নেতৃত্ব হারাতে পারেন রিজওয়ান, কে হবেন পাকিস্তানের নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক
Published: 19th, October 2025 GMT
গত বছরের অক্টোবরে এক সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ রিজওয়ানকে পাশে বসিয়ে তাঁকে নতুন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক ঘোষণা করেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি।
সেই রিজওয়ান এ বছরের অক্টোবরে মুদ্রার অন্য পিঠ দেখতে যাচ্ছেন। ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টি-টোয়েন্টির পর ওয়ানডের নেতৃত্বও হারাতে পারেন রিজওয়ান।
বর্তমানে নিজেদের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলছে পাকিস্তান। দুই দলের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু ২৮ অক্টোবর। এরপর ৪ নভেম্বর শুরু ওয়ানডে সিরিজ। এ মুহূর্তে তিন সংস্করণে তিন অধিনায়ক দিয়ে চলছে পাকিস্তান। টেস্টে শান মাসুদ, টি-টোয়েন্টিতে সালমান আলী আগা এবং ওয়ানডেতে মোহাম্মদ রিজওয়ান।
কিন্তু সম্প্রতি পিসিবি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আসন্ন ওয়ানডে সিরিজের জন্য অধিনায়ক এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। এতেই রিজওয়ানের অধিনায়কত্ব ধরে রাখা নিয়ে শঙ্কা জেগেছে।
ইএসপিএন ক্রিকইনফোর প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আগামীকাল সোমবার প্রধান কোচ মাইক হেসনের সঙ্গে বৈঠকে বসবে পিসিবির নির্বাচক কমিটি। সেখানেই নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক বেছে নিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
গত বছরের অক্টোবরে সীমিত ওভারের দুই সংস্করণের নেতৃত্ব পেলেও নভেম্বরেই টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব হারান রিজওয়ান। এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানের নেতৃত্বে খেলা চার টি-টোয়েন্টি ম্যাচেই হেরে যায় পাকিস্তান। এরপর তিনি এ সংস্করণের দল থেকেই বাদ পড়েন।
তবে ওয়ানডে অধিনায়কত্বের শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছিল রিজওয়ানের। অস্ট্রেলিয়া, জিম্বাবুয়ে, দক্ষিণ আফ্রিকা—তিন দেশেই তাঁর অধিনায়কত্বে গত বছর ওয়ানডে সিরিজ জেতে পাকিস্তান।
কিন্তু বছর ঘুরতেই রিজওয়ানের ভাগ্যও যেন ঘুরে যায়। ২০২৫ সালে পাকিস্তান এখনো কোনো ওয়ানডে সিরিজ বা টুর্নামেন্ট জিততে পারেনি। এর মধ্যে ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ভরাডুবি পাকিস্তান সমর্থকদের হতাশা আরও বাড়িয়েছে।
যদিও অধিনায়ক হওয়ার পর ওয়ানডেতে রিজওয়ানের ব্যাটিং গড় (৪১.
