শহিদুল আলমের মুক্তির দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
Published: 8th, October 2025 GMT
ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (এফএফসি) গাজা অভিমুখী নৌযান থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে বাংলাদেশি আলোকচিত্রী ও লেখক শহিদুল আলমের অপহরণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৮ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বর থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটক হয়ে শাঁখারীবাজার ও বাহাদুর শাহ পার্কসংলগ্ন বিশ্বজিৎ চত্বরে গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
আরো পড়ুন:
আন্ত-ইউনিভার্সিটি বডিবিল্ডিং ও ফিটনেস চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত
হাবিপ্রবিতে বকেয়া টাকা চাওয়ায় ক্যান্টিন পরিচালককে মারধর
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’, ‘প্যালেস্টাইনে মানুষ মরে, জাতিসংঘ কি করে’,'স্বপ্ন দেখি প্রতিদিন, স্বাধীন হবে ফিলিস্তিন’, ‘তুমি কে আমি কে, প্যালেস্টাইন প্যালেস্টাইন’, ‘শহিদুল আলম আটক কেন, জাতিসংঘ জবাব চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও আপ বাংলাদেশের নেতা মাসুদ রানা বলেন, “২০২৩ সাল থেকে ইসরায়েল ফিলিস্তিনে অবিরাম হামলা চালাচ্ছে। গাজার ভাই-বোনদের আমরা একা ছেড়ে দেব না। প্রয়োজনে গাজায় লং মার্চ দিতেও প্রস্তুত আছি।”
শাখা বাগছাসের আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, “ফিলিস্তিন শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, মুসলিম উম্মাহর অনুভূতির নাম। ইসরায়েল এখন শুধু হামলাই নয়, খাদ্য ও মানবিক সহায়তাও বন্ধ করে দিচ্ছে। সর্বশেষ বাংলাদেশি ফটোসাংবাদিক শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তার করেছে। আমরা তার নিঃশর্ত মুক্তি চাই।”
শাখা ছাত্রফ্রন্ট সভাপতি ইভান তাহসীব বলেন, “ইসরায়েলি বাহিনী শহিদুল আলমকে অপহরণ করেছে, অথচ এই সরকারের নীরবতা লজ্জাজনক। এখন নীরব থেকে নয়, ফিলিস্তিনের গণহত্যার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার সময় এসেছে।”
শাখা ছাত্রশিবির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম আরিফ বলেন, “শহিদুল আলম নিজেই বলেছেন, তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে। শুধু তিনি নন, অনেক মানবাধিকারকর্মীই নিখোঁজ। আমরা শহিদুল আলমসহ সবার দ্রুত মুক্তি দাবি করছি।”
এর আগে, বুধবার এক ভিডিও বার্তায় জানা যায়, ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের গাজাগামী নৌযান থেকে শহিদুল আলমকে ইসরায়েলি বাহিনী অপহরণ করেছে।
আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) দীর্ঘদিন ধরে অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর উদ্যোগ নিয়ে আসছে। তবে প্রায়ই ইসরায়েলি বাহিনী এসব নৌবহরকে বাধা দিয়ে নাবিক ও কর্মীদের গ্রেপ্তার বা আটক করে থাকে।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প য ল স ট ইন ইসর য় ল
এছাড়াও পড়ুন:
টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থী অপহরণে স্কুলপড়ুয়া কিশোর গ্যাং
মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে এক চিকিৎসকের ‘ও’ লেভেলপড়ুয়া সন্তানকে অপহরণের পরিকল্পনা করে একটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। তবে নিজেরা না গিয়ে অপহরণের জন্য টাকার বিনিময়ে আরেকটি কিশোর গ্যাংকে ব্যবহার করে তারা। অপহরণের জন্য ওই কিশোর গ্যাংকে ছয় হাজার টাকা দেওয়ার কথা। আগাম চার হাজার টাকা পরিশোধও করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী কোচিংয়ে যাওয়ার পথে ‘ও’ লেভেলপড়ুয়া শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে তারা।
