চট্টগ্রাম শহরের চকবাজার এলাকায় থাকেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার ফজল। সকালে শাটল ট্রেন ধরতে ছুটে যান ষোলশহর স্টেশনে। ক্লাস শেষে ফেরেন বিকেলে। চাকসু নির্বাচন নিয়ে এবার তাঁর অন্য রকম উচ্ছ্বাস। অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাকসু নির্বাচনে ভোট দিতে পারব, এটা ভাবিনি কখনো। পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগে অন্তত একটা বড় ঘটনার সাক্ষী হচ্ছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে শাহরিয়ারের মতো ‘অনাবাসিক’ শিক্ষার্থীরাই মূল ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে উঠবেন। অনাবাসিক হলেন সেই শিক্ষার্থীরা, যাঁরা হলের বাইরে থাকেন। তাঁরা ভোটের দিন শাটল ট্রেনে, বাসে কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে ক্যাম্পাসে ফিরবেন নিজের ভোট দিতে। 

শহরে থাকেন, এমন ৪০ ‘শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁরা সবাই ভোট দিতে ক্যাম্পাসে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে তাঁরা আশা করছেন। অবশ্য ভোটের দিন নিরাপত্তা ও পরিবহন-সংকট নিয়ে কিছুটা চিন্তিত এই শিক্ষার্থীরা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ২৮ হাজার ৫১৫ জন। ১৪টি আবাসিক হলে আসন আছে ৬ হাজার ৩৬৯। তবে গাদাগাদি করে থাকছেন আরও অনেকে। সব মিলিয়ে হলে থাকার সুযোগ পান মাত্র ৯ হাজারের মতো শিক্ষার্থী। প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী থাকেন ক্যাম্পাসের আশপাশের কটেজ ও মেসে। ১০ থেকে ১১ হাজার শিক্ষার্থী থাকেন চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকায়। তাঁদের অনেকেই পড়াশোনা, টিউশন বা পারিবারিক কারণে শহরে থেকেই যান। এই শিক্ষার্থীদের ভোট যে প্যানেলে পড়বে, সেই প্যানেলই এগিয়ে যাবে—এমনটাই মনে করছেন প্রার্থীরা। 

শহরে থাকেন, এমন ৪০ ‘শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁরা সবাই ভোট দিতে ক্যাম্পাসে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে তাঁরা আশা করছেন। অবশ্য ভোটের দিন নিরাপত্তা ও পরিবহন-সংকট নিয়ে কিছুটা চিন্তিত এই শিক্ষার্থীরা। 

চট্টগ্রাম শহর থেকে যাতায়াত করেন অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুশফিকুল কাদের। তিনি বলেন, ‘ভোটের দিন ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত ভিড় থাকবে মনে হচ্ছে। তবু ভোট দিতে যাব। সে ক্ষেত্রে পরিবহন-সংকট নিয়ে কিছুটা চিন্তিত। আশা করি প্রশাসন শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত যানবাহনের ব্যবস্থা করবে।’ 

এবারের চাকসু নির্বাচনের মোট ভোটার ২৭ হাজার ৫১৮ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১৬ হাজার ৮৪ জন, ছাত্রী ১১ হাজার ৩২৯ জন। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এর অন্তত ১০ থেকে ১১ হাজার শিক্ষার্থী নিয়মিত শহর থেকে যাতায়াত করেন। তাঁদের ভোটের দিকেই এখন তাকিয়ে আছে সব প্যানেল।

আমরা প্রথম থেকেই হলের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে কাজ করছি। এঁরা ভোট দিতে আসবেন কি না, সেটাই মূল প্রশ্ন। তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারলে নির্বাচনের ফল উল্টে যাবেছাত্রদলের প্যানেল থেকে ভিপি (সহসভাপতি) পদে নির্বাচন করছেন সাজ্জাদ হোসেনভোটার টানতে প্রার্থীরা সরব

সব ঠিক থাকলে ১৫ অক্টোবর সপ্তম চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর নির্বাচন হচ্ছে বলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ বেশি। ৯ শতাধিক শিক্ষার্থী নির্বাচনে লড়তে প্রার্থী হয়েছেন। এরই মধ্যে নির্বাচনে প্যানেল হয়েছে ১৩টি। হলের বাইরের শিক্ষার্থীদের মন জয় করতে প্রার্থীরা বেশ সরব। 

ছাত্রদলের প্যানেল থেকে ভিপি (সহসভাপতি) পদে নির্বাচন করছেন সাজ্জাদ হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই হলের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে কাজ করছি। এঁরা ভোট দিতে আসবেন কি না, সেটাই মূল প্রশ্ন। তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারলে নির্বাচনের ফল উল্টে যাবে।’