এখন প্রশ্ন হলো, রিজওয়ানকে সরিয়ে দেওয়া হলে পাকিস্তানের নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক হবেন কে? আলোচনায় আছে তিনটি নাম—বাবর আজম, শাহিন আফ্রিদি ও সালমান আলী আগা।
বাবর আজমপাকিস্তানের পাঁচ অধিনায়কের একজন বাবর আজম, যাঁর নেতৃত্বে ওয়ানডেতে ৬০ শতাংশের বেশি ম্যাচ জিতেছে দল। সেই বাবর আজমকে আবারও এ সংস্করণের নেতৃত্বে ফেরাতে পারে পিসিবি।
কিন্তু বাবর রাজি হবেন কি না, সেটাই প্রশ্ন। কারণ, এর আগে দুবার স্বেচ্ছায় নেতৃত্ব ছেড়েছেন এই তারকা ব্যাটসম্যান। প্রথমবার ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর। ২০২৪ সালের মার্চে তাঁকে নেতৃত্বে ফেরানো হয়। কিন্তু অক্টোবরে আবারও অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়ান।
তবে বাবরকে নেতৃত্বে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর ব্যাটিং ফর্ম পিসিবিকে ভাবাতে পারে। ওয়ানডেতে তিনি সর্বশেষ সেঞ্চুরি পেয়েছেন প্রায় ২৬ মাস আগে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে খেলা সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজে তিন ম্যাচের দুটিতেই এক অঙ্কের ঘরে আউট হয়েছেন।
পাকিস্তানের ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে বাবর আজম
মোট ম্যাচ ৪৩
পাকিস্তানের জয় ২৬
পাকিস্তানের হার ১৫
টাই ১
ফল হয়নি ১
শতকরা জয় ৬০.৪৭%
পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক শাহিন আফ্রিদি। তাঁর নেতৃত্বে রেকর্ড তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে লাহোর কালান্দার্স।
কিন্তু জাতীয় দলের হয়ে অধিনায়কত্ব করার অভিজ্ঞতা খুব বেশি নেই আফ্রিদির। গত বছর তাঁর নেতৃত্বে নিউজিল্যান্ড সফরে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের চারটিতেই হেরেছে পাকিস্তান। সেই সিরিজে ব্যর্থ হওয়ার পরই তাঁর অধিনায়কত্ব চলে যায়।
তবে সম্প্রতি দারুণ ছন্দে থাকায় আফ্রিদিকে আরেকবার অধিনায়ক করার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে পিসিবি। তাঁর আসল কাজ বোলিং হলেও ব্যাটিংয়েও তিনি বেশ উন্নতি করেছেন।
২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপের বেশির ভাগ ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার সিমিং কন্ডিশনে। দলের প্রধান পেসার হওয়ায় আফ্রিদি যেহেতু ‘অটো চয়েজ’, তাই বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে তাঁকে এখনই নেতৃত্বে আনতে পারে পিসিবি।
পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে শাহিন আফ্রিদি
মোট ম্যাচ ৫
পাকিস্তানের জয় ১
পাকিস্তানের হার ৪
শতকরা জয় ২০%
তিন সংস্করণেই পাকিস্তান দলের নিয়মিত মুখ সালমান আলী আগা। এ বছরের শুরু থেকেই তিনি টি-টোয়েন্টি দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁকে মোটামুটি সফলই বলা চলে।
বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের পাশপাশি সংযুক্ত আরব আমিরাত ও আফগানিস্তানকে নিয়ে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজেও দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সম্প্রতি তাঁর নেতৃত্বেই এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলেছে পাকিস্তান।
মিডল অর্ডারে ব্যাটিংয়ের অন্যতম ভরসা সালমান স্পিন বোলিংটাও খারাপ করেন না। যদিও আফ্রিদির মতো তাঁরও ওয়ানডেতে অধিনায়কত্ব করার অভিজ্ঞতা নেই। তবে পিসিবি যেহেতু তিন সংস্করণে তিন অধিনায়ক নীতি থেকে সরে আসার চেষ্টা করছে, তাই সীমিত ওভারের দুই সংস্করণেই সালমানকে নেতৃত্ব দেওয়া হতে পারে।
পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে সালমান আলী আগা
মোট ম্যাচ ৩০
পাকিস্তানের জয় ১৭
পাকিস্তানের হার ১৩
শতকরা জয় ৫৬.৬৭%
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জওয় ন র স স করণ গত বছর ত বছর বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
ভাইকিং গোষ্ঠীপতির মৃতদেহ সৎকারের নৃশংস প্রথা
পৃথিবীতে নানা প্রান্তে, নানা গোষ্ঠীর মধ্যে মৃতদেহ সৎকারের আলাদা আলাদা প্রথা রয়েছে। কোনো কোনো প্রথা একেবারে নৃশংস। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ভাইকিংদের গোষ্ঠীপতির মৃতদেহ সৎকারের প্রথা। গোষ্ঠীপতির মৃতদেহ সৎকারের সময় তার সঙ্গে ক্রীতদাসীর এমন মৃত্যু কার্যকর করা হতো- যা শুনলে চমকে যাবেন।
ভাইকিংরা ছিলেন মূলত জলদস্যু। এই শব্দটি এসেছে ‘ভিক’ শব্দ থেকে, যার অর্থ উপসাগর। ভাইকিংদের আদি নিবাস ছিলো উত্তর ইউরোপের স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলে। যেটি বর্তমান সময়ের নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক পর্যন্ত বিস্তৃত। কালক্রমে তাঁরা ছড়িয়ে পড়েন ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্তে। ইতিহাসবিদদের মতে, রাশিয়ানদের পূর্ব পুরুষ ছিলেন এই ভাইকিংরাই। খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকের শেষ থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত ভাইকিংরা জলপথে ইউরোপের দেশে-দেশে হামলা চালিয়ে কখনও লুটপাট করেছে। আবার কখনও বসতি গড়েছে নিজেদের জয় করা এলাকায়।
আরো পড়ুন:
শসা কখন খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়?
