“শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, আর জামায়াতের রাজনীতিও শুরু হয়েছিল জিয়াউর রহমানের নীতির কারণে,” এমনটিই মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন।

শুক্রবার (৭ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী অডিটোরিয়ামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) আয়োজনে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের তাৎপর্য স্মরণে ‘জনতার নয়া রাজনীতির আকাঙ্ক্ষা: বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ শিরোনামে আলোচনা সভায় এ কথা বলেন মাহাদী আমিন।

আরো পড়ুন:

জিয়াউর রহমান স্থাপিত ইবির ভিত্তিপ্রস্তরে শ্রদ্ধাঞ্জলি

একটি দল দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে: মির্জা আব্বাস

তিনি বলেন, “শহীদ জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, বাগ্‌স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গার্মেন্টস শিল্পের প্রতিষ্ঠা, বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি, বেসরকারিকরণ, বিদেশি বিনিয়োগ আনা- সবই হয়েছিল তার হাত ধরে।”

সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের দেশে ইসলামি মূল্যবোধকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করে মাহাদী আমিন বলেন, “ধর্মভিত্তিক রাজনীতি না করলেও বিএনপি কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের দেশে ইসলামের আলোকে ইসলাম ধর্মের খেদমতে সবসময় নিবেদিত প্রাণ ছিল। পররাষ্ট্রনীতির অংশ হিসেবে আমরা নতজানু পররাষ্ট্রনীতি থেকে বেরিয়ে ভারতীয় আধিপত্যবাদকে ভেঙে পশ্চিমা দেশগুলোর মতো ভাষা ব্যবহার শুরু করেছিলাম “

তিনি বলেন, “৭ই নভেম্বর সিপাহী-জনতা এক হয়ে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ এক হয়ে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেছিলেন একটা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে, এমন একটি বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করব যেখানে স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব থাকবে, গণতন্ত্র থাকবে, রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকবে।”

মাহাদী আমিন বলেন, “আমাদের আদর্শই যদি হয় সবার আগে বাংলাদেশের স্বার্থ, সার্বভৌমত্ব- তাহলে আমরা সবাই এক। আমরা আগামীর বাংলাদেশে বাংলাদেশপন্থি রাজনীতি করতে চাই, যে রাজনীতি জিয়াউর রহমান করেছিলেন, যে রাজনীতি বেগম খালেদা জিয়া করেছিলেন, যে রাজনীতি তারেক রহমান করছেন।”

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল হক জুবায়ের বলেন, “জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নেই ৭ নভেম্বর এসেছিল। শেখ মুজিব স্বাধীনতার পরে সবচেয়ে ঘৃণিত মানুষে পরিণত হয়েছিলেন। যার ফলে ৭৫ এসেছিল, ৭৭ এসেছিল।”

“শেখ মুজিব ঘৃণার পাত্রে পরিণত হলেন আর যিনি ক্যান্টনমেন্টে ছিলেন তিনি রাজনীতিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠলেন। তিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান জনগণের আকাঙ্ক্ষা বুঝতে পেরেছিলেন,” মন্তব্য করেন জুবায়ের।

বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর বলেন, “অনেকেই বলে যে জেনারেল জিয়া ক্ষমতা দখল করেছিলেন। কিন্তু না, জনগণ তাকে সিংহাসনে বসিয়েছিলেন।”

“মুক্তিযুদ্ধে যারা আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়েছিল তারা কেউই যুদ্ধে ফ্রন্ট লাইনে ছিল না। তারা সব সময় আমোদ-প্রমোদে ব্যস্ত ছিল,” বলেন ফজলে এলাহী।

তিনি বলেন, “আমাদের ওপর একটি মিথ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, আমরা একটি ছোট রাষ্ট্র। কিন্তু আমরা জনগণের দিক থেকে অষ্টম বৃহত্তম রাষ্ট্র। পাকিস্তানের অর্থনীতি এত ছোট কিন্তু তারা সামরিকভাবে কত শক্তিশালী। কিন্তু আমাদেরকে শক্তিশালী হতে দেয়নি।”

আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, “বাংলাদেশে যদি শীর্ষ দুটি অভ্যুত্থানকে ধরা হয়, তাহলে তা হচ্ছে ৭ নভেম্বর ও চব্বিশের আন্দোলন। আমাদের শত শত বছরের আজাদির যে লড়াই, তা এই দুই আন্দোলনে খুঁজে পাওয়া সম্ভব।” 

“ইতিহাসের পরম্পরা বারবার প্রমাণ করেছে যে, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দলের সংজ্ঞায় পড়ে না। তারা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। আওয়ামী লীগের জন্ম আজন্ম পাপ এবং আমাদের নিরাপত্তার হুমকি। কারণ সে ২৩শে জুন পলাশি দিবসে দলটি জন্ম নিয়েছে,” অভিযোগ তোলেন তিনি। 

ব্যারিস্টার ফুয়াদের অভিযোগ, “শেখ মুজিব ১৩-১৪ বছর ধরে যে জেল খেটেছেন, আজাদির লড়াই করেছেন, তারপর তিনি স্বাধীন বাংলাদেশকে ভারতের নিকট বিক্রি করে দিয়েছেন পরতে পরতে। আর এটাই তার জীবনের ট্রাজেডি। তিনি জিন্নাহ কিংবা গান্ধী হতে পারতেন কিন্তু তিনি মীর জাফর হয়ে গেছেন।”

ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন, “গত ৫৪ বছর ৭ই নভেম্বর যেভাবে পাঠ হয়েছে, তাতে কিছু ভুল রয়েছে, সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। ৭ই নভেম্বর শুধু সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নয়, বরং নাগরিকরা যে রাষ্ট্রের মালিকানা পাচ্ছে না, তা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই সিপাহী-জনতা এক হয়ে বিপ্লব করেছিল।” 

সভাপতির বক্তব্যে ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, “আজকের বাংলাদেশ জিয়াউর রহমানের বাংলাদেশ। জিয়াউর রহমানকে যারা দানব আকারে হাজির করেছিল, সেই কালচারাল ফ্যাসিস্টরা আজ বিএনপির বড় বন্ধু সাজার চেষ্টা করছে।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ থেকে ফ্যাসিবাদের শিকড় সমূলে উৎপাটন করতে হবে। বিএনপি-জামায়াতসহ সকল দল মিলে ঐক্য গঠন করতে হবে, না হলে ৫৪ বছর পর যে সুযোগ এসেছে, তা হাতছাড়া হয়ে যাবে।”

ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক জুমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি আব্দুল মান্নান ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার জসিম উদ্দিন হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক শেখ তানভীর বারী হামিম।

ঢাকা/সৌরভ/রাসেল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ উর রহম ন র স ব ধ নত কর ছ ল ন আম দ র র জন ত ব এনপ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

৭ নভেম্বর: ঐতিহাসিক বাস্তবতা, গণতন্ত্র ও বিএনপির প্রাসঙ্গিকতা

বাংলাদেশের ইতিহাসে ৭ নভেম্বর একটি ঐতিহাসিক দিন, যেদিন রাষ্ট্র, সেনাবাহিনী এবং রাজনীতি একইসঙ্গে এক অগ্নিপরীক্ষার মধ্য দিয়ে গিয়েছিল। দিনটিকে ‘সিপাহী বিপ্লব’, ‘বিপ্লব ও সংহতি দিবস’, আবার অনেকে ‘গণতন্ত্র পুনরুত্থান দিবস’ হিসেবে উদযাপন করে। কিন্তু রাজনৈতিক ভিন্নতা অতিক্রম করে ইতিহাসের মূল প্রেক্ষাপটের ভেতর চোখ রাখলে দৃশ্যমান হয়, দিনটি ছিল রাষ্ট্রের অস্তিত্ব রক্ষার এক সন্ধিক্ষণ, যখন বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে এক চরম সংকট, বিশৃঙ্খলা ও অনিশ্চয়তার মুখে দাঁড়িয়ে ছিল। সেই মুহূর্তে নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণ ছিল অপরিহার্য, তখনই দৃশ্যপটে আবির্ভূত হন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে পুনর্গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক মেরুকরণ, ভিত্তি, রাষ্ট্রযন্ত্রে ফিরে আসে নিয়ন্ত্রণ ও স্থিতি এবং পরবর্তীতে শুরু হয় একটি নতুন গণতান্ত্রিক ধারার অগ্রযাত্রা।

