চিকিৎসা ব্যয়ের বোঝা বাড়ছে রোগীর ওপর
Published: 14th, January 2025 GMT
ওষুধে স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট বাড়িয়েছে সরকার। একই নীতিতে ভ্যাট বাড়তে পারে বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামেও। একই সঙ্গে বেড়েছে ডলারের দাম। এতে আরেক দফা বাড়তে পারে চিকিৎসা ব্যয়। তবে ঔষধ প্রশাসন বলছে, রোগীর ওপর চাপ পড়ে, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না। স্বল্প মূল্যে নিরাপদ ও টেকসই চিকিৎসা সরঞ্জাম নিশ্চিত করতে চায় সংস্থাটি। এমন পরিস্থিতিতে এসব পণ্যের দর পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
গতকাল সোমবার সকালে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে মহাপরিচালক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে মেডিকেল ডিভাইস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং অফথালমিক প্রোডাক্টস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ব্যবসায়ীরা হার্টের স্টেন্ট (রিং), চোখের লেন্সসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জামের দাম পুনর্বিবেচনার দাবি জানান। নতুন করে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট বাড়ানোর আশঙ্কা থেকে এমন দাবি তাদের। এ ছাড়া অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের ক্ষেত্রে স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভ্যাট ২ দশমিক ৪ থেকে বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। ভ্যাট বৃদ্ধির কারণে ওষুধের দাম বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে গতকাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অংশীজনের সঙ্গে আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ দুই ঘণ্টা বৈঠকের পরও দাম নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারেনি সরকার। দু-এক দিনের মধ্যে আবার বৈঠক হতে পারে বলে জানা গেছে।
বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা.
ঔষধ প্রশাসনের তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর ২১টি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ৪৪ ধরনের কার্ডিয়াক স্টেন্টের (হার্টের রিং) দাম ২ হাজার থেকে ৫৬ হাজার টাকা পর্যন্ত কমিয়ে নির্ধারণ করেছিল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। ১৪ ডিসেম্বর ১২ দেশের ১২৯ ধরনের লেন্সের দাম নির্ধারণ করেছিল অধিদপ্তর। এর পর থেকে নির্ধারিত দামেই হার্টের রিং ও লেন্স হাসপাতালগুলোকে সরবরাহ করতে হচ্ছে আমদানিকারকদের।
এখন তারা বলছে, হার্টের রিং, চোখের লেন্সসহ অধিকাংশ মেডিকেল ডিভাইস আমদানি করতে হয়। সরকার-নির্ধারিত দরে এগুলো বিক্রি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে মানহীন সরঞ্জাম অবৈধ পথে বাজারে আসছে। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা।
মেডিকেল ডিভাইস ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) ওয়াসিম আহমেদ বলেন, চিকিৎসা সরঞ্জাম আমদানিতে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা দূর করা। সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়ার সহজীকরণ, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর এমআরপিতে অন্তর্ভুক্ত করা এবং ডলারের মূল্য অনুযায়ী দাম সমন্বয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ভ্যাট নিয়ে কথা বলেছি। বর্তমানে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এখন যদি সেটি বেড়ে যায়, তাহলে তো আমাদের দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় থাকবে না। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বলেছে, মূল্য না বাড়ানোর ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে।
