Prothomalo:
2025-11-19@04:51:08 GMT

দ্রষ্টা লেখকের জন্ম-মৃত্যু

Published: 4th, October 2025 GMT

সচরাচর যা দেখা যায়—লেখক তাঁর শৈশব, কৈশোর ও যৌবন পেরিয়ে নানা উপলব্ধি ও অভিজ্ঞতায় পরিণত হচ্ছেন, গ্রহণ করে নিতে পারছেন নানা কিছু, বদলে যাচ্ছে তাঁর লেখা, কিন্তু পাঠক সেই যে তাঁর প্রথম দিককার লেখা পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন, তা থেকে আর বের হতে পারছেন না। অর্থাৎ লেখকের মনের বয়স বাড়ছে, পাঠকের বাড়ছে না। ফলে লেখকের নতুন ধরনের লেখা যা তিনি নতুন যুগের বা চিরকালের দাবি মাথায় রেখে—পাঠক হারানোর ঝুঁকি সত্ত্বেও—লিখে চলেন, সেগুলো প্রশ্ন, জিজ্ঞাসা ও কৌতূহলের মুখোমুখি হবে তা স্বাভাবিক। এ ক্ষেত্রে সাহিত্য-ইতিহাস যা বলে—পাঠকের চেয়ে অগ্রসর লেখকেরা শেষ পর্যন্ত সফল হন। যেসব লেখার কারণে সমকালের পাঠকেরা একসময় বিব্রত হয়েছিলেন, সেগুলোর জন্যই পরবর্তীকালে লেখক যে কালজয়ী হয়েছেন, সেসব দৃষ্টান্তও ইতিহাসে কম নয়। তাই পাঠকের সমকালীন ক্রিয়ায় লেখককে ক্ষুব্ধ হলে চলে না, মানুষ হিসেবে তিনি হয়তো ভেতরে–ভেতরে ক্ষুব্ধ হবেন, কিন্তু প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে অবিচল থাকাই তাঁর জন্য সম্মানজনক ও স্বস্তিকর। পাঠক হয়তো ক্ষণকাল বা চিরকালের জন্য সম্মোহিত, কিন্তু এ কথা তো মিথ্যা নয় যে একসময় এই পাঠকই কৌতূহলভরে তাঁর লেখা পড়েছিলেন বলেই তিনি আজ লেখক এবং তাঁদের এই অসন্তুষ্টি তাঁর প্রতি ভালোবাসারই দ্বান্দ্বিক প্রকাশ। কেবল পাঠককেই-বা দোষ দিয়ে লাভ কী, বহু গুরুত্বপূর্ণ লেখকও তো কখনো কখনো পাঠক হিসেবে তাঁর লেখকের প্রতি সব সময় সুবিচার করতে পারেন না।

সাহিত্য-ইতিহাস যা বলে—পাঠকের চেয়ে অগ্রসর লেখকেরা শেষ পর্যন্ত সফল হন। যেসব লেখার কারণে সমকালের পাঠকেরা একসময় বিব্রত হয়েছিলেন, সেগুলোর জন্যই পরবর্তীকালে লেখক যে কালজয়ী হয়েছেন, সেসব দৃষ্টান্তও ইতিহাসে কম নয়। তাই পাঠকের সমকালীন ক্রিয়ায় লেখককে ক্ষুব্ধ হলে চলে না, প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে অবিচল থাকাই তাঁর জন্য সম্মানজনক ও স্বস্তিকর।