১৯৭৫ সালের আগস্ট মাস থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত সময় ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অস্থির অধ্যায়। শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর দেশজুড়ে টানা হয় বিভক্তি ও দ্বিধাদ্বন্দ্বের রেখা। রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ে আস্থা ও কর্তৃত্বের সংকট চরম আকার ধারণ করে, সেনাবাহিনী বিভক্ত হয়ে পড়ে নানা গোষ্ঠীতে, প্রশাসন হয়ে পড়ে অচল, সাধারণের জনমনে তৈরি হয় চরম অস্থিরতা। 

এদিকে ওই একই বছর ৩ নভেম্বর কারাগারে নিহত হন জাতীয় চার নেতা। ফলে পুরো জাতি এক গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যায়। এই অস্থির প্রেক্ষাপটে ৭ নভেম্বর যে ঘটনাটি ঘটে তা ইতিহাসে একদিকে সেনা-জনতার অভ্যুত্থান, অন্যদিকে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের সূচনা।

সিপাহী বিপ্লব ও সংহতি দিবসে ঐতিহাসিক ভিত্তি বিশ্লেষণের আলোকে, এটি ছিল এক ধরনের প্রতিবিপ্লব নয়, বরং রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক প্রক্রিয়া। একদিকে বামশক্তিরা সেনাবাহিনীর ভিতরে প্রবেশ করতে শুরু করেছিল, অন্যদিকে প্রশাসনিক দুর্বলতা দেশকে আরও অনিশ্চিত করে তুলছিল। এমন পরিস্থিতিতে সামনে আসেনে জিয়াউর রহমান। তার নেতৃত্বে সেনা ও জনগণের মধ্যে এক ধরনের ঐক্য গঠিত হয়, যা ছিল প্রকৃত অর্থে জাতীয় একত্রীকরণ, গণতন্ত্র উদ্ধারের দিন। 

ইতিহাসের পুনঃপুনঃ বিশ্লেষণে, যদি ৭ নভেম্বরের পর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ অন্য কারও হাতে যেত, বিশেষত সেই সময়কার বামপন্থী প্রভাবশালী গোষ্ঠীর কাছে, তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক গতিপথ সম্ভবত ভিন্নখাতে প্রবাহিত হতে পারতো, বিপর্যয় তৈরি হতো, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা পেতো না, অথবা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করতে হতো।

মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিশৃঙ্খল সেনাবাহিনীতে ঐক্য প্রতিষ্ঠা পায়, প্রশাসনে ফেরে স্থিতি এবং ধীরে ধীরে দেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়। পৃথিবীর দিকে চোখ রাখলে দেখতে পাই—পাকিস্তান, মিশর, ব্রুনাই, লিবিয়া, ইরাক, ইন্দোনেশিয়া এবং হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদের আমলে বাংলাদেশ অর্থাৎ সামরিক শাসকরা সাধারণত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে চান; সেখানে জিয়া ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি দলীয় রাজনীতিকে পুনরায় বৈধতা দিলেন, জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করলেন এবং অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের পথে অগ্রসর হলেন। তার প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি—এই দর্শনেরই ধারক ও বাহক। 

০২.
৭ নভেম্বরের তাৎপর্য বহুমাত্রিক। এটি কেবল একটি সামরিক ঘটনা নয়, বরং রাজনৈতিক রূপান্তরের সূচনাকাল। সংকটকালে রাষ্ট্রের নতুন জন্ম। জিয়াউর রহমানের আহ্বানে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ধারণা বিকশিত হয়, যা বাঙালি জাতিসত্তাকে রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতার বাইরে নিয়ে সার্বভৌম নাগরিক পরিচয়ের নতুন পরিধি তৈরি করে। তিনি অনুধাবন করলেন, মুক্তিযুদ্ধের অর্জনকে টিকিয়ে রাখতে হলে জনগণকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন ঘোষণা করতে হবে। তার সময়েই কৃষিতে সবুজ বিপ্লবের সূচনা, বিদেশে কর্মসংস্থান তৈরি, গ্রামীণ অর্থনীতি বিকাশ লাভ এবং বিভিন্ন কর্মসূচিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ে। এই অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরতার দর্শনই ছিল ৭ নভেম্বরের ‘সংহতি’র বাস্তব রূপ অথবা সাধারণ জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন।

কিন্তু সময়ের প্রবাহে ৭ নভেম্বরের ঐতিহাসিক মূল্যবোধ রাজনীতির মঞ্চে যেন কিছুটা ম্লান হয়ে গেছে। একদল আখ্যা দিয়েছে সেনা বিদ্রোহ হিসেবে, অন্যদল নিজেদের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে এর তাৎপর্য বিকৃত করেছে বারবার। অথচ, ইতিহাসের প্রকৃত বিচার হয় আবেগ দিয়ে নয়, বাস্তবতার নিরিখে; ফলাফল দিয়ে। আর ফলাফল বলছে—এই দিনটির ফলেই বাংলাদেশ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে পেয়েছে, গণতন্ত্রের পথ খুলেছে এবং এক নতুন রাজনৈতিক দর্শনের জন্ম হয়েছে। বিএনপি মূলত গণতন্ত্র, আস্থা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ, অর্থনৈতিক ও ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। ফলে আজকের বিএনপির দায় ও দায়িত্ব অনেক বেড়েছে। বিএনপি কেবল একটি দল নয়; একটি দর্শন, যা মূলত ৭ নভেম্বরের যোগ্য উত্তরাধিকার। জিয়াউর রহমান যে দর্শন রেখে গেছেন তা হলো, বাস্তববাদ, কর্মনিষ্ঠা এবং জাতীয় ঐক্য—বিএনপির পুনর্জাগরণের ডাক। সিপাহী বিপ্লব ও সংহতি দিবসে বিএনপি অবস্থানকে তিনভাবে মূল্যায়ন করা যায়।

প্রথমত রাষ্ট্রের আরও সংকটকালীন মুহূর্ত সন্নিকটে, এজন্য বিএনপিকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ সংহতি সুদৃঢ় ও পোক্ত করার পাশাপাশি জাতীয় ঐক্য নিয়ে কাজ করতে হবে। দলের ভেতরে বিশ্বাসের ভিত্তি আরও মজবুতের পাশাপাশি জাতীয় বিভাজন রেখা চিরতরে বন্ধ করে জনগণের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ গড়ার দিকে মনোযোগী হবে । কারণ, ৭ নভেম্বরের মূল শিক্ষা ছিল—ঐক্যই শক্তি। আজকের বাংলাদেশকে স্বীকার করতে হবে, বিএনপির জন্ম হয়েছিল জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য, বিভাজনের জন্য নয়, যা দলটি চলমান রেখেছে এবং আমরা আশা করব ভবিষ্যতে এই ধারা তারা অব্যাহত রাখবে।

দ্বিতীয়ত বিএনপির এখন প্রয়োজন বাস্তবমুখী রাজনীতি। জিয়াউর রহমান কর্মঠ মানুষ ছিলেন, বক্তৃতার নয়। তার নীতি ও আর্দশ ছিল, কী কাজ সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আজকের বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপিকেও সেই পথেই ফিরতে হবে। দেশের বড় সংকট যতটা রাজনীতি তারচেয়েও কয়েকগুণ বেশি—চাকরি, মূল্যস্ফীতি ও জান ও জীবনের নিরাপত্তা। তরুণ প্রজন্ম বর্তমানে দিক ও দিশাহারা, কারণ তারা কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা পাচ্ছে না। বর্তমান বিএনপি যদি সত্যিকারভাবে মেজর জিয়াউর রহমানের আদর্শে বিশ্বাসী হয়,তাহলে দেশ ও জনগণমুখী হবে এবং রাজনীতির মাধ্যমে জনগণের কর্মসংস্থান ও অর্থনীতি মুক্তির লড়াই জারি রাখবে। যার মাধ্যমে দেশের তরুণরা প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে আত্মনির্ভর হবে, এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

