জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করলে আগামীকাল থেকে সাইট বন্ধ করে দেবে সরকার
Published: 18th, October 2025 GMT
অনলাইন জুয়া নিয়ে সরকার কঠোর হওয়ার বার্তা দিয়েছে। কোনো সাইট জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করলে আগামীকাল রোববার (১৯ অক্টোবর) থেকেই তা বন্ধ করে দেবে সরকার। আজ শনিবার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে।
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে জুয়াকে খেলা, প্রচার ও উৎসাহ প্রদানকে দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। তবে সরকার নিজ দেশের আওতাভুক্ত সাইট বন্ধ করতে পারলেও মেটা ও গুগলের প্ল্যাটফর্মগুলোয় জুয়ার প্রচার এতটা সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় জুয়া, বেটিং ও পর্নোগ্রাফি–সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন ও প্রমোশনাল কনটেন্ট প্রচার করা হচ্ছে। এটি সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২–এর পরিপন্থী ও দণ্ডনীয় অপরাধ।
মন্ত্রণালয় বলছে, যদি কোনো সংবাদপত্র (অনলাইন ভার্সনসহ), নিউজ পোর্টাল, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বা ওয়েবসাইটে জুয়া, বেটিং বা পর্নোগ্রাফি–সম্পর্কিত কনটেন্ট প্রচারিত হয়, তবে বিনা নোটিশে সেই সাইট ব্লক করে দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব গতকাল শুক্রবার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে লিখেছেন, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টের সাইটে একাধিক জুয়ার বিজ্ঞাপন তিনি নিজে দেখতে পেয়েছেন। তিনি শেষবারের মতো এসব বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘অন্যথায় আপনাদের সাইটগুলো বিনা নোটিশে ব্লক হয়ে যাবে। আমরা আর কোনো নোটিশ দেব না।’
আজ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সরকারের সতর্কতার পর এরই মধ্যে ক্রিকইনফো, জনকণ্ঠ, ঢাকা পোস্টসহ আরও বেশ কয়েকটি পত্রিকা তাদের অ্যাডসেন্স পরিবর্তন করেছে। সরকার তাদের ধন্যবাদও দিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সরকার দেশের সাইবারজগৎকে নিরাপদ, নৈতিক ও প্রজন্মবান্ধব রাখতে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও কঠোর পদক্ষেপ অব্যাহত রাখবে। এ বিষয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), জাতীয় সাইবার সুরক্ষা এজেন্সি (এনসিএসএ), জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (এনটিএমসি), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) যৌথভাবে কাজ করছে।
প্ল্যাটফর্মগুলোয় জুয়ার অবাধ প্রচার, নিয়ন্ত্রণ নেই
এদিকে মেটার প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক ও গুগলের ইউটিউবে জুয়ার বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি রয়েছে, যা নীতিমালা লঙ্ঘন করেই প্রচারিত হচ্ছে। তথ্যব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইট লিমিটেডের (ডিআরএল) তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগ ডিসমিসল্যাব গত বছরের এপ্রিলে এক গবেষণায় দেখিয়েছে, ফেসবুকে বাংলাদেশিদের লক্ষ্য করে বছরে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়।
প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, এসব বিজ্ঞাপন প্রচারের পেজগুলোর বেশির ভাগ দেশের বাইরে থেকে প্রচারিত হয়। খেলোয়াড়, অভিনয়শিল্পীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের তারকাদের ছবি, ভিডিও সম্পাদনা করে জুয়ার বিজ্ঞাপনে ব্যবহার হয়। এ ছাড়া তারকারা নিজেরাও এসব বিজ্ঞাপন প্রচারে অংশ নেন। সরকার আইন করে এ ধরনের প্রচারণা নিষিদ্ধও করেছে। এরপরও সম্প্রতি কিছু মডেল ও অভিনয়শিল্পী নিজেদের ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে জুয়ার প্রতিষ্ঠানের প্রচার চালিয়েছেন।
