নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় প্রকাশ্যে মোটরসাইকেল আরোহী এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহত ব্যক্তির নাম সুব্রত চন্দ্র দাশ (৪২)। আজ সোমবার বেলা পৌনে দুইটার দিকে উপজেলার চর জবলী গ্রামের পালোয়ান বাড়ির সামনে আট কপালিয়া-পরিষ্কার বাজার সড়কে এ ঘটনা ঘটে। তবে এ ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত, তা তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ নিশ্চিত করতে পারেনি।

পুলিশ জানায়, নিহত সুব্রত চন্দ্র দাশ উপজেলার চর আমানউল্যাহ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চর বজলুল করিম গ্রামের চিরু রঞ্জন দাশের ছেলে। খবর পেয়ে চর জব্বর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। লাশটির ময়নাতদন্তের জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিহত সুব্রত চন্দ্র দাশের স্ত্রী রিকতা রানী দাশ চর জব্বর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে চাকরি করেন। সুব্রত প্রতিদিন স্ত্রীকে গ্রামের বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলযোগে সকালে কর্মস্থলে পৌঁছে দিতেন, আবার দুপুরে গিয়ে নিয়ে আসতেন। আজ বেলা পৌনে দুইটার দিকে সুব্রত তাঁর স্ত্রীকে কর্মস্থল থেকে আনার জন্য মোটরসাইকেলযোগে পরিষ্কার বাজারের দিকে যাচ্ছিলেন।

স্থানীয় লোকজন জানান, সুব্রতর মোটরসাইকেল আট কপালিয়া-পরিষ্কার বাজার সড়কের পালোয়ান বাড়ির সামনে পৌঁছালে সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে অজ্ঞাতনামা একদল দুর্বৃত্ত তাঁর ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা তাঁর মাথায় এলোপাতাড়ি কোপায় এবং গলা কেটে তাঁকে হত্যা করে সড়কের ওপর লাশ ফেলে পালিয়ে যায়। এ সময় তাঁর ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি সড়কের ওপর অক্ষত অবস্থায় পড়ে থাকে। পরে আশপাশের মানুষজন থানায় খবর দেন।

নিহত সুব্রতর কাকা লিটন চন্দ্র দাশ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ফুফাতো ভাইয়ের ছেলে সুব্রত একসময় ব্যবসা করতেন। স্ত্রীর চাকরির কারণে কয়েক বছর আগে ব্যবসা ছেড়ে দেন। আজ দুপুরে মোটরসাইকেলে কর্মস্থল থেকে স্ত্রীকে আনতে যাওয়ার পথে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তাঁকে গলা কেটে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে। কারা কী কারণে এমন নৃশংস ঘটনা ঘটাল, তা তাঁরা বুঝে উঠতে পারছেন না। আশপাশের লোকজন একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা সড়ক দিয়ে যেতে দেখেছেন। এ কারণে ধারণা করা হচ্ছে যে ওই অটোরিকশায় দুর্বৃত্তরা এসে তাঁর ওপর হামলা করেছে। লিটন চন্দ্র দাশ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

জানতে চাইলে হত্যার ঘটনা নিশ্চিত করেন সুবর্ণচরের চর জব্বর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

শাহীন মিয়া। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, নিহত ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীকে কর্মস্থল থেকে আনতে যাচ্ছিলেন। তাঁর মোটরসাইকেলটিও সড়কে পড়ে আছে। কারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত শুরু করেছেন। লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হবে। এ বিষয়ে পরিবারের অভিযোগের আলোকে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: তদন ত সড়ক র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষকদের এভাবে পেটানো জাতির জন্য লজ্জাজনক

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘একটা নতুন দেশ গড়তে যাচ্ছি আমরা। এত মানুষ রক্ত দিয়েছেন, তারপরও অপমানিত হওয়ার জন্য নয়। শিক্ষক কেন, একটা সাধারণ মানুষকেও রাস্তার মধ্যে কুকুরের মতো পেটাবেন, এই রকম দেশ চাই না।’

আজ সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এমপিওভুক্ত শিক্ষক–কর্মচারীদের তিন দফা দাবিতে চলা অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে এ কথাগুলো বলেন মাহমুদুর রহমান।

নিজের রাজনৈতিক লড়াইয়ের কথা উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘দেশ আমরা বদলাব বলে লড়াই করছি। এখনো যে লড়াই করছি, তা কোনো দলের পরিবর্তে দল কিংবা মানুষের পরিবর্তে মানুষকে ক্ষমতায় বসানোর লড়াই নয়। আমরা সমগ্র মানুষ, ২০ কোটি মানুষের ভাগ্য বদলাবার লড়াই করি।’

গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শিক্ষক–কর্মচারীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটার সমালোচনা করে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের মন্ত্রী সাহেবরা প্রতিদিন কে কতক্ষণ লেট করে অফিসে আসেন, সেই হিসাব তো চাইনি। তাহলে ৫ মিনিটের মধ্যে শিক্ষকদের লাঠিপেটা করা আর যা–ই হোক, মানুষের কাজ তো হতে পারে না। এটা এই জাতির জন্য একটা কলঙ্ক।’

দুই দিন পার হলেও আন্দোলনকারী শিক্ষকদের সঙ্গে সরকারের কোনো প্রতিনিধি যোগাযোগ না করার সমালোচনা করেন মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়ার জন্য যে ভাতা দেওয়া হয়, তা দিয়ে একেবারে গ্রাম এলাকাতেও একটা বাসা পাওয়া যায় না।’

শিক্ষকদের দাবি মানা না হলে রাজনৈতিক দলগুলোও শিক্ষকদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেবে বলে জানান মাহমুদুর রহমান। এ সময় তিনি গণতন্ত্র মঞ্চের ছয়টি দলের পক্ষ থেকে শিক্ষক–কর্মচারীদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘আপনাদের এই আন্দোলনের সঙ্গে আমরা আছি।’

শিক্ষক–কর্মচারীদের আন্দোলনের সফলতা কামনা করে তিনি বলেন, ‘এমন একটি সরকার চাই, যে সরকার সত্যি সত্যি জনগণের কল্যাণে কাজ করবে। আজকের লড়াই শুধু শিক্ষকদের নয়, এই লড়াই শিক্ষকদের মুক্তির লড়াই। শিক্ষাকে উন্নত করার লড়াই।’

এর আগে বিকেলে শিক্ষক–কর্মচারীদের অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদী, খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