গত শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর এলাকা থেকে ধারালো অস্ত্রসহ কিশোর গ্যাংয়ের আট সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। অপহরণে জড়িত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা সবাই অষ্টম থেকে দশম শ্রেণিপড়ুয়া। পুলিশ জানিয়েছে, অপহরণ করা হলেও ‘ও’ লেভেলের ওই শিক্ষার্থী পরে কৌশলে পালিয়ে বাসায় চলে গেছে। ঘটনার পর থেকে সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অপহরণের ঘটনাটি ঘটে গত ২২ সেপ্টেম্বর। ‘ডট গ্যাং’ নামের একটি কিশোর গ্যাংয়ের দলনেতা আবদুল্লাহ আল মাসুম (১৯) বড় অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করতে চিকিৎসক বাবার ‘ও’ লেভেলপড়ুয়া ওই শিক্ষার্থীকে অপহরণের পরিকল্পনা করেন। মাসুম নগরের একটি সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণিতে পড়েন। অপহরণের জন্য তিনি এনএস (নাজিরপাড়া সিন্ডিকেট) নামের আরেকটি কিশোর গ্যাংকে ব্যবহার করেন। ওই দলের নেতা মাহিনকে (২২) বলেন, ‘ও’ লেভেলের ওই শিক্ষার্থীকে অপহরণ করলে ছয় হাজার টাকা দেওয়া হবে। চার হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে বাকি দুই হাজার টাকা কাজের পর দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।—নয়ন আহমেদ, এসআই, পাঁচলাইশ থানা
পুলিশ ঘটনাস্থলে আর কয়েক মিনিট পরে গেলে উভয় পক্ষ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে যেত। নয়ন আহমেদ, এসআই, পাঁচলাইশ থানাকিশোর গ্যাং এনএসের সদস্যরা নগরের ২ নম্বর গেট এলাকা থেকে কোচিংয়ে যাওয়ার পথে ধারালো অস্ত্রের মুখে ‘ও’ লেভেলপড়ুয়া ওই শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে মুরাদপুরে নাজিরপাড়াসংলগ্ন রেললাইন এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে তাকে বেধড়ক মারধর করা হয়। একপর্যায়ে সে চিৎকার শুরু করলে আশপাশের কয়েকজন ব্যক্তি অপহরণে জড়িত কিশোরদের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়ান। এ সময় কৌশলে ‘ও’ লেভেলের ওই শিক্ষার্থী পালিয়ে বাসায় চলে যায়।
এদিকে ‘ও’ লেভেলের ওই শিক্ষার্থী পালিয়ে যাওয়ার পর কিশোর গ্যাং এনএসকে বাকি দুই হাজার টাকা পরিশোধ করেননি ডট গ্যাং। বিষয়টি নিয়ে ডট গ্যাংয়ের ওপর ক্ষুব্ধ হয় এনএস। এরই জেরে শুক্রবার রাতে মুরাদপুর এলাকায় সশস্ত্র অবস্থায় মুখোমুখি হয় দুটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ আটজনকে গ্রেপ্তার করে। এর মধ্যে কিশোর গ্যাং এনএসের দলপ্রধান মাহিনও রয়েছেন। তাদের কাছ থেকে তিনটি ছুরি, চাপাতি, লোহার রড ও পাইপ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করেছে। ডট গ্যাংয়ের নেতা মাসুমকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।
চট্টগ্রামের স্কুলগুলোয় অনুপস্থিত থাকা ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর বেশির ভাগই জড়িয়ে পড়েছে অপরাধে। নগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, সামাজিক অস্থিরতা ও কিশোর গ্যাংয়ের উত্থানের কারণ খুঁজতে গিয়ে স্কুলপড়ুয়া ছাত্রদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার তথ্য পায় পুলিশ।অভিযানে থাকা পাঁচলাইশ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নয়ন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ ঘটনাস্থলে আর কয়েক মিনিট পরে গেলে উভয় পক্ষ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে যেত।’
