জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্প্রতি আংশিক রপ্তানিকারক শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ব্যাংক নিশ্চয়তার বিপরীতে শুল্ক-কর ছাড়া কাঁচামাল আমদানির সুবিধা দিয়েছে। এনবিআরের এই সিদ্ধান্ত রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনবে। বিদ্যমান বন্ড ব্যবস্থাপনার জটিলতার কারণে অনেক আংশিক রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান বন্ডেড ওয়্যারহাউস সনদ বা লাইসেন্স নিতে পারে না। নতুন এই নীতি তাদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি সহজ করবে, যা রপ্তানি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

কারা এই সুবিধা পাবে
যেসব প্রতিষ্ঠানের শিল্প আমদানি নিবন্ধন ও ভ্যাট পরিপালনকারী সনদ থাকবে, সে ধরনের আট খাতের প্রতিষ্ঠান এই সুবিধা পাবে। খাতগুলো হচ্ছে আসবাব, ইলেকট্রনিকস, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, হালকা প্রকৌশল, ইস্পাত পণ্য, প্লাস্টিক পণ্য, চামড়াজাত পণ্য ও তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক খাত। এসব খাতকে এই সুবিধা পেতে হলে রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছু শর্তও পালন করতে হবে। শর্তগুলো হলো রপ্তানি অবশ্যই এলসি, টিটি বা বিক্রয় চুক্তির মাধ্যমে হতে হবে, বিক্রয় চুক্তি অবশ্যই লিয়েন ব্যাংকের অনুমোদনের পর সংশ্লিষ্ট মূসক কমিশনারেটে জমা দিতে হবে, ন্যূনতম মূল্য সংযোজন হতে হবে ৩০ শতাংশ।

যা আমদানি করা যাবে না
এই শুল্কমুক্ত সুবিধায় বেশ কিছু পণ্য আনা যাবে না। সেগুলো হলো সিমেন্ট, প্রি-ফ্যাব ভবন, এমএস রড, বার, পার্টিকেল বোর্ড, তার, হোম অ্যাপ্লায়েন্স, এয়ার কন্ডিশনার, ফার্নিচার ও অফিস সরঞ্জাম এবং জ্বালানি পণ্য।

এ ছাড়া এই সুবিধায় শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে বেশ কিছু শর্ত পালন করতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো রপ্তানি আদেশ পাওয়ার পর উপকরণ-উৎপাদক সহগ, ব্যাংক নিশ্চয়তাপত্র, আমদানির পর আমদানিসংশ্লিষ্ট দলিলাদি, রপ্তানির পর রপ্তানিসংশ্লিষ্ট দলিলপত্র সংশ্লিষ্ট মূসক কমিশনারেটে জমা দিতে হবে। পাশাপাশি আমদানি করা কাঁচামালের ব্যবহার মাসিক ভ্যাট রিটার্নের মাধ্যমে জমা, বিক্রয় ও ক্রয় রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ করতে হবে। এই সুবিধার আওতায় একই এলসির অধীনে একাধিকবার শুল্ক-করমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আমদানি করা যাবে। তবে তা স্থানীয় বাজারের জন্য ব্যবহার করা যাবে না।

কখন ব্যাংক গ্যারান্টি নগদায়ন করা যাবে
মূসক কমিশনারেট দলিলাদি যাচাই করে অনাপত্তি সনদ দেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কাস্টমস হাউস বা শুল্ক স্টেশন ওই আমদানিকে ব্যাংক গ্যারান্টি মুক্ত করবে। যেসব প্রতিষ্ঠান এই সুবিধা নেবে, তাদের ৯ মাসের মধ্যে রপ্তানি সম্পন্ন করতে হবে। তবে সংশ্লিষ্ট মূসক কমিশনারেট যৌক্তিক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই সময় আরও তিন মাস বাড়াতে পারবে। নির্ধারিত সময় পার হলে অথবা আদেশ বাতিল হলে অথবা রপ্তানিতে ব্যর্থ হলে ব্যাংক গ্যারান্টি বাজেয়াপ্ত করা হবে।

এনবিআরের এই উদ্যোগ রপ্তানি বৈচিত্র্য আনার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই উদ্যোগের পুরোপুরি সুফল পেতে হলে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাকে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি রপ্তানিকারকদেরও নিয়মকানুনগুলো যথাযথভাবে পালন করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল কম ক ত এই স ব ধ ন র পর ন করত আমদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার অভিযোগ

বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ)।

আজ বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই অভিযোগ করেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম। ট্রাইব্যুনাল আগামী রোববার শুনানির দিন ধার্য করেছেন।

অভিযোগে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোতে ফজলুর রহমান বলেছেন, তিনি এই ট্রাইব্যুনাল মানেন না। তাঁর যুক্তি, এই ট্রাইব্যুনাল তৈরি হয়েছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য। এই ট্রাইব্যুনালে অন্য কোনো বিচার হতে পারে না।

প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, এই ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, ক্রাইম এগেইনস্ট পিসের বিচার করতে পারেন। এখন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হচ্ছে। ফজলুর রহমানের মাথায় শুধু যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টি আছে।

টক শোর আরেকটি অংশ তুলে ধরে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, ফজলুর রহমান বলেছেন, ‘এই কোর্টের গঠনপ্রক্রিয়া বলে—এই কোর্টে বিচার হইতে পারে না। এই কোর্টে যাঁরা বিচার করতেছেন, আমার ধারণা এঁদের মধ্যে ভেতরে একটা কথা আছে।’

টক শোর এই দুটি অংশ তুলে ধরে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার বলেন, ফজলুর রহমান সুপ্রিম কোর্টের একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বিএনপির সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে এ ধরনের মন্তব্য করার পরিণতি জানেন। তারপরও ফজলুর রহমান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ট্রাইব্যুনালের গঠনপ্রক্রিয়া, বিচার নিয়ে প্রতিনিয়ত বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। ট্রাইব্যুনালকে অবমূল্যায়ন করে বক্তব্য দিয়েছেন। এতে প্রতীয়মান হয়, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে আদালত অবমাননা করছেন।

আজ এ অভিযোগ উপস্থাপনের সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর সদস্য-২ বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার ও সদস্য-১ বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন না।

প্রসিকিউশনকে শোনার পর আদেশে বিচারক মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী বলেন, এটি খুবই গুরুতর অভিযোগ। এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে আগামী রোববার আবার শুনানি হবে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন ফজলুর রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