বুদ্ধদেব বসুর মতো গুণগ্রাহী লেখক ও পাঠক, যিনি শুরুর দিকে জীবনানন্দ দাশের প্রচার ও প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, তিনিও জীবনানন্দ দাশের পরবর্তীকালের কবিতায় পূর্বপাঠ-অভিজ্ঞতায় তাড়িত হয়ে তাঁর আগ্রহের কবিকে খুঁজেছেন, খুঁজে না পেয়ে হতাশ হয়েছেন। রামেন্দ্র দেশমুখ্যের ‘ধানক্ষেত’ কাব্যগ্রন্থের আলোচনা করতে গিয়ে জীবনানন্দ দাশের ‘আত্মঘাতী ক্লান্তি’র উল্লেখ করেছিলেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, কথাটি যে সূক্ষ্মতর অর্থে খুব নঞর্থক ছিল, তা নয়, কিন্তু জীবনানন্দ দাশ খানিকটা বিচলিত হয়েছিলেন এবং সে সম্পর্কে লিখেছিলেন, তাঁর কবিতায় আত্মঘাতী ক্লান্তি ‘কবিভাষিত নয়’, তা এসেছে ড্রামাটিক রিপ্রেজেন্টেশনরূপে। জীবনানন্দ দাশের এই জবাবে কবিতা সম্পর্কে তাঁর এ ধারণা আমাদের জন্য পরবর্তী সময়ে উপকারী হয়েছে, কিন্তু নীরব ও অবিচল থাকাটা তাঁর জন্য সম্মানজনক ছিল। কারণ, পরে তাঁর গুণগ্রাহীদের কেউ না কেউ নিশ্চয়ই এর প্রতিবাদ করতেন। আমাদের মনে পড়বে, জীবনানন্দ দাশের অন্য গুণগ্রাহী তিরিশের দশকের উপেক্ষিত, অথচ অনন্য কবি সঞ্জয় ভট্টাচার্য জীবনানন্দ-কাব্যের পৌর্বাপর্য বিবেচনায় রেখে লিখেছিলেন, ‘জীবনানন্দ যুগের মানসিকতার যোগ্য ভাষা দিতে পেরেছিলেন। জীবনানন্দ আমাদের যুগের মনোভঙ্গির প্রথম কবি.

..রবীন্দ্রনাথের পরে বাঙালি কবিতা-পাঠকের চিত্তে যদি কেউ প্রগাঢ় সাড়া এনে থাকেন, তাহলে তিনি জীবনানন্দ দাশ।’