অনাথ আশ্রমে একটি বেদনা বেলা
ভাইকিংদের নিত্যদিনের কাজ ছিলো উত্তর মহাসাগর, উত্তর আটলান্টিক, বাল্টিক সাগর, নরওয়েজিয়ান সাগরের বুকে ভেসে চলা । শুরুর দিকের দুই শতাব্দী ভাইকিংরা ছিলেন প্যাগান অর্থাৎ বহু দেব দেবীর উপাসক। ভাইকিং মিথোলজি বেশ ঘটনাবহুল। তারা বিশ্বাস করতো গোষ্ঠীপতি মারা গেলে তার মৃতদেহের সঙ্গে ক্রীতদাসীর মৃতদেহ সৎকার করা হলে, মৃত্যুর পরেও মেয়েটি গোষ্ঠীপতির সেবা করতে পারবে।
ভাইকিংদের কোনো গোষ্ঠীপতি মারা গেলে তার জন্য একটি অস্থায়ী কবর তৈরি করা হতো। সেই কবরে মৃতদেহটি দশদিনের জন্য রাখা হতো। এই সময়ের মধ্যে গোষ্ঠীপতির জন্য নতুন পোশাক বানানো হতো। একইসাথে গোষ্ঠীপতির সঙ্গে দাহ করার জন্য কোনো ক্রীতদাসীকে প্রস্তুত করা হতো।
নির্ধারিত ক্রীতদাসীকে রাত-দিন পাহারায় রাখা হতো। আর প্রচুর পরিমাণে উত্তেজক পানীয় পান করানো হতো। এরপর যখন সৎকারের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হতো। ওই দুর্ভাগা মেয়েটিকে একের পর এক গ্রামের সব তাবুর পুরুষের সঙ্গে মিলিত হতে হতো। পুরুষেরা মেয়েটিকে বলতো— “তোমার মনিবকে বলো যে, এটা তার প্রতি আমার ভালোবাসা থেকেই করলাম”!
মেয়েটিকে মেরে ফেলার আগমুহূর্তে ছয়জন ভাইকিং পুরুষ মেয়েটির সঙ্গে মিলিত হতে হতো। এরপরেই মেয়েটিকে দড়ি দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলা হতো। মৃত্যু নিশ্চিত করতে একেবারে শেষধাপে ভাইকিং গোত্রেরই মহিলা প্রধান তাকে ছুরি দিয়ে আঘাত করতেন।
এরপর সেই মেয়ে আর তার মনিবের মৃতদেহ একই কাঠের নৌকায় তুলে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হতো সেখানে। এটি করা হতো যাতে মেয়েটি পরকালে গোষ্ঠীপতির সেবা করতে পারে।
ভাইকিংরা আস্তে আস্তে খ্রিস্টান দেশগুলোর প্রভাবে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করতে থাকে। এবং নৃশংস প্রথা বন্ধ হয়ে যায়।
ঢাকা/লিপি