এ বিষয়ে অফথালমিক প্রোডাক্টস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি আমানউল্লাহ বাদল বলেন, আমাদের দাবি প্রোডাক্টের দাম বাড়ানো নয়, ডলারের দামের সঙ্গে সমন্বয় করা। এসব চিকিৎসা সরঞ্জামের দাম নির্ধারণ করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। মূল্য না বাড়ালে আমাদের পক্ষে ব্যবসা করা কঠিন হবে।
তিনি আরও বলেন, ভ্যাট প্রাইসের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। এর আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড মূল্যের সঙ্গে ভ্যাট যুক্ত করার কথা বলেছিল, সেসব নথি আমরা ঔষধ প্রশাসনে দিয়েছি। ভ্যাট বাড়লে কার্ডিয়াক স্টেন্ট, লেন্সের দাম বাড়াতে হবে– এতে রোগীর খরচ বাড়বে। ডলারের মূল্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ১১০ টাকা ধরে পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সরকারিভাবে ডলারের মূল্য ১২০; কিন্তু ব্যাংক ১২৫-১২৭ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে। ডলারের সঙ্গে সমন্বয় রেখে মূল্য পুনর্বিবেচনার দাবি জানাই।
এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক ড. আকতার হোসেন বলেন, ডলারের মূল্য ও কর বাড়ার কারণে চিকিৎসা সরঞ্জামের দাম বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীরা যে প্রস্তাবনা দিয়েছেন, তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। মন্ত্রণালয় সে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে রোগীর ওপর চাপ পড়বে– এমন কোনো কিছুই করা হবে না। ওষুধে সরকারের সিদ্ধান্তে কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করা হয়েছে, কোম্পানি থেকে দর কষাকষি করে স্বল্প মূল্যে চিকিৎসা সরঞ্জামগুলো আমদানি করতে। একই সঙ্গে নিবন্ধনহীন কোম্পানি বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শামীম হায়দার সমকালকে বলেন, রোগীর ওপর চাপ পড়ে, এমন কোনো সিদ্ধান্ত অধিদপ্তর নেবে না। জনসাধারণ যাতে নিরাপদ ও টেকসই চিকিৎসা সরঞ্জাম পেতে পারে, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের।
এ সময় ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান আবদুল মুক্তাদির বলেন, দেশে বর্তমানে ওষুধের বাজার ৩০ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশে যত কম টাকায় ওষুধ পাই, পৃথিবীর আর কোথাও নেই। বিদ্যুৎ, কর্মীদের বেতনসহ প্রতিটিতে খরচ বেড়েছে। ডলারের মূল্যও বেড়েছে। তাই দাম বাড়ানো ছাড়া আমাদের কিছু করার নেই।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
টাইব্রেকারে দুটি শট আটকে ফারইস্টকে বিদায় করে এআইইউবিকে ফাইনালে তুললেন রাজীব
ইস্পাহানি-প্রথম আলো তৃতীয় আন্তবিশ্ববিদ্যালয় ফুটবলের ফাইনালে উঠেছে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এআইইউবি)।
জাতীয় স্টেডিয়ামে আজ প্রথম সেমিফাইনালে টুর্নামেন্টের গত আসরের রানার্সআপ এআইইউবি জিতেছে রোমাঞ্চকর টাইব্রেকারে। টুর্নামেন্টের প্রথম আসরের রানার্সআপ ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিপক্ষে নির্ধারিত ৭০ মিনিটে ম্যাচটি ছিল ২-২ সমতায়। এরপর টাইব্রেকারে এআইইউবি জেতে ৬-৫ গোলে।
টুর্নামেন্টে টানা দ্বিতীয়বার শিরোপার চূড়ান্ত লড়াইয়ের টিকিট পেয়েছে এআইইউবি। নির্ধারিত সময়ে দুবার পিছিয়ে ম্যাচে ফিরেছে তারা, টাইব্রেকারেও একপর্যায়ে পিছিয়ে ছিল দলটি। টাইব্রেকারে দুটি শট আটকে এআইইউবিকে ফাইনালে তুলে নেন গত মৌসুমে দেশের শীর্ষ লিগে চট্টগ্রাম আবাহনীর হয়ে খেলা গোলকিপার রাজীব ইসলাম।