জীবনানন্দ দাশের কবিতা সম্পর্কে তাঁর সমকালিক এই লেখক–পাঠকের এমন প্রতিক্রিয়া সাহিত্য-ইতিহাসে সুলভ নয়। কারণ, যুগদর্শীর চেতনায় মহত্তর গুণের যোগ না ঘটলে এ রকম মত প্রকাশ করা যায় না। কিন্তু যিনি শুধুই পাঠক, যিনি লেখকের সময়, লিখনপ্রক্রিয়া, সমাজ পরিস্থিতির প্রতি দায়িত্বশীল দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি গুরুত্ব না দেওয়া কেবল একজন পাঠকই মাত্র, তাঁর অবস্থা কী হতে পারে, তা সব সময় আন্দাজ করা যায় না। ফলে লেখকদের এগিয়ে যেতেই হয়। কারণ, অভিযোগ–আপত্তি ‘বড় লেখক’দের প্রতিই হয়। যাঁর ক্ষমতা নেই, তাঁর প্রতি অভিযোগ করেও যে কোনো লাভ নেই, তা আমপাঠকেরাও বোঝেন। মনে পড়ছে, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শেষ প্রশ্ন উপন্যাসটির বিষয়ে লিখতে গিয়ে ‘বড়ো লেখক’ কথাটির উল্লেখ করে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘বড়ো লেখকদের এই এক মুশকিল। তাঁদের লেখার মধ্যে যে জিনিসগুলি...অর্থাৎ লিখনভঙ্গি, চরিত্র-চিত্রণ-পদ্ধতি, রস-পরিবেশন-রীতি প্রভৃতি বৈশিষ্ট্য, এগুলি পাঠকের মনে স্থায়ীভাবে মুদ্রিত হয়ে যায়।’ এর ফলে যা হয়, ‘শেষ প্রশ্ন’ পড়তে গিয়ে পাঠকেরা গৃহদাহ আর চরিত্রহীন-এর শরৎচন্দ্রকে খুঁজতে খুঁজতে বেজায় নাজেহাল। আমরা জানি, শেষ প্রশ্ন শেষ পর্যন্ত ‘গৃহদাহ’, ‘চরিত্রহীন’ ও ‘দত্তা’র মতো সমাদৃত হয়নি, বরং কিছু অগ্রসর পাঠকের কথা বাদ দিলে প্রচলিত রীতি ও নীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করায় এন্তার দুর্নাম কুড়িয়েছেন শরৎচন্দ্র। তাই বলে ‘শরৎচন্দ্র এই বইটি না লিখলেও পারতেন’—এমন অনুযোগ নিশ্চয়ই করা যায় না, বরং এত খ্যাতি ও জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও তিনি যে উদ্ভূত সংকটকে প্রাসঙ্গিক করে সামনে এগিয়ে গেছেন এবং লেখক হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন, তাতে তিনি আজ আমাদের শ্রদ্ধার পাত্র। শেষ প্রশ্ন বিষয়ে যে কথাগুলো বলেছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়—তিনি নিজে উল্লেখ না করলেও—তা তাঁর লেখকজীবনের ক্ষেত্রেও সত্য। যে লেখক ‘দিবারাত্রির কাব্য’, ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’র মতো অনবদ্য উপন্যাসের স্রষ্টা, তাঁর অন্যান্য বইয়ে বিশেষত রাজনৈতিক বা দায়বদ্ধ উপন্যাসে পূর্বপাঠ-মুগ্ধ পাঠকেরা যে সেই মানিককেই খুঁজে হয়রান হবেন, তাতে আশ্চর্য কী! অন্য রূপে একই ঘটনা ঘটেছে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র ক্ষেত্রেও, কিন্তু মহৎ শিল্পীর যুগপৎ ঔদাসীন্য ও জঙ্গমতা তাঁকে কোথাও আটকে রাখতে পারেনি।

‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ ও ‘আন্না কারেনিনা’ লিখে বোদ্ধা পাঠকের কাছে বিপুল সাফল্য পাওয়ার পরও সর্বজনীনতার প্রশ্নে, অর্থাৎ তাঁর শিল্পকর্ম সব শ্রেণির পাঠকের কাছে বোধগম্য না হওয়ায় নিজের প্রতি তিক্ত–বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন লিও তলস্তয়। একই কারণে বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছিলেন শেক্‌সপিয়ার ও গ্যেটের মতো ধ্রুপদি সাহিত্যিকের প্রতিও।

