আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকীকে ‘আধিপত্যবাদবিরোধী দিবস’ ঘোষণার দাবি ডাকসু ভিপির
Published: 3rd, October 2025 GMT
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মৃত্যুবার্ষিকী ৭ অক্টোবরকে আধিপত্যবাদবিরোধী দিবস ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসভাপতি (ভিপি) আবু সাদিক কায়েম। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১১টার পর কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গ্রামে আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ দাবি জানান।
সাদিক কায়েম বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জানিয়েছি, প্রতিবছর যেন ৭ অক্টোবরকে আধিপত্যবাদবিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আমরা আশা রাখব, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বাংলাদেশের প্রতিটি ক্যাম্পাসে ৭ অক্টোবরকে আগ্রাসনবিরোধী, আধিপত্যবাদবিরোধী দিবস হিসেবে যেন ঘোষণা করে। ডাকসুর পক্ষ থেকে এই দিনটিকে আমরা আধিপত্যবাদবিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণা করব।’
ডাকসুর ভিপি বলেন, ‘শহীদ আবরার ফাহাদ বাংলাদেশের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। আমাদের প্রেরণার বাতিঘর। আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে, আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে খুনি হাসিনা ও তাঁর দোসররা (নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ) শহীদ আবরার ভাইকে নির্মমভাবে সারা রাত নির্যাতন করে শহীদ করেছে। শহীদ আবরার ভাই আমাদের যে রাস্তা দেখিয়েছেন, সেই রাস্তার ওপর ভিত্তি করে জুলাই বিপ্লব হয়েছে। শহীদ আবরার যে চেতনা লালন করতেন, জুলাইয়ের সব শহীদসহ প্রত্যেকে একই চেতনা ও আকাঙ্ক্ষা লালন করতেন।’
সাদিক কায়েম আরও বলেন, ‘গত ১৬ বছরে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা জারি ছিল। বাংলাদেশের প্রতিটি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা গণরুম কালচার ও শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়নের মাধ্যমে তাঁদের সব ধরনের অধিকারকে কেড়ে নিয়েছিল। আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে, আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যাঁরাই কথা বলেছেন, তাঁদের বিভিন্নভাবে ট্যাগিং করে, ফ্রেমিং করে হত্যা করা অব্যাহত ছিল। পুরো বাংলাদেশটা ছিল ভারতের সাবজেক্ট কলোনি। ভারতের প্রেসক্রিপশনে এখানকার সবকিছুই নির্ধারিত হতো। আমাদের অর্থনৈতিক শোষণ, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও সাংস্কৃতিক গোলামির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।’
সাদিক কায়েম বলেন, ‘সেই সময়ে শহীদ আবরার সব শোষণের বিরুদ্ধে, সব আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, সব আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে এবং ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের নির্মম নির্যাতনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন, কথা বলেছিলেন এবং পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। আমরা আবরার ফাহাদকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। বাংলাদেশের মানুষ সব শহীদদের সম্মানের সহিত স্মরণ করবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে ডাকসুর ভিপি বলেন, ‘আজ জুলাই বিপ্লবের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। শহীদেরা যে জন্য জীবন দিয়েছেন—একটি বৈষম্যবিরোধী ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য, আমরা দেখতে পাচ্ছি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেই জায়গায় যেভাবে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করার দরকার ছিল, সেভাবে ধারণ করছে না। যেটা আমাদের অনেক বেশি ব্যথিত করেছে। আমরা অনুরোধ করব, আমাদের শহীদেরা যে জন্য জীবন দিয়েছেন, সেই আকাঙ্ক্ষাকে যেন তাঁরা ধারণ করেন। এর যদি কোনো ব্যত্যয় হয়, তাহলে খুনি হাসিনা ও ফ্যাসিবাদীদের যে পরিণতি হয়েছিল, তার চেয়ে বেশি খারাপ পরিণতি তাঁদের হবে।’
আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারতের সময় তাঁর বাবা বরকত উল্লাহ, ডাকসুর কার্যনির্বাহী সদস্য রায়হান উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরাফাত হোসাইন, শাকিল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবর র ফ হ দ র গ র সন আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ঊষর দিন ধূসর রাতের ‘প্রোটাগনিস্ট’ নিখোঁজ
পাপড়ি রহমানের উপন্যাস ‘ঊষর দিন ধূসর রাত’। পড়ার শুরুতে মনে হয়েছিল শেফালি উপন্যাসের মূল প্রোটাগনিস্ট। আরেকটু এগোনোর পরে মনে হলো মূল চরিত্রটি বোধহয় মুমু। শেষে আরেকটি চরিত্র বকুল এসে সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিলো। কেউই প্রোটাগনিস্ট হয়ে উঠলো না। উপন্যাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যাওয়ার পরে মনে হলো আরে প্রোটাগনিস্ট তো তুহিন। কেননা তুহিন শেষতক ‘আমি’ হিসেবে উপন্যাসের চরিত্র হয়ে ওঠে। কিন্তু নাহ, কেউই আসলে প্রোটাগনিস্ট না। বরং এইসব চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলার জন্য যে যে প্রতীকী রূপ ব্যবহৃত হয়েছে, যে ইলিউশন তৈরি হয়েছে তার ভেতর দিয়ে এগিয়ে গেছে এই অস্থির নগরজীবনের গল্প, সেই গল্পটিই প্রোটাগনিস্ট।
মানে হলো নদী বয়ে যেতে যেতে শুকিয়ে গেলো। তারপর জেগে রইলো দাগ। সেই দাগ বলে দিলো ‘এইখানে নদী ছিলো’। ঔপন্যাসিক এই উপন্যাসের মূল গল্পটা পিলো পাসিংয়ের মতো এক চরিত্রের কাছ থেকে আরেকজনের দিকে এগিয়ে দিতে থাকেন। এরই মধ্যে আমাদের সামনে উদ্ভাসিত হয় এই শহুরে সমাজের নারীদের জীবনচিত্র। যা আরেক নারী প্রায় নিখুঁতভাবে চিত্রিত করেছেন।
নারীর প্রিয় রং গোলাপি। এই রঙের একটি বাড়ির দিকে তাকিয়ে ফেলে আসা দাম্পত্যজীবনের কথা ভেবে অস্থির হয় শেফালি। দুই সন্তান নিয়ে যার সংসার। কিন্তু সন্তানেরা বড় হয়ে যে যার মতো থাকে, আর শেফালি চাকরি করে, একা সংসার করেন আর সময়ে-অসময়ে ওই গোলাপি বাড়িটার দিকে তাকিয়ে থাকেন। আদতে শেফালি তাকিয়ে থাকেন তার ফেলে আসা সংসারের দিকে। সেখান থেকে হারিয়ে যাওয়া শব্দ কুড়িয়ে আনেন, ভীত হন। ভীত হতে হতে শেফালি ট্রমাটাইজ এক জীবনযাপনে ঢুকে পড়েন।
শেফালি সংসার ছেড়ে আসে। কারণ স্বামী শেফালির ভাতিজিকে যৌনহয়রানি করে। এই ঘটনা শেফালিকে সংসার ছেড়ে বের হয়ে আসার তাগিদ দেয়। দুই সন্তানের মধ্যে এক সন্তান বাবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, আরেক সন্তান বাবাকে এড়িয়ে চলে। এই সন্তান যে মায়ের ভালো থাকা না থাকার খুব খোঁজ রাখে, ব্যাপারটা এমনও নয়। অথচ শেষে দেখা যায় এক জীবন শেষ হয়ে এলেও দুজনের কেউই বিয়ে করে না। না শেফালি, না বাদল। যে বাদলকে শুরু থেকে শুধুই নিপীড়ক মনে হচ্ছিল, সেই বাদল ক্ষমা না পাওয়া এক অসমাপ্ত চরিত্র হয়ে আসে। আর শেফালিকে বলা হচ্ছে বুড়ো ঈগল, একা একা দীর্ঘ লড়াই করেও সে জয়ী হতে পারে না। এই উপন্যাসে দেখানো হয়েছে মাতৃত্ব কীভাবে নারীর শরীর ও সৌন্দর্য ভেঙেচুড়ে একাকার করে দেয়। মা হয়ে যাওয়া নারীটি প্রিয় পুরুষের কাছে কীভাবে অবহেলার পাত্র হয়ে ওঠে।
উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ কথক তুহিন, সে গান ভালোবাসে। শেফালি দূর থেকে ছেলের গান শোনে। ছেলের আচরণের ভেতর বাবার আচরণের প্রতিফলন দেখতে থাকে শেফালি। তার স্মৃতিতে পাঠক বারবার ফিরে যাওয়ার সুযোগ পান একাধিক নারীর কাছে। শেফালি কোনো বাড়িতে শিশু দেখলে তাদের নিজের সন্তানদের হারানো শৈশব, আর সন্তানদের মাকে দ্বিতীয় শেফালি ভাবেন। সন্তানদের ওপর চালানো শারীরিক নির্যাতনের কথা ভেবে তিনি ভীত হন। শেফালি এমন হাজারটা অপরাধবোধে ভীত মানুষ। দেখতে স্বীকৃত সুন্দরী নন। হাত-পা ছোট ছোট। একটু বেটে। সন্তান জন্ম দেওয়ার পরে এসবের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে যোগ হয়েছে থলথলে তলপেট। তাকে যে কেউ বেঢপ্পা বলতে পারে অনায়াসে। শেফালি পাঠককে ক্রমাগত নিয়ে যায় এমন এক জগতে যেখানে শেফালি বাস্তবতা থেকে স্মৃতিতে বসবাস করেন বেশি সময়। আবার কাজের ডেস্কে যখন ফিরে আসেন, তিনিই হয়ে ওঠেন অদম্য একজন। এই যে নারীর দ্বিচিত্র, এ হলো চিত্রকল্পে হাসি-কান্না ঝুলিয়ে রাখা নারীর অবয়বের মতো। একবার মনে হয় তিনি জিতেছেন, আবার মনে হয় তিনি হেরেছেন।
মুমুকে আমরা পাই শহরে নিজের মতো করে বসবাস করা, আর্থিকভাবে স্বাধীন এক নারী হিসেবে। যে তার এক বান্ধবীর সঙ্গে মিলে শাড়ির ব্যবসা করে। কিন্তু থাকে একা এক ফ্ল্যাটে। সম্পর্ক থেকে লিভ টুগেদারে যায় এক কবির সঙ্গে। মাঝেমধ্যে মুমুর ফ্ল্যাটে কবি সজল আসে। তার আসাকে বিচিত্রভাবে উপস্থাপন করেছেন ঔপন্যাসিক। যেমন: ‘বর্ষার নতুন জলে পুঁটি মাছের মতো রঙিন লেজ নাড়িয়ে এগিয়ে আসে সজলই।’
সজল আসে, সজল চলে যায়। মুমু একা হয়ে যায়। এই একা হয়ে যাওয়া মানুষটি অন্ধকার ভয় পায়। সজলকে সে যখন তার ভয়ের কথা জানায় তখন সজল আর তার কথায় মনোযোগ দেয় না। মুমুর বান্ধবী, ব্যবসায়িক পার্টনার টুলকি সজলের দিকে ঝুঁকে পড়ে। মুমু বুঝতে পারে, প্রশ্ন করে না। কিন্তু হঠাৎ একদিন সজল হারিয়ে যায়। তাকে তন্নতন্ন করে খুঁজে বেড়ায় মুমু। তারপর জানতে পারে সজল বিয়ে করে সংসারী হয়েছে। মুমু পাগলের মতো হয়ে যায়। একটি সংসারের প্রয়োজনিয়তা মুমু বুঝতে পারে।
জীবন থেকে পালিয়ে নয়, বরং জীবনের খোঁজে গ্রাম থেকে শহরে আসে বকুল। সৎ ফুফু শেফালির বাসায় যায় কিন্তু শেফালি তার উপস্থিতি ভালোভাবে নেয় না। নেবে কীভাবে? তারই বোন চম্পা এসেছিল বাসায়। চম্পাকে বাদল মলেস্ট করেছিল, আর ঘুনে ধরা সংসারটা ওই আঘাতেই ভেঙে পড়েছিল।
বকুল চাকরি খুঁজে বেড়ায়। শেষে একটি পত্রিকায় সাব-এডিটর হিসেবে চাকরি পেয়ে যায়। এই পাওয়া বকুলকে আনন্দে ভাসিয়ে দেয়। সে ভাবে, অনেক কিছু পেয়ে গেছে। বাড়িতে ফেরার ইচ্ছা হয় না তার। সেখানে দুই ভাইয়ের শাসনে অতিষ্ঠ ছিল বকুল। কিন্তু মায়ের জন্য পরাণ পোড়ে তার। কিছুদিন যেতে না যেতেই বকুলকে নিজের অসহায় অবস্থার কথা বলেন সম্পাদক মোসাদ্দেক। তিনি বকুলকে বিয়ে করতে চান। বকুল কৃতজ্ঞতা বোধ থেকে তাকে বিয়ে করে। কিন্তু বকুলকে নিজের ফ্ল্যাটে নেন না মোসাদ্দেক। তিনি একটি ভাড়া করা ফ্ল্যাটে বকুলকে রাখেন। বকুল খাঁচায় বন্দি পাখির মতো হাহাকারসমেত বন্দি হয়ে পড়ে। হঠাৎ একদিন বুঝতে পারে মোসাদ্দেক তারই পাশে বসে
প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন। এরপর মোসাদ্দেক প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের কাছে ফিরে যান। তার কয়েকদিন পরেই হার্ট অ্যাটাকে মরে যান মোসাদ্দেক। বকুলের মনে প্রশ্ন জাগে। সে উত্তর খুঁজে বেড়ায়: ‘কেন? কেন মানুষ এমন? কী আছে এই গৃহে? এই পৃথিবীর কোথাও দাগহীন সংসার? পুড়ে যাওয়ার নিত্য যে যন্ত্রণা, রক্তক্ষরণ সেইসব পুনরায় পাওয়ার জন্যই কি মানুষ মেলে দেয় নিজের করপুট?’
