আওয়ামী লীগ ঠেকাতে ২০১৪ সালে বিএনপির সঙ্গে জোট করার চেষ্টা করেছিল জাতীয় পার্টি। কিন্তু বিএনপির কারণে সেটা হয়নি বলে দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

শনিবার (৯ আগস্ট) ঢাকার গুলশানে ইমানুয়েল কমিউনিটি সেন্টারে জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিলে একথা বলেন তিনি। 

বিএনপির উদ্দেশ্যে ব্যারিস্টার আনিস বলেন, “আজকে সবচাইতে বড় দল, তারা ২০১৮ সালে নির্বাচন করেননি? ২০১৪ সালে নির্বাচনে  বিএনপির একজন বড় নেতার সঙ্গে কথা বলেছি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এলায়েন্স করার জন্য, কিন্তু সেদিন বিএনপির কারণে সেটা হয়নি।”

‘‘আমরা নির্বাচন করেছি, আপনারা সংসদ নির্বাচন করেননি, কিন্তু আপনারা সেদিন তো স্থানীয় নির্বাচনগুলো করেছেন। ১৮তে আপনারা করেছেন, আমরাও করেছি, আপনাদের সঙ্গে আমাদের প্রার্থক্য কোথায়। আপনারা এই কিছুদিন আগে মেয়রের যে নির্বাচনটা হয়েছে সেই নির্বাচন আপনারা বৈধতা দিতে চাচ্ছেন। বৈধতা দিয়েছেনও। আজকে স্ববিরোধিতার রাজনীতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে” বলেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

আওয়ামী লীগ আমলে নির্বাচন করার জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে ব্যারিস্টার আনিস বলেন, “নির্বাচন আমরা করেছি, কোনো অন্যায় করিনি। তখনকার যে নিয়ম ছিল, আইন ছিল সেটা মেনে করেছি। বিশ্বের স্বীকৃত একটা সরকার ছিল। সেই সরকারকে প্রতিহত করতে হলে আপনাকে পার্লামেন্টে যেতে হবে। আমরা তো বিপ্লবী পার্টি নই। তারপরও আজকে ফিরোজ রশীদ যে কথা বলেছেন, আমি তার সঙ্গে একসূরে বলবো,  তারপরও যদি জনগণ মনে করে আমরা কোনো অন্যায় করেছি, তাহলে নিঃশর্তভাবে আমরা ক্ষমা চাচ্ছি।”

‘‘কারণ আমরা জনগণকে রায়কে সম্মান করতে চাই। চলতে চাই, আমরা এটা বলবো না যে আমি যেটা বুঝি সেটাই ভালো, আপনারা যেটা বুঝেন সেটা খারাপ। হ্যাঁ তবে আপনাদের বুঝাবার চেষ্টা করবো। তারপরও জনগণ যদি মনে করে আমরা অন্যায় করেছি তাহলে আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি।” 

নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আনিস বলেন, “আমরা জনগণকে নিয়ে রাজনীতি করি। স্বপ্ন দেখছি,  এদেশের শাসনভার আমরা নিতে পারবো যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি। আমরা যদি মানুষের কাছে যেতে পারি।  আজকে সময় এসেছে আমাদের পার্টিকে শক্তিশালী করার। পাড়া মহল্লায় যেতে হবে আমাদের। আশা করছি, আমরা জনগণের কাছে যেতে পারবো। কারণ আমরা কোনো অন্যায় করিনি।” 

সরকারের সংস্কারের সমালোচনা করে দলের এই জ্যেষ্ঠনেতা বলেন, “আজকে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, এ সংস্কার যারা আজকে করার জন্য বসেছে, তারাই একসময় সংস্কারে বাধা দিয়েছিলো। আপনারা বুদ্ধিজীবীরাই সেদিন আমাদের হাইকোর্ট বিকেন্দ্রিকরণ করতে দেন নাই। স্বাস্থ্যনীতি করতে দেয়নি, উপজেলা পদ্ধতি ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পর বিলুপ্ত করে দিয়েছিল, পরে যখন দেখেছে দেশকে চালাতে পারছে না তখন এই উপজেলা পদ্ধতি আবার এনেছে।”