জাতীয় স্টেডিয়ামে গোটা ম্যাচজুড়েই ছিল টান টান উত্তেজনা। টাইব্রেকারে প্রথম চারটি শটে দুই দলই গোল করে। এআইইউবির আজিজুল হক অনন্তর নেওয়া পঞ্চম শট পোস্টে লাগে। এরপর এআইইউবির গোলকিপার রাজীব প্রতিপক্ষ গোলকিপার আরমান হোসেনের শট আটকে দলকে ম্যাচে রাখেন। তখন স্কোর দাঁড়ায় ৪-৪।
এরপর সাডেন ডেথের প্রথম শটে দুই দলই গোল করে, ৫-৫। কিন্তু সাডেন ডেথে ষষ্ঠ শটে এআইইউবি গোল করলেও ফারইস্টের সালমান গোল করতে পারেননি। তাঁর শট আটকে দেন এআইইউবির গোলকিপার রাজীব। আরমান ও সালমান দুই ভাই।
দুজনই টাইব্রেকারে শট মিস করেন। শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে ৬-৫ গোলে জেতে এআইইউবি।
ফারইস্টের দুর্ভাগ্য, দুবার এগিয়ে গিয়েও এবং টাইব্রেকারে লিড নিয়েও তারা জিততে পারেনি। পারেনি এআইইউবির গোলকিপার রাজীব ইসলামের দৃঢ়তায়। জয়ের পর গোলকিপার রাজীবকে নিয়ে এআইইউবি মেতে ওঠে উল্লাসে। ম্যাচসেরার পুরস্কারও জিতেছেন এআইইউবির জয়ের নায়ক রাজীব।
মূল ম্যাচে এআইইউবির প্রাধান্য ছিল। তবে নির্ধারিত ৭০ মিনিটে তারা জিততে পারেনি। ৩০ মিনিটে গোল করে ক্ষয়িষ্ণু শক্তির দল নিয়ে মাঠে নামা ফারইস্টকে এগিয়ে দেন ব্রাদার্সের ফরোয়ার্ড মেরাজ প্রধান।
বাঁ দিক থেকে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে প্লেসিং করেন তিনি। ৪৪ মিনিটে সেই গোল শোধ করেন এআইইউবির আরিফুল হক। ৫৪ মিনিটে আবার গোল করে ফারইস্টকে এগিয়ে নেন মেরাজ। তবে দ্রুতই সেই গোল শোধ হয়ে যায়। ৫৯ মিনিটে গোলাম রাব্বি গোল করে ম্যাচে ২-২ সমতা ফেরান। এরপর ম্যাচ গড়ায় সরাসরি টাইব্রেকারে, যেখানে শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করে এআইইউবি।
ফারইস্ট আজ তাদের কয়েকজন সেরা খেলোয়াড়কে পায়নি। বাংলাদেশ লিগে খেলা থাকায় খেলতে পারেননি আবাহনীর ফরোয়ার্ড আসাদুল মোল্লা, একই দলের গোলকিপার পাপ্পু হোসেন, পুলিশের মিডফিল্ডার এমএস বাবলু, ফকিরেরপুলের ফরোয়ার্ড স্বাধীন হোসেন, প্রথম বিভাগের ডিফেন্ডার লিহান উদ্দিন এবং অধিনায়ক আল আমিন ও সেনাবাহিনীর গোলকিপার আশরাফুল।
ফারইস্ট পেয়েছে প্রিমিয়ার লিগে খেলা শুধু মেরাজকে। সেই মেরাজ দুই গোল করেও দলকে জেতাতে পারেননি।
অন্যদিকে প্রিমিয়ার লিগের আরামবাগের মিডফিল্ডার ওমর ফারুক মিঠু ও আক্কাস আলী, মোহামেডানের স্ট্রাইকার সৌরভ দেওয়ান, ডিফেন্ডার আজিজুল হক ও জাহিদ হাসানকে পেয়েছে এআইইউবি। আগের ম্যাচে লাল কার্ড দেখায় খেলতে পারেননি রহমতগঞ্জের ডিফেন্ডার আলফাজ মিয়া।
ম্যাচসেরার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টুর্নামেন্ট কমিটির প্রধান ও জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু, টুর্নামেন্টের টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ইমতিয়াজ সুলতান জনি, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রেজারার ও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ড. মো. মঞ্জুর ই খোদা তরফদার, ইস্পাহানি টি লিমিটেডের বিপণন মহাব্যবস্থাপক ওমর হান্নান, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক বিপ্লব ভট্টাচার্য, জাহিদ হাসান এমিলি ও মামুনুল ইসলাম।
গত বছর ফাইনালে এআইইউবি হেরে যায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কাছে। এবার তাদের ফাইনালের প্রতিপক্ষ হবে গণ বিশ্ববিদ্যালয় ও চিটাগং ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির মধ্যকার দ্বিতীয় সেমিফাইনালের জয়ী দল। ম্যাচটি আজই জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।