জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) মহালয়া উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে। যেখানে ধর্ম, বর্ণ, দল, মত নির্বিশেষে সবার এক আন্তরিক ভ্রাতৃত্বের দেখা মেলে, যা অসাম্প্রদায়িকতার এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি।

রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সাজিদ একাডেমিক ভবনের নিচতলায় অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়। দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই উৎসব সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য বিশেষ আনন্দের একটি দিন।

আরো পড়ুন:

রাবি উপ-রেজিস্ট্রারের দাঁড়িতে টান ও উপ-উপাচার্যকে সিঁড়িতে ফেলে দেওয়া হয়

ভাষা ব্যবহারে ইবির উদারতা দেশের জন্য আদর্শ হওয়া উচিত: ড.

সলিমুল্লাহ

প্রথা অনুযায়ী দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর দিনভর চলে ধর্মীয় আচার ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সন্ধ্যায় প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে মহালয়ার মূল কর্মসূচি শেষ হয়।

তবে এবারের আয়োজনের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল প্রসাদ বিতরণের সময় এক মুসলিম ছাত্রনেতার ভিন্নধর্মী উদ্যোগ।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক সদস্য আবু বকর খান শুধু প্রসাদ বিতরণেই সহায়তা করেননি, সনাতনী শিক্ষার্থীদের হাতে উপহার হিসেবে তুলে দিয়েছেন পানির বোতলও। 

শিক্ষার্থীরা জানান, তর এই ছোট্ট প্রয়াস উৎসবের আবহকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাস্তব রূপ দেখিয়েছে।

আয়োজক কমিটি জানায়, মহালয়া শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়; এটি সমাজে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও সহাবস্থানের বার্তা বহন করে। এবারের আয়োজনের মাধ্যমে সেই বার্তা আরো জোরালোভাবে প্রতিফলিত হয়েছে, যা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক ভিন্ন মাত্রার অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে তুলে ধরেছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতনী শিক্ষার্থী হৃদয় দাস বলেন, “অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ভাইয়েরা যেভাবে আমাদের উৎসবে সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ করেছে, তা সত্যিই এবারের দুর্গাপূজার চমক। আগে আমরা সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে ভয়ের মধ্যে থাকতাম, কিন্তু এবারের অভিজ্ঞতা সেই ভয়কে শক্তিতে রূপ দিয়েছে।”

আবু বকর খান বলেন, “সামাজিক সাম্য, মর্যাদা ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বদ্ধপরিকর। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম পরিচয়ের চেয়ে বাংলাদেশি পরিচয়ে দেশ গড়তে চাই। সনাতনীরা আমাদের ভাই, ভাইয়ের উৎসবে সহযোগিতা করা আমাদের কর্তব্য। এটিই শহীদ জিয়ার আদর্শ।”

জুলাই আন্দোলনে সাহসী ভূমিকা রাখা আবু বকর খান সম্প্রতি বিভিন্ন অসাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল অন ষ ঠ ন

এছাড়াও পড়ুন:

মৌলভীবাজারে সম্প্রীতির উৎসব মণিপুরি মহারাসলীলা

বর্ণাঢ্য আয়োজন আর বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে মণিপুরি সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শ্রী কৃষ্ণের মহারাসলীলা।

বুধবার (৫ নভেম্বর) সকাল থেকে মণিপুরি অধ্যূষিত জনপদ মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরে এ উৎসব উদযাপিত হচ্ছে। কমলগঞ্জের মাধবপুর শিব বাজারের জোড়ামণ্ডপ এলাকায় রাখাল নৃত্য ও রাতে রাসনৃত্য এ উৎসবের অন্যতম মূল আকর্ষণ। 

পাশাপাশি আদমপুরে মৈতৈই মণিপুরি সম্প্রদায় মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্সে এ উৎসব উদযাপন করছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) ভোরে শেষ হবে শ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা। উৎসব উপলক্ষে উভয়স্থানে মেলা বসেছে। রাস উৎসবে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার ভক্তসহ দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড়ে মুখরিত হবে কমলগঞ্জের মণিপুরি জনপদ। 

এ উপলক্ষে উভয় জায়গায় বসবে বিরাট মেলা। রাসলীলা উপলক্ষে এরইমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এলাকায় সাজ সাজ রব বিরাজ করবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

বৃহত্তর সিলেটের আদিবাসী মণিপুরি সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী মণিপুরি মহারাসলীলা উপজেলার মাধবপুর শিববাজার জোড়া মণ্ডপে মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের আয়োজনে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি সম্প্রদায়ের ১৮৩তম এবং আদমপুর মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে মৈতৈ মণিপুরি সম্প্রদায়ের ৪০তম মহারাস উৎসব হবে এবার।

কমলগঞ্জের মণিপুরি অধ্যুষিত গ্রাম ও পাড়াগুলোতে বইছে উৎসবের হাওয়া। আগামী বুধবার দুপুরে উভয় স্থানে গোষ্ঠলীলা বা রাখালনৃত্য এবং রাতে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা, গুণীজন সংবর্ধনা ও রাসনৃত্য।

উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড় মণ্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা। এছাড়া মণিপুরি রাস উৎসব উপলক্ষে বুধবার বিকাল ৫টা ও সন্ধ্যা ৬টায় মণিপুরি ললিতকলা একাডেমি মিলনায়তনে মণিপুরি থিয়েটারের আয়োজনে ‘নুংশিপি’ চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।