লালসালু উপন্যাসে মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে স্বকপোলকল্পিত মিথ ও মিথ্যাকে যেভাবে সত্যের ছদ্মবেশে দাঁড় করানো হয়েছে, প্রকারান্তরে তাঁর নানা রকম দৃষ্টান্ত সমাজে থাকায় উপন্যাসের বাস্তবতা একটি প্রতীকে পরিণত হয়, প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মাধ্যম হয়—এভাবে ধীরে ধীরে বিপুল জনপ্রিয়তা আদায় করে নেয় বইটি। এরপর বাংলা ভাষায় যে দুটি উপন্যাস লেখেন সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্, তার চরিত্র ও পটভূমি (বাংলা) দেশের হলেও এর মনস্তত্ত্ব ও বিষয়-উন্মোচক আঙ্গিক ছিল সর্বদেশীয়, কিন্তু পাঠক এই দুটি উপন্যাসে লালসালুর ঔপন্যাসিককে খুঁজে হয়রান হয়ে গৌণ বিষয়গুলোকে বড় করে তুলেছেন। কিন্তু সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ পাঠক-প্রতিক্রিয়ায় কৌতূহলী থাকলেও—বিচলিত না হয়ে—স্বস্থানে ছিলেন নির্বিকার। ফ্রান্সে অবস্থানকালে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্‌র সঙ্গে যখন দেখা করতে যান, অনুজ কথাসাহিত্যিক রশীদ করীম, তখন সেই জায়গায় ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ উপন্যাসের পাণ্ডুলিপির কিছু অংশ পড়ে মন্তব্য করেছিলেন, ‘যা পড়লাম তা খুব একটা ভালো লাগল না।’ আরও বললেন, ‘ভাষা ঝাঁকি খেতে খেতে এগোয়, ঠিক যেন কাদায় আটকে পড়া কোনো গাড়ির ঘুরন্ত চাকা, হঠাৎ হঠাৎ সামনে ছোটে। ভাষার গতি মোটেও মসৃণ নয়। আর এ ভাষা খামোকাই ভারাক্রান্ত। ন্যারেটিভেও কিছুটা অগোছালো ভাব রয়েছে।’ সেদিনের সাক্ষাৎকারে রশীদ করীমের এসব মন্তব্যে আত্মবিশ্বাসহীন ঊনলেখকদের মতো অস্থির হয়ে স্নেহাস্পদ অনুজের সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হননি ওয়ালীউল্লাহ্। বাস্তবে রশীদ করীমের ‘গতিশীল ভাষায়’ লেখা উপন্যাসগুলো যতটা মনে রেখেছে পাঠক, তার চেয়ে বেশি মনে রেখেছে ঝাঁকি খেয়ে চলা অমসৃণ ভাষায় লেখা ‘কাঁদো নদী কাঁদো’ উপন্যাসটিকে। সেদিন ‘চাঁদের অমাবস্যা’ উপন্যাসটি সম্পর্কেও যে মন্তব্য করেছিলেন রশীদ করীম, তা–ও কোনো ঔপন্যাসিকের জন্য স্বস্তিকর ছিল না। কিন্তু লালসালুর জনপ্রিয়তায় থিতু না থেকে এবং অন্যের মন্তব্যকে গুরুত্ব না দিয়ে অবিচল আত্মবিশ্বাসের জোরে পরবর্তীকালে দুটি ইংরেজি উপন্যাস—‘দ্য আগলি এশিয়ান’ ও ‘হাউ ডাজ ওয়ান কুক বিনস’–সহ যে চারটি উপন্যাস লিখলেন, সেগুলোর কারণে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ ইতিমধ্যে বাংলা সাহিত্যে ধ্রুপদি লেখকের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত। রুশ কথাসাহিত্যিক তলস্তয়ের ক্ষেত্রেও হয়েছিল তা–ই। তাঁর লোকসংবেদী ব্যথিত মন তাঁকে তাঁর খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠায় স্থির থাকতে দেয়নি।

‘ওয়ার অ্যান্ড পিস’ ও ‘আন্না কারেনিনা’ লিখে বোদ্ধা পাঠকের কাছে বিপুল সাফল্য পাওয়ার পরও সর্বজনীনতার প্রশ্নে, অর্থাৎ তাঁর শিল্পকর্ম সব শ্রেণির পাঠকের কাছে বোধগম্য না হওয়ায় নিজের প্রতি তিক্ত–বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন লিও তলস্তয়। শুধু নিজের প্রতিই নয়, একই কারণে বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছিলেন শেক্‌সপিয়ার ও গ্যেটের মতো ধ্রুপদি সাহিত্যিকের প্রতিও। তাঁর মতে, দীর্ঘকাল ধরে অভিজাত শ্রেণি যে শিল্প সৃষ্টি করেছে, সাধারণ স্তরের লোকেরা তা বুঝতে পারেনি। এই সংকট ক্রমেই বাড়ছে, জটিল হয়ে উঠছে আঙ্গিক। ফলে এসব কাজ সর্বস্তরে না পৌঁছে একটি বিশেষ স্তরের মানুষের মন জুগিয়ে গেছে। এমন শিল্পভাবনার নিরিখে তিনি যখন তাঁর পরবর্তী সাহিত্যকর্মগুলো সৃষ্টি করলেন, তা নিয়ে তুলনামূলক আলোচনা-পর্যালোচনা হয়েছে প্রচুর; ব্যক্তিজীবন, লিখিত আত্মজীবনী, সাক্ষাৎকার, চিঠিপত্র, শিল্প-প্রবন্ধ ও কথাসাহিত্যের আলোকে খোঁজা হয়েছে তাঁর ধর্ম ও দর্শনের পরিচয়। এসব আলোচনায় তাঁর লেখা আগের তুলনায় ভালো না মন্দ—সেই প্রসঙ্গ বারবার উঠেছে। তা উঠতেই পারে, কিন্তু আমাদের কাছে জরুরি ব্যাপার হলো, তলস্তয় তাঁর স্বভাবনার আলোকে নিরন্তর যে কাজগুলো করে গেলেন, পরবর্তীকালের লেখকদের জন্য তা দিশা ও দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল।

