ঢাকার কেরানীগঞ্জে ঢাকা ইস্ট–ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য প্রস্তাবিত স্টেশন জনবসতিপূর্ণ গ্রাম থেকে অন্যত্র সরানোর দাবিতে বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় ঢাকা–মাওয়া মহাসড়কে এ অবরোধে কয়েক শ মানুষ অংশ নেন। এ সময় বিভিন্ন স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে মহাসড়ক।

প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলা অবরোধে মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিনাত ফৌজিয়া ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তিনি বিক্ষোভকারীদের দাবির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন। তাঁর এ আশ্বাসে পরবর্তী সময়ে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাংলাদেশের একটি নির্মাণাধীন প্রকল্প। এটি ঢাকা-বাংলাবান্ধা মহাসড়ক ও ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ককে ঢাকা-টেকনাফ মহাসড়কের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করবে। এই মেগা প্রকল্পের অংশ হিসেবে কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় একটি স্টেশন বা হাব নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পাশে প্রাথমিকভাবে প্রায় দুই একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এই স্থানে ১৩টি গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ বসবাস করেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা, এখানে স্টেশন নির্মিত হলে তাঁরা পৈতৃক ভিটেমাটিছাড়া হবেন।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, কেরানীগঞ্জের ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে তেঘরিয়া ইউনিয়ন ইতিমধ্যে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের জন্য সবচেয়ে বেশি জমি হারিয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সেনা ক্যাম্প, র‍্যাব-১০ সদর দপ্তর, রেললাইনসহ নানা প্রকল্পের জন্য শত শত একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এতে হাজারো পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। প্রস্তাবিত এ প্রকল্পের জন্য প্রায় দুই একর জমি লাগবে। এতে নতুন করে বহু পরিবার ভিটেমাটি হারাবে বলে তাঁরা অভিযোগ করেন।

রাজেন্দ্রপুর বসতভিটা রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক নুর হোসেন মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে আমাদের বাপ-দাদার বসতভিটা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, খেলার মাঠসহ সর্বস্ব হারাতে হবে। আমরা চাই, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হোক। তবে সেটি যেন জনস্বার্থবিরোধী না হয়। প্রস্তাবিত জায়গা থেকে মাত্র এক কিলোমিটার পূর্বদিকে পয়েন্টটি সরিয়ে নিলেই গ্রামগুলো রক্ষা পাবে।’

রাজেন্দ্রপুর এলাকার বাসিন্দা ও ঢাকা জেলা (দক্ষিণ) ছাত্রদলের সভাপতি পাভেল মোল্লা দাবি করেন, ‘নকশা অনুযায়ী প্রকল্পটি বিগত সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের মালিকানাধীন আবাসন প্রকল্প প্রিয়প্রাঙ্গণের ভেতর দিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও পরে তা পরিবর্তন করে আমাদের গ্রামগুলোর ওপর চাপানো হয়েছে। আমাদের দাবি, প্রস্তাবিত স্টেশনটি সাধারণ মানুষের ভিটেমাটি থেকে সরিয়ে ওই আবাসন প্রকল্পের ভেতরে স্থাপন করা হোক।’

রাজেন্দ্রপুর বাজার এলাকার বাসিন্দা কৃষক জহিরুল হক বলেন, ‘যে গ্রামগুলোর ওপর দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে, সেখানে তিন ফসলি জমিও আছে। আমরা ওই জমিতে চাষাবাদ করে ঘর-সংসার চালাই। জমি হারালে রুটিরুজির সব পথ বন্ধ হয়ে যাবে। কৃষক ও গ্রামবাসীর স্বার্থে প্রকল্পটি অন্য জায়গায় পাস করা হোক।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ব ত প রকল প র র এল ক র জন য অবর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মাথায় রেখে নকশায় গুরুত্ব প্রদান

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবকে মাথায় রেখে স্থাপনার নকশা প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম। স্থাপত্য শাখার নোবেল হিসেবে খ্যাত আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার বিজয়ী এই স্থপতি বলেছেন, “একজন শিল্পী একটি দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন, আর তার শিল্পকর্ম তাকে সারা জীবন বাঁচিয়ে রাখে।”

শনিবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে ‘সিরামিক বাংলাদেশ ম্যাগাজিন’ আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধে তিনি এসব কথা বলেন। 

‘বিটুইন ইরোশন অ্যান্ড ইমারজেন্সি’ শিরোনামে উপস্থাপনায় মেরিনা তাবাসসুম তার দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “স্থাপত্য কেবল ভবন নির্মাণ নয়, এটি সংস্কৃতি, সমাজ ও মানুষের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত একটি জীবন্ত শিল্প। একজন স্থপতির দায়িত্ব শুধু কাঠামো তৈরি নয়, বরং এমন কিছু সৃষ্টি করা যা মানুষের জীবন, পরিবেশ ও সময়ের সঙ্গে কথা বলে।”

মেরিনা তাবাসসুম বলেন, “আমাদের কাজ যেন এই মাটির বাস্তবতার সঙ্গে মিশে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তন, নগরায়ণ এবং মানুষের জীবনধারার পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্থাপত্যের ভাষা বদলাতে হবে।”

তিনি যোগ করেন, “চরাঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে বাঁচে। তাদের জীবনযাপন ও বাসস্থানকে টেকসইভাবে গড়ে তুলতে স্থাপত্যের নতুন ধারণা প্রয়োগ জরুরি।”

মেরিনা তাবাসসুম জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং পুনর্বাসনযোগ্য ঘর তৈরিতে তার দল ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করছে। এসব প্রকল্পে স্থানীয় মানুষকে যুক্ত করে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী নকশা তৈরি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধু স্থাপনা নির্মাণ নয়, বরং মানুষের সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য সৃষ্টি করা। চরাঞ্চলের মানুষকে আত্মনির্ভর করে তুললেই প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব।”

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন- সিরামিক বাংলাদেশ ম্যাগাজিনের সিনিয়র অ্যাডভাইজর, আরকিকানেক্টের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্থপতি জালাল আহমেদ। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের স্থাপত্য আজ বিশ্বে নিজস্ব অবস্থান তৈরি করেছে। মেরিনা তাবাসসুমের মতো স্থপতিরা আমাদের গর্ব এবং নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।”

পুরো অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন স্থপতি মৌসুমী আহমেদ। স্থপতি মাহমুদুল আনোয়ার রিয়াদের সঞ্চালনায় পরে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন প্রফেসর জয়নাব ফারুকী আলী, স্থপতি নাহাস আহমেদ খলিল ও প্রফেসর ফুয়াদ হাসান মল্লিক।

সমাপনী বক্তব্যে বিসিএমইএ প্রেসিডেন্ট ও মুন্নু সিরামিকের ভাইস চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম বলেন, “দেশের স্থাপত্য ও সিরামিক শিল্প একে অপরের পরিপূরক। শিল্প, শিক্ষা ও গবেষণার সমন্বয় ঘটিয়ে এই খাতকে আরও এগিয়ে নিতে হবে।”

অনুষ্ঠানে দেশের প্রখ্যাত স্থপতি, প্রকৌশলী, সিরামিক শিল্প উদ্যোক্তা, শীর্ষ কর্মকর্তা ও সিনিয়র সাংবাদিকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