পাহাড় কাটা নিয়ে টম অ্যান্ড জেরি খেলা চলবে না: উপদেষ্টা রিজওয়ানা
Published: 19th, January 2025 GMT
বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, “পাহাড় কেটে পাহাড় সৃষ্টি করার জাদু নেই। যদি জাদু না থাকে তাহলে পাহাড় কাটতে দেওয়া যাবে না।”
তিনি বলেন, “চট্টগ্রামে পাহাড় কাটার বিষয়ে টম অ্যান্ড জেরি খেলা আর চলবে না। আমি আসব-যাব, পাহাড় কাটা বন্ধ হবে। কাল আবারো পাহাড় কাটা হবে। ওরা রাতেও পাহাড় কাটে। রাতের বেলা পাহাড় পাহারা দিতে হবে। এটা সবার দায়িত্ব। এটা সরকারের আইন।”
রবিবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) আয়োজিত পলিথিন বিরোধী এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন চসিক মেয়র ডা.
আরো পড়ুন:
‘মানুষকে শাস্তি দিতে চাইলে বলতে পারেন, তুমি সন্দ্বীপ যাও’
ওষুধের ভ্যাট কমানো হবে বলে আশা করছি: স্বাস্থ্য উপদেষ্টা
রিজওয়ানা হাসান পলিথিনের ব্যবহার প্রসঙ্গে বলেন, “পলিথিন শপিংব্যাগের বিরোধিতা আমাদের সময়ে শুরু হয়নি। এটি ২০০২ সালে নিষিদ্ধ হয়েছে। আজ ২০২৫ সালে এসে এটি বাস্তবায়নের কথা আমরা বলছি। কতটা দুর্ভাগ্য আমাদের। জনগণের স্বার্থেই পলিথিন বন্ধ করা হয়েছিল। আমার মনে আছে, ২০০৪ থেকে ২০০৬ সালে লাগাতার অভিযান করে পলিথিনের ব্যবহার প্রায় কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তখন কেউ বিকল্পের কথা তোলেনি। বিকল্প আপনার-আমার সবারই আছে। এই ধোঁয়াগুলো তোলা হয়, প্লাস্টিক-পলিথিন ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে। আপনার দাদা পর্যন্ত যাব কেন? আপনার বাবা কি নিয়ে বাজারে যেতেন? চটের ব্যাগ নিয়ে বাজারে যেতেন।”
পলিথিনের অপকারিতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এখন বাজারে গেলে গাজরের জন্য, শসার জন্য, ফুলকপির জন্য, কাঁচা মরিচের জন্য একটা করে পলিথিন। মাছ-মাংসের জন্য পলিথিন তো আছেই। এটা আসলে সরকার আইন করেছে বলে আপনাকে মানতে হবে না। আপনাকে এজন্য মানতে হবে, আপনার ভবিষ্যৎ এবং সরকারের জন্য খারাপ। আমাদের দূষিত বাতাস ইনহেইল করেও আপনার বাচ্চা অসুস্থ হচ্ছে। পলিথিন ব্যাগে খাবার রেখে খাওয়া চরম অনিরাপদ। প্লাস্টিকের গ্লাসে গরম চা-কফি দেওয়া হলে মাইক্রোপ্লাস্টিক লিকেজ হয়ে সিস্টেমে ঢুকে যাচ্ছে। এটা কেন আপনার সন্তানকে খাওয়াবেন? আপনার মনে রাখতে হবে, এটা খারাপ জিনিস এবং এটির বিকল্প আছে।”
পলিথিন সস্তা নয় উল্লেখ করে এই উপদেষ্টা বলেন, “অনেকে সস্তার কথা বলেন। পলিথিন নাকি সস্তা। এটা কেমন করে সস্তা হল? আপনি পলিথিনের জন্য আলাদা টাকা দিচ্ছেন না। পলিথিন যারা বানাচ্ছে তারা কি বিদ্যুৎ ছাড়া বানাচ্ছে? তারা কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করে আনছে। আমরা যখন পলিথিন বন্ধের কাজ শুরু করলাম তখন শ্রমিক পুনর্বাসনের ধোঁয়া তুললো। প্লাস্টিক যে তাপমাত্রায় পোড়ানোর কথা তার চেয়ে অনেক কম তাপমাত্রায় পুড়িয়ে তারা শপিংব্যাগ তৈরি করছে। এতে শ্রমিকদের ডায়োক্সিনের মুখোমুখি করছে, ফলে ক্যান্সার হচ্ছে। তখন প্লাস্টিক উৎপাদনকারীরা বলে না কেন আমার শ্রমিককে ক্যান্সার হতে দেব না?”
পলিথিন কারখানা বন্ধ হলে মালিকরা ক্ষতিপূরণ দেবে জানিয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, “গার্মেন্টস বন্ধ হলে মালিক শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়। তাহলে পলিথিন কারখানা বন্ধ হলে আমরা কেন ক্ষতিপূরণ দেব? ক্ষতিপূরণ মালিক দেবে। কারণ সে তার শ্রমিককে অনিরাপদ কর্মস্থলে কাজ করিয়েছে।”
“যে পাটের দাম ছিল ২৮ টাকা; যেই বললাম পলিথিন বন্ধ, পাট আসবে অমনি হয়ে গেল ৪০ টাকা। এটাতো বাংলাদেশ। আমাদের দেশটাকে তো আমরা চিনি। জিনিসগুলো প্রশ্রয় দিলে কিন্তু পলিথিন ব্যবসায়ীরাই সামনে আসবে। তাই এগুলোকে আমরা প্রশ্রয় দেব না। পলিথিন ব্যাগ পুনর্ব্যবহার করা যায় না। একটা চটের ব্যাগ অনেকবার ব্যবহার করা হয়।” যোগ করেন তিনি।
চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, “জলাবদ্ধতা এবং পলিথিন-প্লাস্টিক এগুলো একটার সঙ্গে একটা সম্পৃক্ত। আমাদেরকে পলিথিন-প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এটাকে আইন করে তা বন্ধ করতে হবে। যেভাবে ২০০৫ সালে করা হয়েছিল। ঠিক একইভাবে প্রতিটি কারখানা এবং বিপণন স্থানগুলোতে আইন প্রয়োগ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে একটা সুফল আমরা পেতে পারি।”
সভায় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা/রেজাউল/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট র ব যবহ র উপদ ষ ট র জওয় ন র জন য আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে দুই ট্রেনের সময় বদলে যাচ্ছে
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলা সৈকত এক্সপ্রেস ও প্রবাল এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচি পরীক্ষামূলকভাবে নতুন করে নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। নতুন সময়সূচি আগামী ১০ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারগামী সৈকত এক্সপ্রেস (৮২১ নম্বর ট্রেন) ট্রেনটি এখন সকাল সোয়া ৬টায় চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে যায়। নতুন সূচি অনুযায়ী, পরীক্ষামূলকভাবে এ ট্রেন চলাচল করবে ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে।
আর কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামগামী প্রবাল এক্সপ্রেস (৮২২ নম্বর ট্রেন) ট্রেনটি কক্সবাজার স্টেশন ছাড়বে সকাল ১০টায়। এখন এ ট্রেন ছাড়ে ১০টা ২০ মিনিটে। গত মঙ্গলবার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে চলাচলরত সৈকত এক্সপ্রেস ও প্রবাল এক্সপ্রেসের সময়সূচি পরীক্ষামূলকভাবে পরিবর্তনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের উপপ্রধান পরিচালন কর্মকর্তা তারেক মুহাম্মদ ইমরান।
রেলওয়ের সহকারী প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিকীকের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়েছে, যাত্রীদের চাহিদা ও সময়ানুবর্তিতা রক্ষায় সুষ্ঠুভাবে ট্রেন পরিচালনার জন্য কক্সবাজারগামী সৈকত এক্সপ্রেস এবং চট্টগ্রামমুখী প্রবাল এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রুটে এখন দুই জোড়া আন্তনগর ট্রেন চলাচল করে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত চলাচল করে আরও দুই জোড়া আন্তনগর ট্রেন।
কক্সবাজার রেললাইনে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর। প্রথমে ঢাকা থেকে কক্সবাজার এক্সপ্রেস নামে আন্তনগর বিরতিহীন ট্রেন দেওয়া হয়। এরপর গত বছরের জানুয়ারিতে চলাচল শুরু করে পর্যটক এক্সপ্রেস। এটাও দেওয়া হয় ঢাকা থেকে। চট্টগ্রাম থেকে ট্রেন না দেওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়।
গত বছরের ৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এক জোড়া বিশেষ ট্রেন চালু করা হয়। দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই ট্রেন। এরপর ইঞ্জিন ও কোচের সংকটের কথা বলে গত বছরের ৩০ মে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের চাপে সেই অবস্থান থেকে সরে আসে রেলওয়ে। গত বছরের ১২ জুন থেকে আবার চালু হয় ট্রেন। আর নিয়মিত ট্রেন চলাচল শুরু হয় চলতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে।
সৈকত এক্সপ্রেস ট্রেনটি যাত্রী ওঠানামার জন্য ষোলশহর, জানালী হাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলাহাজরা ও রামু স্টেশনে থামবে।
আর প্রবাল এক্সপ্রেস যাত্রাপথে থামবে ষোলশহর, গোমদণ্ডী, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলহাজারা, ইসলামাবাদ ও রামু স্টেশনে।