এসব অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু ভিন্নমত থাকলেও কখনো কখনো মনে হয়, এ যুগে রোলাঁ বার্থের কথাটিই বোধ হয় সত্য হলো—লেখকের মৃত্যুর মধ্য দিয়েই পাঠকের জন্ম। হতে পারে এই পাঠক বিভ্রান্ত; কখনো অব্যর্থ ও সমদর্শী; কখনো বা তার চেয়ে অগ্রসর ও দূরদর্শী। কারণ, পাঠ/পাঠ্য রোলাঁ বার্থ-কথিত ‘দ্ব্যর্থ’বোধক নয় শুধু, বাখতিন-কথিত বহুস্বরিক হওয়ার জন্য উচ্চাকাঙ্ক্ষীও, আর এ ক্ষেত্রে একজন লেখককে তাঁর রচনা লিখিত হওয়ার পর কেউ হয়তো মৃত বলে ঘোষণা করবেন, কিন্তু তাঁকে—একজন যুগন্ধর লেখককে—ফিনিক্স পাখির প্রতীক না হয়ে উপায় কী?

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পরবর ত ক ল হয় ছ ল ন কর ছ ল ন র জন য স ল খকদ র উপন য স চর ত র আম দ র অর থ ৎ ল র জন সমক ল

এছাড়াও পড়ুন:

রোনালদো কি সত্যিই বিশ্বকাপে ১-২ ম্যাচ মিস করবেন

পর্তুগাল আজ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ খেলবে আর্মেনিয়ার বিপক্ষে। ম্যাচটা পর্তুগিজদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জিতলে ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলা নিশ্চিত হবে, এমনকি ড্র করলেও সমূহ সম্ভাবনা। কিন্তু হারলে নেমে যেতে হতে পারে প্লে-অফের পরীক্ষায়। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটিতে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে পাচ্ছে না পর্তুগাল। বৃহস্পতিবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে লাল কার্ড দেখায় আজ দর্শক হয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁকে।

তবে রোনালদো ও পর্তুগালের জন্য বড় বিপদ সামনে। লাল কার্ডের জন্য এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা সবাইকেই কাটাতে হয়। শাস্তির মূল পরিমাণ ঠিক কত ম্যাচের বা দিনের, সেটি অপরাধের মাত্রার ওপর নির্ভর করে পরে ঘোষণা করা হয়। আর এখানেই শঙ্কা রোনালদোকে নিয়ে।

আইরিশ ফুটবলার দারা ও’শেয়ারকে আঘাতের দায়ে রোনালদো যদি দুই থেকে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পান, তাহলে পর্তুগাল বিশ্বকাপে উঠলে গ্রুপ পর্বের একটি বা দুটি ম্যাচই তিনি মিস করবেন। আর গ্রুপ পর্বে ম্যাচ যেহেতু মাত্র তিনটি, দল আগেভাগে খারাপ করে বিদায় নিশ্চিত হলে রোনালদোর বিশ্বকাপ শুরুর আগেই শেষ হয়ে যাবে।

