শুক্রবার হামাস বলেছে, তারা গাজায় আটক থাকা সব ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিতে ও তাদের মধ্যে যারা মারা গেছে, সেসব মৃতদেহ ফিরিয়ে দিতে প্রস্তুত। তবে তারা স্পষ্ট করে দিয়েছে, আলোচনার জন্য এখনো অনেক কিছু বাকি।

হামাস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শান্তি–পরিকল্পনার কিছু অংশের বিষয়ে সম্মত হয়েছে, যদিও তারা আগে প্রত্যাখ্যান করা নির্দিষ্ট কিছু বিষয়, যেমন গোষ্ঠীটির নিরস্ত্রীকরণের শর্ত, সেগুলো নিয়ে তাদের বক্তব্যে কিছু উল্লেখ করেনি।

ট্রাম্প তাঁর ২০ দফা পরিকল্পনা মেনে নিতে হামাস ও ইসরায়েলকে জোরালো চাপ তৈরি করেন। তিনি বলেন, এই অগ্রগতি গাজায় যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনাকে আগের চেয়ে আরও কাছে এনে দিয়েছে। তিনি ইসরায়েলকে ফিলিস্তিনিদের এই ভূখণ্ডে বোমা হামলা বন্ধ করারও দাবি জানান।

তবে এখনো অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার করে বলা যাচ্ছে না যে গাজায় বিপুলসংখ্যক মানুষের চরম দুর্ভোগ নিয়ে আসা প্রায় দুই বছর ধরে চলা এই যুদ্ধ শেষ করার জন্য ইসরায়েল ও হামাস প্রয়োজনীয় চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হবে কি না।

গাজার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই প্রস্তাবের প্রতি তাদের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। তারা আশা করছে, এটি অবশেষে ইসরায়েলের অভিযান থেকে মুক্তি এনে দিতে পারে, যে অভিযানে ইতিমধ্যে ৬০ হাজারের বেশি গাজাবাসী নিহত হয়েছে।

আরও পড়ুনগাজা নিয়ে ট্রাম্পের বিশ দফা যেন বিশটি ‘বিষের বড়ি’০১ অক্টোবর ২০২৫হামাস কী বলেছে

শুক্রবার এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, তারা গাজায় আটক থাকা সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে ও তাদের মধ্যে যারা মারা গেছে, সেসব মরদেহ ফিরিয়ে দেবে। তবে সেটি হবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবে উল্লেখ করা বন্দিবিনিময়ের প্রক্রিয়া মেনে এবং বন্দিবিনিময়ের জন্য মাঠের পরিস্থিতি তৈরি করা সাপেক্ষে।

ইসরায়েল মনে করে, গাজায় প্রায় ২০ জন জীবিত জিম্মি এবং আরও প্রায় ৩০ জনের মরদেহ রয়েছে। যদি হামাস তাদের মুক্তি দেয়, তবে ট্রাম্পের প্রস্তাবে ইসরায়েলকে ২৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দী ও যুদ্ধ চলাকালে আটক ১ হাজার ৭০০ জন গাজাবাসীকে মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

হামাসের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, তারা গাজা উপত্যকার শাসনভার একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি সংস্থার (টেকনোক্র্যাট) কাছে হস্তান্তর করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। তবে  সংস্থাটি গঠিত হতে হবে ফিলিস্তিনি জাতীয় ঐকমত্য এবং আরব ও ইসলামি বিশ্বের সমর্থনের ভিত্তিতে।

গত মার্চে সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি মৌলিক বিরোধ স্থায়ী শান্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হামাস যুদ্ধ-পরবর্তী গাজায় নিজেদের প্রভাব ধরে রেখে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চায়, অন্যদিকে ইসরায়েল চায় শুধু একটি সাময়িক চুক্তি, যা  হামাসকে পরাজিত করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা আবার শুরু করার সুযোগ দেবে তাদের।হামাসের বিবৃতিতে কিছু অস্পষ্টতা

হামাসের এই প্রতিক্রিয়া গভীর তাৎপর্যপূর্ণ। তবে এতে মূল কিছু জায়গায় অস্পষ্টতা রয়েছে, যা চুক্তি হওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে। হামাস জিম্মিদের মুক্তির জন্য কোনো সময়সূচি দিয়েছে কি না, ‘মাঠের পরিস্থিতি’ বলতে ঠিক কী বোঝানো হয়েছে, যা পূরণ হতে হবে—এসব বিষয় তাদের প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট নয়।

এ ছাড়া  আগে যা অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করত, সেই প্রস্তাবগুলো থেকে হামাস সরে আসবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। বিবৃতিতে এ বিষয়েও কিছু বলা হয়নি যে গোষ্ঠীটি তাদের অস্ত্র ত্যাগ করবে কি না। ভবিষ্যতে গাজায় রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগ না করার শর্তে হামাস রাজি হয়েছে কি না, অথবা টেকনোক্র্যাট সংস্থাটিতে নিজেদের বা তাদের সদস্যদেরও স্থান দিতে হবে কি না, এ বিষয়গুলোও স্পষ্ট নয়।

আরও পড়ুনগাজার সঙ্গে ৮ মুসলিম দেশ কি বড় বিশ্বাসঘাতকতা করল০২ অক্টোবর ২০২৫ ট্রাম্প কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন

শুক্রবার সন্ধ্যায় (যুক্তরাষ্ট্রের সময় অনুসারে) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন, হামাস গাজায় ‘একটি স্থায়ী শান্তি স্থাপনের জন্য প্রস্তুত’। তিনি ইসরায়েলকে বোমা হামলা বন্ধ করার দাবি জানান, যাতে ইসরায়েলি জিম্মিদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া যায়।

ওভাল অফিস থেকে দেওয়া এক মিনিটের ভিডিওতে ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও বলেন, শান্তি–পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত দেশগুলোর প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ। এ সময় ট্রাম্প কাতার, সৌদি আরব, জর্ডান, মিসর ও তুরস্কের নাম উল্লেখ করেন; যদিও তিনি ভিডিওতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নাম উল্লেখ করেননি।

আরও পড়ুনট্রাম্পের পরিকল্পনায় কি হামাস রাজি হবে ০১ অক্টোবর ২০২৫ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া

শনিবার ভোরে নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রথম ধাপ বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সেই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর টিমের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতায় কাজ চালিয়ে যাব, যাতে ইসরায়েল নির্ধারিত নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যুদ্ধের অবসান ঘটানো যায় এবং যা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।’

ইসরায়েলের পার্লামেন্টের বিরোধী দলের নেতা ইয়াইর লাপিদ বলেছেন, চুক্তির দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি নেতানিয়াহুকে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক সমর্থন দেবেন।

আরও পড়ুনট্রাম্পের ২০ দফা পরিকল্পনা: নেতানিয়াহুর পরাজয় নাকি হামাসের আত্মসমর্পণ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫অন্যান্য দেশ কী বলছে

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে বলেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রতি হামাসের সাড়া প্রদান একটি ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’। তিনি আরও বলেন, এটি সংঘাতকে ‘আগের চেয়ে শান্তির কাছাকাছি এনেছে’ এবং তিনি সব পক্ষকে ‘অবিলম্বে চুক্তি বাস্তবায়নের’ আহ্বান জানান।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সব জিম্মির মুক্তি এবং গাজায় যুদ্ধবিরতি হাতের নাগালে!’ তিনি আরও বলেন, হামাসের বিবৃতির ওপর অবিলম্বে কাজ করা উচিত। হামাসের প্রতিক্রিয়াকে ‘শান্তির দিকে নিষ্পত্তিমূলক অগ্রগতির একটি সুযোগ’ বলে অভিহিত করেন তিনি।

আগেও কি আমরা সাফল্যের কাছাকাছি এসেছিলাম

গাজার যুদ্ধ শেষ করার সব প্রচেষ্টা প্রায়ই হতাশার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। এর আগে ইসরায়েল ও হামাস শুধু সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল। সেটি ছিল ২০২৩ সালের নভেম্বরে প্রায় এক সপ্তাহের জন্য এবং এই বছরের শুরুতে তিন মাসের কম সময়ের জন্য।

গত মার্চে সর্বশেষ যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি মৌলিক বিরোধ স্থায়ী শান্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হামাস যুদ্ধ-পরবর্তী গাজায় নিজেদের প্রভাব ধরে রেখে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চায়, অন্যদিকে ইসরায়েল চায় শুধু একটি সাময়িক চুক্তি, যা  হামাসকে পরাজিত করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা আবার শুরু করার সুযোগ দেবে তাদের।

তবে হামাসের পক্ষ থেকে সব ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার সদিচ্ছার এই বিবৃতি অন্তত কিছুটা হলেও আশাবাদ জাগিয়েছে যে সাম্প্রতিক আলোচনাগুলোর এর একটি স্থায়ী প্রভাব পড়বে।

জন ইউন নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক

নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনুবাদ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এক ব ব ত ত প রস ত ব আরও বল র জন য ইসর য আরও প

এছাড়াও পড়ুন:

নিউইয়র্ক সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগদান শেষে নিউইয়র্ক থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকালে দেশে ফিরেছেন।

নয় দিনের নিউইয়র্ক সফর শেষে প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফিরলেন। এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের নিয়ে আজ সকাল ৯টায় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বাসসকে এই তথ্য জানান।

এর আগে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ১১টা ১০ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীরা যুক্তরাষ্ট্রের জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি সালাহউদ্দিন নোমান চৌধুরী ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক এমদাদ আরিফুল ইসলাম বিমানবন্দরে প্রধান উপদেষ্টাকে বিদায় জানান।

সফরকালে গত ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা। ৩০ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্যান্য সংখ্যালঘুর পরিস্থিতিবিষয়ক’ উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের উদ্বোধনী সম্মেলনে বক্তব্য দেন।

২৯ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁর অবস্থান করা হোটেলে সাক্ষাৎ করেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপো গ্রান্ডি। একই দিন জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ, স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশ এবং ক্ষুদ্র দ্বীপরাষ্ট্রপুঞ্জবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রাবাব ফাতিমাও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

নিউইয়র্ক সফরে মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া সংবর্ধনায় যোগ দেন। তিনি ট্রাম্পকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।

এ ছাড়া মুহাম্মদ ইউনূস নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, ভুটান, কসোভোসহ বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র-সরকারপ্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।

প্রধান উপদেষ্টা গত ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বুয়েটের গল্প, জীবনের গল্প
  • সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ, বিমানবন্দরে আখতার-জারার সংবাদ সম্মেলন বর্জন
  • নিউইয়র্ক সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা