‘‘কলমের এক খোঁচায় দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেই বাদ দিয়ে দিলেন। যেন বাপের জমিদারি আর কি। খাজনা দেও নাই বাড়ি থেকে বের করে দিলাম। দল এরশাদ সাহেবের, আরে মিয়া আপনি বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার কে? জন্মলগ্ন থেকে আছি আমরা। আপনি কোথায় ছিলেন। আমরা যখন জাতীয় পার্টি করি তখন আপনি ঘরে। তখন কোনো কারখানায় চাকরি করেছেন। বড় বড় কথা বলেন। আজেবাজে কথা বলবেন না।”

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরকে উদ্দেশ্য করে শনিবার (৯ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানে ইমানুয়েল কমিউনিটি সেন্টারে আয়োজিত পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিলে দলের কো চেয়ারম্যান ও সাবেকমন্ত্রী কাজী ফিরোজ রশীদ এসব কথা বলেন।

এই কাউন্সিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে কাজী ফিরোজ বলেন, “জাতীয় পার্টিকে যে স্বৈরাচার বলে, তার কারণ রয়েছে। জন্মলগ্ন থেকে আমাদের গঠনতন্ত্রে একটা ধারা ছিল ২০ ক ধারা। এরশাদ সাহেবকে বলেছি, স্যার এটা উঠিয়ে দেন, আপনি ইচ্ছা করিয়া যাহা করিবেন তাহাই তো হইবে। এটা রাখার দরকার কি? কোনো দলের গঠনতন্ত্রে এমন ধারা নাই। কিন্তু তিনি সেটা বাদ দিলেন না। সেই স্বৈরতান্ত্রিক ও অগণতান্ত্রিক ধারা নিয়ে জাতীয় পার্টি জন্মলগ্ন থেকে জ্বলছে। জিএম কাদের যে ধারার অপব্যবহার করছেন। যার কারণে আজ কাউন্সিল হচ্ছে।”

আরো পড়ুন:

জাপাকে তিন কাজের পরামর্শ দিলেন জেপি মহাসচিব শেখ শহীদ

লেভেল প্লেয়িং ছাড়া নির্বাচনে যাওয়া হাত পা বেঁধে সাঁতার কাটার শামিল: জাপা

‘‘আমরা উত্তরোধিকার সূত্রে এই কালো আইন বহন করছি। আমাদের সভাপতি-মহাসচিবকে বলেছি, এই ধারা তুলতে হবে। হাওলাদার সাহেবও বলেছেন, তুলে দেওয়া হবে। তারা কথা রেখেছেন, এই ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে। আপনারা ভাগ্যবান যে আজকে থেকে জাতীয় পার্টি এই বাজে ধারামুক্ত হইলো।” - ঘোষণা দেন কাজী ফিরোজ।

জিএম কাদেরকে জাতীয় বেইমান উল্লেখ করে দলটির সাবেক মহাসচিব বলেন, “সবাই সাক্ষী ১২ নভেম্বর আমাদের একটা বর্ধিত সভা হয়েছিল, ৫৮ জেলার নেতা বক্তব্য রাখলেন, তারা বললো,  এই নির্বাচনে যাবেন না, যাবেন না। যারা যাবেন তারাই জাতীয় বেইমান। উনি বললেন, আপনারা আমার উপর ভরসা রাখেন, আমি জাতীয় বেইমান হবো না। পরে কি দেখা গেলো তিনি নির্বাচনে গিয়ে জাতীয় বেইমান হলেন। আজকে যে মানুষ আমাদের দোসর বলে, বেইমান বলে, দালাল বলে আপনার আর আপনার বউ এর এসব অপকর্মের জন্যই বলেন।”

ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, মুজিবুল হক চুন্নু, কাজী ফিরোজ রশীদদের দলের অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত নেতৃত্ব উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, ব্যারিস্টার আনিসসহ বর্তমান নেতৃত্ব শান্তিপ্রিয় মানুষ। তারা বহিস্কার-আবিস্কার করবেন না। কাজের মূল্যায়ণ করবেন। নেতাকর্মীরা যে যেভাবে কাজ করতে চান করতে পারবেন।”