‘‘আপনারা পিআর পদ্ধতির কথা বলছেন, এটাও এরশাদ সাহেবের কথা। প্রাদেশিক সরকারও তার কথা। আজকে ৪৫ বছর পর আপনারা এখন অনুধাবন করছেন এসব জিনিস করতে হবে-যোগ করেন তিনি।

জাতীয় ‍পার্টি জনগণের পার্টি উল্লেখ করে ব্যারিস্টার আনিস বলেন, “আমাদের প্রয়াত চেয়ারম্যান একজন সামরিক শাসক ছিলেন। যখন তিনি ক্ষমতায়। কিন্তু তিনি এসে করলেন কি? সাধারণত সামরিক শাসকরা ক্ষমতা নিজের হাতে রাখতে পছন্দ করেন কিন্তু তিনি ক্ষমতা বিকেন্দ্রিকরণ করেছিলেন। উপজেলা করে মানুষের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দিলেন।  উপজেলায় কোর্ট নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেটাও আপনারা বন্ধ করে দিয়েছেন। অতএব আপনারা সংস্কার আমাদের শিখায়েন না।”  

কাউন্সিলের প্রথম অধিবেশনের উদ্বোধনী আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (জেপির) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। 

দলের যুগ্ম মহাসচিব বেলাল হোসেন, ফখরুল আহসান শাহজাদা ও দপ্তর সম্পাদক রাজ্জাক খানের পরিচালনায় কাউন্সিলে বক্তব্য রাখেন, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, এটিইউ তাজ রহমান, সোলায়মান আলম শেঠ, নাসরিন জাহান রতনা, নাজমা আকতার, লিয়াকত হোসেন খোকা, মোস্তফা আল মাহমুদ, মাসরুর মওলা, জহিরুল ইসলাম জহির, জসিম উদ্দিন ভূইয়া, আরিফুর রহমানখান, নুরুল ইসলাম মিলন, জিয়াউল হক মৃধা, মোবারক হোসেন আজাদ, খান ইসরাফিল খোকনসহ দলটির অধিকাংশ সিনিয়র নেতা ও বিভিন্ন জেলা কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদকরা।

এ সময় সারাদেশ থেকে আগত কাউন্সিলরদের পাশাপাশি প্রায় তিন হাজারের অধিক ডেলিগেট কাউন্সিলে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকালে জাতীয় ও দলীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে কাউন্সিলের উদ্বোধন করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক উন স ল ব এনপ র আম দ র র র জন আওয় ম ক ষমত আপন র সরক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

জামায়াতের কেউ এমপি হলে সরকারি প্লট ও বিনা ট্যাক্সের গাড়ি নেবেন না : শফিকুর রহমান

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আগামীতে আমাদের একজনও যদি এমপি নির্বাচিত হন, তাঁদের কেউ সরকারি প্লট নেবেন না ও বিনা ট্যাক্সের গাড়িতে চলবেন না। জনগণের ওপর ট্যাক্স বসানোর জন্য আমাদের ভোট দেবেন না। জনগণের পাহারাদারি করার জন্য আমাদের ভোট দেবেন। না হলে আমাদের ভোট দেবেন না।’

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সিলেট নগরের একটি কনভেনশন হলে মহানগর জামায়াত আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শফিকুর রহমান।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও সিলেট মহানগরের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সিলেট মহানগরের নায়েবে আমির নূরুল ইসলামের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দলের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ফজলুর রহমান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও সিলেট-৬ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন এবং কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও সিলেট-১ আসনে জামায়াতের সংসদ সদস্য প্রার্থী হাবিবুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন সিলেট-১ আসনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আবদুল হাই হারুন।

