বুটিক, ব্র্যান্ডের পোশাক, জিলাপি, সুশি কী নেই বনানীর এই রাস্তায়
Published: 5th, October 2025 GMT
ফুটপাতঘেঁষা সুন্দর, পরিপাটি দোকান। সাইনবোর্ডে নাম লেখা ‘প্যাঁচঘর’। এখানে বেশ জনপ্রিয় একটি প্যাঁচানো জিনিস বিক্রি হয়। সেটি হলো জিলাপি। বনানীর ১১ নম্বর সড়কের পশ্চিম পাশের প্রবেশমুখের পাশেই এই প্যাঁচঘর।
জিলাপির প্যাঁচ আর সঙ্গে কলিজার শিঙাড়া দিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সারতে এসেছিলেন মারুফ হোসেন ও মেহেদি হাসান। সম্প্রতি এক দুপুরে কথা হয় তাঁদের সঙ্গে। তাঁরা এখানে এসেছিলেন মূলত সৌদি আরবে কাজে যাওয়ার জন্য এক জনশক্তি রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠানে সাক্ষাৎকার দিতে। বাড়ি চাঁদপুরে। জিলাপির দোকানটি যে ভবনের নিচের তলায়, সেটির নাম নন্দন ম্যানশন। এখানে বিভিন্ন তলায় বেশ কয়েকটি জনশক্তি রপ্তানিবিষয়ক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আরও অনেক রকমের বাণিজ্যিক অফিস আছে। তাদের কর্মচারী আর কাজে আসা লোকজন এখানে খাবারের দোকানে খেতে আসেন। জিলাপি-শিঙাড়া ছাড়াও আছে ‘তেহারি ঘর’। সেখানেও দুপুরে খাসির তেহারি, মোরগ-পোলাও, কাচ্চির স্বাদ নিতে দেখা গেল অনেকেই। তবে বিক্রেতাদের তেমন সন্তুষ্ট মনে হলো না। প্যাঁচঘরের ব্যবস্থাপক সোহাগ হোসেন ও তেহারি ঘরের আকিল ইসলাম বললেন, খদ্দের ইদানীং বেশ কম। আগে পশ্চিম দিকের বিমানবন্দর সড়ক থেকে সরাসরি ১১ নম্বর সড়কে প্রবেশ করা যেত। সেটি বন্ধ করে দেওয়ায় লোকসমাগম কমে গেছে।
জিলাপির প্যাঁচ আর সঙ্গে কলিজার শিঙাড়া দিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সারতে এসেছিলেন মারুফ হোসেন ও মেহেদি হাসান। সম্প্রতি এক দুপুরে কথা হয় তাঁদের সঙ্গে। তাঁরা এখানে এসেছিলেন মূলত সৌদি আরবে কাজে যাওয়ার জন্য এক জনশক্তি রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠানে সাক্ষাৎকার দিতে।বনানীর এই ১১ নম্বর সড়কটি জিলাপি, ফুচকা, তেহারি থেকে শুরু করে জাপানি সুশি, ইতালির পিৎজা, আমেরিকান বার্গার থেকে থাই চায়নিজ অবধি বিস্তর খাবারের দোকানে ভরা। সঙ্গে আছে দেশের জনপ্রিয় বুটিক শপ থেকে পোশাক-আশাকের নামকরা অনেক বিদেশি ব্র্যান্ডের শোরুম। এক সড়কে কেনাকাটা আর খাবারের আয়োজনের জন্য রাজধানীর অভিজাত এলাকাটি অনেকের দৃষ্টি কেড়েছে।
পরিকল্পিত আবাসিক এলাকা হিসেবে বনানীর পত্তন হয়েছিল ১৯৭০ সালে। এরপর থেকে আবাসনের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, রসনাবিলাসের আয়োজনসহ নানা নাগরিক সুবিধা এখানে যুক্ত হতে থাকে। প্রশস্ত সড়কের পাশ দিয়ে নির্মিত হয়েছে সারি সারি আধুনিক স্থাপত্যরীতির বহুতল ভবন। ২০০০ সাল থেকে বনানীতে অনেক রকমের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে থাকে। এখানে ১১ নম্বর সড়কটি পশ্চিমে বিমানবন্দর সড়ক থেকে শুরু হয়ে পূর্ব দিকে লেকের কাছে সেতু পর্যন্ত প্রসারিত। প্রশস্ত সড়কটির দুই পাশে ২০১০ সাল থেকেই একটি দুটি করে দেশি বুটিকগুলোর বিক্রয়কেন্দ্র খুলতে থাকে। দিন দিন পোশাক-আশাকের দোকান যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে হোটেল-রেস্তোরাঁ।
এখানে দেশি-বিদেশি হরেক রকম খাবারের সম্ভার নিয়ে আছে পিৎজা হাট, কেএফসি, হারফি, সুশি, বিএসফি, কফি ওয়ার্ল্ড, শিঙাড়াওয়ালা, আমেরিকান বার্গার, বার্গার কিং, টেরা ব্রিস্টো, হটকেক, ট্রাইব, বোহো, ফুচকাওয়ালীসহ শ খানেক ছোট-বড় ভোজনালয়।
মুখরোচক খাবারের দোকানও পাওয়া যাবে বনানীর এই সড়কে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এস ছ ল ন ম বন ন র
এছাড়াও পড়ুন:
মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধ সড়ক যেন মরণফাঁদ
