চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলতি বছরে সরকারি প্রকল্পের আওতায় বিদেশে আম রপ্তানিতে ধস নেমেছে। তবে এবার প্রকল্প বহির্ভূত আম রপ্তানিতে বিশ্ববাজার জয় করেছেন ব্যক্তিগত উদ্যোক্তারাই। ফলে আম রপ্তানিতে সরকারি উদ্যোগের চেয়ে বেসরকারি খাতের শক্তিশালী ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়েছে। 

আম চাষিদের দাবি, যথাযথ প্যাকেজিং, কার্গো ভাড়া বৃদ্ধিসহ কিছু জটিলতা কাটাতে পারলেই আম রপ্তানির জোয়ার বইবে।

চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ১৫২ দশমিক ২৩ মেট্রিক টন আম রপ্তানি হয়েছে এমনই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক পরীসংখ্যানে। এতে বলা হয়, সরকারি প্রকল্পভুক্ত বিদেশে আম রপ্তানির পরিমাণ ৬৩ দশমিক ৮৭ মেট্রিক টন। 

অন্যদিকে প্রকল্প বহির্ভূত ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৮৮ দশমিক ৩৬ মেট্রিক টন আম রপ্তানি হয়। যা সরকারি প্রকল্পের থেকে এখন পর্যন্ত চলতি মৌসুমে ব্যক্তিগত উদ্যোগেই ২৪ দশমিক ৪৯ মেট্রিক টন বেশি আম রপ্তানি হয়েছে। এসব আম গেছে ইংল্যান্ড, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় ৭৫৬ দশমিক ৩০ হেক্টর জমিতে ২৭৭ জন চাষি ফলটি আবাদ করছেন। এ সরকারি প্রকল্পের আওতায় এবার ৫ হাজার ৯৮২ মেট্রিক টন রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় ৩৫ জন চাষি আমের আবাদ করছেন ৯৫ দশমিক ৫ হেক্টর জমিতে। এছাড়া শিবগঞ্জে ৫৫ চাষি ১৯৫ দশমিক ৩ হেক্টরে, গোমস্তাপুরে ৫০ চাষি ১৯৯ হেক্টরে, নাচোলে ৪০ চাষি ১৬১ হেক্টরে এবং ভোলাহাটে ৯৭ জন চাষি ১০৫ দশমিক ৫ হেক্টর জমিতে রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন করেছেন।

এবারের আমের মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন আম নেবে চিন এমনই দাবি তুলে কিছু গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করে। সেই আশায় বুক বেঁধে চাষিরা উত্তম কৃষি চর্চার মাধ্যমে আম উৎপাদন করেছিলেন। কিন্তু কৃষকের স্বপ্ন ভেঙে দিয়ে এখন পর্যন্ত চাঁপাইনবাবঞ্জ থেকে মাত্র ১ মেট্রিক টন অর্থাৎ ১ হাজার কেজি আম রপ্তানি হয়েছে চীনে। এরমধ্যে ৫০০ কেজি করে ল্যাংড়া ও আম্রপালি রয়েছে। এই দুই রকমের আম ১০০ টাকা কেজি দরে চীনে রপ্তানি করেছে আকিজ গ্রুপ।

আম রপ্তানির প্রক্রিয়া বিভিন্ন ধরনের জটিলতার কারণে যথাযথ সময়ে বিদেশে আম পাঠাতে পারেন না চাষিরা। ফলে তারা অর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। চাষিদের ভাষ্য- আম রপ্তানির ক্ষেত্রে ফাইটোস্যানিটারি সনদ খুবই জরুরি। কিন্তু সময়মতো সনদটি না পাওয়ায় রপ্তানি করতে বাধা সৃষ্টি হয়। হট ওয়াটার টিটমেন্ট প্ল্যান্ট অর্থাৎ রপ্তানির জন্য আমকে ক্ষতিকারক পোকামাকড় থেকে মুক্ত করতে গরম পানির শোধনাগারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত সংখ্যক এ ধরনের প্ল্যান্ট না থাকায় অনেক আম রপ্তানির অনুপযোগী হয়ে পড়ে। 

