ঝালকাঠিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতে জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন সাগর হোসেন নামের এক ব্যক্তি। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর মায়ের পেনশনের টাকা পেতে ওই কর্মকর্তা আড়াই লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। পরে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা দেওয়ার পর পেনশনের টাকা মিলেছে।

আজ সোমবার ঝালকাঠি জেলা শিল্পকলা মিলনায়তনে দুদক আয়োজিত গণশুনানিতে এমন আরও অভিযোগ তুলে ধরেন অভিযোগকারীরা।

‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের একতা, গড়ব আগামীর শুদ্ধতা’ স্লোগান নিয়ে আয়োজিত গণশুনানিতে সরকারি-বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সেবামূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে হয়রানি, দুর্নীতি, অনিয়ম, ঘুষ নেওয়াসহ নানা অভিযোগ তোলেন সেবাগ্রহীতারা।

সাগর হোসেনের অভিযোগ, তাঁর মা চতুর্থ শ্রেণির একজন সরকারি কর্মচারী ছিলেন। তাঁর মায়ের পেনশনের টাকা পেতে আড়াই লাখ ঘুষ দাবি করেন ঝালকাঠি জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন। একপর্যায়ে পেনশন পেতে সাজ্জাদকে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা ঘুষ দেওয়া হয়। এরপর তাঁরা হাতে পান পেনশনের টাকা।

তবে জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কোনো ঘুষ গ্রহণ করিনি। আমি তাঁকে পেনশন পেতে আন্তরিকভাবে সহায়তা করিছি।’

গণশুনানিতে ২৯টি সরকারি দপ্তরের বিরুদ্ধে শতাধিক অভিযোগ করেন নাগরিকেরা। উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, জেলা পরিষদ, জেলা হিসাব বিভাগ, ঝালকাঠি পৌরসভা, নলছিটি পৌরসভা, সেটেলমেন্ট অফিস, ওজোপাডিকো, সাবরেজিস্ট্রার অফিস, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। এর মধ্যে দুদকের তফসিলভুক্ত ৭৪টি অভিযোগের শুনানি হয়, কিছু অভিযোগের বিষয়ে সরাসরি অনুসন্ধান এবং কিছু অভিযোগের তাৎক্ষণিক সমাধান দেওয়া হয়।

ঝালকাঠি সদরের সারেঙ্গল ফাজিল মাদ্রাসার ইংরেজির শিক্ষক মীর এনামুল হক অভিযোগ করেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নয়জন শিক্ষকের কাছ থেকে এমপিওভুক্তির বিল পেতে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম হারুন অর রশিদ। পরে জনপ্রতি দুই হাজার টাকায় দফারফা হয়। তিনি বরিশালে কোটি টাকা ব্যয়ে বাড়ি নির্মাণ করেছেন। শুনানিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম হারুন অর রশিদ অনুপস্থিত ছিলেন। পরে বিষয়টি তদন্তের জন্য আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

গণশুনানির প্রথম পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেন, ‘যদি আমরা আয়ের চেয়ে বেশি উপহার বা সম্পদ নিয়ে পরিবারে ফিরি, সন্তানদের সামনে কীভাবে জবাব দেব? আমরা নিজে সৎ থাকব, পরিবারকেও সৎ পথে রাখব। দুর্নীতি বন্ধে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে এবং পাশাপাশি মানসম্মত সেবা প্রদানের নিশ্চয়তাও দিতে হবে।’

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো.

আক্তার হোসেন, বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক মোজাহার আলী সরদার ও ঝালকাঠির পুলিশ সুপার উজ্জ্বল কুমার রায়।

দুদক জানিয়েছে, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত দপ্তরগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত, সেবার মানোন্নয়ন, সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি রোধ এবং দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে দেশে এ ধরনের গণশুনানির আয়োজন করা হচ্ছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প নশন র ট ক গণশ ন ন ত কর মকর ত ঝ লক ঠ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সারা দেশে সরকারি কলেজে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা মঙ্গলবার

ঢাকা কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হাতাহাতি ও শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনায় সারা দেশের সরকারি কলেজে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) থেকে দেশের সব সরকারি কলেজে শিক্ষকেরা শ্রেণিকক্ষে না গিয়ে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন।

সোমবার (১৩ অক্টোবর) এই তথ্য জানিয়েছেন সংগঠনের সদস্য সচিব ড. মো. মাসুদ রানা খান।

আরো পড়ুন:

শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বসেছেন শিক্ষার্থীরা

নবীনদের বরণ করে নিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

তিনি জানান, শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানাতে এবং শিক্ষক সমাজের মর্যাদা রক্ষার দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করা হবে।

মাসুদ রানা খান বলেন, “এ ঘটনায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের মর্যাদা ও নিরাপত্তা প্রশ্নে আমরা কোনোভাবেই আপস করব না। কর্মবিরতির পাশাপাশি শিক্ষকসমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ জানাবে।”

এর আগে, সোমবার সকালে ঢাকা কলেজ প্রাঙ্গণে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি আইন-২০২৫’ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা শুরুর সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এক শিক্ষার্থীকে শিক্ষকেরা কমনরুমে আটকে রাখলে সহপাঠীরা প্রশাসনিক ভবন ঘেরাও করে তাকে ছাড়িয়ে আনেন। এ ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লেও পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

চলতি বছরের ২৬ মার্চ সরকার রাজধানীর সাত সরকারি কলেজকে পৃথক করে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের ঘোষণা দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) প্রস্তাবিত নাম নির্ধারণ করে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’। কলেজগুলো হলো— ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। 

ঢাকা/রায়হান/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