আল্লাহর নবী হজরত আদম (আ.) মানবজাতির প্রথম পিতা, যাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে আল্লাহ-তাআলা পৃথিবীতে মানুষকে প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত করেন। কোরআনে বর্ণিত আছে, আল্লাহ ফেরেশতাদের বলেছিলেন, ‘আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি সৃষ্টি করতে যাচ্ছি।’ (সুরা বাকারা, ৩০)
মানবসভ্যতার প্রথম অধ্যায় তাই শুরু হয় আদম (আ.)-এর অবতরণ থেকেই। ইসলামি ঐতিহ্য অনুসারে, তাঁর জীবনের সূচনা জান্নাতে এবং অবতরণ পৃথিবীতে। পরে সেই পৃথিবীতেই তাঁর বংশধরেরা ছড়িয়ে পড়ে এবং গড়ে ওঠে মানবসমাজের প্রথম ভিত্তি।
আদম (আ.
এভাবে মোট চল্লিশটি যুগল সন্তান পৃথিবীতে এসেছিল। সেই হিসাবে আদম (আ.)-এর সন্তানের সংখ্যা প্রায় ৮০। ইমাম ইবনে কাসির যদিও এই মত উল্লেখ করার পর বলেছেন, এসব মতামত প্রাচীন ইসরাইলীয় বিভিন্ন রেওয়ায়েত থেকে পাওয়া। (ইবনে কাসির, কিসাসুল আম্বিয়া, অধ্যায় ‘আদম (আ.)’; তাবারি, তারিখ আল-উমাম ওয়াল মুলুক)
আরও পড়ুনহজরত আদম (আ.) এবং পৃথিবীতে তাঁর প্রথম আবাস০৫ নভেম্বর ২০২৫প্রথম দিকের মানবসমাজ নদী ও উর্বর ভূমির আশপাশে বসতি গড়ে তোলে। দজলা ও ফুরাত নদীর তীর, সিন্ধু উপত্যকা ও মিসরের নীল নদ অঞ্চলই মানবসভ্যতার প্রথম কেন্দ্র হয়ে ওঠে।আদম (আ.)-এর সন্তানদের মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ দুই পুত্র ছিলেন কাবিল ও হাবিল। তাঁদের কাহিনি মানবেতিহাসে প্রথম ট্র্যাজেডি হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তুমি তাদের কাছে আদমের দুই পুত্রের কাহিনি বর্ণনা করো...!’ (সুরা মায়িদাহ, ২৭-৩১)
কাবিল নিজের ভাই হাবিলকে হত্যা করে মানবেতিহাসের প্রথম রক্তপাত ঘটায়। ইসলামি ঐতিহ্যে বলা হয়, হাবিল ছিলেন ধার্মিক ও বিনয়ী, আর কাবিল ছিলেন ঈর্ষাপরায়ণ। হত্যার পর আল্লাহ কাবিলকে একটি কাকের মাধ্যমে কবর দেওয়ার শিক্ষা দেন। এ ঘটনার মধ্য দিয়েই মানবসমাজে পাপ ও অনুশোচনার ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়। (সুরা মায়িদাহর ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে কাসির ও ইমাম কুরতুবি)
হাবিলের মৃত্যুর পর আদম (আ.) গভীর শোকে আচ্ছন্ন হন। কিছু সময় পর আল্লাহ তাঁকে এক নতুন সন্তান দান করেন, যার নাম রাখা হয় শিশ বা শিথ। ইসলামি বর্ণনা অনুযায়ী তিনি নবী হিসেবেও পরিচিত। আদম (আ.) মৃত্যুর আগে শিশ (আ.)-কে তাঁর উত্তরসূরি ও নবুওয়তের ধারক হিসেবে মনোনীত করেন।
শিশ (আ.)-এর ওপর আল্লাহ তাওহিদের শিক্ষা ও নির্দেশনা নাজিল করেন, যা তাঁর বংশধরদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল। তাঁকে আদম (আ.)-এর ‘সত্য উত্তরাধিকারী’ বলা হয়। (ইবনে কাসির, কিসাসুল আম্বিয়া; ইমাম তাবারি, তারিখ আল-উমাম ওয়াল মুলুক; ইমাম সুয়ুতি, আদ-দুররুল মানসুর)
শিশ (আ.)-এর যুগে মানুষ সংগঠিত জীবনযাপনের কৌশল শিখতে থাকে। ইসলামি ইতিহাসে বলা হয়, তিনি তাঁর জনগণকে কৃষি, বয়নশিল্প এবং গণনা ও সময় পরিমাপের জ্ঞান দিয়েছিলেন। তাঁর নেতৃত্বেই আদম (আ.)-এর পরবর্তী প্রজন্ম প্রথমবারের মতো স্থায়ী জনপদ গড়ে তোলে।
আরও পড়ুনহজরত আদম (আ.) বিশ্বের প্রথম নবী০৭ জানুয়ারি ২০২৫আজকের পৃথিবীর সব জাতি ও ভাষা আদম (আ.)-এর এই বংশধরদের থেকেই উদ্ভূত। তাদের হাতে গড়ে ওঠা প্রাচীন সমাজগুলোই মেসোপটেমিয়া, সিন্ধু ও মিসরের প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করে।এই প্রজন্মের কিছু অংশ বসতি স্থাপন করে আরব উপদ্বীপের দক্ষিণে, কিছু শাম (সিরিয়া-ফিলিস্তিন) অঞ্চলে এবং কিছু ইরাক ও ব্যাবিলন এলাকায়। এখান থেকেই মানবসমাজের প্রাথমিক সম্প্রসারণ শুরু হয়। (ইমাম তাবারি, তারিখ আল-উমাম ওয়াল মুলুক; ইবনে কাসির, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া; আল-মাসউদী, মুরুজুয যাহাব)
আদম (আ.)-এর মৃত্যুর পর তাঁর বংশধরেরা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। প্রথম দিকের মানবসমাজ নদী ও উর্বর ভূমির আশপাশে বসতি গড়ে তোলে। দজলা ও ফুরাত নদীর তীর, সিন্ধু উপত্যকা ও মিসরের নীল নদ অঞ্চলই মানবসভ্যতার প্রথম কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
বিভিন্ন তাফসিরকার ও ইতিহাসবিদ বলেন, নুহ (আ.)-এর আগপর্যন্ত মানুষ তাওহিদ একনিষ্ঠ ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তারা আদম ও শিশ (আ.)-এর ধার্মিক অনুসারীদের অতিরিক্ত শ্রদ্ধা করতে শুরু করে, যা পরে মূর্তিপূজায় পরিণত হয়। এই বিচ্যুতিই ছিল নবী নুহ (আ.)-এর নবুয়তপ্রাপ্তির ঐতিহাসিক ভূমিকা। (ইবনে কাসির, তাফসির আল-কোরআনুল আজিম; ইমাম কুরতুবি, তাফসিরে সুরা নুহ)
আজকের পৃথিবীর সব জাতি ও ভাষা আদম (আ.)-এর এই বংশধরদের থেকেই উদ্ভূত। তাদের হাতে গড়ে ওঠা প্রাচীন সমাজগুলোই মেসোপটেমিয়া, সিন্ধু ও মিসরের প্রাগৈতিহাসিক সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করে।
আরও পড়ুননবী ইবরাহিম (আ.) ও চারটি পাখি১৭ জুন ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র প রথম ম নবসম জ র সন ত ন আল ল হ ত ত নদ র উল ল খ ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
মানবসম্পদ উন্নয়নে অবদান রাখায় কে এম হাসান রিপনকে বিশেষ সম্মাননা
মানবসম্পদ উন্নয়ন ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ গ্রিন এইচআর ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ড. কে এম হাসান রিপনকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।
এই সম্মাননা প্রদান করা হয় ফাউন্ডেশনের নিয়মিত ৩৩১তম পাঠচক্রে।
ড. রিপন সম্প্রতি ভারতের টেকনো ইন্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘কৌশলগত কর্মদক্ষতা উন্নয়নের কাঠামো’ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল প্রফেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশের মানবসম্পদ উন্নয়ন, উদ্যোক্তা বিকাশে অবদানের জন্য সুপরিচিত বক্তা, লেখক ও পরামর্শক।
পাঠচক্রের আলোচ্য বিষয় ছিল ‘কৌশলগত কর্মদক্ষতা উন্নয়নের কাঠামো’, যেখানে ড. রিপন তাঁর গবেষণার অভিজ্ঞতা, আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কর্মদক্ষতা উন্নয়নের রূপরেখা তুলে ধরেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে ড. রিপন বলেন, ‘গ্রিন এইচআর ফাউন্ডেশনের পাঠচক্র শুধু একটি জ্ঞানচর্চা নয়—এটি একটি ইতিবাচক চিন্তা ও মূল্যবোধের আন্দোলন। বাংলাদেশে যত বেশি এমন সচেতন, মানুষকেন্দ্রিক ও ইতিবাচক উদ্যোগ বাড়বে, দেশ তত দ্রুত এগিয়ে যাবে।”
গ্রিন এইচআর ফাউন্ডেশন-এর প্রেসিডেন্ট রওশন আলী বুলবুল বলেন, “ড. রিপন বাংলাদেশের কর্মদক্ষতা ও মানবসম্পদ উন্নয়নের অঙ্গনে এক আলোকবর্তিকা। তাঁর গবেষণাভিত্তিক অবদান আমাদের মানবসম্পদ খাতকে ভবিষ্যতের জন্য আরও প্রস্তুত করবে। তাঁকে এই সম্মান জানাতে পেরে আমরা গর্বিত ও কৃতজ্ঞ।”
সম্প্রতি গ্রিন এইচআর ফাউন্ডেশন সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, যা সংগঠনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। প্রতি শুক্রবার আয়োজিত এই পাঠচক্রে দেশের বিভিন্ন খাতের পেশাজীবীরা অংশগ্রহণ করেন, যেখানে নেই প্রতিযোগিতা বা নেতিবাচকতা; বরং রয়েছে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ইতিবাচক শক্তি এবং মানুষকে মূল্য দেওয়ার সংস্কৃতি।
ঢাকা/ইভা