কীভাবে মরল, কেন মরল—উয়েফাকে প্রশ্ন মোহাম্মদ সালাহর
Published: 10th, August 2025 GMT
লিভারপুলের তারকা ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ সালাহ ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনি ফুটবলার সুলেইমান আল-ওবেইদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে উয়েফার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা একটি টুইটের সমালোচনা করেছেন। এই পোস্টে তাঁর মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (পিএফএ) জানায়, সুলেইমান আগের দিন দক্ষিণ গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তার জন্য অপেক্ষা করার সময় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন। ৪১ বছর বয়সী সুলেইমানকে ‘ফিলিস্তিনের পেলে’ বলা হতো। ২৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে দুটিসহ ক্যারিয়ারে শতাধিক গোল করেছিলেন সুলেইমান।
শুক্রবার ইউরোপীয় ফুটবল সংস্থা উয়েফার এক্স পেজ থেকে সুলেইমানের স্মরণে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। সেখানে লেখা হয়, ‘বিদায় সুলেইমান আল-ওবেইদ, “ফিলিস্তিনি পেলে”। একজন প্রতিভাবান খেলোয়াড়, যিনি ঘোর দুঃসময়েও অসংখ্য শিশুকে আশা জুগিয়েছেন।’
সুলেইমানকে স্মরণ করলেও তাঁর মৃত্যু কোথায় কীভাবে হয়েছে, তা এড়িয়ে গেছে উয়েফা। শনিবার লিভারপুলের মিসরীয় ফুটবলার সালাহ উয়েফার সেই পোস্ট শেয়ার করে সংস্থাটির প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন। লিখেছেন, ‘আপনারা কি বলতে পারেন তিনি কীভাবে, কোথায় এবং কেন মারা গেছেন?’
গত ২৯ জুলাই ফিলিস্তিন অলিম্পিক কমিটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, শুধু জুলাই মাসেই গাজা ও দখলকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের হামলায় ৪০ জন ফিলিস্তিনি ক্রীড়াবিদ নিহত হয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘একেকটি দিন যায় আর ফিলিস্তিনের ক্রীড়াঙ্গনে বিয়োগান্ত ঘটনার নতুন অধ্যায় যোগ হয়।’
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে প্রায় বিরতিহীন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এসব হামলায় এখন পর্যন্ত ৬১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। শনিবার হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৩৮ জন নিহত এবং ৪৯১ জন আহত হয়েছেন।
এ মাসের শুরুতে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মে মাসের শেষের দিকে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল-সমর্থিত সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণের কেন্দ্র স্থাপনের পর থেকে খাবার চাইতে গিয়ে ১ হাজার ৩৭৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
আরও পড়ুনফিলিস্তিন ফুটবলের ‘লায়ন’কেও মেরে ফেলল ইসরায়েলি বাহিনী১৪ মার্চ ২০২৪লিভারপুল ফরোয়ার্ড সালাহ এর আগেও গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের পক্ষে কথা বলেছেন এবং ‘নিরীহ মানুষের হত্যা বন্ধ করতে বিশ্বনেতাদের একত্রিত হওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছিলেন।