তৃতীয়ত নির্বাচন ও ক্ষমতাগ্রহণ পরবর্তীতে বিএনপিকে অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদের দর্শন বাস্তবায়নের ভূমিকায় দেখতে চায় এ দেশের জনগণ। যেমন বিদেশি বিনিয়োগের পাশাপাশি দেশীয়- ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সুরক্ষা, বিনিয়োগ এবং কৃষিকে লাভজনক করে গড়ে তোলা—যা জিয়ার নীতি ও দর্শন। কারণ, গরিব মানুষের দল হিসেবে বিএনপির শক্তি গ্রামীণ অর্থনীতিতে; সেই বাস্তবতা বাস্তবায়নই হবে বাংলাদেশের উন্নয়ণ।

জাতীয় ঐক্য, সমন্বয়, নীতি ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন, কর্ম ও যোগ্যতার মূল্যায়ন এবং কাজের পুনর্লিখন ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশের বাস্তব ‍উদাহরণ। তাই মাঠ ও মতবাদ গোছানো, জান ও জীবনের নিরাপত্তার আওয়াজ, অর্থ ও কর্মসংস্থানের ভিত্তি বাস্তবায়নই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সিপাহী বিপ্লব ও সংহতি দিবসের তাৎপর্য। এই দিনে সেনা ও জনতা এক হয়েছিল রাষ্ট্রকে বাঁচাতে, আজকে আবার গণতন্ত্র চর্চার সংকটকাল চলছে, বিএনপি থাকবে সেই ঐক্যের নেতৃত্বে আর  গণতন্ত্র বাঁচানোর ভূমিকায়, যা বাস্তবায়ন হবে—বক্তৃতায় নয়, কর্মকৌশলে।

আলোচনার শুরুতে বলা হয়েছে, বিএনপি গরীব ও মেহনতি মানুষের দল। এই দিনে জনতা এবং সেনাদের সমন্বয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়। ৭ নভেম্বর সমুন্নত রেখে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারসাম্যের এক নতুন অধ্যায় শুরু। কারণ ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে—যে শক্তি জনগণের সঙ্গে মিশে থাকে, রাজনীতি কর্মনিষ্ঠা ও সংহতির ওপর দাঁড়িয়ে থাকে, শেষ পর্যন্ত সময় তাদের পক্ষেই যায়। বিএনপির অবস্থান সেখানেই।

লেখক: কবি ও কথাসাহিত্যিক
 

ঢাকা/তারা//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বন্দরে এমপি প্রার্থী মাওলানা মইনুদ্দিন আহমাদ-এর গণসংযোগ 
  • একটি দল দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে: মির্জা আব্বাস
  • একটি দলের দায়িত্বশীল ব্যক্তি কীভাবে বলেন ‘নো হাঙ্কি পাঙ্কি’, প্রশ
  • ৭ নভেম্বর: ঐতিহাসিক বাস্তবতা, গণতন্ত্র ও বিএনপির প্রাসঙ্গিকতা
  • জামায়াতের কেউ এমপি হলে সরকারি প্লট ও বিনা ট্যাক্সের গাড়ি নেবেন না : শফিকুর রহমান
  • চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রাজনীতি করতে চাই: নাসীরুদ্দীন
  • এনসিপির প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্য
  • প্রয়োজনে প্রথম আলোর সম্পাদককে মনোনয়ন দেবে এনসিপি: নাসীরুদ্দীন
  • নির্বাচন দেরি হলে বিভিন্ন ধরনের আশঙ্কা–বিশৃঙ্খলার সম্ভাবনা আছে: জামায়াতের আমির