প্রশ্ন হচ্ছে, এমন পরিস্থিতি কি সত্যিই তৈরি হতে পারে? রোনালদোর বিশ্বকাপে ১-২ মিস করার সম্ভাবনা কতটুকু? ২০২৬ বিশ্বকাপ শুরু হবে জুনে, যা এখনো ছয় মাসেরও বেশি সময় বাকি। এর মধ্যে পর্তুগাল ম্যাচও খেলবে। আর রোনালদোকে আসলে কত ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটাতে হবে, সেটি জানা যাবেই–বা কবে?

রোনালদোর অপরাধ কী ছিল

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের ৬১তম মিনিটে ও’শেয়ারকে কনুই দিয়ে মেরেছেন রোনালদো। রেফারি গ্লেন নাইবার্গ এ ঘটনায় তাঁকে হলুদ কার্ড দেখান। তবে ভিএআরে ঘটনা পর্যালোচনার পর রেফারি সিদ্ধান্ত পাল্টান, দেখান লাল কার্ড। রিপ্লে দেখে সিদ্ধান্ত বদলের অর্থ হচ্ছে, রেফারির কাছে ঘটনাটি গুরুতরই মনে হয়েছে।

শাস্তি কী

লাল কার্ডের ন্যূনতম শাস্তি এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা। এরপর ফিফার ডিসিপ্লিনারি কমিটি ঠিক করে সেটি এক ম্যাচে সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি বাড়বে। বাড়লে কতটা? ফিফা তাদের শৃঙ্খলাবিধির ১৪.১ ধারা অনুসারে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই ধারার ‘ই’ অনুচ্ছেদ অনুসারে, গুরুতর ফাউল খেলার জন্য দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। এই নিয়মটি বল দখলের জন্য অতিরিক্ত আক্রমণাত্মক চ্যালেঞ্জের আওতায় পড়ে।

উদাহরণ হিসেবে অঁরেলিয়ে চুয়ামেনির কথা বলা যেতে পারে। রিয়াল মাদ্রিদের এই মিডফিল্ডার সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সের হয়ে আইসল্যান্ডের বিপক্ষে সরাসরি লাল কার্ড দেখেছিলেন। এ ঘটনায় তাঁকে দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়—একটি লাল কার্ডের জন্য, অন্যটি গুরুতর ফাউলের জন্য।

পর্তুগালের জন্য বিপদ হচ্ছে রোনালদোর পরিস্থিতি আরও গুরুতর হতে পারে। ফিফা আইনের অধীনে তাঁর কনুই মারাকে সহিংস আচরণ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা যেতে পারে। অনুচ্ছেদ ১৪.১ ধারার ‘এইচ’ এবং ‘আই’ অনুচ্ছেদে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার কথা বলা আছে।

এইচ. সহিংস আচরণের জন্য কমপক্ষে তিন ম্যাচ।
আই. আক্রমণাত্মক আচরণের জন্য কমপক্ষে তিন ম্যাচ বা উপযুক্ত সময়ের জন্য নিষেধাজ্ঞা, যার মধ্যে কনুই মারা, ঘুষি মারা, লাথি মারা, কামড়ানো, থুতু দেওয়া, বা কোনো খেলোয়াড় বা রেফারি নন এমন কাউকে আক্রমণ করা অন্তর্ভুক্ত।

যেহেতু রোনালদো আইরিশ ডিফেন্ডারকে কনুই দিয়ে আঘাত করেছেন, তাই তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার খড়্গে পড়তে পারেন, যার ফলে বিশ্বকাপের প্রথম দুটি ম্যাচ মিস করবেন তিনি। এর আগে চলতি মৌসুমের শুরুতে আর্মেনিয়ার তিগরান বারসেঘিয়ানকে উত্তর আয়ারল্যান্ডের এক খেলোয়াড়কে সামান্য মাথা দিয়ে আঘাত করার দায়ে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ফিফা।

