ইসরায়েলকে ২ হাজার ১৭০ কোটি ডলার সামরিক সহায়তা যুক্তরাষ্ট্রের
Published: 8th, October 2025 GMT
বাইডেন ও ট্রাম্প প্রশাসনের সময় গত দুই বছরে গাজায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে হামলা শুরুর পর অন্তত ২ হাজার ১৭০ কোটি ডলার বা ২১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তার অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত এক নতুন একাডেমিক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল ছিল এই সংঘাতের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি।
গাজায় মার্কিন সহায়তা নিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ওয়াটসন স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের কস্টস অব ওয়ার প্রজেক্টের গবেষকেরা। ব্রাউন ইউনিভার্সিটির তথ্য অনুযায়ী, কস্টস অব ওয়ার প্রজেক্ট হলো ৩৫ জন গবেষক, আইনবিশেষজ্ঞ, মানবাধিকারকর্মী ও চিকিৎসকের একটি দল, যাঁরা ২০১১ সালে তাঁদের কাজ শুরু করেন।
কস্টস অব ওয়ার প্রজেক্টের আরেকটি গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, গত দুই বছরে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যের বিস্তৃত এলাকায় নিরাপত্তা সহায়তা ও সামরিক অভিযানে আরও প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে।
যদিও প্রতিবেদনের বেশির ভাগ তথ্য উন্মুক্ত সূত্রের ওপর ভিত্তি করে তৈরি, তবু এতে ইসরায়েলকে দেওয়া সামরিক সহায়তার সবচেয়ে বিস্তৃত চিত্রগুলোর একটি তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সামরিক ব্যয়ের হিসাবও দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলবিরোধী তীক্ষ্ণ সমালোচনামূলক এসব প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ধারাবাহিক সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো না। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় ভবিষ্যতে ইসরায়েলের জন্য কয়েক শ কোটি মার্কিন ডলার অর্থায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধের প্রথম বছরে যখন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে ১৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে, আর দ্বিতীয় বছরে দিয়েছে ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এই সামরিক সহায়তার একটি অংশ ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছে, বাকিটাও সরবরাহ করা হবে। ওই প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক সংস্থা কুইন্সি ইনস্টিটিউট ফর রেসপনসিবল স্টেটক্র্যাফটের সহযোগিতায়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
ইসলামে পুরুষের জন্য স্বর্ণের অলঙ্কার পরা কেন বৈধ নয়
ইসলাম মানব সমাজে শালীনতা, পরিমিতি ও ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার ধর্ম। এটি শুধু ইবাদত নয়, বরং জীবনযাত্রার নান্দনিক ও নৈতিক দিকগুলোও নির্ধারণ করে। পুরুষ ও নারীর পোশাক, আচরণ, অলঙ্কার—সব ক্ষেত্রেই ইসলাম একটি স্পষ্ট পার্থক্য রেখেছে।