তিনি বলেন, “কথা হবে একটা, এত কথা বাড়ায়ে লাভ নেই। ওয়ান ইলেভেনের সময় এরশাদ সাহেব জাতীয় পার্টির দায়িত্ব আনিস সাহেবকে দিয়ে গেছিলেন, উনি দুবছর দায়িত্বও পালন করেছেন। এ দুবছরে আমরা যারা নেতাকর্মী আমরা ঠিকমতো কাজ করতে পেরেছি।”

“আমি মনে করি, সামনে মঞ্চে যে নেতৃত্ব আছে, সারাদেশ থেকে যে নেতাকর্মীরা এসেছেন আমরা সবাই যদি পাড়া-মহল্লায় ওয়ার্ড এ এরশাদের কাজ-অবদান নিয়ে ফেরিওয়ালার মতো ঘুরে বেড়াই তাহলে আমরা সফলকাম হবো”- বলেন, সাহিদুর রহমান টেপা।

জিএম কাদেরের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “তুই কেটা, চুন্নু, কাজী ফিরোজ বাবলাদের মতো নেতাকে বহিস্কার করে দেন। যখন তখন সই করে ত্যাগি নেতাদের বের করে দেন।”

“জিএম কাদেরের একনায়কতন্ত্রের সই এর জন্য আমরা জাতীয় পার্টি করি নাই। আমার সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়েছে, আমি বলেছিলাম, এই নির্বাচনে যাবেন না। তিনি বলেছিলেন, (যদিও আমার এই কথা বলা উচিত হবে না।) তুমি কি রাজনীতি বেশি বুঝ? আমি বলেছিলাম, শুক্র শুক্র আট দিন আগে রাজনীতিতে এসেছেন। আপনি ছিলেন ক্লার্ক।”

টেপা আরো বলেন, “আমি জন্মসূত্রে রাজনীতি করি। রাজনীতি আমার নেশা, পেশা না। আমরা রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। আমরা চার ভাই বীরমুক্তিযোদ্ধা। দেশকে স্বাধীন করেছি চার ভাই কাধে কাধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছি। তাই আমি মনে করি, রাজনীতিবিদদের হাতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব থাকা উচিত। তাহলে দেশ, জাতি ও নেতাকর্মীদের জন্য সঠিক রাজনীতি করা সম্ভব হবে।”

সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, “দেশ জাতি ও সকল ধর্মের উন্নয়নের রূপকার এরশাদ। যিনি ক্ষমতার বিকেন্দ্রিকরণ, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, শুক্রবারে ছুটি, মসজিদ মাদ্রাসার খেদমত করেছেন। জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী মিশনে সৈন্য পাঠিয়ে বিশ্বদরবারে দেশের মান উজ্জ্বল করেছিলেন, তাকে বলেন আপনারা স্বৈরাচার। অথচ আপনারা হলেন এখন একহাজার পার্সেন্ট স্বৈরাচার।”

তিনি বলেন, “সাবেক সফলমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিস, হাওলাদার, চুন্নুর নেতৃত্বে আজকের থেকে তিনমাসের মধ্যে সারাদেশ চষে বেড়িয়ে সকলকে সঙ্গে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে আমরা শক্তিশালী জাতীয় পার্টি গড়ে তুলবো।”

শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, “মঞ্চে বক্তারা বলে গেছেন, আমরা সবাই যদি ঐক্যবদ্ধ হই তাহলে যে কোনো সময় যে কোনো কিছু ঘটাতে পারি। আজকে দেখেন, ৯০ এ এরশাদ সাহেবের মুক্তি হয়েছিল, এই মঞ্জু সাহেবের নেতৃত্বে। শুধু এরশাদকে মুক্ত করেননি জাপাকে ৩৫টি আসনে নির্বাচিত হয়েছি। বাংলাদেশে আর কোনো সময় জাপা এত আসন পাইনি। ৯৬ এ ৩৪টি আসন, এই মঞ্জু ভাইর নেতৃত্বে। তারপর আর উল্লেখযোগ্য আসন পাইনি। নেতৃত্বের কারণে হয়েছে, তিনি যতদিন ছিলেন জাতীয় পার্টির যৌবন ছিল। দলের অবস্থাও ভালো ছিল, জনগণের কাছে মূল্যায়নও ছিল, পরীক্ষিতও ছিলাম।”

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনারা দলের প্রাণ, আপনাদের নেতৃত্বে এরশাদের অসমাপ্ত কাজ যেন করতে পারি। আপনারা চাইলে জাতীয় পার্টি একটা সুন্দর ও সম্মানজনক জায়গা যেতে পারে।”

‘‘আজকে ছাত্ররা বলে স্বৈরাচারের দোসর, আরে বাবা স্বৈরাচারের দোসর আমরা তো না। নির্বাচনে বিএনপি, জামায়াত সবাই ছিল কমবেশি। আমরা বিরোধী দলে ছিলাম উপায় ছিল না, কথা না শুনলে প্রবলেম হতো। নানা কারণে আমরা এই সরকারের সাথে ছিলাম”- যোগ করেন তিনি।

সেন্টু বলেন, “আমাদের স্বৈরাচার বলা হতো, অথচ দিনের ভোট রাতে করে আওয়ামী লীগ আমাদের ছাড়িয়ে গেছেন। আমাদের হাতে রক্তের গন্ধ ছিল না, কাদের হাতে ছিল দেশ ও জাতি দেখেছে।”

প্রথম অধিবেশনের উদ্বোধনী আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (জেপির) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম।

স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। 

দলের যুগ্ম মহাসচিব বেলাল হোসেন, ফখরুল আহসান শাহজাদা ও দপ্তর সম্পাদক রাজ্জাক খানের পরিচালনায় কাউন্সিলে বক্তব্য রাখেন, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, এটিইউ তাজ রহমান, সোলায়মান আলম শেঠ, নাসরিন জাহান রতনা, নাজমা আকতার, লিয়াকত হোসেন খোকা, মোস্তফা আল মাহমুদ, মাসরুর মওলা, জহিরুল ইসলাম জহির, জসিম উদ্দিন ভূইয়া, আরিফুর রহমানখান, নুরুল ইসলাম মিলন, জিয়াউল হক মৃধা, মোবারক হোসেন আজাদ, খান ইসরাফিল খোকনসহ দলটির অধিকাংশ সিনিয়র নেতা  ও বিভিন্ন জেলা কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদকরা।

কাউন্সিলে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য, দিদারুল আলম দিদার বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির(মতিন) মহাসচিব জাফর আহমেদ জয় প্রমুখ।

এ সময় সারাদেশ থেকে আগত কাউন্সিলরদের পাশাপাশি প্রায় তিন হাজারের অধিক ডেলিগেট কাউন্সিলে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকালে জাতীয় ও দলীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে কাউন্সিলের উদ্বোধন করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এরশ দ স হ ব জ এম ক দ র ল ইসল ম ম ক উন স ল ন ত কর ম র রহম ন র জন ত আম দ র ব র কর আপন র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

নোয়াখালীতে আগুনে পুড়ল ১১টি দোকান ও একটি কারখানা

নোয়াখালীর সেনবাগে একটি কাঠের আসবাবপত্র তৈরির কারখানা, গোডাউনসহ অন্তত ১১টি দোকান আগুনে পুড়ে গেছে। শনিবার (৯ আগস্ট) রাত ১টার দিকে উপজেলার সেবারহাট বাজারে ঘটনাটি ঘটে। 

ফায়ার সার্ভিসের সেনবাগ, চৌমুহনী ও মাইজদীর পাঁচটি ইউনিট প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রবিবার (১০ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জানায়, শনিবার রাত ১টার দিকে সেবারহাটে একটি আসবাবপত্র তৈরির কারখানা থেকে প্রথমে আগুনের সূত্রপাত হয়। এরপর আগুন আশপাশের ১১টি দোকানে ছড়িয়ে পড়ে। আজ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। 

আরো পড়ুন:

নেত্রকোণার ধলাই নদীতে বাল্কহেড ডুবে ২ শ্রমিক নিখোঁজ

মানিকগঞ্জে প্লাস্টিক কারখানার আগুন, ৬০ কোটি টাকার ক্ষতি

আগুনে আসবাবপত্র তৈরির কারখানা, মেশিনারিজ সামগ্রী, থাই অ্যালুমিনিয়াম পণ্য বিক্রির দোকানসহ অন্তত ১১টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। আগুনে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের ৩৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।  

সেনবাগ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ফায়ার ফাইটার মো.সাব্বির হোসেন বলেন, ‍“পাঁচটি ইউনিট প্রায় সাড়ে ৬ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ক্ষয়ক্ষতি ও অগ্নিকাণ্ডের কারণ তদন্ত শেষে বলা যাবে।” 

ঢাকা/সুজন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