মেরামতকাজের গতি মন্থর, তিন দিন ধরে ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট
Published: 7th, October 2025 GMT
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে দীর্ঘদিনের যানজট নিরসনে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার সময় শেষ হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। কিন্তু তিন দিনে মহাসড়কে মাত্র ২৫ শতাংশ কাজ দৃশ্যমান হয়েছে। সমন্বয়হীনতা ও মন্থর গতির কারণে মহাসড়কে যানজট ও দুর্ভোগ উভয়ই বেড়েছে। গত শনিবার বিকেলে শুরু হওয়া যানজট এখনো লেগে আছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মহাসড়কে গাড়ির অনেক চাপ। তাঁরা সড়ক মেরামতের কাজ ঠিকঠাকভাবে করতে পারছেন না। এ জন্য বিলম্ব হচ্ছে।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, আগামীকাল বুধবার সরাইল বিশ্বরোড এলাকা পরিদর্শনে আসছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। উপদেষ্টার আগমন উপলক্ষে তড়িঘড়ি করে সংস্কারকাজ করছে সওজ। উপদেষ্টা চলে গেলে আবার ইট তুলে ফেলা হবে। তবে সওজের ভাষ্য, তিন স্তরে ইট ফেলে স্থায়ী সমাধানের অংশ হিসেবে মেরামতের কাজ করা হচ্ছে।
সওজ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে দীর্ঘ যানজট নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে নির্দেশ আসে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরাইল বিশ্বরোড অংশে যানজট নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এরপর শনিবার বিকেল থেকে বিশ্বরোড গোলচত্বর এলাকায় সড়ক মেরামতের কাজ শুরু করে সওজ। গোলচত্বর অংশে ১২ মিটার প্রস্থ ও ১৮৫ মিটার দৈর্ঘ্য আর গোলচত্বর থেকে সিলেটমুখী সরাইল কুট্টাপাড়া খেলার মাঠ পর্যন্ত ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ দশমিক ৩ মিটার প্রস্থে তিন স্তরে ইট ও বালু বিছানো হচ্ছে। ঢাকা, কুমিল্লা, মুন্সিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে তৈরি ইট আনা হচ্ছে। মোট চার লাখ ইট বিছানো হবে।
সওজ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার সময়সীমা আজ বিকেলে শেষ হয়েছে। আজকের মধ্যে বিশ্বরোড অংশে মেরামতের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও দৃশ্যমান হয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ কাজ। অন্যদিকে শনিবার বিকেলে কাজ শুরুর পরপরই ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অংশে যানজট সৃষ্টি হয়। আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে হবিগঞ্জের মাধবপুর পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার এলাকায় তিন দিন ধরে দীর্ঘ যানজট লেগে আছে। যানবাহনে চালক ও যাত্রীদের অভিযোগ, মেরামতকাজে মন্থর গতির কারণে যানজট ও দুর্ভোগ উভয়ই বেড়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কে দীর্ঘ যানজট। সওজের শ্রমিকেরা ধীরগতিতে কাজ করছেন। এতে যানজট আগের তুলনায় বেড়েছে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের লোকজনকে বিশ্বরোড মোড়ে মাটি ফেলতে দেখা যায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকাগামী সোহাগ পরিবহনের সরাইল বিশ্বরোড মোড় কাউন্টারের পরিচালক সোহাগ আহমেদ বলেন, প্রতিদিন ভোর ৫টা ২০ থেকে বিকেল সাড়ে ৫টার মধ্যে ৩০টির বেশি গাড়ি যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। কিন্তু আজ গাড়ি গেছে মাত্র ১৮টি। এর মধ্যে কোনো গাড়িতেই পরিপূর্ণ যাত্রী হয়নি। এক–চতুর্থাংশ যাত্রীও তাঁরা পাচ্ছেন না।
তিশা পরিবহনের কাউন্টারের পরিচালক শাহ আলম মিয়া বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে প্রতিদিন ৩০টি গাড়ি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। আজ সারা দিনে গেছে মাত্র ১০টি বাস। প্রতিটি গাড়ি প্রায় খালিই গেছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে চলাচলকারী মিতালী পরিবহনের কাউন্টার পরিচালক বাবুল মিয়া বলেন, ঢাকা-সিলেট সড়কপথে প্রতিদিন মিতালী পরিবহনের ৬০টি বাস চলাচল করে। কিন্তু আজ সিলেটে গেছে মাত্র একটি বাস।
সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, এভাবে কাজ করাটা ভুল সিদ্ধান্ত। এখানে ত্রিমুখী গাড়ি চলাচল করে। কাজের কারণে যেকোনো এক মুখে গাড়ি ছাড়লে বাকি দুই দিকে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে যানজট ও দুর্ভোগ বেড়েছে। তিনি বলেন, আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত চার লেন প্রকল্পে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও ঢাকা-সিলেট ছয় লেন মহাসড়কে কাজ করা লোকজনের মধ্যে সমন্বয় নেই। সমন্বয়হীনতার কারণেই যত্রতত্র ইট-বালু বহনকরী ট্রাক রাখা হচ্ছে। এতে যানজট তীব্র হচ্ছে।
সওজের কুমিল্লা অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু হেনা মোহাম্মদ তারেক ইকবাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও যানবাহনের চাপের কারণে দ্রুতগতিতে কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় আরও তিন থেকে চার দিন সময় লাগবে। সমন্বয়হীনতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা মালামাল সরবরাহ করছি। জনবল দিচ্ছে দুটি প্রকল্পের লোকজন।’ কাজ কতটুকু হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, ‘আপনারা তো দেখছেনই।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় ম র মত র ক জ দ র ঘ য নজট পর বহন র ব শ বর ড ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনাকে ভারতের ফেরত দেওয়া উচিত: আ ন ম মুনিরুজ্জামান
আইনি প্রক্রিয়ার প্রতি সম্মান জানিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত শেখ হাসিনাকে ভারতের ফেরত পাঠানো উচিত বলে মনে করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনিরুজ্জামান।
আ ন ম মুনিরুজ্জামান বলেছেন, বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী হিসেবে ভারতকে বাংলাদেশের আইনি প্রক্রিয়ার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত।
আজ শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের এক কর্ম অধিবেশনে এ কথা বলেন মুনিরুজ্জামান। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন’ শীর্ষক তিন দিনের এই সম্মেলন আয়োজন করেছে।
জুলাই অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন। অভ্যুত্থান দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে সম্প্রতি দেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাঁকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিয়েছেন।
ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে আজ শনিবার সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন’–এর উদ্বোধনী দিনে ‘ফ্র্যাকচার্ড অর্ডারস, ফ্লুইড লয়্যালটিজ: পাওয়ার পলিটিকস ইন দ্য পোস্ট-অ্যালাইনমেন্ট এজ’ শিরোনামের প্লেনারি সেশনে আলোচকেরা