শহর থেকে প্রতিদিন এক জোড়া শাটল ট্রেন ১৮ বার চলাচল করে। এটিই শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম। ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেলে ভিপি প্রার্থী ধ্রুব বড়ুয়া বলেন, প্রতিদিন শাটল ট্রেনে যাঁরা আসেন, তাঁরা বড় ভোটব্যাংক। শহরের ভোটাররা ভোটের ফলাফলই পাল্টে দিতে পারেন।

শহরের শিক্ষার্থীদের অনেকেই বন্ধুর মেসে রাত কাটিয়ে পরদিন ভোট দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। আবার অনেকেই দল বেঁধে ট্রেনে ক্যাম্পাসে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোটের দিন নিরাপত্তা জোরদার থাকবে। শাটল ট্রেন চলবে ঘণ্টায় ঘণ্টায়। 

আরও পড়ুনচাকসু নির্বাচন: ফেসবুকে ছড়াচ্ছে ভোটের উত্তাপ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫প্রচারণা শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে

ক্যাম্পাস থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে শহরের ষোলশহর রেলস্টেশন। নিয়ম করে এখানে প্রতিটি ট্রেন থামে। স্টেশন ঘিরে একাধিক দোকানপাট। শিক্ষার্থীরাও বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত এসব দোকানে আড্ডায় মেতে থাকেন। তাই চাকসু নির্বাচনের প্রচারণা এখন এখানেও ছড়িয়ে পড়েছে। ষোলশহর রেলস্টেশনে ঝুলছে প্রার্থীদের ব্যানার-পোস্টার। প্রার্থীরাও এ এলাকায় শাটল ট্রেনের সূচি মিলিয়ে নিয়মিত প্রচারণা করছেন।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের সমর্থিত প্যানেল থেকে ভিপি পদে নির্বাচন করছেন ইব্রাহিম হোসেন। অন্য প্রার্থীদের মতো তিনিও নিয়মিত ষোলশহরে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ইব্রাহিম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন হাজারও শিক্ষার্থী শহর থেকে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করেন। ষোলশহরে একসঙ্গে অনেক শিক্ষার্থীকে পাওয়া যায়। তাই তিনিও নিয়মিত এখানে প্রচারণা চালাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের সাড়া পাচ্ছেন। 

হলের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করেছে বামপন্থী প্যানেল ‘দ্রোহ পর্ষদ’। এ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ বলেন, এত বছরেও আবাসন–সংকট দূর করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই বাড়তি টাকা খরচ করে মেসে ও কটেজে থাকেন। এসব বিষয়গুলো নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। 

শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ হলের বাইরে থাকেন। তাঁদের ভোট যে প্যানেল বা প্রার্থী পাবেন, তিনিই এগিয়ে থাকবেন। তাই ইশতেহারে অবশ্যই এ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে।বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো.

বখতেয়ার উদ্দীন

শহরে বসবাস করা শিক্ষার্থীরা পরিবহন–সংকটে ধুঁকছেন। গত ২৫ বছরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এ সময়ে নতুন নতুন বিভাগ হয়েছে। কিন্তু পরিবহনের সুবিধা তেমন একটা বাড়েনি। এখনো হাজারো শিক্ষার্থীকে গাদাগাদি করে ট্রেনে যাতায়াত করতে হচ্ছে। প্রার্থীরা বলছেন, নির্বাচিত হতে পারলে প্রশাসনের কাছ থেকে সংকটের সমাধান আদায় করে নেবেন তাঁরা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এবারই প্রথম এত বড় পরিসরে ‘অনাবাসিক ভোটারদের’ অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এর আগে ১৯৯০ সালের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১০ হাজার ৫২৬। তখন অনাবাসিক শিক্ষার্থীর সংখ্যাও ছিল কম। 

আরও পড়ুনচাকসু নির্বাচন: হলের লড়াইয়েও ছাত্রদল-শিবির ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

অনাবাসিক ভোটারদের সংকটগুলো প্রার্থীদের ইশতেহারে গুরুত্ব পাওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. বখতেয়ার উদ্দীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ হলের বাইরে থাকেন। তাঁদের ভোট যে প্যানেল বা প্রার্থী পাবেন, তিনিই এগিয়ে থাকবেন। তাই ইশতেহারে অবশ্যই এ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক য ত য় ত কর অন ব স ক শহর থ ক ষ লশহর শহর র করছ ন অবশ য

এছাড়াও পড়ুন:

চাকসু নির্বাচন: হলের বাইরের ভোটাররাই ‘ফ্যাক্টর’