এর অন্যতম উদাহরণ হলো পুরুষের জন্য স্বর্ণ (Gold) পরিধান নিষিদ্ধকরণ। এই নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুশাসন নয়; বরং এটি সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক ও নৈতিক ভারসাম্য রক্ষার প্রজ্ঞায় ভরপুর এক বিধান।
কোরআনের নির্দেশনা ও ব্যাখ্যাযদিও কোরআনে সরাসরি পুরুষদের স্বর্ণ পরার নিষেধাজ্ঞা নেই, তবে এতে সাজসজ্জার সীমা ও শালীনতার নীতি সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত। আল্লাহ বলেন, “বল, কে হারাম করেছে আল্লাহর সৌন্দর্যোপকরণ, যা তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং পবিত্র জীবনোপকরণ।” (সুরা আ‘রাফ, আয়াত: ৩২)
সাজসজ্জা বৈধ, তবে তা এমনভাবে হতে হবে যাতে শরিয়তের নির্ধারিত সীমা অতিক্রম না করে। পুরুষদের জন্য স্বর্ণ ও রেশম সেই সীমা অতিক্রমের অন্তর্ভুক্ত।ইবনে কাসির (রহ.), তাফসির ইবনে কাসিরইবনে কাসির (রহ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, “সাজসজ্জা বা সৌন্দর্যোপকরণ বৈধ, তবে তা এমনভাবে হতে হবে যাতে শরিয়তের নির্ধারিত সীমা অতিক্রম না করে। পুরুষদের জন্য স্বর্ণ ও রেশম সেই সীমা অতিক্রমের অন্তর্ভুক্ত।” (তাফসির ইবনে কাসির, সংশ্লিষ্ট আয়াতের ব্যাখ্যা)
অতএব, কোরআনের সাধারণ নীতিমালা থেকেই বোঝা যায়—যে সাজসজ্জা নারীদের জন্য বৈধ, পুরুষদের জন্য তা নিষিদ্ধ হতে পারে। হতে পারে তা নারীর অনুকরণের কারণে অথবা বিলাসিতা সৃষ্টি করার কারণে।
আরও পড়ুনইসলামি দিনারের উদ্ভব এবং ইতিহাসের প্রথম মুদ্রাযুদ্ধ১৪ জুন ২০২৫হাদিসে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞারাসুল (সা.)-এর জীবন থেকে আমরা এই নিষেধাজ্ঞার সবচেয়ে স্পষ্ট প্রমাণ পাই। আলী ইবনে আবি তালিব (রা.) বলেন, “নবীজি রেশম ও স্বর্ণ পরিধান থেকে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন — ‘এই দুটি জিনিস আমার উম্মতের নারীদের জন্য বৈধ, কিন্তু পুরুষদের জন্য নিষিদ্ধ।’” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৪০৫৭; সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৫৯৫)
ইবনে আব্বাস (রা.) একটি হাদিসে বর্ণনা করেন, “নবীজি এক ব্যক্তির হাতে স্বর্ণের আংটি দেখে তা খুলে ফেলে দেন এবং বলেন, ‘তুমি কি (দোজখের) আগুনের টুকরা হাতে নিতে চাও?’” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২০৯০)
বুরাইদাহ (রা.) বলেন, “নবীজি পুরুষদের জন্য স্বর্ণের আংটি পরা হারাম করেছেন।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৮৬৩)
চারটি প্রধান মাজহাব—হানাফি, মালিকি, শাফেয়ি ও হাম্বলি—সবগুলোর আলেমগণ একমত যে, পুরুষদের জন্য স্বর্ণ পরা বৈধ নয়।এগুলো থেকে স্পষ্ট হয় যে পুরুষদের জন্য স্বর্ণের ব্যবহার শরীয়তসম্মত নয়, বরং এটি জাহান্নামের আগুনের প্রতীক হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।
ফিকহি ব্যাখ্যা ও ঐক্যমতচারটি প্রধান মাজহাব—হানাফি, মালিকি, শাফেয়ি ও হাম্বলি—সবগুলোর আলেমগণ একমত যে, পুরুষদের জন্য স্বর্ণ পরা বৈধ নয়।
ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন: “পুরুষের জন্য স্বর্ণ বা রেশমের কোনো অংশ বৈধ নয়, যদি না যুদ্ধ বা চিকিৎসায় প্রয়োজন পড়ে।”
ইমাম নববী (রহ.) বলেন: “এই নিষেধাজ্ঞা এমন মাত্রায় প্রযোজ্য যে, স্বর্ণের সামান্য অংশও পরিধান করা জায়েয নয়।” (শারহ মুসলিম, খণ্ড ১৪, পৃ. ৩২)
আরও পড়ুনকেনা জমিতে খুঁড়ে পাওয়া গেল সোনা২৩ অক্টোবর ২০২৩নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ বিষয়ে পণ্ডিতদের ব্যাখ্যাইমাম গাজালি (রহ.) তাঁর বলেন, “পুরুষের জন্য স্বর্ণ হারাম করা হয়েছে, যাতে নারী-পুরুষের বাহ্যিক রূপে পার্থক্য বজায় থাকে এবং পুরুষ অহংকার, বিলাসিতা ও আত্মম্ভরিতার পথে না যায়।” (ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন, খণ্ড ২, পৃ. ৩১২)
ইবনে কাইয়িম জাওযি (রহ.) বলেন, “স্বর্ণের প্রতি আসক্তি আত্মতৃপ্তি ও অহংকারের প্রতীক, যা পুরুষের বিনয় ও আধ্যাত্মিক চরিত্রকে দুর্বল করে।” (ইলামুল মুওয়াক্কি‘ইন, খণ্ড ১, পৃ. ৪৮৬)
এই দৃষ্টিকোণ থেকে, স্বর্ণ নিষিদ্ধকরণ পুরুষের আত্মসংযম, বিনয় ও মানসিক শক্তি রক্ষার এক মাধ্যম। তা ছাড়া স্বর্ণ সাধারণত সৌন্দর্য, বিলাসিতা ও সামাজিক মর্যাদার প্রতীক। ইসলাম চায় না পুরুষ বাহ্যিক অলঙ্কারে নিজেকে সংজ্ঞায়িত করুক; বরং তার মর্যাদা নির্ধারিত হোক চরিত্র, জ্ঞান ও দায়িত্ববোধে।
পুরুষের জন্য স্বর্ণ হারাম করা হয়েছে, যাতে নারী-পুরুষের বাহ্যিক রূপে পার্থক্য বজায় থাকে এবং পুরুষ অহংকার, বিলাসিতা ও আত্মম্ভরিতার পথে না যায়।ইমাম গাজালি (রহ.), ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন, ২/৩১২মনোবিজ্ঞানী কারেন হর্নাই (Karen Horney) তার Neurosis and Human Growth গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, “যেসব সমাজে পুরুষরা বাহ্যিক সৌন্দর্য ও অলঙ্কারকে পরিচয়ের অংশ বানায়, সেখানে পুরুষত্বের ধারণা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং আত্মমর্যাদাবোধ হ্রাস পায়।”
ইসলাম এই মানব-মনস্তাত্ত্বিক বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়ে পুরুষকে আভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য ও নৈতিক দৃঢ়তা অর্জনে উদ্বুদ্ধ করেছে।
আধুনিক ইসলামি চিন্তাবিদদের মধ্যে ইউসুফ কারজাভি বলেন, “স্বর্ণ পুরুষের জন্য মানানসই নয়; এটি পার্থিব সৌন্দর্যের প্রতীক, আর ইসলাম পুরুষকে আত্মিক সৌন্দর্যের দিকে আহ্বান করে।” (আল-হালাল ওয়াল-হারাম ফিল ইসলাম, পৃ. ৭৩)
বিকল্প ব্যবস্থা: রুপা পরিধানরাসুল (সা.) নিজে রুপার আংটি পরতেন। হাদিসে আছে, “রাসুল (সা.)-এর একটি রুপার আংটি ছিল, যার পাথরে লেখা ছিল ‘মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’।’’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৮৭৭)
সুতরাং, রুপা পরিধান পুরুষের জন্য বৈধ, তবে সেটিও অহংকার ও প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে নয়, বরং সরলতার প্রকাশ হিসেবে।
পুরুষের জন্য স্বর্ণ পরিধান নিষিদ্ধকরণ ইসলামের গভীর সমাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। এই নিষেধাজ্ঞা পুরুষকে বিলাসিতা ও বাহ্যিক আভিজাত্য থেকে দূরে রেখে আত্মিক উন্নয়ন, বিনয় ও দায়িত্ববোধে উদ্বুদ্ধ করে।
ইসলাম পুরুষের মর্যাদা নির্ধারণ করেছে তার তাকওয়া, সততা ও কর্মে; স্বর্ণের অলঙ্কারের মাধ্যমে নয়।
আরও পড়ুনওসমানিয়া নারীদের মিথ ও বাস্তবতা১৯ জুন ২০২৫