ভ্রাতৃত্ব ও অসাম্প্রদায়িকতায় জবিতে মহালয়া উৎসব
Published: 21st, September 2025 GMT
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) মহালয়া উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে। যেখানে ধর্ম, বর্ণ, দল, মত নির্বিশেষে সবার এক আন্তরিক ভ্রাতৃত্বের দেখা মেলে, যা অসাম্প্রদায়িকতার এক উজ্জ্বল প্রতিচ্ছবি।
রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সাজিদ একাডেমিক ভবনের নিচতলায় অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয়। দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই উৎসব সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য বিশেষ আনন্দের একটি দিন।
আরো পড়ুন:
রাবি উপ-রেজিস্ট্রারের দাঁড়িতে টান ও উপ-উপাচার্যকে সিঁড়িতে ফেলে দেওয়া হয়
ভাষা ব্যবহারে ইবির উদারতা দেশের জন্য আদর্শ হওয়া উচিত: ড.
প্রথা অনুযায়ী দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর দিনভর চলে ধর্মীয় আচার ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। সন্ধ্যায় প্রসাদ বিতরণের মধ্য দিয়ে মহালয়ার মূল কর্মসূচি শেষ হয়।
তবে এবারের আয়োজনের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল প্রসাদ বিতরণের সময় এক মুসলিম ছাত্রনেতার ভিন্নধর্মী উদ্যোগ।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক সদস্য আবু বকর খান শুধু প্রসাদ বিতরণেই সহায়তা করেননি, সনাতনী শিক্ষার্থীদের হাতে উপহার হিসেবে তুলে দিয়েছেন পানির বোতলও।
শিক্ষার্থীরা জানান, তর এই ছোট্ট প্রয়াস উৎসবের আবহকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাস্তব রূপ দেখিয়েছে।
আয়োজক কমিটি জানায়, মহালয়া শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়; এটি সমাজে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও সহাবস্থানের বার্তা বহন করে। এবারের আয়োজনের মাধ্যমে সেই বার্তা আরো জোরালোভাবে প্রতিফলিত হয়েছে, যা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক ভিন্ন মাত্রার অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে তুলে ধরেছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতনী শিক্ষার্থী হৃদয় দাস বলেন, “অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ভাইয়েরা যেভাবে আমাদের উৎসবে সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ করেছে, তা সত্যিই এবারের দুর্গাপূজার চমক। আগে আমরা সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে ভয়ের মধ্যে থাকতাম, কিন্তু এবারের অভিজ্ঞতা সেই ভয়কে শক্তিতে রূপ দিয়েছে।”
আবু বকর খান বলেন, “সামাজিক সাম্য, মর্যাদা ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বদ্ধপরিকর। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, মুসলিম পরিচয়ের চেয়ে বাংলাদেশি পরিচয়ে দেশ গড়তে চাই। সনাতনীরা আমাদের ভাই, ভাইয়ের উৎসবে সহযোগিতা করা আমাদের কর্তব্য। এটিই শহীদ জিয়ার আদর্শ।”
জুলাই আন্দোলনে সাহসী ভূমিকা রাখা আবু বকর খান সম্প্রতি বিভিন্ন অসাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল অন ষ ঠ ন
এছাড়াও পড়ুন:
গরিবের কাছে স্বপ্নের মতো একটুকরো ইলিশ
ইলিশ শুধু মাছ নয়, বাঙালির খাদ্যসংস্কৃতি ও অনুভূতির এক অনন্য প্রতীক। পূর্ণিমার রাতে নদীতে জ্যোৎস্না পড়লে যেমন মনে হয় সোনালি রূপ ঝলমল করছে, তেমনি ইলিশের রুপালি ঝলক যেন বাঙালির খাবার টেবিলে আনন্দের আলো ছড়ায়। কিন্তু সেই আলো গরিব মানুষের ঘরে পৌঁছায় না। তাদের কাছে ইলিশ আজ স্বপ্নের মতো ছোঁয়া যায় না, শুধু কল্পনায় ভেসে ওঠে।
বাংলাদেশকে ইলিশের দেশ বলা হয়। বাংলাদেশে ইলিশ শুধু খাবার নয়, আবেগ। ঈদ হোক বা পূজা, অতিথি এলে কিংবা উৎসবের দিনে, ইলিশ ছাড়া খাবারের টেবিল অসম্পূর্ণ মনে করেন অনেক মানুষ। কিন্তু এই আনন্দ সব ঘরে ভাগ হয়ে যায় না। শ্রমিক, রিকশাওয়ালা, দিনমজুর কিংবা গ্রামীণ গরিব পরিবারগুলোর কাছে ইলিশ এখন বিলাসবস্তু। একসময় বাজারে গিয়ে ছোট একটা ইলিশ কেনা গেলেও এখন দাম আকাশচুম্বী হয়ে যাওয়ায় তাদের কাছে এটা একেবারেই নাগালের বাইরে চলে গেছে।
পদ্মা, মেঘনা, যমুনা কিংবা সাগর সব জায়গায় এই মাছের সমারোহ। প্রতিবছর দেশ-বিদেশে কোটি কোটি টাকার ইলিশ বিক্রি হয়। অথচ এ দেশের অনেক গরিব মানুষ বছরের পর বছর মুখে ইলিশ তুলে খেতে পারে না। দাম এত বেশি যে সাধারণ শ্রমিক বা দিনমজুর পরিবারের কাছে এটা এখন বিলাসিতা।
দেশের প্রান্তিক শ্রমজীবী পরিবারগুলোর বেশির ভাগই বছরে একবারও ইলিশ কিনতে পারে না। কখন সর্বশেষ তারা ইলিশ খেয়েছে, তাদের বেশির ভাগেরই হয়তো মনেই থাকে না। অথচ বিশ্বে উৎপাদিত ইলিশের ৭০ শতাংশের বেশি আসে এই দেশ থেকে। বর্তমানে মাঝারি আকারের এক কেজি ইলিশের দাম দেড় হাজার টাকার ওপরে। আর একজন তৈরি পোশাক শ্রমিকের মাসিক আয় গড়ে ১০-১২ হাজার টাকা। ফলে তাঁদের জন্য ইলিশ কেনা মানেই মাসের বাজেট ভেঙে যাওয়া।
ইলিশ নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার পেছনে নানা কারণ কাজ করছে। নদীদূষণ, অতিরিক্ত নৌ চলাচল, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ইলিশের প্রজনন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে ইলিশের প্রাপ্যতা কমে গেছে। জাটকা নিধন বন্ধ না হওয়া এবং প্রজনন মৌসুমে অবৈধ জালের ব্যবহার উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছে। দালাল ও ব্যবসায়ী চক্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দেয়। ফলে মধ্যবিত্তও হিমশিম খায়, আর গরিবদের জন্য ইলিশ নাগালের বাইরেই থেকে যায়। উৎসবের মৌসুমে চাহিদা বেড়ে যায়, কিন্তু সরবরাহ সীমিত থাকে। এতে দাম দ্বিগুণ-তিনগুণ হয়ে যায়। সব মিলিয়ে ইলিশ এখন সাধারণ মানুষের স্বপ্নের খাদ্যে পরিণত হয়েছে।
ইলিশের স্বাদ যেন কেবল ধনীদের জন্য সীমাবদ্ধ না থাকে, সে জন্য সমস্যার সমাধান করতে হবে। কিছু বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারকে অবশ্যই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে এবং ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। জাটকা নিধন কঠোরভাবে দমন করতে হবে এবং প্রজনন মৌসুমে নদীতে বিশেষ নজরদারি চালাতে হবে। নদীদূষণ রোধেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ইলিশ আহরণের মৌসুমে সঠিক সময়ে মাছ ধরার সুযোগ ও আর্থিক সহায়তা দিলে উৎপাদন বাড়বে। এসব উদ্যোগ কার্যকর হলে ইলিশের দাম কমে আসবে এবং সব শ্রেণির মানুষ সমানভাবে এর স্বাদ নিতে পারবে।
ইলিশকে যদি আমরা সত্যিই ‘জাতীয় মাছ’ বলি, তাহলে তার স্বাদ কেবল ধনী-সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। গরিব শিশুরাও যেন উৎসবের দিনে অন্তত একটুকরো ইলিশ খেতে পারে। এটি আমাদের রাষ্ট্র ও সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
ফারিহা জামান নাবিলা
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা