না, লেনদেনে ট্রাম্প ভরসা করার মতো লোক নন
Published: 6th, August 2025 GMT
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাণিজ্য কমিশনার মারোশ শেফচোভিচ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউর মধ্যে হওয়া একটি বাণিজ্যচুক্তির কথা বলেছেন। এই চুক্তি অনুযায়ী, ইউরোপীয় রপ্তানির ওপর যুক্তরাষ্ট্র ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক বসাবে। এর বদলে ইউরোপ আগামী তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৭৫০ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি কিনবে এবং আরও ৬০০ বিলিয়ন ডলার সেখানে বিনিয়োগ করবে।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্য আলাদা অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যদিও তার পরিমাণ প্রকাশ করা হয়নি। শেফচোভিচ এ চুক্তিকে বলছেন, ‘এটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো চুক্তি ছিল।’ কিন্তু আসলেই কি এটা সবচেয়ে ভালো চুক্তি ছিল? ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর শুধু বিদেশি বাণিজ্য অংশীদারেরাই নন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, আইন প্রতিষ্ঠান, এমনকি সংবাদমাধ্যমও ভাবছে, ট্রাম্পের সঙ্গে চুক্তি করা মানে কি কেবল শক্তির খেলায় নামা, নাকি এর ফলে আমরা আইনকে অবহেলা করা এক নতুন স্বাভাবিক বাস্তবতায় ঢুকে পড়ছি?’
আরও পড়ুনট্রাম্প যেভাবে মিয়ানমারকে চীনের হাতে তুলে দিচ্ছেন০১ আগস্ট ২০২৫এই প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আইনের শাসন না থাকলে কোনো চুক্তিকেই আমরা ‘সর্বোত্তম’ বলতে পারি না। বাজার যেটা চায়, সেটা হলো স্থিতিশীলতা ও পূর্বানুমানযোগ্যতা, যা আসে আইনের শাসন থেকে। আইন না থাকলে সবকিছু হয়ে দাঁড়ায় জোরজবরদস্তি আর লোকদেখানো নাটক। একটা ভালো চুক্তির জন্য দরকার দুটি বিষয়—একটি হলো সত্যিকারের সদিচ্ছা; আরেকটি হলো এমন নিয়মকানুন, যা নির্ভরযোগ্যভাবে কার্যকর করা যায় এবং একতরফাভাবে পরিবর্তন করা যায় না।
এবার ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প আগের চেয়ে বেশি বেপরোয়া ও ‘স্বাধীন’ হয়েছেন। তাঁর ওপর আইনের নিয়ন্ত্রণ কার্যত উঠে গেছে। এর একটি উদাহরণ হলো দেশের সবচেয়ে বড় আইনজীবী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তাঁর ‘চুক্তি’। এখন পর্যন্ত নয়টি বড় আইনপ্রতিষ্ঠান এমন চাপে পড়েছে যে তারা ট্রাম্পপন্থী কাজে ৯৪০ মিলিয়ন ডলারের বিনা পারিশ্রমিক আইনি সহায়তা দিতে রাজি হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল—তাদের সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স বাতিল করা হবে, সরকারিভাবে চুক্তি থেকে বাদ দেওয়া হবে, এমনকি ফেডারেল কোর্টেও ঢুকতে দেওয়া হবে না। যদিও চারটি প্রতিষ্ঠান ট্রাম্পের এসব নির্বাহী আদেশের বিরুদ্ধে মামলা করে এবং আদালতে জয় পায়।
আরও পড়ুন‘ট্রাম্প ডকট্রিন’ নয় ইরানের ৩টি কৌশলই সফল তাহলে১৮ জুলাই ২০২৫তাহলে প্রশ্ন আসে, দেশের সেরা আইনজীবীরা কেন এমন চাপের কাছে নতিস্বীকার করলেন? এর কারণ হলো আইনজীবীরা বুঝেছেন, এখন আর কেবল আইনের পক্ষে থাকলেই নিরাপদ থাকা যায় না। ট্রাম্প প্রশাসন পুরো আইন প্রয়োগব্যবস্থাকে নিজের ইচ্ছার অধীন নিয়ে এসেছে। প্রেসিডেন্ট চাইলে যেকোনো সময় যেকোনোভাবে তাঁদের শাস্তি দিতে পারেন। আইনের কোনো সুরক্ষা আর নেই। এখানেই মূল সমস্যা। যারা একচ্ছত্র ক্ষমতা চায়, তারা কোনো নিয়ম মানে না।
দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসেই ট্রাম্প ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ ঘোষণার মাধ্যমে অতিরিক্ত ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তিনি ব্যবহার করেন ১৭৯৮ সালের এলিয়েন এনিমিস অ্যাক্ট। এই আইন কেবল তখনই কার্যকর হয়, যখন যুদ্ধ বা বিদেশি আগ্রাসনের মতো পরিস্থিতি ঘটে। কিন্তু ট্রাম্প এই আইন ব্যবহার করে ভেনেজুয়েলার একটি মাদক চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করেন। এই যুক্তি ব্যবহার করে যেকোনো দেশের নাগরিককে (যে দেশ যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসন বা মাদক পাচারের উৎস) টার্গেট করা সম্ভব।