পাঁচলাইশ থানার আরেক উপপরিদর্শক নুরুল আবছার প্রথম আলোকে বলেন, ডট গ্যাংয়ের নেতা কলেজপড়ুয়া মাসুম মাদকাসক্ত। নেশার টাকা জোগাড়ের জন্য চিকিৎসকের ছেলেকে অপহরণ করার পরিকল্পনা করেছিলেন তিনি।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের। দুজন ছাড়া বাকি ছয়জন দীর্ঘদিন ধরে পরিবারের অবাধ্য। ওসি আরও বলেন, এনএস গ্যাংয়ের দলনেতা মাহিন উদ্দিন ছিনতাই, অপহরণসহ নানা অপরাধে জড়িত। তাঁর বয়স ২২ বছর। তিনি কয়েকবার দাখিল পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে তিনি নিজেকে মাদ্রাসার দশম শ্রেণিপড়ুয়া হিসেবে পরিচয় দেন। আর ফেসবুক মেসেঞ্জারে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে দলে ভেড়ান। স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করেন। কিশোর শিক্ষার্থীরাও এলাকায় এবং বন্ধুদের সঙ্গে হিরোইজম (বীরত্ব) দেখাতে তাঁর সঙ্গে চলাফেরা করে।
সম্প্রতি ঘটনাস্থল মুরাদপুর সিডিএ অ্যাভিনিউ এলাকায় গিয়ে কথা হয় এক দোকানদারের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্কুলপড়ুয়া ছোট ছোট শিশুর হাত, ব্যাগ, জামার ভেতর ছুরি, চাপাতি দেখে অবাক হয়েছি।’ আরেক দোকানদার বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনায় প্রায়ই এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ধাওয়া করে। কেউ ভয়ে কিছু বলে না তাদের।’
গ্রেপ্তার আট কিশোরের একজনের বাবার সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি বলেন, ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে ঘোরাফেরা করে জানতেন। কিন্তু ছেলে যে কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত, সেটি তিনি জানতেন না।
অপহরণের ঘটনার পর থেকে ট্রমায় রয়েছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কোনো মামলা করা হয়নি। জানতে চাইলে শিশুটির চিকিৎসক বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলে শুধু কাঁদছে। ও কীভাবে স্কুলে যাবে বুঝছি না। আমাদেরই–বা কী হবে।’
নগরে সক্রিয় ২০০ কিশোর গ্যাং
গত বছরের মার্চে নগর পুলিশের করা এক জরিপে উঠে আসে, চট্টগ্রাম নগরে সক্রিয় প্রায় ২০০ কিশোর গ্যাং। এসব গ্যাংয়ের সদস্য ১ হাজার ৪০০ জনের মতো। গত ৬ বছরে ৫৪৮টি অপরাধের ঘটনায় কিশোর গ্যাং জড়িত। তাদের প্রশ্রয় ও পৃষ্ঠপোষকতায় ৬৪ ‘বড় ভাই’ থাকার কথা সেই জরিপে উঠে আসে।
জরিপ অনুযায়ী পুলিশ জানায়, চট্টগ্রামের স্কুলগুলোয় অনুপস্থিত থাকা ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর বেশির ভাগই জড়িয়ে পড়েছে অপরাধে। নগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, সামাজিক অস্থিরতা ও কিশোর গ্যাংয়ের উত্থানের কারণ খুঁজতে গিয়ে স্কুলপড়ুয়া ছাত্রদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার তথ্য পায় পুলিশ। এসব ছাত্র পর্নোগ্রাফি, সাইবার অপরাধ, ছিনতাই, চুরি, মাদক নেওয়া ও কেনাবেচা এবং অনলাইন জুয়ার মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে তারা বেছে নেয় স্কুলের সময়টা।
নানা নামে পরিচিত কিশোর গ্যাং
নগরের মুরাদপুর এলাকা থেকে গত ৪ সেপ্টেম্বর কিশোর গ্যাং এমবিএসের (মোহাম্মদপুর বয়েজ সিন্ডিকেট) ৯ সদস্য গ্রেপ্তার হয়। এর আগে ১০ মে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে পাঁচলাইশ থানার পুলিশ। তারা কেবি (খতিবের হাট), এনএস (নাজিরপাড়া), ৯৯৯, এক্স-মার্ক, ব্যাকহোল, ডট গ্যাংসহ নানা নামে পরিচিত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য। একেকটি দলে একজন করে দলনেতা রয়েছে।
জানতে চাইলে নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, কিশোর গ্যাং যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সে জন্য পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছে। তাদের যারা প্রশ্রয় দিচ্ছে, তাদেরও ছাড়া দেওয়া হচ্ছে না। কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে শুধু পুলিশ নয়, অভিভাবকদেরও সচেতন হতে হবে। সন্তান কোথায় যায়, কী করে, খোঁজ রাখতে হবে।