ইসরায়েলি অবরোধ ভাঙতে মানবিক সহায়তা নিয়ে ফিলিস্তিনের গাজা অভিমুখী ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র একটি নৌযান থেকে বাংলাদেশি আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলমকে অপহরণ করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা।

আজ বুধবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাত্তরের গণহত্যা ভাস্কর্য চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি প্রশাসনিক ভবন এলাকা, কাঁঠালতলা, মুক্তমঞ্চ, বিজ্ঞান অনুষদ চত্বরসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থিত বাহাদুর শাহ পার্কসংলগ্ন ‘বিশ্বজিৎ চত্বর’-এর সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘মুক্তি মুক্তি চাই, শহিদুল আলমের মুক্তি চাই’; ‘ফ্রম দ্য রিভার টু দ্য সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি’; ‘ফিলিস্তিনে মানুষ মরে, জাতিসংঘ কী করে’; ‘স্বপ্ন দেখি প্রতিদিন, স্বাধীন হবে ফিলিস্তিন’ এবং ‘ফিলিস্তিনে গণহত্যা, বন্ধ কর করতে হবে’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

এর আগে আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সোয়া ১০টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করা এক ভিডিও বার্তায় শহিদুল আলম বলেন, তাঁদের বহনকারী গাজা অভিমুখী জাহাজটি মাঝসমুদ্রে আটকে দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তিনি অপহরণের শিকার হয়েছেন।

শহিদুল আলম কনশেনস নামের যে জাহাজে আছেন, তা আন্তর্জাতিক উদ্যোগ ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) ও থাউজেন্ড ম্যাডলিনস টু গাজা (টিএমটিজি) নৌবহরের একটি জাহাজ। আন্তর্জাতিক সাংবাদিক ও চিকিৎসাকর্মীবাহী এই জাহাজ ইসরায়েলের অবৈধ অবরোধ ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গাজা অভিমুখে রওনা হয়েছিল।

বিক্ষোভে অংশ নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলিম বলেন, গাজা অভিমুখী ত্রাণবহর সুমুদ ফ্লোটিলায় ইসরায়েলি বর্বর হামলা হয়েছে। বহরে থাকা অধিকারকর্মীদের আটক করা হয়েছে। শহিদুল আলম নিজে বলেছেন তাঁকে অপহরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সেখানে আটককৃত সকল মানবাধিকারকর্মীর অবিলম্বে মুক্তি চাই।’

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন, ফিলিস্তিনে কয়েক দশক ধরে বর্বর গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গণহত্যা চালিয়েও তারা ক্ষান্ত হয়নি, তারা গাজায় সব ধরনের খাবার-ওষুধ বন্ধ করে দিয়েছে। এই অবরোধ ভাঙতে সারা পৃথিবীর মানবাধিকারকর্মীরা অর্ধশত নৌযান নিয়ে রওনা হয়েছিলেন। কিন্তু একেক করে সবাইকে আটক করেছে ইসরায়েল।

শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ফয়সাল মুরাদ বলেন, শহিদুল আলমকে মুক্ত করে আনতে অন্তর্বর্তী সরকারের যা যা করার, তা করতে হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি ইভান তাহসীভ বলেন, ‘গাজাগামী সুমুদ ফ্লোটিলায় শহিদুল আলমের এই যাত্রা সারা বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে। আমরা জানলাম তাকে অপহরণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আমাদের পুরো জাতিকে অপমান করা হয়েছে। শহিদুল আলমকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাই।’

আরও পড়ুনইসরায়েলি বাহিনী আমাদের আটকে দিয়েছে, আমাকে অপহরণ করেছে: শহিদুল আলম৭ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ধ ক রকর ম ইসর য় ল গণহত য

এছাড়াও পড়ুন:

অভাবের কথা বলে পরিচিত হন, আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে হাতিয়ে নেন টাকা

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্য পরিচয়ে অপহরণ ও চাঁদাবাজিতে জড়িত একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সন্দেহভাজন দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাজধানীর হাইকোর্ট এলাকা থেকে সিআইডির সিরিয়াস ক্রাইম শাখার একটি আভিযানিক দল তাঁদের গ্রেপ্তার করে।

