যেদিন সম্পদ ও সন্তান কোনো কাজে আসবে না
Published: 13th, November 2025 GMT
জীবনের সবচেয়ে কঠিন দিনটি এখনো আসেনি। সেদিন সম্পদের পাহাড় থাকলেও কোনো লাভ হবে না। সন্তান-কন্যা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব—কেউ পাশে দাঁড়াবে না। সেদিন শুধু একটি জিনিস কাজে লাগবে: একটি পরিচ্ছন্ন হৃদয়।
কোরআন মাজিদে আল্লাহ বলেন, ‘আর আমাকে সেই দিন লাঞ্ছিত করো না, যেদিন মানুষকে উত্থিত করা হবে। যেদিন না সম্পদ কোনো কাজে আসবে, না সন্তান। কিন্তু যে আল্লাহর কাছে পরিচ্ছন্ন অন্তর নিয়ে আসবে।’ (সুরা শু‘আরা, আয়াত: ৮৭-৮৯)।
এই আয়াত ইবরাহিম (আ.
সেই দিনকে কোরআন বলেছে ‘ইয়াওমুত তাগাবুন’—প্রতারণার দিন। যেদিন মানুষ বুঝবে, দুনিয়ায় যা ভেবেছিল স্থায়ী, তা সব মায়া। সম্পদ, সন্তান, পদমর্যাদা—কিছুই সঙ্গী হবে না।
ইমাম আবু মনসুর আল-মাতুরিদি (রহ.) বলেন, যদি কেউ সম্পদকে আল্লাহর আনুগত্যে ব্যয় করে, সন্তানকে সৎশিক্ষা দেয়, তাহলে সেটি কিয়ামতের দিন কাজে লাগবে। কারণ আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের সম্পদ ও সন্তান তোমাদের কাছে আল্লাহর নৈকট্য এনে দেবে না, কিন্তু যে ইমান এনে সৎকর্ম করে, তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ প্রতিদান।’ (সুরা সাবা, আয়াত: ৩৭)। (আবু মনসুর আল-মাতুরিদি, তা’ওয়িলাতু আহলিস সুন্নাহ, ৭/৪৫৬, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বৈরুত, ২০০৪)।
আরও পড়ুন‘পাহাড় যখন মেঘের মতো চলতে থাকবে’০৪ অক্টোবর ২০২৫দুনিয়ায় আমরা ভুল করি। শেষমেশ কেউ না কেউ এসে বাঁচিয়ে দেয়। কেউ সুপারিশ করে, কেউ সান্ত্বনা দেয়। কিন্তু কিয়ামতের দিন? সেদিন কেউ কারো জন্য না।কিন্তু যদি হৃদয় শিরক, পাপ ও দূষণে ভরা থাকে, তাহলে কোনো আমলই কাজে আসবে না। পরিচ্ছন্ন হৃদয় মানে শিরকমুক্ত, পাপমুক্ত, একমাত্র আল্লাহর জন্য নিবেদিত। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাওহিদ ধরে রাখতে হবে। মাতুরিদি (রহ.) বলেন, যদি শেষ মুহূর্তে তাওহিদ না থাকে, আগের সব আমল বৃথা। বু মনসুর আল-মাতুরিদি, তা’ওয়িলাতু আহলিস সুন্নাহ, ৭/৪৫৮, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়া, বৈরুত, ২০০৪)
দুনিয়ায় আমরা ভুল করি। পরিবারের প্রতি অবহেলা, দায়িত্বে গাফিলতি—কিন্তু শেষমেশ কেউ না কেউ এসে বাঁচিয়ে দেয়। বাবা-মা, স্ত্রী-সন্তান, বন্ধু—কেউ সুপারিশ করে, কেউ সান্ত্বনা দেয়।
কিন্তু কিয়ামতের দিন? সেদিন কেউ কারো জন্য একটি নেকিও দিতে পারবে না। নিজের সন্তানের দিকে তাকিয়ে বলবেন, ‘বাবা, তোমার একটি নেকি দাও!’ কিন্তু সে নিজেই ভয়ে কাঁপছে। মা-বাবা পালিয়ে যাবে। যাদের জন্য জীবন বিলিয়ে দিয়েছি, তারা মুখ ফিরিয়ে নেবে। কারণ তারাও নিজেদের মুক্তির জন্য হাহাকার করছে।
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন বিবাদ এত তীব্র হবে যে, রূহ দেহের সঙ্গে ঝগড়া করবে।’ (আত-তাবারি, জামি‘উল বায়ান ফি তা’ওয়িলিল কোরআন, ১৯/১২৩, দারু ইহইয়া আত-তুরাস, বৈরুত, ২০০১)।
সেদিন কেউ কারো নয়। শুধু আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে একা।