পর্তুগাল আজই বিশ্বকাপ নিশ্চিত করলে কী হবে

আজ আর্মেনিয়ার বিপক্ষে জিতলে বা ড্র করলে বিশ্বকাপের টিকিট কাটা হয়ে যাবে পর্তুগালের। এর অর্থ হচ্ছে, পর্তুগাল তাদের পরবর্তী প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলবে আগামী বছরের জুনে বিশ্বকাপের মূল পর্বে। সে ক্ষেত্রে রোনালদো গ্রুপ পর্বের প্রথম একটি বা দুটি ম্যাচ (মোট নিষেধাজ্ঞা দুই বা তিন ম্যাচ সাপেক্ষে) মিস করবেন। এর আগে মার্চে ফিফা উইন্ডো আছে। তবে সে সময় পর্তুগাল খেললেও তা হবে ‘প্রীতি ম্যাচ’। রোনালদোকে শাস্তি ভোগ করতে হবে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচেই।

কবে জানা যাবে রোনালদোর নিষেধাজ্ঞা কত ম্যাচের

ঘটনার কত দিনের মধ্যে ফিফা ডিসিপ্লিনারি কমিটি শাস্তি ঘোষণা করবে, সে বিষয়ে কোনো বিধান নেই। সাধারণত, ঘটনার পরবর্তী মাসের শুরুতে রায় পাওয়া যায়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন হচ্ছে আগামী ৫ ডিসেম্বর। সে দিন ওয়াশিংটন ডিসিতে ২০২৬ বিশ্বকাপের সূচি চূড়ান্ত (ড্র) হবে। এর কাছাকাছি সময়েই রোনালদো তাঁর নিষিদ্ধ ম্যাচসংখ্যার খবর পেয়ে যাবেন।

বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে খেলার কি কোনো উপায়ই থাকবে না

প্রথম কথা, রোনালদো এখন পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা পাননি। যদি অন্তত দুই ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পান, তবেই বিশ্বকাপের প্রথম থেকে না খেলার প্রশ্ন আসবে। তবে অপরাধের ধরনের কারণে ধরে নেওয়া যায় নিষেধাজ্ঞা তিনি পেতে যাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে পর্তুগালের বিশ্বকাপে জায়গা করাও একটা বিষয়। আজ পর্তুগাল যদি আর্মেনিয়াকে হারাতে না পারে এবং একই গ্রুপে হাঙ্গেরি আয়ারল্যান্ডকে হারায়, তাহলে পর্তুগাল গ্রুপে পিছিয়ে ইউরোপিয়ান প্লে-অফে নেমে যাবে।

সে ক্ষেত্রে পর্তুগালের পরবর্তী দুটি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ হবে প্লে-অফ সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল। নিষেধাজ্ঞা পেলে রোনালদো এই ম্যাচগুলো মিস করবেন। দল বিশ্বকাপে গেলে সেখানে শুরু থেকেই খেলতে পারবেন ‘সিআরসেভেন’। কিন্তু যে প্লে-অফের ওপরে বিশ্বকাপে খেলা, না খেলা নির্ভর করবে, সেই ম্যাচে না খেলতে পারাও তো রোনালদো এবং পর্তুগালের জন্য ধাক্কা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় নির্বাচন: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • চলতি বছরে যেসব সিনেমার প্রস্তাব ফেরান আমির
  • নোয়াখালীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২
  • জাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে পরীক্ষার খাতা অবমূল্যায়ন ও ট্যাগিংয়ের অভিযোগ
  • সিদ্ধিরগঞ্জে দুই গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মামলা
  • একীভূত হতে যাওয়া পাঁচ ব্যাংকের দুরবস্থার সময় দায়িত্বে ছিলেন যারা
  • রোনালদো কি সত্যিই বিশ্বকাপে ১-২ ম্যাচ মিস করবেন