আজ রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় সিআইডি। গ্রেপ্তার দুজন হলেন মো. হাসানুজ্জামান (৩৫) ও মো. আলমগীর শিকারী (৪৬)।

সিআইডি জানায়, চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে সিআইডি বা পুলিশের পরিচয় ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে অপহরণ, মারধর, ভয়ভীতি প্রদর্শন, চাঁদা আদায় এবং বিব্রতকর ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেল করে আসছিল। তাঁরা মূলত তাবলিগ জামাতসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সূত্র ধরে মানুষের সঙ্গে পরিচয় তৈরি করে বিশ্বাস অর্জন করত। এরপর অভাবের কথা বলে টাকা নেওয়ার মাধ্যমে ফাঁদ পাতত।

সিআইডি সূত্র আরও জানায়, কাকরাইল মারকাজ মসজিদে তাবলিগ জামাতের অনুষ্ঠানে অভিযুক্ত শামসুল হক খানের (৫৬) সঙ্গে জামাল (ছদ্মনাম) নামের এক ব্যবসায়ীর এভাবেই পরিচয় হয়। চক্রের সদস্য শামসুল প্রায়ই অসুস্থতা ও অভাবের কথা বলে তাঁর কাছ থেকে টাকা নিতেন।

সূত্রটি জানায়, গত ১৪ অক্টোবর রাতে ব্যবসায়িক কাজ সেরে খুলনা থেকে ঢাকায় এলে জামালের সঙ্গে যাত্রাবাড়ীর কাঁচাবাজার গোলচত্বরে দেখা করেন সামসুল। নাশতা শেষে তাঁকে দুই হাজার টাকা দিয়ে রেস্তোরাঁ থেকে বের হতেই সামসুসহ আরও সাতজন নিজেদের সিআইডি পরিচয় দিয়ে জাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখিয়ে জামালকে জোর করে গাড়িতে তোলেন। এ সময় জামালের এক ব্যবসায়িক অংশীদারও তাঁর সঙ্গে ছিলেন।

ভুক্তভোগীদের ঢাকার হাসনাবাদ এলাকায় বসুন্ধরা সিটির বি-ব্লক, রোড-৮–এর একটি ছয়তলা বাড়ির ছয়তলায় নিয়ে যাওয়া হয় উল্লেখ করে সিআইডি জানায়, সেখানে প্রথমে পাঁচ কোটি টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে জামালকে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে ভয় দেখিয়ে তাঁর নগদ টাকা এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে মোট ১ কোটি ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। জামালের ব্যবসায়িক অংশীদারের কাছ থেকেও ২৭ হাজার টাকা নেওয়া হয়।

সিআইডি আরও জানায়, জামালকে বিবস্ত্র করে এক নারীর সঙ্গে বসিয়ে ভিডিও ও ছবি ধারণ করা হয় এবং ১৮টি নন–জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে জোর করে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। দুজনকে টানা প্রায় ১৭ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পরে ঘটনাটি পুলিশে জানালে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

সিআইডি জানায়, এ ঘটনার এক সপ্তাহ পর চক্রটি ধারণ করা ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আরও ২০ লাখ টাকা দাবি করে। ঘটনার পর জামাল যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা (নং-১৬, তারিখ ৬ নভেম্বর ২০২৫) দায়ের করেন। এরপর মামলার তদন্তভার সিআইডি গ্রহণ করে এবং চক্রের সদস্য হাসানুজ্জামান ও আলমগীর শিকারীকে গ্রেপ্তার করে।

সিআইডি জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার দুজন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। চক্রের অন্য সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশের এই সংস্থা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অভাবের কথা বলে পরিচিত হন, আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে হাতিয়ে নেন টাকা
  • জুলাই গণহত্যার দায়ে দণ্ডিতদের সাজা কার্যকরের দাবিতে গণমিছিল করছে এনসিপি
  • নাইজেরিয়ায ৩১৫ জন ছাত্র-শিক্ষক অপহৃত
  • নাইজেরিয়ায় স্কুল থেকে ২২৭ শিক্ষার্থী ও কর্মী অপহরণ