জিসান হত্যা: আদালতে জবানবন্দি দিলেন ৩ আসামি
Published: 13th, October 2025 GMT
খুলনার দিঘলিয়ায় সাত বছরের শিশু জিসানকে হত্যা করেন প্রতিবেশী ফয়সাল। তার লাশ গুম করতে সহযোগিতা করেন অভিযুক্তের মা-বাবা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দিঘলিয়া থানার জিআরও এএসআই ইমাম আলী।
তিনি জানান, রবিবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে ফয়সাল ও তার বাবা-মাকে খুলনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অমিত কুমার বিশ্বাসের আদালত-১ এ হাজির করা হয়। সেখানে গ্রেপ্তারকৃতরা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আদালতে প্রথমে ফয়সাল (২৬), এরপর তার বাবা জিএম হান্নান (৫২) ও সর্বশেষ তার মা মাহিনুর বেগম (৪৫) জবানবন্দি দেন। পরে আদালতের নির্দেশে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
আরো পড়ুন:
শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ, যুবক গ্রেপ্তার
খুলনায় শিশু জিসান হত্যা: আসামির বাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ
এদিকে, সন্তান হারা জিসানের মায়ের আহাজারি যেন থামছে না। ১২ বছর বয়সী বড় ছেলে রাশেদকে জড়িয়ে একের পর এক বিলাপ করছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার বাজান তো কোনো অন্যায় করে নাই। আমার লগে ওদের কোনো শত্রুতা নাই। কেন ওরা আমার বাজানরে মাইরা ফালাইলো। কেমনে আমার বাজানরে খুন করল? আমি এইডার বিচার চাই। সুষ্ঠু বিচার চাই।”
তিনি বলেন, “আমার বাবারে ওরা যে কষ্ট দিছে, আমিও ওগো সেই কষ্ট দিবার চাই। আমার বাবারে যেভাবে শাস্তি দিছে, আমিও ওদের সেভাবে শাস্তি চাই। আমি ওগো ফাঁসি চাই। আমার বাজান মসজিদ থেইক্যা নামাজ পইড়া বাহির হইছে বৃহস্পতিবারের দিন। ওই শয়তানও সঙ্গে নামাজ পড়ছে। নামাজ পইড়া দু’জন একসাথে বাহির হইছে। এরপর আমার বাবারে হাত ধরে লইয়া কাম করছে।”
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লিটন কুমার মন্ডল বলেন, “৯ অক্টোবর বিকেল পৌনে ৫টার দিকে শিশু জিসানকে ফয়সাল তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে তিনি দড়ি দিয়ে বেঁধে রান্নাঘর থেকে দা এনে কুপিয়ে হত্যা করেন জিসানকে। ঘটনাটি প্রথমে ফয়সালের মা মাহিনুর বেগম আঁচ করতে না পারলেও পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন, তার ছেলে একটি শিশুকে হত্যা করেছে। এরপর তিনি ফয়সালের বাবা হান্নানকে খবর দেন।”
তিনি বলেন, “তারা উভয়ে জিসানের মরদেহ প্রথমে প্লাস্টিকের বস্তায় এবং পরবর্তীতে একটি চটের বস্তায় করে বাড়ির পূর্ব পাশের দেওয়ালের কাছে মাটি চাপা দেন। বিষয়টি যাতে কেউ আঁচ করতে না পারেন সেজন্য মাটির উপর রোদে শুকানোর জন্য পাটখড়ি সাজিয়ে রাখেন তারা।”
দিঘলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এইচএম শাহীন বলেন, ‘কি কারণে এবং কেন শিশু জিসানকে হত্যা করা করেছে এর উত্তর বের করার জন্য অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন। বাদীর সাথে তাদের কোনো শত্রুতাও ছিল না। প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ফয়সাল মাদকাসক্ত ছিলেন।”
অভিযুক্ত ফয়সালের চাচা জিএম আকরাম বলেন, “সরকারি সেনহাটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ফয়সাল এসএসসি পাস করে। এরপর স্থানীয় একটি কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে। ওদের স্বভাব চরিত্রের কারণে আমি খোঁজখবর রাখি না। মাঝেমধ্যে ওর মাথা ঠিক থাকতো না, পাগলামি করত।”
উল্লেখ্য, বড় ছেলে রাশেদ নানা নানির সঙ্গে ভোলায় থাকে। ছোট ছেলে জিসান বাবা-মায়ের সঙ্গে দৌলতপুর-দেয়াড়া খেয়াঘাট সংলগ্ন মন্ডল টেক্সটাইল মিলের কোয়ার্টারে বসবাস করত। জিসানের বাবা আলমগীর হোসেন মন্ডল টেক্সটাইল মিলের মেকানিক্যাল বিভাগের শ্রমিক।
ঢাকা/নূরুজ্জামান/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য আস ম আম র ব জ ন ফয়স ল
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাইয়ের হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন
জুলাই আন্দোলনের সময় রামপুরায় একটি হত্যাকাণ্ডের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আসামি করা হয়েছিল শেখ বশিরউদ্দীনকে; এরপর তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার সময় তা নিয়ে আলোচনাও উঠেছিল। কিন্তু এ ঘটনায় তাঁর সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ পাননি আদালত। তাই তাঁকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
ভারগো গার্মেন্টসের ‘এক্সিকিউটিভ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার’ মো. সোহান শাহ হত্যার মামলায় শেখ বশিরউদ্দীনকে অব্যাহতি দিয়ে আজ মঙ্গলবার আদেশ দেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. জামসেদ আলম।
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে দেওয়া প্রতিবদনে বলেছিলেন, ‘এ মামলার ঘটনার সঙ্গে আসামি শেখ বশিরউদ্দীনের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তাঁকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি প্রার্থনা করছি।’
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন হাছান জানান, ২৪ নভেম্বর তদন্তকারী কর্মকর্তা, র্যাব-৩–এর উপপরিদর্শক মো. মোস্তাফিজুর রহমান আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩(ক) ধারা অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন দিয়েছিলেন।
আকিজ বশির গ্রুপের কর্ণধার শেখ বশিরউদ্দীন গত বছর অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের তিন মাস পর গত বছরের নভেম্বরে এই সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। এর পরপরই জুলাই আন্দোলনের সময় রামপুরা থানায় করা একটি মামলায় তাঁর আসামি হওয়ার বিষয়টি আলোচনায় ওঠে।
জুলাই আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৯ জুলাই রামপুরার সিএনজি স্টেশনের সামনে গুলিতে আহত হন সোহান শাহ (৩০)। ওই বছরের ২৮ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
এরপর গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সোহানের মা সুফিয়া বেগম বাদী হয়ে ঢাকার আদালতে একটি হত্যা মামলা করেন। এজাহারে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করেন তিনি, এর মধ্যে ৪৯ নম্বর আসামি হিসেবে নামটি ছিল ‘শেখ বশির উদ্দিন ভূঁইয়া’। এই নামের সঙ্গে শেখ বশিরউদ্দীনের, এমনকি তাঁর বাবার নামও মিলে গিয়েছিল।
তবে মামলার বাদী সুফিয়া বেগম তখন প্রথম আলোকে বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশ তাঁর ছেলে হত্যার জন্য দায়ী। তবে আসামি কারা করেছে, তা তিনি বলতে পারছেন না।
তখন শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ভুল তথ্যের ভিত্তিতে হয়তো তাঁর নাম এ মামলায় দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন‘শেখ বশিরের’ বিরুদ্ধে হত্যামামলা: বাদী বললেন জানেন না, উপদেষ্টা সেখ বশির বললেন নিশ্চিত নন১১ নভেম্বর ২০২৪