বাগেরহাটে সাংবাদিক হায়াত উদ্দিনের দাফন
Published: 4th, October 2025 GMT
বাগেরহাটে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত সাংবাদিক ও বিএনপি নেতা এস এম হায়াত উদ্দিনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার (০৪ অক্টোবর) রাতে শহরের হাড়িখালি এলাকার নিজ বাড়িতে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে হাড়িখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজায় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ টি এ এম আকরাম হোসেন তালিম, বাগেরহাট প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তরফদার রবিউল ইসলামসহ স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী ও জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আরো পড়ুন:
প্রতিমা বিসর্জনে গিয়ে নদীতে পড়ে নিখোঁজ কিশোরের লাশ উদ্ধার
নিজ ঘর থেকে নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় শহরের হাড়িখালি এলাকায় দৈনিক ভোরের চেতনা পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক হায়াত উদ্দিনকে (৪০) ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারি কুপিয়ে ও হাতুরি দিয়ে পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করা হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে নেয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শনিবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে হায়াত উদ্দিনের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যায় বাগেরহাটে নিয়ে আসা হয়।
নিহত হায়াত উদ্দিন শহরের হাড়িখালি এলাকার মৃত নিজাম উদ্দিনের ছেলে। তিনি সম্প্রতি বাগেরহাট পৌর বিএনপির সম্মেলনে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচন করেন। তবে তিনি পরাজিত হন। এর আগে হায়াত উদ্দিন পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। হায়াত উদ্দিন স্ত্রী এবং ৮ ও ১ বছর বয়সী দুটি মেয়ে সন্তান রেখে গেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী এক নারী বলেন, হাড়িখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন মোড়ে চায়ের দোকানে বসে ছিলেন হায়াত উদ্দিন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে দুটি মোটরসাইকেলে করে এসে চার–পাঁচ যুবক অতর্কিত তার ওপর হামলা চালায়। এ সময় তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে হামলাকারী ব্যক্তিরা ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যায়।
বাগেরহাট প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক তরফদার রবিউল ইসলাম বলেন, ‘‘মাদক কারবার, ঠিকাদারি কাজের মান, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব ছিলেন হায়াত উদ্দিন। কয়েক মাস আগেও তার ওপর হামলা করা হয়।’’
স্ত্রী ফাতেমা বেগম বলেন, ‘‘শুধু সত্য কথা বলার কারণে আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। আমি খুনিদের ফাঁসি চাই।’’
হায়াত উদ্দিনের মা হাসিনা বেগম বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগে সন্ত্রাসীরা বাড়িতে এসে আমার ছেলেকে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেয়। তখন আমার ছেলে মামলা করেছিল। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আসলে বিচার দেওয়ার আমাদের কোনো জায়গা নেই। তাই আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি।’’
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বলেন, ‘‘হত্যার সঙ্গে জড়িতদের আমরা প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেছি। তার নাম ইসরাইল মোল্লা। তাদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে এজাহার দিলে মামলা করা হবে।’’
অভিযুক্ত ইসরাইল মোল্লা হাড়িখালি এলাকার আব্দুস ছালাম মোল্লার ছেলে। তিনি বিএনপির কর্মী। পাশাপাশি ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস এ্যান্ড হেলথ কেয়ার সোসাইটির বাগেরহাট জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক। তার বিরুদ্ধে মাদক কারবার করার অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, হত্যার শিকার সাংবাদিক ও বিএনপি নেতা এস এম হায়াত উদ্দিনের হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়েছে। দুপুরে প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে মানববন্ধনে শতাধিক গণমাধ্যমকর্মী অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন, বাগেরহাট প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো.
বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে একজন সংবাদকর্মীকে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। পুলিশ এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের আটক করতে হবে। তা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার ঘোষণা দেন সংবাদকর্মীরা।
এদিকে, সংবাদকর্মীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে মানববন্ধনে যোগ দেন বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম, যুগ্ম আহ্বায়ক ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম, বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার জাকির হোসেন, খান মনিরুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার মাসুদ রানা, ফকির তারিকুল ইসলাম, শাহেদ আলী রবি, মাহবুবুর রহমান টুটুলসহ জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
তারা বলেন, হায়াত উদ্দিন শুধু সাংবাদিক ছিলেন না, তিনি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী একজন সৈনিক ছিলেন। তিনি বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। তার হত্যাকারী যত শক্তিশালী হোক তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে।
ঢাকা/শহিদুল/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হ য় ত উদ দ ন র ব গ রহ ট প র ব এনপ র ল ইসল ম দ র রব
এছাড়াও পড়ুন:
জাদুঘরের নিয়োগে ‘প্রত্নতত্ত্ব’ বিষয় অন্তর্ভুক্তির দাবি
জাদুঘরের চাকরির যোগ্যতার তালিকায় ‘প্রত্নতত্ত্ব’ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। ইতিহাস ও ধ্রুপদি শিল্পকলা বিভাগে ‘সহকারী কিপার’ (গ্রেড–৯) পদে নিয়োগে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে জাদুঘরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদনপত্র দাখিল ও মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার দুপুর ১২টায় আবেদনপত্র দাখিল করে জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়।
আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পাঠ্যক্রমে ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, শিল্পকলা, জাদুঘরবিদ্যাসহ ইতিহাস ও শিল্প ঐতিহ্য সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় সব বিষয়ের ওপর শ্রেণিকক্ষ, ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ ও মাঠকর্মের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করা হয়। বিভাগটির স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে জাদুঘর–সংক্রান্ত বেশ কিছু বিশেষায়িত কোর্স পড়ানো হয়। যেমন জাদুঘরবিদ্যা: তত্ত্ব ও প্রয়োগ, প্রত্নসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও পর্যটন, অ্যাডভান্সড মিউজিয়াম স্টাডিজ ইত্যাদি।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, তাত্ত্বিক জ্ঞান ও হাতে–কলমে প্রশিক্ষণ ‘সহকারী কিপার’ পদে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের গ্র্যাজুয়েটদের যোগ্য করে তোলে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে এ ধরনের সমন্বিত ও কারিগরি কারিকুলাম চালু রয়েছে বলে তাঁরা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন।
শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, দীর্ঘদিন ধরে দাপ্তরিক পর্যায়ে চিঠিপত্র আদান–প্রদানের পরও জাতীয় জাদুঘরের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রত্নতত্ত্ব বিষয়টিকে যথাযথ স্থান দেওয়া হচ্ছে না। ইতিহাস ও ইসলামের ইতিহাসের পাশাপাশি ‘প্রত্নতত্ত্ব’কে সমমানের যোগ্যতা হিসেবে তালিকাভুক্ত না করায় যোগ্য প্রার্থীরা আবেদন করতে পারছেন না।
ইতিহাস ও ধ্রুপদি শিল্পকলা বিভাগে ‘সহকারী কিপার’ (গ্রেড–৯) পদে নিয়োগে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে জাদুঘরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদনপত্র দাখিল ও মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা