বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অক্সিজেনকে বলছে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। অথচ বাংলাদেশে প্রয়োজনের সময় প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ ঠিকমতো অক্সিজেন পায় না। যোগাযোগ, প্রস্তুতি ও সরবরাহ পরিষেবার ঘাটতি এবং সেবার নিম্নমানের কারণে সময়মতো অক্সিজেন পায় না মানুষ।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর একটি পাঁচতারা হোটেলে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ অক্সিজেন সামিট ২০২৫’–এ এ কথা বলা হয়। অনুষ্ঠানে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, অক্সিজেনকে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সম্মেলনে গবেষক ও বিজ্ঞানীরা বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর ৭৪ লাখ মানুষের মেডিকেল অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। অক্সিজেন খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার।

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সাময়িকী দ্য ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ ২০২২ সালে অক্সিজেন নিরাপত্তা বিষয়ে একটি কমিশন গঠন করেছিল। ওই কমিশন মেডিকেল অক্সিজেনের নিরাপত্তা বিষয়ে এ বছরের মার্চে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

গতকালের অনুষ্ঠানে ল্যানসেট কমিশনের প্রতিবেদনের মূল বিষয়ের পাশাপাশি দেশের মেডিকেল অক্সিজেন পরিস্থিতি, সরকার কী করছে, অক্সিজেনপ্রাপ্তি নিশ্চিতে কী করা উচিত, তা নিয়ে আলোচনা হয়। আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি), দ্য ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এভরি ব্রেথ কাউন্টস ও ইউনিটাইড যৌথভাবে এক দিনের এ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সম্মেলনের প্রধান অতিথি ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো.

সায়েদুর রহমান বলেন, অক্সিজেন মূলত জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়। সরকার এ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চায়। এখন অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদ করার কাজ চলছে। ওই তালিকায় অক্সিজেনকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনের সভাপতি ও আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক তাহমিদ আহমেদ বলেন, ‘আমরা কখনো চিন্তা করি না যে আমার অক্সিজেনের প্রয়োজন। অক্সিজেন না থাকলে জীবন থেমে যায়। অক্সিজেনের ক্ষেত্রে দেশ উন্নতি করেছে। তবে দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগা মানুষের অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ছে।’

অক্সিজেন পেতে ৪ বাধা

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, অক্সিজেন শিল্পে ও চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। চিকিৎসায় ব্যবহৃত অক্সিজেন ‘মেডিকেল অক্সিজেন’ নামে পরিচিত। মূলত তিনটি ক্ষেত্রে মেডিকেল অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়: জরুরি চিকিৎসার চাহিদা (শিশু ও বয়স্ক), অস্ত্রোপচার ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভোগা মানুষ, বিশেষ করে শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী রোগ (সিওপিডি)।

দ্বিতীয় অধিবেশনে অক্সিজেন নিরাপত্তা বিষয়ে মূল উপস্থাপনায় ল্যানসেট কমিশনের সদস্য ও আইসিডিডিআরবির ইমেরিটাস বিজ্ঞানী শামস এল আরেফিন বলেন, বৈশ্বিকভাবে দেখা যায়, অনেকে অক্সিজেনের প্রয়োজনের সময় হাসপাতালে বা ক্লিনিকে পৌঁছাতে পারেন না। হাসপাতালে পৌঁছালে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি অক্সিজেন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত নয়। হাসপাতাল প্রস্তুত থাকলেও দেখা যায় নানা ঘাটতি আছে। আবার দেখা যায় সেবা মানসম্মত নয়।

শামস এল আরেফিন বলেন, অক্সিজেনপ্রাপ্তির এই চার ধাপের সমস্যা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশেও আছে। ৪৬ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ অক্সিজেনের প্রয়োজনের সময় হাসপাতালে বা ক্লিনিকে পৌঁছাতে পারে না বা প্রতিষ্ঠান বাড়ি থেকে অনেক দূরে, ২ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ হাসপাতালে গিয়ে দেখে প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত নয়। আবার ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ দেখে, অক্সিজেন দেওয়ার ক্ষেত্রে নানা ঘাটতি আছে। সবশেষে দেখা যায়, ৭ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ মানসম্মতভাবে অক্সিজেন পায় না। এভাবে দেখা যায়, প্রয়োজনে ৭০ শতাংশ মানুষ অক্সিজেন পায় না।

তবে অধিবেশনের এক পর্যায়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান এ পরিসংখ্যানের ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, দেশে মেডিকেল অক্সিজেনের কোনো ঘাটতি নেই।