সুলেইমানের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিংবদন্তি এরিক ক্যান্টোনা নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে লিখেছিলেন, ‘সাহায্য পাওয়ার আশায় রাফায় অবস্থান করার সময় ফিলিস্তিন জাতীয় দলের তারকা সুলেইমান আল-ওবেইদকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। তাকে “ফিলিস্তিনের পেলে” ডাকা হতো। আমরা তাদের আর কত গণহত্যা করতে দেব? ফিলিস্তিন মুক্ত হোক।’
আরও পড়ুনফিলিস্তিনের পক্ষে থাকায় সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত, প্রতিবাদে সাক্ষাৎকার দিলেন না উসমান খাজা২৬ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নারীর ভোটাধিকার বাতিল চেয়ে যাজকদের মন্তব্যে হেগসেথের সমর্থন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট
নারীর ভোটাধিকার নিয়ে যাজকদের করা নেতিবাচক মন্তব্যের ভিডিও সমর্থন করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। এতে সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি।
ভিডিওতে একটি খ্রিষ্টান জাতীয়তাবাদী গির্জার একাধিক যাজক মত দেন, নারীদের আর ভোট দেওয়ার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়।
গত বৃহস্পতিবার রাতে এক্সে পুনঃপ্রকাশ করা হেগসেথের পোস্টে দেখা গেছে, তিনি খ্রিষ্টান জাতীয়তাবাদী এক যাজকের সঙ্গে গভীর ও ব্যক্তিগত সম্পর্ক রাখেন, যাঁর ধর্ম ও নারীর ভূমিকা বিষয়ে চরমপন্থী দৃষ্টিভঙ্গি আছে।
হেগসেথ তাঁর পোস্টে সিএনএনের প্রায় সাত মিনিটের এক প্রতিবেদন নিয়ে মন্তব্য করেন। কমিউনিয়ন অব রিফর্মড ইভানজেলিক্যাল চার্চেসের (সিআরইসি) সহপ্রতিষ্ঠাতা ডগ উইলসনের কর্মকাণ্ড নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে সিএনএন। প্রতিবেদনে উইলসনস চার্চের একজন যাজক মার্কিন সংবিধান থেকে নারীর ভোটাধিকার বাতিলের পক্ষে মত দেন। অন্য আরেকজন যাজক বলেন, তাঁর প্রত্যাশিত ‘আদর্শ সমাজে’ মানুষ পরিবারভিত্তিক ভোট দেবে। ভিডিওতে একজন নারী সদস্যকেও বলতে শোনা যায়, তিনি তাঁর স্বামীর প্রতি অনুগত।
ভিডিওটি পোস্ট করে হেগসেথ লিখেছেন, জীবনের সব ক্ষেত্রে খ্রিষ্টধর্মের বিধান প্রভাব বিস্তার করবে। হেগসেথের পোস্টে ১২ হাজারের বেশি লাইক ও ২ হাজারের বেশি শেয়ার হয়। কিছু ব্যবহারকারী ভিডিওতে থাকা যাজকদের মতের সঙ্গে একমত হলেও অনেকে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর খ্রিষ্টান জাতীয়তাবাদী ধারণা প্রচারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তবে প্রগ্রেসিভ ইভানজেলিকাল সংগঠন ‘ভোট কমন গুড’-এর নির্বাহী পরিচালক ও যাজক ডগ পাগিট বলেন, ভিডিওতে প্রচারিত মতামত শুধু ‘খ্রিষ্টানদের এক ক্ষুদ্র প্রান্তিক অংশের’ ধারণা এবং হেগসেথের এগুলো প্রচার করাকে তিনি ‘খুবই বিরক্তিকর’ বলে উল্লেখ করেন।
পেন্টাগনের প্রধান মুখপাত্র শন পারনেল গত শুক্রবার অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেছেন, হেগসেথ এমন ‘একটি চার্চের গর্বিত সদস্য’, যা সিআরইসির সঙ্গে যুক্ত। তিনি উইলসনের অনেক লেখা ও শিক্ষাকে অত্যন্ত মূল্যায়ন করেন।
গত মে মাসে হেগসেথ তাঁর ব্যক্তিগত যাজক ব্রুকস পোটেইগারকে পেন্টাগনে আমন্ত্রণ জানান। সেখানে তিনি সরকারি কর্মঘণ্টায় একাধিক খ্রিষ্টান প্রার্থনাসভার প্রথমটি পরিচালনা করেন। প্রতিরক্ষা দপ্তরের কর্মী ও সামরিক সদস্যরা বলেন, তাঁরা এ অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র সরকারি ই–মেইলে পেয়েছিলেন।
সিএনএনের প্রতিবেদনে উইলসন বলেন, ‘আমি এ দেশকে একটি খ্রিষ্টান দেশ হিসেবে দেখতে চাই এবং চাই বিশ্বও খ্রিষ্টান বিশ্ব হোক।’