সুধী সমাবেশে শফিকুর রহমান বলেন, ‘যদি কোনো কারণে আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের বিরোধী দলে বসতে হয়, আমরা তাদের (সরকারি দল) আশ্বস্ত করছি, প্রতিটি মানবিক ও ভালো কাজে আমরা অবশ্যই তাদের কর্মী হয়ে কাজ করব। তারা সরকারে যাওয়ার পর আবার যদি পুরোনো কায়দায় ওলট-পালট কিছু করে, প্রথমে ব্যক্তিগতভাবে বলব, এগুলো ছেড়ে দেন। যদি তারা সংশোধন হয়ে যান, অভিনন্দন জানাব। যদি না করেন, তবে আগেও যেমন জীবন বাজি রেখে আন্দোলন–সংগ্রাম আমরা করেছি, আগামীতেও ছাড় দেব না।’

ভবিষ্যতে নির্বাচিত হলে দুর্নীতি দূর করে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আশ্বাস দেন আমির শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এই বাংলাদেশ আমরা পাল্টে দিতে চাই। এ জন্য জনগণের কথা—এবার আমরা পরিবর্তন চাই। সে পরিবর্তনটা কী হবে তাহলে? একটি জ্যান্ত মাছ কড়াইয়ের মধ্যে ভাজা হচ্ছে, বাঁচার জন্য লাফ দিল, পড়ে গেল চুলার মধ্যে। সে পরিবর্তন কি আমরা চাই? না, নিরাপদ বাংলাদেশ আমরা চাই। এ ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামী ওয়াদাবদ্ধ জাতির কাছে। আল্লাহর কাছে ওয়াদাবদ্ধ। আমরা আমাদের এ আন্দোলন চালিয়ে যাব। সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত কেউ আমাদের থামাতে পারবে না। সামাজিক ন্যায়বিচার যদি কায়েম হয়, তাহলে দুর্নীতির জট কেটে যাবে। দুর্নীতিবাজরা দুর্নীতি করার সাহস করবে না, লুটেরা আর লুটতোরাজ করবে না। ব্যাংক লুটপাট করবে না। সেই রকম সমাজ আমরা বিল্ডআপ করতে চাই।’

বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে পুনর্বিন্যাস করতে চান জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, ‘সব জায়গায় ইঁদুর বসে আছে সমাজের রশি কেটে দেওয়ার জন্য। এই ইঁদুরগুলোকে তাড়াতে হবে। না হলে তারা আমাদের খেতের সব ফসল নষ্ট করবে। যেভাবে অতীতে করেছে। এটা কি একা জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্ব? এটা আমাদের সবার দায়িত্ব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গণভোট-সনদ জনগণ বোঝে না: মির্জা ফখরুল 
  • ‘কথায় কথায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জোটের প্রার্থী আসে কেন`
  • চট্টগ্রাম বন্দর ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত না পাল্টালে কঠোর কর্মসূচি: বাম গণতান্ত্রিক জোট
  • সংস্কারের মূল লক্ষ্য প্রশাসনিক নয়, নৈতিক: প্রধান বিচারপতি
  • বিএনপি আহ্বান করলে আমরা আলোচনায় যেতে প্রস্তুত: আযাদ
  • অভিজাততন্ত্র থেকে কি আমাদের মুক্তি নেই
  • গণভোটকে নির্বাচনের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে সরকার, অভিযোগ তাহেরের
  • বন্দরে এমপি প্রার্থী মাওলানা মইনুদ্দিন আহমাদ-এর গণসংযোগ 
  • ‘জামায়াতের রাজনীতি শুরু হয় জিয়াউর রহমানের নীতির কারণে’
  • জামায়াতের কেউ এমপি হলে সরকারি প্লট ও বিনা ট্যাক্সের গাড়ি নেবেন না : শফিকুর রহমান