বিএনপির প্রার্থী বদলের দাবিতে ঢাকা-শরীয়তপুর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
Published: 28th, November 2025 GMT
শরীয়তপুর–১ আসনে (সদর-জাজিরা) বিএনপির প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে মশালমিছিল করেছেন দলটির স্থানীয় এক নেতার অনুসারীরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় শরীয়তপুর-ঢাকা সড়কে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সরদার এ কে এম নাসির উদ্দিন ওরফে কালুর সমর্থকেরা এ কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়ে ভোগান্তি দেখা দেয়।
এ আসনে দলের প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ আহমেদ আসলাম। তিনি শরীয়তপুর–৩ আসনের আওতাধীন ডামুড্যা উপজেলার বাসিন্দা। তাঁর প্রার্থিতা পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
শরীয়তপুর–১ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন এ কে এম নাসির উদ্দিন, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি আমজাদ সওদাগর, শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ মজিবুর রহমান। সাঈদ আহমেদকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেওয়ার পর স্থানীয় বিএনপির মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। নাসির উদ্দিনের সমর্থকেরা বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ দেখান। গতকাল বৃহস্পতিবারও শরীয়তপুর-ঢাকা সড়কের জাজিরার কাজীরহাট এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন তাঁরা।
আজ সন্ধ্যায় নাসির উদ্দিনের সমর্থকেরা জেলা শহরের ধানুকা এলাকায় শরীয়তপুর-ঢাকা সড়কে জড়ো হন। তাঁরা মাশালমিছিল নিয়ে জেলা শহরে ওই সড়কের এক কিলোমিটারজুড়ে অবরোধ করেন। জেলা প্রশাসকের বাসভবনের সামনে থেকে মশালমিছিল নিয়ে শরীয়তপুর-ঢাকা সড়ক ধরে সদর থানার কাছে গিয়ে শেষ হয়। অবরোধের কারণে অন্তত এক ঘণ্টা সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এতে শহরে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।
শরীয়তপুর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আলী আজম সরদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘শরীয়তপুর–১ আসনে অন্য একটি নির্বাচনী এলাকা থেকে একজন নেতাকে এনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। ত্যাগী নেতাকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যা আমরা মানতে পারছি না। মনোনয়ন পরিবর্তন না করা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল ছৈয়াল বলেন, সাঈদ আহমেদ জেলা পর্যায়ের নেতা হলেও তিনি শরীয়তপুর–৩ নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা।
ঢাকাকেন্দ্রিক ব্যবসায়ী। মাঠপর্যায়ের রাজনীতিতে তাঁর উপস্থিতি একেবারেই কম। তিনি বলেন, ‘এমন একজন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়েছেন। আমরা যে নেতাকে সংকটের সময় পাশে পাই, তাঁকেই মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
দলের প্রাথমিক মনোনীত প্রার্থী সাঈদ আহমেদ আসলাম ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিনের এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য তাঁদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও ধরেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সহসভাপতি সিরাজুল হক মোল্যা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনোনয়নবঞ্চিত এক নেতার সমর্থকেরা আন্দোলন করছেন। দল যাঁকে ভালো মনে করেছে, তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে। এখন দলের সিদ্ধান্তটা মেনে নেওয়াই উচিত হবে। আমরা তৃণমূলের নেতার দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে রয়েছি।’
আরও পড়ুনবিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে দুই জেলায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ২৭ নভেম্বর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন স র উদ দ ন স ঈদ আহম দ ব এনপ র স
এছাড়াও পড়ুন:
মামলা নেওয়ার দাবিতে লাশ নিয়ে থানায় স্বজনদের অবস্থান
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্রদলের সাবেক নেতা সাদ্দাম হোসেনকে (৩৫) গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলা নেওয়ার দাবিতে লাশ নিয়ে থানায় বিক্ষোভ করেছেন স্বজনেরা। শুক্রবার সন্ধ্যা পৌনে ছয়টা থেকে তাঁরা থানা চত্বরে লাশ নিয়ে অবস্থান নেন। রাত নয়টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাঁরা থানা চত্বরে অবস্থান করছিলেন।
এ ঘটনায় রাত সোয়া আটটার দিকে নিহত সাদ্দামের বাবা মোস্তফা কামাল ওরফে মস্তু মিয়া বাদী হয়ে হত্যার অভিযোগে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেনসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা পাঁচ থেকে সাতজনের বিরুদ্ধে থানায় একটি এজাহার জমা দিয়েছেন। তবে সেটি এখনো মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়নি। বাদী মোস্তাফা কামাল বলেন, ‘মামলার কপি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আমরা থানা চত্বর ত্যাগ করব না।’
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কান্দিপাড়া এলাকায় বাসা থেকে ডেকে নিয়ে ছাত্রদলের সাবেক ওই নেতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। স্বজনদের অভিযোগ, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা দেলোয়ার হোসেন ও তাঁর সহযোগীরা তাঁকে হত্যা করেছেন। নিহত সাদ্দাম হোসেন সদর উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সদস্য। তিনি শহরের কান্দিপাড়ার মাইমলহাটির মোস্তফা কামালের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও দুটি মেয়ে আছে।
সাদ্দামের বাবা মোস্তফা কামাল বলেন, গতকাল রাত দেড়টার দিকে সাদ্দাম বাসায় ভাত খাচ্ছিলেন। তখন দেলোয়ার হোসেন, তাঁর সহযোগী পলাশ ও বাবুল মিয়া বাড়ি থেকে সাদ্দামকে ডেকে নিয়ে যান। রাত দুইটার দিকে সাদ্দামের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পান। কান্দিপাড়ার শংকর শাহবাড়ির পাশের খালপাড় নতুন সেতুর ওপরে গিয়ে দেখেন, দুজন সাদ্দামকে টানাহেঁচড়া করে তোলার চেষ্টা করছেন। তাঁকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে আজ সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে নিহত সাদ্দামের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর স্বজনেরা লাশ নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা দেলোয়ার হোসেনসহ জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। একপর্যায়ে তাঁরা লাশ নিয়ে সদর থানায় যান। থানা চত্বরে লাশ রেখে মামলা নেওয়ার দাবিতে অবস্থান নেন।
আরও পড়ুনব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাবেক ছাত্রদল নেতাকে গুলি করে হত্যা, অভিযোগ স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার বিরুদ্ধে৯ ঘণ্টা আগেএ সময় থানার ফটকের বাইরে স্বজনদের পাশাপাশি এলাকাবাসী জড়ো হন। রাত সোয়া আটটার দিকে স্বজনেরা মামলার লিখিত এজাহার নিয়ে থানায় পৌঁছান। দ্রুত এজাহার মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হবে—ওসি এ আশ্বাস দিলে রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁরা সাদ্দামের লাশ নিয়ে থানা চত্বর ত্যাগ করেন। ১৫ মিনিট পর তাঁরা আবার লাশ থানা চত্বরে এনে অবস্থান শুরু করেন।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘তাঁরা মামলার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তবে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করলেও স্বজনেরা এজাহার নিয়ে থানায় আসেননি। পরে এজাহার পেয়েছেন। এ নিয়ে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। এখন পর্যন্ত কোনো আটক নেই। গুলির ঘটনা ঘটেছে। অস্ত্র উদ্ধারসহ আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।