অপরদিকে উৎসবস্থল আদমপুরেও থাকবে যথারীতি রাখাল নৃত্য ও রাসলীলা। তবে মণিপুরি বিষ্ণুপ্রিয়া ও মণিপুরি মৈতৈ এরা আলাদা স্থানে আয়োজন করলেও উৎসবের অন্তঃস্রোত, রসের কথা, আনন্দ-প্রার্থনা সবই একই। উৎসবের ভেতরের কথা হচ্ছে বিশ্বশান্তি, সম্প্রীতি ও সত্যসুন্দর মানবপ্রেম।

আলাপকালে মণিপুরি ললিতকলা একাডেমির উপ-পরিচালক (অ: দা:) প্রভাস চন্দ্র সিংহ জানান, মণিপুরের রাজা ভাগ্যচন্দ্র মণিপুরে প্রথম এই রাসমেলা প্রবর্তন করেছিলেন।

মণিপুরের বাইরে ১৮৪২ সালে কমলগঞ্জের মাধবপুরে প্রথম মহারাস উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। রাস উৎসবে সকালে ‘গোষ্ঠলীলা’ বা ‘রাখালনৃত্য’ হয়। গোধূলি পর্যন্ত চলে এই রাখালনৃত্য। রাত ১২টা থেকে শুরু হয় রাস উৎসবের মূল পর্ব শ্রীশ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা অনুসরণ।

মণিপুরিদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের পোশাকে নেচে-গেয়ে কৃষ্ণবন্দনায় ভোর পর্যন্ত চলে রাসলীলা। রাসনৃত্যে শ্রীকৃষ্ণ, রাধা ও প্রায় ৫০ জন গোপী থাকেন। গোপীর সংখ্যা অনেক সময় কমবেশি হয়।

একটি রজনীকে কেন্দ্র করে মণিপুরিদের সংস্কৃতির এক বিশাল মিলন মেলায় পরিণত হয়। রাস উৎসবকে কেন্দ্র করে গত কয়েকদিন ধরে কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরের মণিপুরি পাড়া সমুহে চলে প্রস্তুতি ও উৎসবের আমেজ। রং ছড়িয়ে মন্ডপগুলোকে সাজানো হচ্ছে নতুন সাজে। 

রাসের দিন দুপুরে উৎসবস্থল মাধবপুরের শিববাজার উন্মুক্ত মঞ্চ প্রাঙ্গণে হবে গোষ্ঠলীলা বা রাখাল নৃত্য। রাতে জোড় মন্ডপে রাসের মূল প্রাণ মহারাসলীলা। রাস উৎসবে মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজনের পাশাপাশি অন্যান্য জাতি, ধর্মের হাজার হাজার লোক মেতে উঠবে আনন্দ-উৎসবে। উৎসব উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন স্থানসহ ভারত থেকেও মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকজন ছুটে আসেন।

মণিপুরি মহারাসলীলা সেবা সংঘের সাধারণ সম্পাদক শ্যাম সিংহ বলেন, রাস উপলক্ষে আমাদের পাড়ায় পাড়ায় প্রস্তুতি চলছে। প্রতি বছরের মতো ঐতিহ্য ও ধর্মীয় ভাবধারায় মাধবপুর জোড়ামণ্ডপে ১৮৩তম শ্রীকৃষ্ণের মহারাসলীলা আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। 

রাসলীলা মণিপুরিদের আয়োজন হলেও জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের আগমনে মানুষের মানবিক মূল্যবোধ বৃদ্ধির পাশাপাশি অপরাপর সকল জাতিগোষ্ঠীর মাঝে সম্প্রীতির বাঁধনে বেধে চলেছে এই উৎসব রাসলীলা, গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের প্রেমপ্রীতির ঐতিহ্য দর্শন।

কমলগঞ্জ থানার ওসি আবু জাফর মো. মাহফুজুল কবির জানান, নির্বিঘ্নে মণিপুরি মহারাসলীলা উপলক্ষে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। 

আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে নিরাপত্তার জন্য দুই জায়গাতেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে পুলিশ ৩ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। উৎসব নির্বিঘ্নে করার লক্ষ্যে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের টহলও থাকবে।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাখন চন্দ্র সূত্রধর জানান, ঐতিহ্যবাসী মণিপুরি রাসোৎসব উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এরইমধ্যে আইনশৃংখলা বিষয়ক সভা করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

ঢাকা/আজিজ/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনের বুকে শেষ হলো রাস উৎসব
  • স্বপ্ন, সাহস আর নেতৃত্বের উৎসবে অনুপ্রাণিত হলো হাজারো মানুষ
  • মৌলভীবাজারে সম্প্রীতির উৎসব মণিপুরি মহারাসলীলা
  • ট্রাম্পের লাল টুপি বনাম মামদানি সমর্থকদের নীল-হলুদ টুপি
  • খাগড়াছড়িতে চলছে রাস উৎসব ও মেলা
  • পুণ্যস্নান মধ্য দিয়ে কুয়াকাটায় শেষ হলো রাস উৎসব, মেলা চলবে ৫ দিন
  • প্রথম আলোর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শুরু
  • কাশ্মীর ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘নয়া মানুষ’