জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন টেকসই করতে হলে জনগণের অভিপ্রায়ের ওপর নির্ভর করতে হবে। এটি যাচাই করার উপায় হলো গণভোট বা গণপরিষদ (সংবিধান সংস্কার সভা) নির্বাচন।

জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে গত শুক্রবার রাতে এক বৈঠকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে বিশেষজ্ঞরা এই অভিমত দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় অনলাইনে।

বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক সূত্র জানায়, আলোচনায় যে মতামত এসেছে তা হলো জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে সংস্কার প্রশ্নে গণভোট করা যেতে পারে। জুলাই সনদ নিয়ে সংবিধান আদেশ জারি করে সেটার ভিত্তিতে গণভোট হতে পারে। আর গণপরিষদ বা সংবিধান সংস্কার সভা গঠন করা হলে সেটাও জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গেই করা যাবে।

সে ক্ষেত্রে আগামী সংসদ একই সঙ্গে গণপরিষদ বা সংবিধান সংস্কার সভা এবং জাতীয় সংসদ হিসেবে কাজ করবে। এ ছাড়া জুলাই সনদ নিয়ে সংবিধান আদেশ জারি, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।

এর আগেও সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন। সেখানে বলা হয়েছিল, জুলাই সনদ নিয়ে সংবিধান আদেশ জারি করা যেতে পারে। সেটা অবিলম্বে কার্যকর হবে। পরে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে এই আদেশ নিয়ে গণভোট করা যেতে পারে।

অবশ্য সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ছয়টি সংস্কার কমিশনের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই পর্বের আলোচনায় ইতিমধ্যে ৮৪টি বিষয়ে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলো নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। মূল বিতর্ক সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে।

বিএনপি আগামী সংসদের মাধ্যমে সংবিধান সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের পক্ষে। এর বাইরে অন্য কোনোভাবে সংবিধান সংস্কার সম্ভব কি না, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়া যেতে পারে বলে মনে করে দলটি।

জামায়াতে ইসলামী চায় সংবিধান আদেশ জারি এবং গণভোটের মাধ্যমে বাস্তবায়ন। আর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চায় গণপরিষদ। দলটি মনে করে, গণপরিষদ একই সঙ্গে নিয়মিত সংসদ হিসেবেও কাজ করতে পারে। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলনসহ আরও কোনো কোনো দল এ ধরনের সংবিধান সংস্কার সভা গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছে। এর বাইরে কিছু দল সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ার পক্ষে।

সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তিন দিন আলোচনা হলেও এখনো ঐকমত্য হয়নি। আপাতত আলোচনা মুলতবি রয়েছে। আগামী ৪ বা ৫ অক্টোবর আবার আলোচনা হতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক

এমন পরিস্থিতিতে শুক্রবার রাতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করে ঐকমত্য কমিশন। কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে পাওয়া প্রস্তাব গণপরিষদ গঠন, সংবিধান আদেশ জারি, ১০৬ অনুচ্ছেদের অধীনে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়া এবং গণভোট আয়োজনের সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সম্ভাব্য উপায় সম্পর্কে সরকারের কাছে একাধিক সুপারিশ উপস্থাপন করবে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, কমিশন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আবার আলোচনা করেছে। সনদ বাস্তবায়নের উপায় হিসেবে গণভোট, গণপরিষদ, সংবিধান আদেশ জারি, সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়া—এসব বিষয় আলোচনায় এসেছে। এসবের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিশেষজ্ঞ হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট শরিফ ভূইয়া, ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন ও ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক।

আলোচনায় কমিশনের পক্ষে অংশ নেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো.

এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া। এ ছাড়া জাতীয় ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও এতে যুক্ত ছিলেন।

জানতে চাইলে মনির হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জনগণের অভিপ্রায় যাচাই করার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা বেশি উৎসাহ দেখিয়েছেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ল ই জ ত য় সনদ জ ত য় ঐকমত য জ ল ই সনদ প রস ত ব গণভ ট

এছাড়াও পড়ুন:

ঐকমত্য কমিশন বলছে, শরিয়াহ নিয়ে প্রশ্ন ছিল না, মামুনুল হক বললেন অসতর্কতায় অন্য জরিপের কথা বলেছেন

প্রথম আলোয় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে শরিয়াহ আইন নিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হকের একটি মন্তব্য নিয়ে বক্তব্য দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গত সোমবার মামুনুল হকের সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়।

‘আফগানিস্তানে যেতে আইনি বাধা নেই’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই সাক্ষাৎকারের একটি অংশে মামুনুল হক উল্লেখ করেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন বিষয়ে জরিপ চালানো হয়েছিল। সেখানে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ শরিয়াহ শাসন চেয়েছে।’

এ বিষয়ে প্রথম আলোকে দেওয়া বক্তব্যে ঐকমত্য কমিশন বলেছে, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে যে কমিশনের পক্ষ থেকে যে জরিপ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছিল, সেখানে শরিয়াহ আইন বা শরিয়াহ শাসনসংক্রান্ত কোনো প্রশ্নই অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ফলে উক্ত জরিপ থেকে এ ধরনের মতামত বা ফলাফল পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

অন্যদিকে এ বিষয়ে মামুনুল হক প্রথম আলোকে বলেছেন, ২০১৭ সালে ‘রিজলভ নেটওয়ার্ক’ পরিচালিত একটি জরিপকে তিনি অসতর্কতাবশত ঐকমত্য কমিশনের জরিপ বলে উল্লেখ করেছেন। ‘ডেমোক্রেসি অ্যান্ড শরিয়াহ ইন বাংলাদেশ: সার্ভেয়িং সাপোর্ট’ শীর্ষক ওই জরিপ প্রতিবেদন লিখেছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ও সৈয়দা সেলিনা আজিজ। ওই জরিপে ৯১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের একটি মর্মবস্তু হচ্ছে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব। তবে ৮০ শতাংশের বেশি মনে করেন, শরিয়াহ আইন মৌলিক সেবা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দুর্নীতিকে নিরুৎসাহিত করে।

আরও পড়ুনআফগানিস্তানে তিনটি বিষয় নজর কেড়েছে, নারী শিক্ষার বিষয় আপত্তিকর ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ ১৫ অক্টোবরের মধ্যে
  • মধ্যবিত্তের ভরসা সঞ্চয়পত্র: কোনটিতে কত মুনাফা
  • ঐকমত্য কমিশন বলছে, শরিয়াহ নিয়ে প্রশ্ন ছিল না, মামুনুল হক বললেন অসতর্কতায় অন্য জরিপের কথা বলেছেন
  • ১১ দিনের নতুন কর্মসূচি ইসলামী আন্দোলনের
  • জুলাই সনদ: আগামী সপ্তাহে দলগুলোর সঙ্গে আবার আলোচনায় বসবে ঐকমত্য কমিশন