আরও পড়ুনযখন নীরবতাই ইবাদত২৯ আগস্ট ২০২৫কিয়ামতের দিন বিবাদ এত তীব্র হবে যে, রূহ দেহের সঙ্গে ঝগড়া করবে।সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)তাই দুনিয়াতেই নিজের প্রতি যত্নবান হতে হবে। এটা স্বার্থপরতা নয়, দায়িত্ব। শরীরের রোগ সারাই যেমন জরুরি, অন্তরের রোগ সারানো আরও জরুরি। শিরক, হিংসা, অহংকার—এগুলো অন্তরের ক্যান্সার। এগুলো থেকে মুক্ত না হলে, কিয়ামতের দিন কোনো ওষুধ কাজ করবে না।
আমরা প্রায়ই ভাবি, ‘আমার সন্তানরা আমাকে বাঁচাবে’, ‘আমার সম্পদ আমাকে সম্মান দেবে’। কিন্তু সেদিন বুঝব, সবই ধোঁকা। শুধু একটি জিনিস সঙ্গে যাবে: আমার আমলের খাতা আর আমার অন্তরের অবস্থা। যে অন্তর আল্লাহর জন্য খাঁটি, সে মুক্তি পাবে। বাকি সবাই—ধনী হোক বা গরিব, পিতা হোক বা সন্তান—সবাই একা।
ইবরাহিম (আ.)–র দোয়া আমাদের শেখায়, ‘হে আল্লাহ! আমাকে সেদিন অপমানিত করো না।’ তিনি জানতেন, সেদিন লাঞ্ছনা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়—পরিচ্ছন্ন অন্তর।
চলুন, আজ থেকেই অন্তর পরিষ্কার করি। তাওবা করি। শিরক ত্যাগ করি। সৎকর্মে সম্পদ ব্যয় করি। সন্তানদের দ্বিন শেখাই। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা—নিজের অন্তরকে আল্লাহর জন্য খাঁটি রাখি। যাতে সেদিন যখন সবাই পালাবে, আল্লাহ আমাদের হাত ধরেন।
আরও পড়ুনএকজন মুসলিমের জন্মদিন কীভাবে যাপন করা উচিত১০ অক্টোবর ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মত র দ ন সন ত ন র জন য আল ল হ
এছাড়াও পড়ুন:
ধানমন্ডি ৩২ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ আটক সেই কিশোরকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ
রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর এলাকা থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক কিশোরকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরের পর ধানমন্ডি থানা থেকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আজ সকাল ১০টার দিকে ১৪ বছর বয়সী ওই কিশোরকে আটক করা হয়েছিল। তার বাড়ি ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায়।
আজ বিকেলে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, আটক কিশোরটি গ্রামের বাড়ি থেকে আজ সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর দেখতে এসেছিল। তার বাড়িতে খোঁজ নিয়ে তার সম্পর্কে সন্দেহজনক বা খারাপ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সেই কারণে তাকে ধানমন্ডি থানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
কিশোরকে আটকের পর পুলিশ বলেছিল, আটক কিশোরের আচরণ সন্দেহজনক। তাঁর কথা বিভ্রান্তিকর। সে নিজেকে শিক্ষার্থী পরিচয় দিচ্ছে। একবার বলছে সে ছাত্রদল করে। আরেকবার বলছে ছাত্রশিবির করে। আটক কিশোরের ব্যাগে পাওয়া কাগজপত্রসহ অন্যান্য আলামত দেখে মনে হচ্ছে, সে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত।
কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনলাইনে ডাকা আজ ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
কোনো ব্যক্তি নাশকতা করতে পারে, এমন সন্দেহ হলেই তাঁকে আটক করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় গত মঙ্গলবার এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
আরও পড়ুনধানমন্ডি ৩২ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ কিশোরকে আটক করল পুলিশ৬ ঘণ্টা আগে