এবার বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশে আম পরিবহনে খরচ বেশি। যা রপ্তানি পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয় এবং অন্যান্য দেশের আমের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে সমস্যা সৃষ্টি করে। এছাড়া রপ্তানির জন্য আমের সঠিক প্যাকেজিং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানসম্মত প্যাকেজিং না থাকার কারণে অনেক সময় আম ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা ক্রেতারা সেসব আম কিনতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি অ্যাসোসিশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম মানিক রাইজিংবিডিকে বলেন, “গত বছরের তুলনায় কার্গো ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় এবার আম রপ্তানি কম। জেলায় একটি কোয়ারেন্টাইন সেন্টার থাকলেও সেখানে জনবল নেই। যার কারণে ফাইটোস্যানিটারি সনদ পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ঢাকায় গিয়ে এই সনদের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। এছাড়া চাষি ও রপ্তানিকারকদের মধ্যে দুর্বল যোগাযোগের কারণে আম রপ্তানিও কম হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কৃষি সম্প্রসারণ থেকে আম চাষিদের সহায়তা করা হলে আগামীতে রপ্তানি বাড়বে।”

তিনি আরও বলেন, “রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় শুধু কাঁচা আম বিদেশে পাঠানোর লক্ষ্য থাকলে কখনই সরকারি উদ্দেশ্যে সফল হবে না। সেক্ষেত্রে আমের প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি করা গেলে চাষিরা আম উৎপাদন করে লাভোবান হবে। তাহলেই একটি শক্তিশালী সাপ্লাই চেইন তৈরি হবে।”

চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড.

মো. ইয়াছিন আলী রাইজিংবিডিকে বলেন, “রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনীভুক্ত চাষিরা ৬৩ দশমিক ৮৭ মেট্রিক টন এবং প্রকল্প বহির্ভূত চাষিরা ৮৮ দশমিক ৩৬ মেট্রিক টন আম রপ্তানি করেছেন। তবে প্রকল্প বহির্ভূত চাষিদের অনেকেই বিভিন্ন্ সময়ে আমাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমের আবাদ করেছেন। আমাদের শেখানো পদ্ধতিতে আম চাষ করে তারা বিদেশে রপ্তানি করেছেন।”

এ বিষয়ে রপ্তানিযোগ্য প্রকল্প পরিচালক আরিফুর রহমান বলেন, “এখনও আম রপ্তানির সময়সীমা শেষ হয়ে যায়নি। আরও একমাস ধরে বিদেশে আম পাঠানোর কার্যক্রম চলবে। আশা করা যাচ্ছে এই প্রকল্পের মাধ্যমে আম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।”

ঢাকা/শিয়াম/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রকল প র আওত য় ম ট র ক টন আম প ইনব বগঞ জ র লক ষ কর ছ ন দশম ক সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

হালনাগাদ ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ: মোট ভোটার ১২ কোটি ৬১ লাখের বেশি

হালনাগাদ কার্যক্রম শেষে ২০২৫ সালের ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

হালনাগাদ কার্যক্রমের মাধ্যমে তালিকায় নতুন যুক্ত হচ্ছেন ৪৫ লাখ ৭১ হাজার ২১৬ জন ভোটার (২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে যাঁদের জন্ম)। পাশাপাশি তালিকা থেকে ২১ লাখ ৩২ হাজার ৫৯০ জন মৃত ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে খসড়া তালিকা অনুযায়ী, এখন (৩০ জুন পর্যন্ত) দেশে মোট ভোটার ১২ কোটি ৬১ লাখ ৭০ হাজার ৯০০ জন।

আজ রোববার দুপুরে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সচিব আখতার আহমেদ খসড়া ভোটার তালিকার এ তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। হালনাগাদ কার্যক্রমের তথ্য একটি সম্পূরক তালিকায় সংশ্লিষ্ট সব উপজেলা/থানা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে প্রকাশ করা হয়েছে।

খসড়া তালিকা নিয়ে কারও কোনো দাবি বা আপত্তি থাকলে তা আগামী ১২ দিনের মধ্যে জানাতে হবে। দাবি–আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে ৩১ আগস্ট চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।

হালনাগাদ কার্যক্রমে যেসব ভোটার অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, তার মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি। এবার ২৭ লাখ ৭৬২ জন নারী ভোটারের নাম খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর পুরুষ ভোটার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন ১৮ লাখ ৭০ হাজার ২০৩ জন। হিজড়া পরিচয়ে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন ২৫১ জন।

নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যাঁদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তাঁদেরও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তাঁরাও আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। আগামী ৩১ অক্টোবর বা তারপরে তরুণ ভোটারদের সম্পূরক তালিকা প্রকাশ করা হবে। সব মিলিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সারা দেশে ভোটারের সংখ্যা আরও বাড়বে।

আরও পড়ুনডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ভোটের তফসিল, প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ভোট০৭ আগস্ট ২০২৫আরও পড়ুনভোটের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন০৬ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