চট্টগ্রাম শহরের চকবাজার এলাকায় থাকেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার ফজল। সকালে শাটল ট্রেন ধরতে ছুটে যান ষোলশহর স্টেশনে। ক্লাস শেষে ফেরেন বিকেলে। চাকসু নির্বাচন নিয়ে এবার তাঁর অন্য রকম উচ্ছ্বাস। অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘চাকসু নির্বাচনে ভোট দিতে পারব, এটা ভাবিনি কখনো। পড়াশোনা শেষ হওয়ার আগে অন্তত একটা বড় ঘটনার সাক্ষী হচ্ছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে শাহরিয়ারের মতো ‘অনাবাসিক’ শিক্ষার্থীরাই মূল ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে উঠবেন। অনাবাসিক হলেন সেই শিক্ষার্থীরা, যাঁরা হলের বাইরে থাকেন। তাঁরা ভোটের দিন শাটল ট্রেনে, বাসে কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে ক্যাম্পাসে ফিরবেন নিজের ভোট দিতে। 

শহরে থাকেন, এমন ৪০ ‘শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁরা সবাই ভোট দিতে ক্যাম্পাসে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে তাঁরা আশা করছেন। অবশ্য ভোটের দিন নিরাপত্তা ও পরিবহন-সংকট নিয়ে কিছুটা চিন্তিত এই শিক্ষার্থীরা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ২৮ হাজার ৫১৫ জন। ১৪টি আবাসিক হলে আসন আছে ৬ হাজার ৩৬৯। তবে গাদাগাদি করে থাকছেন আরও অনেকে। সব মিলিয়ে হলে থাকার সুযোগ পান মাত্র ৯ হাজারের মতো শিক্ষার্থী। প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থী থাকেন ক্যাম্পাসের আশপাশের কটেজ ও মেসে। ১০ থেকে ১১ হাজার শিক্ষার্থী থাকেন চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকায়। তাঁদের অনেকেই পড়াশোনা, টিউশন বা পারিবারিক কারণে শহরে থেকেই যান। এই শিক্ষার্থীদের ভোট যে প্যানেলে পড়বে, সেই প্যানেলই এগিয়ে যাবে—এমনটাই মনে করছেন প্রার্থীরা। 

শহরে থাকেন, এমন ৪০ ‘শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। তাঁরা সবাই ভোট দিতে ক্যাম্পাসে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে তাঁরা আশা করছেন। অবশ্য ভোটের দিন নিরাপত্তা ও পরিবহন-সংকট নিয়ে কিছুটা চিন্তিত এই শিক্ষার্থীরা। 

চট্টগ্রাম শহর থেকে যাতায়াত করেন অর্থনীতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুশফিকুল কাদের। তিনি বলেন, ‘ভোটের দিন ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত ভিড় থাকবে মনে হচ্ছে। তবু ভোট দিতে যাব। সে ক্ষেত্রে পরিবহন-সংকট নিয়ে কিছুটা চিন্তিত। আশা করি প্রশাসন শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত যানবাহনের ব্যবস্থা করবে।’ 

এবারের চাকসু নির্বাচনের মোট ভোটার ২৭ হাজার ৫১৮ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১৬ হাজার ৮৪ জন, ছাত্রী ১১ হাজার ৩২৯ জন। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, এর অন্তত ১০ থেকে ১১ হাজার শিক্ষার্থী নিয়মিত শহর থেকে যাতায়াত করেন। তাঁদের ভোটের দিকেই এখন তাকিয়ে আছে সব প্যানেল।

আমরা প্রথম থেকেই হলের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে কাজ করছি। এঁরা ভোট দিতে আসবেন কি না, সেটাই মূল প্রশ্ন। তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারলে নির্বাচনের ফল উল্টে যাবেছাত্রদলের প্যানেল থেকে ভিপি (সহসভাপতি) পদে নির্বাচন করছেন সাজ্জাদ হোসেনভোটার টানতে প্রার্থীরা সরব

সব ঠিক থাকলে ১৫ অক্টোবর সপ্তম চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর নির্বাচন হচ্ছে বলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ বেশি। ৯ শতাধিক শিক্ষার্থী নির্বাচনে লড়তে প্রার্থী হয়েছেন। এরই মধ্যে নির্বাচনে প্যানেল হয়েছে ১৩টি। হলের বাইরের শিক্ষার্থীদের মন জয় করতে প্রার্থীরা বেশ সরব। 

ছাত্রদলের প্যানেল থেকে ভিপি (সহসভাপতি) পদে নির্বাচন করছেন সাজ্জাদ হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকেই হলের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে কাজ করছি। এঁরা ভোট দিতে আসবেন কি না, সেটাই মূল প্রশ্ন। তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারলে নির্বাচনের ফল উল্টে যাবে।’