ডিসমিসল্যাবের সে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেটার অনলাইন জুয়া ও গেমিং বিজ্ঞাপন নীতিমালা অনুযায়ী বিজ্ঞাপনদাতাদের এ ধরনের প্রচারের আগে অবশ্যই একটি ফরম পূরণ করতে হবে এবং যেসব দেশ মেটার এ ধরনের বিজ্ঞাপনের তালিকাভুক্ত, সেসব দেশকেই লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন দেওয়া যাবে।
কিন্তু মেটার অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপনের জন্য অনুমোদিত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ নেই। ডিসমিসল্যাব বলছে, এসব বিজ্ঞাপনদাতা তাদের বিজ্ঞাপনের ধরন অস্পষ্ট করে বা মেটার শনাক্তকরণের পদ্ধতি এড়িয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে।
গত বছরের অক্টোবরে ডিসমিসল্যাবের প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে জনপ্রিয় গেমিং অ্যাপে গুগলের বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অনলাইন বেটিং সাইটের বিজ্ঞাপন ছড়াচ্ছে। অনুমোদনহীন দেশ হওয়া সত্ত্বেও এসব বিজ্ঞাপন গুগলের নীতিমালা ও আদালতের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে প্রচারিত হচ্ছে, যা তাদের নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরে।
চলতি বছরের আগস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ডিসমিসল্যাব জানিয়েছে, গুগল নিজস্ব নীতির তোয়াক্কা না করেই ডিপফেকের (প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভুয়া ছবি ও ভিডিও তৈরি) মাধ্যমে পর্নো সাইট বা জুয়ার সাইটে মানুষকে নিয়ে যাচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ল য টফর ম ফ সব ক স ইট ব গ গল র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
রাকসুতে পরাজিতদের মিলনমেলা, সম্প্রিতির ক্যাম্পাস গড়ার প্রত্যয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীদের উদ্যোগে মিলনমেলার আয়োজন করা হয়েছে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবাস বাংলাদেশ মাঠে এ আয়োজন করেন। এতে তারা বিভিন্ন খেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
আরো পড়ুন:
রাকসু: হল সংসদে শিবিরের আধিপত্য, ছাত্রদলের শূন্য
শেষ পর্যায়ে রাকসুর সংস্কার কাজ, রবিবার থেকেই বসতে পারবেন নির্বাচিতরা
ছাত্রদল সমর্থিত পরাজিত ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর বলেন, “আমরা এখানে এক হয়েছি একটি উদ্দেশ্য নিয়ে, যাতে একসঙ্গে আমাদের ক্যাম্পাস সুন্দর, নিরাপদ, সহাদ্যপূর্ণ ও শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তুলতে পারি। আমাদের এই আয়োজন সকল পরাজিত প্রার্থীদের নিয়ে, কারণ পরাজিত হলেও আমরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেক হোল্ডার। যারা বিজয়ী হয়েছেন তারা যেন আগামী ১ বছর তাদের ইশতেহারগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করে, সেগুলো জবাবদিহিতা ও তদারকি করার দায়িত্ব আমাদের।”
তিনি আরো বলেন, “আমি আমার বিজয় ভিপি প্রার্থীকে বলতে চাই, মুস্তাকুর রহমান জাহিদ ভাই বলেছিলেন, ‘আমরা যেই জয়ী হই, সকলে মিলে একসঙ্গে কাজ করব।’ তিনি যেন তার কথা রাখেন। আমরা সবাই একসঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে সুন্দর করে গড়তে চাই।”
পরাজিত স্বতন্ত্র এজিএস পদপ্রার্থী শাহ পরান বলেন, “কিছু মানুষ ছড়িয়েছে যে, আমরা হেরে গিয়ে কান্নাকাটি করতেছি। ওই কান্নার স্বরটা দেখানোর জন্যই আমাদের এই আয়োজন। আমাদের এই আয়োজনটা মূলত সবাই যেন একত্রিত হতে পারে, তার জন্য। আমরা আয়োজনের মধ্যে খেলাধুলা খাওয়া-দাওয়ার গান বাজনা করব।”
এ সময় বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থী, স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ কেন্দ্র ও বিভিন্ন হলের পরাজিত প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী