তামাক চাষ ছেড়ে পেঁপেতে বাজিমাত
Published: 23rd, September 2025 GMT
তামাক চাষ ছেড়ে ‘টপ লেডি’ জাতের পেঁপে চাষ করে প্রথমবারেই দুই লাখ টাকা লাভের আশা করছেন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বলিদাপাড়া এলাকার কৃষক জামিরুল ইসলাম।
মাত্র ৩৫ শতাংশ জমিতে পেঁপে চাষ করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছেন এবং দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার পেঁপে বিক্রির আশা করছেন তিনি। এরইমধ্যে তিনি পেঁপে বিক্রি শুরু করেছেন। জমি থেকেই কাঁচা পেঁপে পাইকারী ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে বেশ খুশি তিনি।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বলিদাপাড়া এলাকার তার বাগান ঘুরে দেখা যায়, গাছের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত পেঁপে ধরেছে। ছোট-বড়-মাঝারি এবং ফুলও ধরেছে। এক একটি গাছ থেকে এ মৌসুমে প্রায় এক মণ করে পেঁপে সংগ্রহ করতে পারবেন বলে আশা করেন জামিরুল ইসলাম।
ছোটবেলা থেকেই কৃষি কাজের সাথে জড়িত রয়েছেন জামিরুল ইসলাম। ধান চাষের পাশাপাশি বেশ কয়েক বছর ধরে তামাকের চাষ করেন তিনি। তামাকে পরিশ্রম এবং বিক্রির ক্ষেত্রে হয়রানির কারণে চায়ের দোকান খুলেছেন। কৃষি পেশা ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। তবে স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে নিরাপদ উপায়ে উচ্চমূল্য সবজি চাষের উপরে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তিন দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তাদের সহায়তায় পেঁপের চাষ করেছেন। তামাকের পরিবর্তে পেঁপে চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছেন বলে জানান তিনি।
জামিরুল ইসলাম বলেন, “আপনারা গাছে পেঁপে দেখছেন, কিন্তু আমি দেখছি টাকা। আমার মনে হচ্ছে গাছে টাকা ঝুলছে। এক একটি পেঁপে মানে ১০/২০ টাকার নোট।”
তিনি আরো বলেন, “আমি মূলত এই জমিতে তামাক চাষ করতাম। কিন্তু উপজেলা থেকে ট্রেনিং নিয়ে এবার প্রথম পেঁপের চাষ শুরু করেছি। কীভাবে পেঁপের চাষ করতে হবে, কখন কী পরিচর্যা করতে হবে সবকিছু হাতে কলমে শিখিয়ে দিয়েছে কৃষি অফিসের লোকজন। আমি নিজেই ওয়ানটাইম চায়ের কাপে পেঁপের চারা উৎপাদন করে রোপন করেছি। জমি চাষাবাদ ও পরিচর্যা করেছি। কৃষি অফিস থেকে আমাকে ২০ শতক জমির জন্য সার, বীজ, পরিচর্যার খরচ দিয়েছে। বাকীটুকু নিজের খরচে করেছি।”
জামিরুল বলেন, “আমার এই জমিতে ৪০০ পেঁপে গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছেই আশা করছি এক মণের কাছাকাছি করে পেঁপে পাব। এটা বিক্রির জন্য আমাকে বাজারেও নিতে হচ্ছে না। ব্যাপারীরা এসে বাগান থেকেই পেঁপে নিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি এই মৌসুমেই আমি দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করতে পারব। যেখানে আমার খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকার মতো।”
স্থানীয় কৃষক আয়নাল ইসলাম জানান, এক এক গাছে যে এত পেঁপে ধরে তা কখনো জানতাম না। আমরা জামিরুল এর বাগান দেখে বুঝছি এখন যে পেঁপে চাষ কতটা লাভজনক। তামাকের চেয়ে অনেক বেশি লাভজনক এই পেঁপে চাষ।
স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুল ইসলাম জানান, “আমরা কৃষকদের সার্বক্ষণিক উচ্চমুল্য সবজি ও ফল চাষে পরামর্শ প্রদান করছি। সেই সাথে কৃষক জামিরুল ইসলামকে পেঁপে চাষে পরামর্শ প্রদান করেছি। নিয়মিত তার বাগান পরিদর্শন করে ব্যবস্থাপনা প্রদান করছি। পেঁপে চাষটা বেশ লাভজনক হওয়ায় এরইমধ্যে আরো ১০ বিঘা জমিতে পেঁপের চাষ বৃদ্ধি পেঁয়েছে এই এলাকায়।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “পেঁপে একটি পুষ্টিকর এবং উচ্চমূল্য সবজি। এটি বেশ লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের মাঝে বর্তমানে পেঁপে চাষে আগ্রহ বাড়ছে। আমরা যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় পেঁপে চাষে কৃষকদের বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছি।”
যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রবিউল ইসলাম বলেন, “খোরপোশ কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। এজন্য কৃষকদের নিরাপদ উপায়ে উচ্চমূল্য ফসল উৎপাদনে প্রশিক্ষণ প্রদান, প্রদর্শনীর মাধ্যমে উপকরণ ও সহায়তা প্রদান করছি। সেই সাথে বাজারজাত এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য উদ্যোক্তা সৃষ্টি করছি। মিরপুর উপজেলা কৃষক জামিরুল ইসলাকে আমাদের প্রকল্প থেকে নিরাপদ উপায়ে পেঁপে চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেই সাথে তাকে চাষাবাদের জন্য সার, বীজ, পরিচর্যার খরচও দেওয়া হয়। ফলে তিনি পেঁপে চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে বেশ সফল হয়েছেন। তার দেখাদেখি এলাকার আরো অনেক কৃষক পেঁপে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।”
ঢাকা/কাঞ্চন/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ম র ল ইসল ম ক ষকদ র প রকল প ল ভজনক র জন য কর ছ ন চ ষ কর উপজ ল র খরচ
এছাড়াও পড়ুন:
জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মাথায় রেখে নকশায় গুরুত্ব প্রদান
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবকে মাথায় রেখে স্থাপনার নকশা প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম। স্থাপত্য শাখার নোবেল হিসেবে খ্যাত আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার বিজয়ী এই স্থপতি বলেছেন, “একজন শিল্পী একটি দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন, আর তার শিল্পকর্ম তাকে সারা জীবন বাঁচিয়ে রাখে।”
শনিবার (৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে ‘সিরামিক বাংলাদেশ ম্যাগাজিন’ আয়োজিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধে তিনি এসব কথা বলেন।
‘বিটুইন ইরোশন অ্যান্ড ইমারজেন্সি’ শিরোনামে উপস্থাপনায় মেরিনা তাবাসসুম তার দীর্ঘ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “স্থাপত্য কেবল ভবন নির্মাণ নয়, এটি সংস্কৃতি, সমাজ ও মানুষের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত একটি জীবন্ত শিল্প। একজন স্থপতির দায়িত্ব শুধু কাঠামো তৈরি নয়, বরং এমন কিছু সৃষ্টি করা যা মানুষের জীবন, পরিবেশ ও সময়ের সঙ্গে কথা বলে।”
মেরিনা তাবাসসুম বলেন, “আমাদের কাজ যেন এই মাটির বাস্তবতার সঙ্গে মিশে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তন, নগরায়ণ এবং মানুষের জীবনধারার পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্থাপত্যের ভাষা বদলাতে হবে।”
তিনি যোগ করেন, “চরাঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে বাঁচে। তাদের জীবনযাপন ও বাসস্থানকে টেকসইভাবে গড়ে তুলতে স্থাপত্যের নতুন ধারণা প্রয়োগ জরুরি।”
মেরিনা তাবাসসুম জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা এবং পুনর্বাসনযোগ্য ঘর তৈরিতে তার দল ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করছে। এসব প্রকল্পে স্থানীয় মানুষকে যুক্ত করে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী নকশা তৈরি করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধু স্থাপনা নির্মাণ নয়, বরং মানুষের সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য সৃষ্টি করা। চরাঞ্চলের মানুষকে আত্মনির্ভর করে তুললেই প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব।”
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন- সিরামিক বাংলাদেশ ম্যাগাজিনের সিনিয়র অ্যাডভাইজর, আরকিকানেক্টের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্থপতি জালাল আহমেদ। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের স্থাপত্য আজ বিশ্বে নিজস্ব অবস্থান তৈরি করেছে। মেরিনা তাবাসসুমের মতো স্থপতিরা আমাদের গর্ব এবং নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।”
পুরো অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন স্থপতি মৌসুমী আহমেদ। স্থপতি মাহমুদুল আনোয়ার রিয়াদের সঞ্চালনায় পরে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন প্রফেসর জয়নাব ফারুকী আলী, স্থপতি নাহাস আহমেদ খলিল ও প্রফেসর ফুয়াদ হাসান মল্লিক।
সমাপনী বক্তব্যে বিসিএমইএ প্রেসিডেন্ট ও মুন্নু সিরামিকের ভাইস চেয়ারম্যান মইনুল ইসলাম বলেন, “দেশের স্থাপত্য ও সিরামিক শিল্প একে অপরের পরিপূরক। শিল্প, শিক্ষা ও গবেষণার সমন্বয় ঘটিয়ে এই খাতকে আরও এগিয়ে নিতে হবে।”
অনুষ্ঠানে দেশের প্রখ্যাত স্থপতি, প্রকৌশলী, সিরামিক শিল্প উদ্যোক্তা, শীর্ষ কর্মকর্তা ও সিনিয়র সাংবাদিকসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/মাসুদ