নোয়াখালী-২ (সেনবাগ ও সোনাইমুড়ী আংশিক) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের  কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দুই নেতা। আজ শুক্রবার বিকেলে সেনবাগ থানার মোড়ে আয়োজিত এক সমাবেশে তাঁরা এ আহ্বান জানান।  মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে এ সমাবেশ হয়েছিল।

বিএনপির এ দুই নেতা হলেন দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মফিজুর রহমান ও দলটির সৌদি আরব পশ্চিমাঞ্চল বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল মান্নান। নোয়াখালী-২ আসন থেকে তাঁরা দুজনেই মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন জয়নুল আবদিন ফারুক। তিনি বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ।

মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে হওয়া এ সমাবেশে সেনবাগ ও সোনাইমুড়ী উপজেলার বিএনপি এবং অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। এতে তাঁরা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, কাজী মফিজ ও আবদুল মান্নানের ছবি–সংবলিত ফেস্টুন বহন করেন। সমাবেশের কারণে সেনবাগ উপজেলা সদরে এক ঘণ্টার বেশি যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাজী মফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা সেনবাগে পরিবর্তন করেই এই এলাকার মানুষকে মুক্ত করব। আপনারা প্রতিটি ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলুন। প্রতিটি ঘর থেকে আওয়াজ তুলুন। যাকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, আমরা তাঁকে চাই না। তাঁকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। তাঁকে যদি রাখা হয়, তাহলে সেনবাগের মানুষ তাঁদের সিদ্ধান্তও পরিবর্তন করতে বাধ্য হবে।’

সমাবেশ মনোনয়ন পাওয়া  জয়নুল আবদিন ফারুকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তোলেন আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী আবদুল মান্নান।  তিনি জয়নুল আবদিনের উদ্দেশে বলেন, ‘চাঁদামুক্ত সেনবাগ হতে হবে। সন্ত্রাসমুক্ত সেনবাগ হতে হবে। দুর্নীতিমুক্ত সেনবাগ হতে হবে। আমরা ভুলে গেলে চলবে না,  গত এক বছরে লাখ লাখ, কোটি কোটি টাকা চাঁদা নিয়েছেন। আমরা চাঁদাবাজমুক্ত সেনবাগ চাই। আপনাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের মৃত্যুবরণও করতে হয়, আমি মরতে রাজি আছি।’

সেনবাগ পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক মফিজুল ইসলাম এ সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন। এতে আরও বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব আনোয়ার হোসেন, সহসভাপতি জাহাঙ্গীর হাসান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, সাবেক উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ওবায়দুল হক প্রমুখ।

চলতি মাসের ৩ নভেম্বর বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ঘোষণার পর থেকেই নোয়াখালীর এ আসনে বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচি হয়েছে। জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব হারুনুর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেনবাগে মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই নেতা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিষয়ে তাঁরা অবগত রয়েছেন। এটা তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়। জেলা বিএনপি কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঘোষিত প্রার্থীদের পক্ষে বিভিন্ন এলাকায় প্রচার-প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত সবাইকে মেনে চলা উচিত।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ক ত স নব গ ব এনপ র র আহ ব উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

কিশোরগঞ্জ-৫ : বিএনপির দুই মনোনয়নপ্রত্যাশীর মহড়া ঘিরে উত্তাপ, সহিংসতার শঙ্কা

কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনে বিএনপির মনোনয়ন ঘিরে দুই নেতার অনুসারীদের পাল্টাপাল্টি মহড়াকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে দুই পক্ষ থেকে পরস্পরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থিতা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে এখনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। এখানে মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় আছেন বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় পর্ষদের সদস্য শেখ মুজিবুর রহমান (ইকবাল) এবং ১২–দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের সভাপতি সৈয়দ এহসানুল হুদা। তাঁদের বাড়ি বাজিতপুর উপজেলায়। মজিবুর রহমান দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং এহসানুল হুদা জোটের প্রার্থী হতে চান। প্রতিদিন নানাভাবে শোডাউন দিয়ে তাঁরা নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন।

