গাজা অভিমুখী ফ্লোটিলা থেকে শহিদুলকে অপহরণের প্রতিবাদে জবিতে বিক্ষোভ
Published: 8th, October 2025 GMT
ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙতে মানবিক সহায়তা নিয়ে ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখী ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র একটি নৌযান থেকে বাংলাদেশি আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলমকে অপহরণ করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।
আজ বুধবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্য চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি প্রশাসনিক ভবন এলাকা, কাঁঠালতলা, মুক্তমঞ্চ, বিজ্ঞান অনুষদ চত্বরসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থিত বাহাদুর শাহ পার্কসংলগ্ন ‘বিশ্বজিৎ চত্বর’-এর সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘মুক্তি মুক্তি চাই, শহিদুল আলমের মুক্তি চাই’; ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’; ‘ফিলিস্তিনে মানুষ মরে, জাতিসংঘ কী করে’; ‘স্বপ্ন দেখি প্রতিদিন, স্বাধীন হবে ফিলিস্তিন’ এবং ‘ফিলিস্তিনে গণহত্যা, বন্ধ কর করতে হবে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এর আগে আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সোয়া ১০টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় শহিদুল আলম বলেন, তাঁদের বহনকারী গাজা অভিমুখী জাহাজটি মাঝসমুদ্রে আটকে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তিনি অপহরণের শিকার হয়েছেন।
শহিদুল আলম কনশেনস নামের যে জাহাজে আছেন, তা আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) ও থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা (টিএমটিজি) নৌবহরের একটি জাহাজ। আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ও চিকিৎসাকর্মীবাহী এই জাহাজ ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গাজা অভিমুখে রওনা হয়েছিল।
বিক্ষোভে অংশ নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলিম বলেন, গাজা অভিমুখী ত্রাণবহর সুমুদ ফ্লোটিলায় ইসরায়েলি বর্বর হামলা হয়েছে। বহরে থাকা অধিকারকর্মীদের আটক করা হয়েছে। শহিদুল আলম নিজে বলেছেন তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সেখানে আটককৃত সকল মানবাধিকারকর্মীর অবিলম্বে মুক্তি চাই।’
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, ফিলিস্তিনে কয়েক দশক ধরে বর্বর গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গণহত্যা চালিয়েও তারা ক্ষান্ত হয়নি, তারা গাজায় সব ধরনের খাবার-ওষুধ বন্ধ করে দিয়েছে। এই অবরোধ ভাঙতে সারা পৃথিবীর মানবাধিকারকর্মীরা অর্ধশত নৌযান নিয়ে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু একেক করে সবাইকে আটক করেছে ইসরায়েল।
শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ফয়সাল মুরাদ বলেন, শহিদুল আলমকে মুক্ত করে আনতে অন্তর্বর্তী সরকারের যা যা করার, তা করতে হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি ইভান তাহসীভ বলেন, ‘গাজাগামী সুমুদ ফ্লোটিলায় শহিদুল আলমের এই যাত্রা সারা বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে। আমরা জানলাম তাকে অপহরণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আমাদের পুরো জাতিকে অপমান করা হয়েছে। শহিদুল আলমকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাই।’
আরও পড়ুনইসরায়েলি বাহিনী আমাদের আটকে দিয়েছে, আমাকে অপহরণ করেছে: শহিদুল আলম৭ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ধ ক রকর ম ইসর য় ল গণহত য
এছাড়াও পড়ুন:
গুইমারায় নিহতদের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্বালন: পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে এ সরকারের সময়েও মিথ্যা প্রচার হচ্ছে
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার সময় ন্যায়বিচার ও বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামে এক দিনও ওই প্রতিশ্রুতির কোনো অগ্রগতি হয়নি; বরং অনেক ক্ষেত্রে অবনতি ঘটেছে। অনেক অন্যায়কে আড়াল করা হয়েছে। মিথ্যাকে সত্য হিসেবে প্রচার করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ির গুইমারাতে গুলিবর্ষণে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্বালন কর্মসূচিতে উপস্থিত বক্তারা এসব কথা বলেছেন। আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ কর্মসূচির আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন।
কর্মসূচিতে দেশবাসী ও অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের লিখিত ঘোষণা পাঠ করেন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন। ঘোষণায় বলা হয়, খাগড়াছড়িতে একজন মারমা কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় শুরু হওয়া প্রতিবাদে সংঘর্ষ, গুলিবর্ষণ ও অগ্নিসংযোগে তিনজন নিহত এবং অন্তত ৩০ আদিবাসী আহত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দ্বারা অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ রয়েছে। চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপের দাবি জানাচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা একটি জাতীয় সমস্যা উল্লেখ করে বলা হয়, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি এখনো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। যার কারণে পাহাড়ে অশান্তি বেড়ে গেছে। তাই দেশের সব রাজনৈতিক পক্ষ ও অংশীজনকে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ে জাতীয় সংলাপ জরুরি।
কিশোরী ধর্ষণের ঘটনার মেডিকেল রিপোর্ট জনসমক্ষে চলে আসা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন জাকির হোসেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন অফিসের সুস্পষ্ট বক্তব্য দেওয়া হোক। ধর্ষণের শিকার কিশোরীর পিতার বক্তব্য বিবেচনা করে দ্রুত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নির্যাতিত কিশোরী ও পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নিহতের পরিবারের জন্য কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমার জানামতে সেই ১৯৭১ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে যতগুলো গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল, তার অধিকাংশ গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল খাগড়াছড়ি জেলায়। আরও আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পরেও যে ১৬-১৭টি গণহত্যা হয়েছে, তার অধিকাংশই সংঘটিত হয়েছে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলায়। সম্প্রতি সংঘটিত নারী নিপীড়ন, হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকারের লঙ্ঘনের ঘটনাও সেই ধারাবাহিকতার অংশ।’
প্রদীপ প্রজ্বালন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের কয়েকজন