সময় ৩ মিনিট

সকালের অধিবেশনে ল্যানসেট কমিশনের প্রতিবেদনের মূল বিষয়বস্তু উপস্থাপনার সময় কমিশনের নির্বাহী কমিটির সমস্য ও আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী আহমদ এহসানূর রহমান অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সাধারণত মানুষ খাদ্য ছাড়া তিন সপ্তাহ বাঁচতে পারে, পানি ছাড়া বাঁচতে পারে তিন দিন। আর অক্সিজেন ছাড়া মানুষ তিন মিনিটের বেশি বাঁচতে পারে না।

আহমদ এহসানূর রহমান বলেন, প্রতিবছর সারা বিশ্বে ৩৭ কোটি ৪০ লাখ মানুষের মেডিকেল অক্সিজেনের দরকার হয়। এসব মানুষের চাহিদা মেটাতে ১২০ কোটি ঘনমিটার অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। দিন দিন এ চাহিদা বাড়ছে। অক্সিজেনের চাহিদা তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে বেশি। তিনি বলেন, বিলম্বে অক্সিজেন দেওয়ার অর্থ জীবনকে অস্বীকার করা।

সম্মেলনের একাধিক অধিবেশনে একাধিক আলোচক কোভিড মহামারির সময় অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা ও সংকটের কথা তুলে ধরেন। শিশুরোগবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবিদ হোসেন মোল্লা বলেন, ‘কোভিড আমাদের শিখিয়েছে, অক্সিজেন কতটা জরুরি। কোভিড শিখিয়েছে, কীভাবে অক্সিজেন দিতে হয়।’

অনুষ্ঠানে বলা হয়, বাংলাদেশে জরুরি চিকিৎসার চাহিদায় ২ কোটি ৩৪ লাখ ঘনমিটার, অস্ত্রোপচারে ২৩ লাখ ঘনমিটার এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ বা সমস্যায় ৫ কোটি ৮৩ লাখ ঘনমিটার অক্সিজেন দরকার হয়।

বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ কাজী সাইফউদ্দীন বেননূর বলেন, দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছেন—এমন মানুষের মাসের পর মাস, বছরের পর বছর মেডিকেল অক্সিজেন দরকার হয়। তবে সবাই প্রয়োজনের সময় চাহিদামাফিক অক্সিজেন পায় না।

করণীয় বা সুপারিশ

ল্যানসেট কমিশন প্রতিবেদনে সরকার, অক্সিজেনশিল্পের মালিক, স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান, দাতা সংস্থা, নাগরিক সংগঠন, গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ও পেশাজীবী সংগঠনের করণীয় বিষয়ে লম্বা সুপারিশ রয়েছে। সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মো. মহিউদ্দীন আল হেলাল বাংলাদেশে অক্সিজেন নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি পথরেখার খসড়া উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, সবার জন্য নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও নির্ভরযোগ্য অক্সিজেন নিশ্চিত করতে হবে।

এর আগে কোভিডের সময় কোন দেশ, কোন প্রতিষ্ঠান বিশ্বের কোথায় কোথায় অক্সিজেনের সংকট মোকাবিলায় কী উদ্যোগ বা কী উদ্ভাবন করেছিল, তার বর্ণনা দেওয়া হয় অনুষ্ঠানে। এ অধিবেশনে আইসিডিডিআরবি, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা তাঁদের অক্সিজেন–সম্পর্কিত উদ্ভাবনের বর্ণনা দেন।

অন্যদিকে অক্সিজেন উৎপাদন, নিয়ম-বিধি ও বিনিয়োগবিষয়ক পৃথক অধিবেশনে বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অপারেশন অফিসার ইফ্ফাত মাহমুদ, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মোহিত ইসলাম, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) কাজী দেলওয়ার হোসেন বক্তব্য দেন।

সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগের সচিব মো. সাঈদুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর, ইউনিসেফের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা পিয়া ফিও থান চো, সোসাইটি অব সার্জনস অব বাংলাদেশের সদস্যসচিব অধ্যাপক সালেহীন, বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের সদস্যসচিব মোহাম্মদ জাকারিয়া আল-আজিজ, বুয়েটের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ তারিক আরাফাত।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইস ড ড আরব প রস ত ত অন ষ ঠ ন র রহম ন ঘনম ট র ন বল ন দশম ক সরক র দরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নিরাপত্তা ও আবাসন সংকটের সমাধান চান শিক্ষার্থীরা

ট্রেন ছাড়তে তখনো ঘণ্টাখানেক বাকি। ঘড়ির কাঁটা একটার ঘর ছুঁয়েছে। স্টেশনে শিক্ষার্থীদের জটলা। ভেসে আসছে ‘গম্ভীরার’ সুর। সেই সুরে সুরে চলছিল চাকসুর প্রার্থীদের প্রচারণা। চারপাশে দাঁড়িয়ে কেউ তা মুঠোফোনে বন্দী করছিলেন, কেউ তুলছিলেন ছবি।

গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের রেলস্টেশনে গিয়ে এ দৃশ্য চোখে পড়ল। জটলার ভেতর দাঁড়িয়ে গম্ভীরার দুই চরিত্র ‘নানা-নাতির’ গান শুনে হাততালি দিচ্ছিলেন সামিয়া মুনতাহা। এক ফাঁকে জানালেন, তিনি সংগীত বিভাগে চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন। গম্ভীরার সুরে এমন অভিনব প্রচারণা দেখে তিনি উচ্ছ্বসিত।

সামিয়ার সঙ্গে কথায় কথায় নানা প্রসঙ্গ এল। চাকসুতে যাঁরা নির্বাচিত হবেন, তাঁদের কাছে প্রত্যাশা কী—এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল তাঁকে। সামিয়া বললেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে এখনো উদ্বেগ রয়েছে। নিরাপত্তা দিতে প্রশাসনের উদ্যোগ নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। এ ছাড়া আরেকটি বড় সমস্যা হলো, আবাসনসংকট। বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকেই হলের বাইরে থাকতে হয়। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা এ দুই বিষয় নিয়ে প্রথমেই কাজ করবেন, এমনটাই প্রত্যাশা।

আর মাত্র ছয় দিন পরই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর ১৫ অক্টোবর নির্বাচন হচ্ছে। এবার প্রার্থী হয়েছেন ৯ শতাধিক শিক্ষার্থী। নানাভাবে প্রচারণা করে তাঁরা ভোটারদের মন জয় করে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। ফলে ক্যাম্পাসজুড়ে এখন শুধু একটাই আলোচনা—চাকসু নির্বাচন।

সামিয়া মুনতাহার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখন শাটল ট্রেন স্টেশনেই দাঁড়ানো। ট্রেন থেকে নেমে এলেন আরেক শিক্ষার্থী—জেরিন শুভা। ফিন্যান্স বিভাগের এ শিক্ষার্থী বললেন, ‘সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছিল। এ ঘটনার পর নিরাপত্তা নিয়ে আরও বেশি শঙ্কা তৈরি হয়েছে। নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব প্রশাসনের। আমরা চাই চাকসুতে নির্বাচিত হয়ে আসা প্রতিনিধিরা প্রশাসনের কাছ থেকে এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ আদায় করে নেবেন।’

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের প্রসঙ্গটি নতুন নয়। গত এক দশক ক্যাম্পাস ছিল ছাত্রলীগের (বর্তমানে নিষিদ্ধ) ‘হাতের মুঠোয়’। সংগঠনটির দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ লেগেই থাকত। এর প্রভাবে অবরোধ, ধর্মঘটে বন্ধ থাকত ক্লাস–পরীক্ষা। যার ক্ষতি বহন করতে হতো সাধারণ শিক্ষার্থীদের।

ছাত্রলীগের আধিপত্যের পাশাপাশি ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্যও ছিল। শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরের ক্যাম্পাসটি সবুজ পাহাড় ও টিলাবেষ্টিত। শিক্ষার্থীরা সময় পেলেই পাহাড়ে ঢুঁ মারেন। দল বেঁধে চলে যান ক্যাম্পাস থেকে কয়েক কিলোমিটার গহিনের চালন্দা গিরিপথে। কিন্তু সেখানে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ছাত্রলীগের দাপট আর নেই। তবে ছিনতাইকারীর ভয় কেটে গেছে—এ কথা জোর দিয়ে বলতে পারলেন না ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী প্রত্যয় চাকমা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ক্যাম্পাসের পাহাড়গুলোতে যেতে এখনো ভয় হয়। নিরাপত্তাকর্মী আরও বাড়ানো প্রয়োজন।

প্রার্থী-ভোটারের মিলনমেলা

কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ঝুপড়ি সব সময় জমজমাট থাকে। শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষে ঝুপড়ির চায়ের দোকানে বসে আড্ডায় মেতে ওঠেন। আবার কেউ কেউ ক্লাসে যাওয়ার আগে এখানেই সারেন নাশতা। এখানকার কোনো টেবিলে বসে মেতে ওঠেন গানে।

গতকাল বেলা ১১টার দিকে চায়ের দোকানে বসে কেউ শিঙাড়ায় কামড় বসাচ্ছিলেন। কারও হাতে ছিল ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ। প্রার্থীরা একের পর এক আসছেন। প্রচারপত্র দিচ্ছেন। ভোট চাইছেন। এসব নিয়েই চলছিল কথাবার্তা।

ঝুপড়িতে পাওয়া গেল সমাজতত্ত্ব বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের তৃণা দাশ ও আঞ্জলী ধরকে। তৃণা থাকেন চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ এলাকায়। আর আঞ্জলীর বাসা অলংকারে। চাকসু নির্বাচনের প্রসঙ্গে বললেন, অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো পরিবহনসংকট। শাটলে গাদাগাদি করে যাতায়াত করতে হয়। বগির সংকট রয়েছে। চাকসুর আগামী দিনের প্রতিনিধিদের এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।

দুই ছাত্রীর সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখন প্রচারণা চালাতে এসেছিলেন চাকসুর স্বতন্ত্র ভিপি (সহসভাপতি) পদপ্রার্থী মো. মাহফুজুর রহমান। ভোট চাওয়ার পর তাঁর কাছে ইশতেহার চান ওই দুই ছাত্রী। পরে তিনি নিজের ইশতেহারও তুলে ধরেন। এর মধ্যে আছে ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আবাসন ও পরিবহন সমস্যা সমাধানসহ নানা বিষয়।

গতকাল ওই ঝুপড়িতে আড্ডারত আরও ১০ শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলো এ প্রতিবেদকের। তাঁরা বলেছেন, ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থীদের কার্যক্রম, অতীত ইতিহাস ও বর্তমান কার্যক্রম তাঁরা বিবেচনায় নিচ্ছেন। পাশাপাশি ইশতেহারে কী প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে, তা–ও দেখছেন তাঁরা।

বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, চাকসুর নেতারা শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠবেন, কোনো দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবেন না, এমনটাই প্রত্যাশা। শিক্ষার্থীরা আর লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি দেখতে চান না। প্রার্থীদের এটি মনে রাখতে হবে।

ক্যাম্পাসের আরেকটি ‘জনপ্রিয়’ জায়গা হলো সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ঝুপড়ি। গতকাল দুপুর ১২টায় ওই ঝুপড়িতে গিয়ে চোখে পড়ল লোকসমাগম। ক্লাসের বিরতিতে আড্ডায় মশগুল ছিলেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের দুই শিক্ষার্থী। তাঁরা হলেন অনিন্দিতা চাকমা ও মনীষা তঞ্চঙ্গ্যা। তাঁদের হাতে ছিল বিভিন্ন প্রার্থীর প্রচারপত্র। অনিন্দিতা বলেন, ‘গ্রামবাসীর সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ঘটনার পর পরিবেশ কিছুটা ভীতিকর হয়েছে। এখন রাতে ক্যাম্পাসে ঘোরাফেরা করতে অস্বস্তি লাগে। তাই দ্রুত হলে ঢুকে যাই।’

ইশতেহারে আগ্রহ সবার

এবারের চাকসু নির্বাচনের মোট ভোটার প্রায় ২৭ হাজার। এর মধ্যে ছাত্র ১৬ হাজার ৮৪ জন, ছাত্রী ১১ হাজার ৩২৯ জন। কেন্দ্রীয় সংসদের নির্বাচনে লড়তে ১৩টি প্যানেল ঘোষণা হয়েছে। বেশ কয়েকটি প্যানেল ইতিমধ্যে ইশতেহার ঘোষণা করেছে। তবে ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল এখনো তাদের ইশতেহার দেয়নি। আজ বুধবার ছাত্রশিবিরসহ বেশ কয়েকটি প্যানেলের ইশতেহার ঘোষণার কথা রয়েছে।

অবশ্য সম্প্রতি ইশতেহার ঘোষণা করেছে ‘বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য’ প্যানেল। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেসব ‘ইস্যু’ আলোচিত, প্যানেলটির ইশতেহারে মোটাদাগে সেসব বিষয়ই জায়গা পেয়েছে। তারা সাতটি দফা উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে পরিবহন, স্বাস্থ্য খাত, আবাসন ও খাদ্য, প্রশাসনিক খাত, গবেষণা ও একাডেমিক খাত, নিরাপদ ও সবুজ ক্যাম্পাস উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে ইশতেহার ঘোষণা করেছে ‘রেভল্যুশন ফর স্টেট অব হিউম্যানিটি’ ও ‘সার্বভৌম শিক্ষার্থী ঐক্য’ নামের দুটি প্যানেল।

নির্বাচনী আমেজ, শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও প্রার্থীদের প্রচারণা নিয়ে কথা হয় রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. বখতেয়ার উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন পর নির্বাচন হওয়ায় ভবিষ্যৎ চাকসু নেতাদের কাছে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা বেশি থাকবে। যদিও নিরাপত্তা দেওয়া ও আবাসনসংকটের সমাধান করার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। তবে ভবিষ্যৎ নেতারা প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা বা দর-কষাকষি করে এসব দাবি আদায় করে নিতে পারবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