বিএনপির মনোনয়নের দাবিতে গত শনিবার সকালে বাজিতপুরে দীর্ঘ মানববন্ধন করেন শেখ মজিবুর রহমানের কর্মী-সমর্থকেরা। পরে বিকেলে পাল্টা শোডাউন দেন এহসানুল হুদার অনুসারীরা। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির জেরে বাজিতপুরের একাধিক স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন। ভাঙচুর করা হয় কয়েকটি মোটরসাইকেল। এ ঘটনায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে ২২ জনকে আটক করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে ছয় রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল ও দেশি অস্ত্র জব্দ করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মনোনয়নকে কেন্দ্র করে এক সপ্তাহ আগে থেকে দুই মনোনয়নপ্রত্যাশী একে-অপরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। ইতিমধ্যে দুই পক্ষ থেকে দুই নেতাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দুই প্রার্থী ফেসবুকে একে অপরের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছেন। এ ছাড়া প্রতিদিন ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার ওয়ার্ড পর্যায়ে দুই পক্ষের সমর্থকেরা মিছিল করে প্রতিপক্ষকে হুঁশিয়ারি করে স্লোগান দিচ্ছেন। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, গত শনিবার দুই পক্ষের সংঘাতের পরও দুই

মনোনয়নপ্রত্যাশীর অনুসারীরা থামেননি। ঘটনার পর থেকে উভয় পক্ষ মিছিল করছে। এতে এক পক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে দোষারোপ করে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে। স্থানীয় লোকজনের মধ্যে এতে আতঙ্ক তৈরি করছে।

আরও পড়ুনকিশোরগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী চেয়ে দীর্ঘ মানববন্ধন২২ নভেম্বর ২০২৫

বাজিতপুর উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান। তিনি শেখ মজিবুর রহমানকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে দেখতে চেয়ে শুরু থেকে মাঠে আছেন। মনিরুজ্জামান বলেন, ‘এহসানুল হুদার মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের অধিকাংশই আওয়ামী সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারী ক্যাডার। আমাদের নেতা শেখ মজিবুর রহমানকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। কর্মীদেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এককথায় এহসানুল হুদার কারণে বাজিতপুর ও নিকলীর রাজনৈতিক পরিবেশ সংঘাতপূর্ণ হয়ে উঠছে।’

অন্যদিকে বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য মো. শাহ আলম এহসানুল হুদার পক্ষে মাঠে সক্রিয় আছেন। তিনি বলেন, ‘দুই উপজেলার শান্ত রাজনীতি অশান্ত করছে শেখ মজিবুর রহমানের অনুসারীরা। আমাদের শোডাউনে হামলা চালানোর মধ্য দিয়ে মজিবুর রহমানের পক্ষ সহিংসতার রাজনীতির সূচনা করল। এর নেতিবাচক প্রভাব বড় হতে পারে।’

জানতে চাইলে বিএনপি নেতা শেখ মজিবুর রহমান বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিবেশ ভালো নেই। এক মনোনয়নপ্রত্যাশী (এহসানুল হুদা) আমার ও আমার দলের সাধারণ সম্পাদক মনিরের নাম নিয়ে কবর রচনা করে চলেছেন। অস্ত্রের মহড়া চলছে। বিএনপির বদনাম হচ্ছে। তবে যারা করছে, তারা বিএনপির কেউ না।’ তিনি যৌথ বাহিনীর কাছে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র ও গুলির সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান।

অন্যদিকে সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ‘আমার শোডাউনে শেখ মজিবুর পক্ষ হামলা চালাল। তাঁর লোকজন আমাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে চাচ্ছেন। তবে আমাকে চোখ রাঙিয়ে লাভ নেই। নিজের কবর খুঁড়তে হবে।’ তিনি স্বীকার করেন, মনোনয়ন ইস্যুতে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

এ ছাড়া মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি ও গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, বাজিতপুর পৌর বিএনপি সভাপতি এহেসান কুফিয়া, সাবেক জিএস মীর জলিল, বিএনপির সমর্থক মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল ওয়াহাব, জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক মাশুক মিয়া ও নিকলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি বদরুল মোমেন এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কিশোরগঞ্জ-৫ : বিএনপির দুই মনোনয়নপ্রত্যাশীর মহড়া ঘিরে উত্তাপ, সহিংসতার শঙ্কা