শহর থেকে প্রতিদিন এক জোড়া শাটল ট্রেন ১৮ বার চলাচল করে। এটিই শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম। ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’ প্যানেলে ভিপি প্রার্থী ধ্রুব বড়ুয়া বলেন, প্রতিদিন শাটল ট্রেনে যাঁরা আসেন, তাঁরা বড় ভোটব্যাংক। শহরের ভোটাররা ভোটের ফলাফলই পাল্টে দিতে পারেন।

শহরের শিক্ষার্থীদের অনেকেই বন্ধুর মেসে রাত কাটিয়ে পরদিন ভোট দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। আবার অনেকেই দল বেঁধে ট্রেনে ক্যাম্পাসে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ভোটের দিন নিরাপত্তা জোরদার থাকবে। শাটল ট্রেন চলবে ঘণ্টায় ঘণ্টায়। 

আরও পড়ুনচাকসু নির্বাচন: ফেসবুকে ছড়াচ্ছে ভোটের উত্তাপ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫প্রচারণা শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে

ক্যাম্পাস থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে শহরের ষোলশহর রেলস্টেশন। নিয়ম করে এখানে প্রতিটি ট্রেন থামে। স্টেশন ঘিরে একাধিক দোকানপাট। শিক্ষার্থীরাও বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত এসব দোকানে আড্ডায় মেতে থাকেন। তাই চাকসু নির্বাচনের প্রচারণা এখন এখানেও ছড়িয়ে পড়েছে। ষোলশহর রেলস্টেশনে ঝুলছে প্রার্থীদের ব্যানার-পোস্টার। প্রার্থীরাও এ এলাকায় শাটল ট্রেনের সূচি মিলিয়ে নিয়মিত প্রচারণা করছেন।

ইসলামী ছাত্রশিবিরের সমর্থিত প্যানেল থেকে ভিপি পদে নির্বাচন করছেন ইব্রাহিম হোসেন। অন্য প্রার্থীদের মতো তিনিও নিয়মিত ষোলশহরে প্রচারণা চালাচ্ছেন। ইব্রাহিম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন হাজারও শিক্ষার্থী শহর থেকে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করেন। ষোলশহরে একসঙ্গে অনেক শিক্ষার্থীকে পাওয়া যায়। তাই তিনিও নিয়মিত এখানে প্রচারণা চালাচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের সাড়া পাচ্ছেন। 

হলের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করেছে বামপন্থী প্যানেল ‘দ্রোহ পর্ষদ’। এ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ঋজু লক্ষ্মী অবরোধ বলেন, এত বছরেও আবাসন–সংকট দূর করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই বাড়তি টাকা খরচ করে মেসে ও কটেজে থাকেন। এসব বিষয়গুলো নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হচ্ছে। 

শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ হলের বাইরে থাকেন। তাঁদের ভোট যে প্যানেল বা প্রার্থী পাবেন, তিনিই এগিয়ে থাকবেন। তাই ইশতেহারে অবশ্যই এ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে।বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. বখতেয়ার উদ্দীন

শহরে বসবাস করা শিক্ষার্থীরা পরিবহন–সংকটে ধুঁকছেন। গত ২৫ বছরে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। এ সময়ে নতুন নতুন বিভাগ হয়েছে। কিন্তু পরিবহনের সুবিধা তেমন একটা বাড়েনি। এখনো হাজারো শিক্ষার্থীকে গাদাগাদি করে ট্রেনে যাতায়াত করতে হচ্ছে। প্রার্থীরা বলছেন, নির্বাচিত হতে পারলে প্রশাসনের কাছ থেকে সংকটের সমাধান আদায় করে নেবেন তাঁরা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এবারই প্রথম এত বড় পরিসরে ‘অনাবাসিক ভোটারদের’ অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এর আগে ১৯৯০ সালের নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১০ হাজার ৫২৬। তখন অনাবাসিক শিক্ষার্থীর সংখ্যাও ছিল কম। 

আরও পড়ুনচাকসু নির্বাচন: হলের লড়াইয়েও ছাত্রদল-শিবির ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

অনাবাসিক ভোটারদের সংকটগুলো প্রার্থীদের ইশতেহারে গুরুত্ব পাওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. বখতেয়ার উদ্দীন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ হলের বাইরে থাকেন। তাঁদের ভোট যে প্যানেল বা প্রার্থী পাবেন, তিনিই এগিয়ে থাকবেন। তাই ইশতেহারে অবশ্যই এ শিক্ষার্থীদের কল্যাণে প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