সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র থেকে পাথর লুটের ঘটনায় অভিযানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোর্সমেন্ট টিম। রাষ্ট্রীয় পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন ও লুটের অভিযোগে এ অভিযান পরিচালিত হয়।

বুধবার বেলা দুইটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত দুদকের পাঁচ সদস্যের একটি দল পরিদর্শন করে দোষীদের শনাক্তের কাজ শুরু করে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদকের সিলেট সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাফি মো.

নাজমুস্ সাদাৎ।

অভিযান-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র থেকে কয়েক শ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় খনিজ সম্পদ তথা পাথর অবৈধভাবে উত্তোলন করে আত্মসাতের অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক অভিযান চালায়। প্রাথমিকভাবে তাঁরা এ অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। এ লুটপাটে কারা সম্পৃক্ত ছিলেন, সেটাও তাঁরা শনাক্ত করার কাজ করছেন।

দুদকের উপপরিচালক রাফি মো. নাজমুস্ সাদাৎ প্রথম আলোকে বলেন, লুটপাটে স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রভাবশালী লোক, পাথর–সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জড়িত ছিলেন। তাঁদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ ও খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো নিষ্ক্রিয় ছিল বা বাধা দেয়নি। এ কারণে এ লুটপাট ঠেকানো যায়নি বলে দুদক জানতে পেরেছে। অভিযান শেষে দুদক পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।

দুদক সূত্র জানায়, দুদক দল সরেজমিনে দেখতে পায়, ঘটনাস্থলে স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন সেবা চালু আছে। নদীর তীরেই বিজিবি ক্যাম্প এবং বিজিবি সদস্যরা টহল দিচ্ছেন। বছরখানেক সময় ধরে প্রশাসনের সামনে এবং স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের ইন্ধন ও সরাসরি সম্পৃক্ততায় পাথর উত্তোলন করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পাথর চুরির প্রক্রিয়াটি প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় সংঘটিত হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। সেই পাথর স্থানীয় পাথর ভাঙার (স্টোন ক্রাশার) যন্ত্রে ভাঙা হয়েছে, যাতে চুরি করা পাথরের অস্তিত্ব না পাওয়া যায়।

এদিকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সাদাপাথর ও আশপাশের এলাকায় অভিযান শুরু হয়। বেলা সাড়ে চারটা পর্যন্ত এ অভিযান অব্যাহত ছিল। এ সময় সাদাপাথরের পাশের কালাইরাগ এলাকা থেকে অবৈধভাবে উত্তোলন করা ১২ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়। এসব পাথর আবার সাদাপাথরে রাখার প্রস্তুতি চলছে। এ ছাড়া কলাবাড়ি এলাকায় পাথর ভাঙার কাজে ব্যবহৃত বেশ কিছু যন্ত্রের বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহার প্রথম আলোকে বলেন, নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে অভিযান চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন। অভিযানে শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখতে সেনাবাহিনী সহায়তা করছে। সীমান্ত এলাকা হওয়ায় যতটুকু পর্যন্ত সেনাবাহিনী যেতে পারে, তারা ততটুকু পর্যন্ত গেছে।

একইভাবে সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ের বল্লাঘাট, ঝুমপাহাড় ও জিরো পয়েন্ট এলাকায়ও আজ বেলা একটা থেকে চারটা পর্যন্ত অবৈধ পাথর ও বালু উত্তোলন ঠেকাতে অভিযান চালানো হয়। এতে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার পলি রানী দেব।

অভিযান-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অভিযানে অবৈধভাবে বালু ও পাথর উত্তোলনে ব্যবহৃত ১০০টি বারকি নৌকা ভেঙে ফেলা হয়। পাশাপাশি অবৈধভাবে উত্তোলন করা ১৩০ ফুট বালু জব্দ করা হয়।

এর আগে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ২০২০ সাল থেকে সরকারি নির্দেশনায় বন্ধ থাকা সিলেটের সব কটি পাথর কোয়ারিতে গণলুট শুরু হয়। কয়েক হাজার পাথরশ্রমিক প্রকাশ্যে পাথর উত্তোলন শুরু করেন। বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের পৃষ্ঠপোষকতায় এ লুটপাট চলে বলে অভিযোগ। তখন অন্যান্য পাথর কোয়ারিতে গণলুট চললেও তুলনামূলকভাবে পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথরে লুটপাট কম হয়। তবে গত ২৩ এপ্রিল থেকে সাদাপাথর এলাকায় আবার পাথর লুট শুরু হয়। গত এক সপ্তাহ দেদার লুটপাট চালিয়ে এলাকাটির প্রায় ৮০ শতাংশ পাথর তুলে ফেলা হয়।

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সীমান্তের শূন্যরেখার কাছে ধলাই নদের উৎসমুখেই সাদাপাথরের অবস্থান। প্রায় ১৫ একর এলাকাজুড়ে এ পর্যটনকেন্দ্র। ছোট-বড় অসংখ্য পাথরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত জলের স্রোতোধারা এ পর্যটনকেন্দ্রের মূল আকর্ষণ। এই সৌন্দর্যের টানে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের কয়েক হাজার পর্যটক ভিড় জমান। এখন পাথর লুট হয়ে যাওয়ায় পর্যটকেরা হতাশ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এল ক য় ল টপ ট

এছাড়াও পড়ুন:

বাড্ডায় মন্দিরে দায়িত্বরত পুলিশের গুলি চুরি, ওসি প্রত্যাহার ও ৭ পুলিশ বরখাস্ত

রাজধানীর বাড্ডায় একটি মন্দিরে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ৩০টি গুলি চুরির ঘটনায় বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে থানার একজন উপপরিদর্শক (এসআই), একজন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ও পাঁচজন কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) একাধিক সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ডিএমপির গুলশান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাড্ডার নিমতলীর শ্রীশ্রী মহাদেব আশ্রম ও কালীমন্দিরে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের জন্য মন্দিরের সীমানাপ্রাচীরের মধ্যে থাকা একটি নির্মাণাধীন ভবনের দোতলায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে মঙ্গলবার ভোররাত সাড়ে চারটা থেকে সাড়ে পাঁচটার মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা চারজন পুলিশ সদস্য ও তিনজন আনসার সদস্যের পাশ থেকে তাঁদের ব্যবহৃত চারটি ব্যাগ, দুটি মানিব্যাগ ও তিনটি মুঠোফোন চুরি হয়। এর মধ্যে একটি ব্যাগে শটগানের ৩০টি গুলি ছিল। পরে সকাল পৌনে ১০টায় পুলিশ মণ্ডপের পাশের একটি জায়গা থেকে চুরি হওয়া গুলিগুলো অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দায়িত্বে অবহেলার কারণে একজন উপপরিদর্শক, একজন সহকারী উপপরিদর্শক এবং পাঁচজন কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে ওসি প্রত্যাহারের অফিস আদেশ এখনো পাইনি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাড্ডা থানার নতুন ওসি হাবিবুর রহমান
  • রেললাইনে বিকল যাত্রীবাহী অটোরিকশা, ট্রেনের ধাক্কায় মা-মেয়ে নিহত
  • বাড্ডায় মন্দিরে দায়িত্বরত পুলিশের গুলি চুরি, ওসি প্রত্যাহার ও ৭ পুলিশ বরখাস্ত