আরও পড়ুনট্রাম্প কি বিশ্বের সব ডানপন্থী নিয়ে জোট গড়তে চান১৭ জুলাই ২০২৫ট্রাম্পের আরেকটি নির্বাহী আদেশ যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী শিশুদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার বাতিল করে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৪তম সংশোধনী বলছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া এবং এখানকার আইনের আওতায় থাকা প্রত্যেকেই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।’ এ পরিস্থিতিতে কেউ যদি ট্রাম্পের সঙ্গে চুক্তি করে, তাহলে প্রশ্ন ওঠে, ‘আপনি আসলে কোন ভিত্তিতে এই চুক্তিকে টেকসই বলে মনে করছেন?’
এই সংকটে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বড় বিশ্ববিদ্যালয়ও। ট্রাম্প প্রশাসন তাদের হুমকি দিয়েছে, বিলিয়ন ডলারের সরকারি অনুদান বন্ধ করে দেবে, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর-ছাড়ের সুবিধাও বাতিল করবে। এখন তারা ভাবছে, ট্রাম্পকে খুশি রাখতে কি চুক্তি করে ফেলবে, নাকি একজোট হয়ে বলবে, ‘আমরা এই অন্যায় শর্ত মেনে নেব না?’ যে চুক্তি যেকোনো সময় একতরফাভাবে বাতিল বা পরিবর্তন করা যায়, সেই চুক্তি আসলে ফাঁকা বুলি। এটি আত্মপ্রবঞ্চনা, স্বার্থের মুখোশ।
রিচার্ড কে শারউইন নিউইয়র্ক ল স্কুলের আইন বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক
স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র আইন র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
সভাপতি পদে বিএনপি, সাধারণ সম্পাদক পদে জামায়াত–সমর্থিত প্রার্থী নির্বাচিত
কুড়িগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে সভাপতি পদে বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থী ফখরুল ইসলাম এবং সাধারণ সম্পাদক পদে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী–সমর্থিত প্রার্থী সরদার মো. তাজুল ইসলাম নির্বাচিত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ভোট গণনা শেষে বিকেলে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সোলায়মান আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় সহসভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদসহ সাতটি সম্পাদকীয় পদ এবং কার্যনির্বাহী সদস্য পদে বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছেন। ফলে ১৯ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদ ছাড়া বাকি ১৮টি পদে বিএনপি–সমর্থিত প্যানেলের জয় হয়েছে।
ভোটের ফলাফল অনুযায়ী, সভাপতি পদে বিজয়ী বিএনপি–সমর্থিত ফখরুল ইসলাম পেয়েছেন ১২৮ ভোট। তাঁর নিকটতম ও একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত–সমর্থিত ইয়াছিন আলী সরকার পেয়েছেন ১০৭ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী জামায়াত–সমর্থিত সরদার মো. তাজুল ইসলাম পেয়েছেন ১২১ ভোট। তাঁর নিকটতম ও একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি–সমর্থিত আবুল কাশেম পেয়েছেন ১১২ ভোট। নির্বাচনে মোট ভোটার ২৪৯। নির্বাচনে ২৪১ জন ভোট দিয়েছেন। ৬টি ভোট বাতিল হয়েছে এবং দুজন ভোটার সাধারণ সম্পাদক পদে ভোট দেননি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার সোলায়মান আলী বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় গত ৩১ আগস্ট কার্যনির্বাহী কমিটির ১৭ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচিত কমিটি আগামী দুই বছর দায়িত্ব পালন করবে।