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ৬৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সড়কটি এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে ছোট-বড় অনেক গর্ত। এসব গর্তের পাশ দিয়ে প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন পথচারী ও যানবাহন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের দাবি জানানো হলেও সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধের দুই পাশে জায়গায় জায়গায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও সড়কের পিচ উঠে গেছে, কোথাও আবার গর্তের গভীরতা এত বেশি যে, ছোট যানবাহন উল্টে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে দুর্ঘটনায় কলেজছাত্রের মৃত্যু, ট্রাকে আগুন
সিলেটে বাস-প্রাইভেটকার সংঘর্ষ, বাবা-মেয়ে নিহত
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও, এর ওপরে নির্মিত পাকা সড়কটি সওজ বিভাগের আওতাধীন। এ সড়কটি ব্যবহার করে মতলব উত্তর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও ঢাকা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর যানবাহন চলাচল করে।
স্থানীয় অটোরিকশা চালক রোবেল হোসেন বলেন, “নির্মাণের দুই-তিন বছর যেতে না যেতেই সড়কের দুই পাশে অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখন প্রতিদিন গাড়ি চালাতে হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। একটু অসাবধান হলেই ঘটবে দুর্ঘটনা।”
মোটরসাইকেল চালক আনোয়ার হোসেন বলেন, “দিনে কোনোভাবে পার হওয়া যায়, কিন্তু রাতের পরিস্থিতি থাকে ভয়ঙ্কর। কারণ, অনেক সময় দূর থেকে গর্ত দেখা যায় না। এই সড়কে খুব ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।”
পিকআপ ভ্যানের চালক আব্দুর রহমান বলেন, “কয়েক বছর না যেতেই রাস্তা গর্তে ভরে গেছে। রাতের বেলায় গর্তগুলো বোঝা যায় না, তাই সব সময় আতঙ্ক নিয়ে গাড়ি চালাতে হয়।”
কলাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কটি এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। এখন গর্তের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত মেরামতের জন্য আমরা একাধিকবার জানিয়েছি।”
মতলব উত্তর প্রেস ক্লাবের সভাপতি বোরহান উদ্দিন ডালিম বলেন, “এই বেড়িবাঁধ শুধু মতলব নয়, পুরো অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের প্রধান সড়ক। তাই সওজ বিভাগের উদাসীনতা জনজীবনে ঝুঁকি তৈরি করছে। বর্ষার আগেই এই সড়কটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার জরুরি।”
চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “অতিবৃষ্টির কারণে গর্ত তৈরি হয়েছে। আমরা সড়কটি মেরামতের ব্যবস্থা নিয়েছি।”
উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, মতলব ব্রিজ থেকে বেড়িবাঁধের পূর্ব অংশে সংস্কার কাজের জন্য টেন্ডার করা হয়েছে। পশ্চিম অংশ এখনও ঠিকাদারের দায়িত্বে আছে, তাদেরকেও মেরামতের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (চঃ দাঃ) সেলিম শাহেদ বলেন, “বেড়িবাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের হলেও এর ওপরে থাকা পাকা সড়ক সওজ বিভাগের দায়িত্বে। বেড়িবাঁধের যদি কোথাও ক্ষতি হয়, আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই; সড়ক সংস্কার কাজ সওজ বিভাগকেই করতে হয়।”
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, “বেড়িবাঁধ সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত দেখা গেছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে।”
ঢাকা/অমরেশ/মাসুদ