বকুলের মা মালিহা খাতুন। মায়ের মৃত্যু বকুলকে অন্যরকম মানুষে পরিণত করে। সে সারাক্ষণ মায়ের উপস্থিতি বুঝতে পারে। এমনকি মোসাদ্দেকের স্ত্রীকেও তার কাছে মালিহা খাতুন মনে হয়।
‘ঊষর দিন ধূসর রাত’-এর নারীরা অভিজ্ঞতা থেকে সঞ্চিত ভয় বুকে নিয়ে তাড়া খেয়ে বেড়ায়, স্মৃতিতে ফেরে আর বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে যায়। এরা কেউ সাজানো সংসার ছেড়ে একা বেঁচেছে, কেউ একা থাকতে থাকতে একটি সংসার পাওয়ার আশায় ব্যক্তিগত আভিজাত্য বিসর্জন দিয়ে ভালোবাসার মানুষকে ফিরে পেতে চেয়েছে। আর কেউ বিশ্বাস করে ঠকেছে।
এবার মাহিনের কথায় আসি। শেফালির ছোট ছেলে। মুমুর বন্ধু। মুমু মাঝেমধ্যে মাহিনের কাছে এসে নিজের কষ্টের কথা বলে, কান্নায় ফেটে পড়ে। তুহিন দূর থেকে বুঝতে পারে, আঁচ করতে পারে। সমবেদনা বোধ করে। গানপ্রিয় তুহিন মুমুকে ভালোবেসে ফেলে। তুহিন আসলে মাকেও ভালোবাসে, তার ভালোবাসার প্রকাশ শেষের দিকে এসে স্পষ্ট হয়। মা আর বাবার একা থাকার বিষয়টি তুহিনকে ভাবায়। মুমুর কাছে যায় তুহিন, কিন্তু মায়ের কাছে সময়মতো ফিরে আসে।
মুমুর বাসা থেকে মায়ের বাসার দিকে যাওয়ার সময় একদিন তাকে কয়েকজন ধরে নিয়ে যায়। গুম হয়ে যায় তুহিন। শেফালি ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় অবস্থা, ভাবতে থাকে তুহিনের জন্ম আর সেই সময়ের অনুভূতি নিয়ে। তুহিন হারিয়ে যাওয়ার পরেও প্রতিদিন এক কৌটা ভাত বেশি রান্না করে শেফালি, ছেলে যদি ফিরে আসে।
শেফালিকে পরিবার, সমাজ, বিশ্বাস, নিজস্ব বোঝাপড়া সব কিছুর সঙ্গে লড়তে হয়। শেষ পর্যন্ত চূড়ান্তভাবে হেরে যায় রাজনীতির ‘গুম প্রবণতার’ কাছে। এখানে শেফালি জানে না কার বিরুদ্ধে লড়বেন, কার কাছ থেকে সরে আসবেন। কেবল অপেক্ষা করতে থাকেন।
শেষ থাবাটা রাজনীতির। তিলে তিলে বড় করে তোলা সন্তান হারিয়ে ফেলা শেফালির মতো আরও অনেকেই প্রতিদিন এই ঠাঁইহীন শহর সমুদ্রে নিঃশব্দে ডুবে বেঁচে থাকা আয়ত্ব করেছে। কিন্তু একটি বিষয় ঔপন্যাসিক পাপড়ি রহমান খুব ভালোভাবে দেখিয়েছেন: তার উপন্যাসের নারীরা ভান করে বাঁচতে চায়নি। এই উপন্যাসে নারী মাতৃত্বের মধ্যে দিয়ে সৌন্দর্য হারিয়েছে ঠিকই কিন্তু সন্তানদের জীবনে মায়ের ছায়া হয়েছে সুতীব্র ও সুঘন।
উপন্যাসের দুর্বলতা খুঁজে নেবেন সমালোচকেরা, আমি কেবল চরিত্রদের সঙ্গে এক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়েছি। যেখানে তিনটি আলাদা গল্প, এক সূত্রে গেঁথে একটি উপন্যাসের জন্ম হয়েছে। নারীর সূক্ষ্ম বোঝাপড়া এখানে প্রধান।
উপন্যাসটি প্রকাশ করেছে বেঙ্গল পাবলিকেশন্স। মূল্য ৫৬০ টাকা।
ঢাকা/তারা//