ। এখন সেই সংখ্যা ২০ গুণ বেড়েছে। তখন বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রতি ১ হাজার ১৯০ জনে একজন ছিল শরণার্থী, আর এখন প্রতি ১৮৫ জনে একজন। আফগানিস্তান ও ইরাকের যুদ্ধ এবং সিরিয়া ও দক্ষিণ সুদানের গৃহযুদ্ধ এই সংকটের প্রধান কারণ।

আশ্রয়ের খোঁজো বেশিরভাগ শিশু শরণার্থী ৫০০ কিলিমিটার বা তার বেশি হেঁটেছে
সামীর যুক্তরাজ্যে পৌঁছাতে দেড় বছর সময় নিয়েছিল। ফলে সে সেই ১২ শতাংশ শিশু শরণার্থীদের একজন, যারা নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ২ হাজার কিলোমিটারের বেশি পথ হেঁটেছিল।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায়, প্রতি ১০ জন শিশু শরণার্থীর মধ্যে ৯ জনই আশ্রয়ের জন্য নিজের ঘর থেকে ৫০০ কিলোমিটার বা তার বেশি দূরত্ব হেঁটেছে।

অর্ধেক (৫০ শতাংশ) শিশু শরণার্থীকে ৫০০ থেকে ১ হাজার কিলোমিটারপথ পাড়ি দিতে হয়েছে।

এই দূরত্ব গাড়িতে ১০-১২ ঘণ্টায় বা বিমানে ২ ঘণ্টায় অতিক্রম করা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ শরণার্থীকে হেঁটে, নৌকায় বা ধীরগতির যাতায়াত মাধ্যমে এই পথ পাড়ি দিতে হয়।

সামীর আলজাজিরাকে বলেন, তার যাত্রাপথ ছিল ঠাণ্ডা ও স্যাঁতসেঁতে ভেজা পরিবেশে। 

“আমরা বিভিন্ন দেশের ভেতর দিয়ে পার হয়েছি, কিন্তু বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছি জঙ্গল ও পাহাড়ে,” বলেন সমীর। 

শারীরিক কষ্ট ছাড়াও সামীরকে সহ্য করতে হয়েছে সীমান্ত পুলিশদের নির্মমতা, বিশেষ করে তুরস্ক ও বুলগেরিয়ার সীমান্ত পার হওয়ার সময়।

“তারা আমাদের সব দিক থেকে মারত। আমাদের কাপড়ে খোঁচা দিত এবং আমাদের আগের দেশে ফিরিয়ে দিত,” বলেন সমীর।

সামীরের অভিজ্ঞতা শরণার্থী জীবনের একটি ক্ষুদ্র প্রতিচ্ছবি, যেখানে থাকে সহিংসতা, অপরিচিত পরিবেশ এবং শোক- শুধু হারানো পরিবার বা প্রিয়জনের জন্য নয়, হারিয়ে যাওয়া ঘরের জন্যও।

“তারা এমন কিছু থেকে পালাচ্ছে যা শুরু থেকেই বিপজ্জনক, যা ট্রমাটিক হওয়ার সম্ভাবনা রাখে। এরপর তারা চলে যাচ্ছে পরিচিত সবকিছু থেকে— বন্ধু, পরিবার। চলে যাচ্ছে একটি অপরিচিত জায়গায়, যে জায়গা থেকে আর ফিরে আসা বড়ই কঠিন ও অনিশ্চত,” বলেন ডেভিড ট্রিকি।

যখন তারা অবশেষে গন্তব্যে পৌঁছায়: ১৪ জন ইরানে, ১১ জন তুরস্কে আশ্রয় নেয়
সামীর হলো সেই অল্পসংখ্যক শিশু শরণার্থীদের একজন, যে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে পৌঁছাতে পেরেছে। ২০২৪ সালে শরণার্থীদের সবচেয়ে বড় আশ্রয়দাতা দেশ ছিল ইরান (১৮ লাখ); তারপর তুরস্ক (১৪ লাখ) ও উগান্ডা (৯.৬৫ লাখ)।

কীভাবে অবশেষে যুক্তরাজ্যে পৌঁছায় সমীর, আলজাজিরাকে সেই গল্প শুনিয়েছেন সমীর। তিনি বলেন, “প্রথমে যখন আমি চ্যানেল পার হওয়ার চেষ্টা করছিলাম, তখন আমাদের নৌকা ডুবে যায় এবং ফরাসি পুলিশ আমাদের উদ্ধার করে।”

এরপর মধ্যরাতে আরেকটি নৌকা নিয়ে যাত্রা শুরু করেন, সকালে ব্রিটেনের তীরে পৌঁছান সামীর; শেষ হয় ১৮ মাসের দীর্ঘযাত্রা। তবে গন্তব্যে পৌঁছানোর পরও শরণার্থীরা প্রায়ই নতুন ঝুঁকির মুখে পড়ে, যেমন: ডিটেনশন সেন্টারে (বন্দিশালা) আটক হওয়া।

ডেভিড ট্রিকি আলজাজিরাকে বলেন, “কিছু মানুষের জন্য এই আটক হওয়া (ডিটেনশন সেন্টারে) সবচেয়ে খারাপ পর্ব। কারণ, সেটাই তাদের সবচেয়ে বড় ট্রমা হয়ে থাকে।”

তবে সামীরের অভিজ্ঞতা তুলনামূলকভাবে ভালো ছিল। “যুক্তরাজ্যের পুলিশ সদয় এবং খুব ভদ্র ছিল। তারা খুব সম্মানের সঙ্গে আচরণ করেছিল। তারা আমাদের এমন এক জায়গায় নিয়ে যায়, যেখানে আমাদের কাপড় ও খাবার দেওয়া হয়।”

“আমি কখনোই আমার ভাইকে দেখতে পাইনি”: কতজন শিশু শরণার্থী একা থাকে?
ইউএনএইচসিআরের মতে, প্রায় ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩০০ শিশু শরণার্থী তাদের অভিভাবক বা পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন অথবা একা।

সামীর তুরস্কে তার ভাইয়ের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। “আমাকে একটি পথে পাঠানো হয়েছিল, আর তাকে অন্য পথে। তারপর থেকে আমি আর কখনো আমার ভাইকে দেখিনি এবং তার খোঁজও পাই না,” আলজাজিরাকে বলেন সমীর।

কিছু শিশু একা যাত্রা করে, কারণ তাদের বাবা-মা তাদের বাঁচানোর জন্য পাঠিয়ে দেন, আবার কেউ কেউ এতিম হয়ে পড়ে।

ইউএনএইচসিআরের জ্যেষ্ঠ মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোসামাজিক সহায়তা কর্মকর্তা পিটার ভেনটেভোগেল বলেন, “আপনি যদি ভালো একটি সামাজিক ব্যবস্থায় থাকেন, নিরাপদ বোধ করেন, তাহলে আপনি কম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে এই প্রভাব আরো বেশি।”

“আমরা অনেক ক্ষেত্রে দেখেছি, শিশুরা ভয়ানক অবস্থায় থাকলেও যদি তারা মায়ের সঙ্গে থাকে, আর মা যদি নিরাপত্তার অনুভূতি দিতে পারেন, তবে অনেক বিরূপ প্রভাব ঠেকানো যায়। এর মানে যখন পরিবার ভেঙে যায় বা বিচ্ছিন্ন হয়, তখন শিশুদের মানসিক সমস্যা বেশি দেখা যায়।”

উত্তর আয়ারল্যান্ডের কুইন’স ইউনিভার্সিটি বেলফাস্ট এবং আলস্টার ইউনিভার্সিটির গবেষণায় দেখা গেছে, একাকী শিশু শরণার্থীদের মধ্যে মানসিক অসুস্থতার হার সব দেশ ও আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় একই রকম। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, তারা গন্তব্যে গিয়ে কেমন আচরণ পায়, সেটিও অনেক কিছু নির্ধারণ করে।

ডেভিড ট্রিকি আলজাজিরাকে বলেন, “আমি আফগানিস্তানের দুই শিশুর সঙ্গে কাজ করেছি। দুজনই একই সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে এসেছিল। দুজনই একা। একজনকে এমন একটি ফস্টার হোমে রাখা হয়েছিল, যেখানে একই ভাষায় কথা বলত, একই বয়সি সন্তান ছিল; সে ভালো করেছিল।”

“অন্যজন, একই বয়সি, একই রকম অভিজ্ঞতা, তাকে রাখা হয়েছিল এমন একটি হোস্টেলে যেখানে কেউ তার ভাষা জানত না, কর্মীরা অনুপস্থিত থাকত; সে খুব কষ্টে ছিল। ট্রমা ও বিষণ্নতায় ভুগছিল। তাই সেই স্থিতিশীলতা এবং সংযোগ যখন একজন পায়, তা তার অতীত অভিজ্ঞতা কাটিয়ে ওঠার ক্ষমতায় বিরাট পার্থক্য আনতে পারে।”

শিশু শরণার্থীদের মধ্যে পিটিএসডি, উদ্বেগ ও বিষণ্নতা বেশি
সামীর বলেন, “আমি যা কিছু দেখেছি, তা আমার ওপর খুব খারাপ প্রভাব ফেলেছে। এখনো যখন মনে পড়ে, তখন খুব কষ্ট হয়।”

শরণার্থী শিশুদের নিয়ে করা গবেষণায় দেখা যায়, তাদের মধ্যে মানসিক রোগের হার সাধারণ শিশুদের তুলনায় বেশি।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, শরণার্থী শিশুদের মধ্যে পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের (পিটিএসডি) হার ২৩ শতাংশ (প্রতি চারজনে একজন), উদ্বেগজনিত মানসিক রোগ ১৬ শতাংশ (প্রতি ছয়জনে একজন) এবং বিষণ্নতা ১৪ শতাংশ (প্রতি সাতজনে একজন)।

ডেভিড ট্রিকি বলেন, “ট্রমার একটি বিষয় হলো এটি আপনাকে সর্বদা আতঙ্কে রাখে। আর আমি মনে করি, যাদের এখনো শরণার্থী মর্যাদা নেই, তারা এক ধরনের স্থায়ী ভয়ে বেঁচে থাকে, যেন কখন তাদের আবার সেই ভয়ানক জায়গায় ফেরত পাঠানো হয়।”

তবে সব শিশু ট্রমাকে একইভাবে অনুভব করে না, যোগ করেন ডেভিড ট্রিকি। “পিটিএসডি হওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি বা পূর্বাভাস হচ্ছে, ঘটনা কতটা বড় ছিল তা নয়, বরং তুমি সেটা কীভাবে অনুভব করেছিলে। তুমি কি খুব ভয় পেয়েছিলে? তুমি কি ভেবেছিলে কেউ মারা যেতে পারে?”

“এবং বিভিন্ন শিশু বিভিন্ন জিনিসকে ভীতিকর মনে করে। কেউ কেউ খুব ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়, কিন্তু তারপরও মোটামুটি ঠিকঠাক থাকে। আবার কেউ দেখায় যে, তারা ঠিক আছে, কিন্তু তাদের মধ্যে একটা ‘গোপন দুর্বলতা’ থাকে। পরে জীবনের কোনো পর্যায়ে সেই দুর্বলতা থেকে সমস্যার সৃষ্টি হয়।”

ভেনটেভোগেল আলজাজিরাকে বলেন, ছোট শিশুদের মধ্যে প্রায়ই নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, কারণ তারা কী অনুভব করছে, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারে না।

উদাহরণস্বরূপ, “একটি শিশু যদি হঠাৎ করে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলা বন্ধ করে দেয়, বা খেলার মধ্যে এমন কিছু দেখায় বা ক্রিয়া করে, যা দেখে বোঝা যায় কিছু একটা ঠিক নেই।”

“এগুলো রোগ নির্ণয়ের চূড়ান্ত প্রমাণ নয়, তবে গভীর কোনো সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে,” বলেন ভেনটেভোগেল।

ডেভিড ট্রিকি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “একটি ট্রমা-কেন্দ্রিক থেরাপি সেশনে এক ছেলেশিশু তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল যে, সে কীভাবে তার অভিজ্ঞতাগুলো অনুভব করে। সে তার মস্তিষ্ককে কল্পনা করে একটি ‘টিস্যু পেপারে ভর্তি একটি ডাস্টবিন’ হিসেবে, যেগুলো প্রতিটি ভাঁজ করা কাগজে লেখা থাকে তার খারাপ অভিজ্ঞতার প্রতীক।”
সেই ছেলেটি তাকে বলেছিল, “আর যখন আমি স্কুলে যাই, সেই কাগজগুলো আমার চোখের সামনে পড়ে যায়। আর যখন আমি ঘুমাতে যাই, তখন সেগুলো আমার স্বপ্নে চলে আসে।” 

“কিন্তু যখন আমি আপনার কাছে আসি, তখন আমরা সেই কাগজগুলো বের করি, খুলে পড়ি, এবং আবার ভাঁজ করে সুন্দরভাবে ডাস্টবিনে রাখি। আর যেহেতু ওগুলো এখন গুছানোভাবে রাখা হয়েছে, সেগুলো আর বাইরে পড়ে না, ফলে আমার মাথায় অন্য জিনিস ভাবার জায়গা হয়।”

সামীরের জন্য, মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা নির্ভর করেছে তার মানসিক অবস্থার ওপর। 

সমীর বলেন, “সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমি পরিস্থিতির সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গেছি, এখন আমি আত্মবিশ্বাসী ও ভালো অনুভব করি। আমি আশাবাদী, ভবিষ্যতে যেসব সমস্যা বা বিপদ আসবে, আমি সেগুলো কাটিয়ে উঠব এবং আশা করি, সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”

[নোট: হান্না ডুগ্গাল ও মোহামেদ এ. হুসেইনের এই প্রতিবেদনটি আলজাজিরা প্রকাশ করেছে ২৮ জুন। প্রতিবেদনটির জন্য তারা বিশেষভাবে ধন্যবাদ দিয়েছেন দ্য চিলড্রেন’স সোসাইটি, আন্না ফ্রয়েড সেন্টার/ইউকে ট্রমা কাউন্সিল ও ইউএনএইচসিআরকে, যাদের বিশ্লেষণ ও অভিজ্ঞতা এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়ক হয়েছে।]

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