সৈকত ও প্রবাল এক্সপ্রেসের যাত্রা শুরু হচ্ছে ১ ফেব্রুয়ারি
Published: 20th, January 2025 GMT
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম রুটে দুটি নতুন ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি চালু হতে যাওয়া এই ট্রেনগুলোর নাম রাখা হয়েছে সৈকত এক্সপ্রেস ও প্রবাল এক্সপ্রেস। যাত্রী ও পর্যটকদের যাতায়াত আরো সহজ এবং আরামদায়ক করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলীয় কার্যালয়ের প্রধান অপারেটিং সুপারিনটেন্ডেন্ট কামাল আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কক্সবাজারের আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার গোলাম রব্বানী বলেছেন, “এই অঞ্চলের মানুষ এবং পর্যটকদের দীর্ঘদিনের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন ট্রেনগুলো চালু করা হচ্ছে।”
সৈকত এক্সপ্রেস প্রতিদিন সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে যাত্রা শুরু করবে এবং ৯টা ৫৫ মিনিটে কক্সবাজারে পৌঁছাবে। কক্সবাজার থেকে রাত ৮টা ১৫ মিনিটে যাত্রা শুরু করে পুনরায় চট্টগ্রামে পৌঁছাবে রাত ১১টা ৫০ মিনিটে।
অন্যদিকে, প্রবাল এক্সপ্রেস কক্সবাজার থেকে সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে ছাড়বে এবং দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে চট্টগ্রামে পৌঁছাবে। বিকেল ৩টা ১০ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে ছাড়বে এবং সন্ধ্যা ৭টায় কক্সবাজার পৌঁছাবে। সোমবার এই দুটি ট্রেনের চলাচল বন্ধ থাকবে।
কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম হয়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ শুরুর পর থেকেই এই রুটের যাত্রীদের মধ্যে আরো ট্রেন যুক্ত করার চাহিদা তৈরি হয়েছিল। নতুন এ ট্রেন দুটি সেই চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
কক্সবাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী বলেছেন, ‘ঢাকা-কক্সবাজার রুটে রেল যোগাযোগ চালু হলেও চট্টগ্রামের সঙ্গে ছিল না। নতুন এই ট্রেনগুলো ব্যবসা ও পর্যটন উভয়ের জন্যই সুবিধা বাড়াবে।”
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে নতুন ট্রেন চালু হলে পর্যটন খাতের বিকাশ আরো ত্বরান্বিত হবে। দ্রুত এবং আরামদায়ক এই যাত্রা আরও বেশি পর্যটককে আকৃষ্ট করবে।
ঢাকা/তারেকুর/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
কক্সবাজারে পর্যটকের ঢল, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ
রাজধানী ঢাকা থেকে ছুটিতে পরিবার নিয়ে কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন হাবিবুল আউয়াল। ভালো হোটেলে রুম না পাওয়ায় শহরের কলাতলী এলাকায় মধ্যমমানের একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছেন। তাঁর কাছে এক রাতের জন্য হোটেলটির দুটি রুমের ভাড়া নেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। যদিও অন্য সময়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকায় এই মানের হোটেলে রুম ভাড়া পাওয়া যায়। ঈদ মৌসুমে চাহিদা বাড়ায় অন্য সময়ের তুলনায় ১২ গুণের বেশি ভাড়া নেওয়া হয়েছে তাঁর কাছ থেকে।
কোরবানির ঈদ ও পরবর্তী ছুটির সময়ে অতিরিক্ত পর্যটক আসায় কক্সবাজার শহর ও এর আশপাশের পাঁচ শতাধিক আবাসিক হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস ও রিসোর্টের প্রায় প্রতিটিতেই অন্য সময়ের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। শুধু আবাসিক হোটেল নয়, রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে পর্যটনসংশ্লিষ্ট সব সেবা খাতেই অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট অনেকের মতে, প্রতিটি ছুটির মৌসুমে কক্সবাজারে পর্যটকদের সংখ্যা একটু বাড়লেই তাদের কাছ থেকে ‘গলাকাটা’ টাকা নেওয়া হয়।
ঈদুল আজহার লম্বা ছুটি শেষ হচ্ছে আজ। গতকাল শুক্রবার কক্সবাজার সৈকতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় ছিল পর্যটকের ভিড়। সাগরতীর পরিণত হয়েছিল উৎসবের বেলাভূমিতে। শুক্রবার সকাল থেকে তীব্র গরম থাকলেও পর্যটকে পূর্ণ ছিল কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবণী, কলাতলী, হিমছড়ি, ইনানী, পাতুয়ারটেক থেকে মেরিন ড্রাইভ পর্যন্ত পুরো এলাকা।
রাজধানীর মতিঝিল থেকে ঘুরতে আসা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এখন সমুদ্রে গোসল করছি। বিকেলে মেরিন ড্রাইভে ঘুরব, এরপর শনিবার রাতে ঢাকায় ফিরে যাব।’ নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা আসিফ আহমেদ বলেন, ‘অনেক মানুষ, তবুও পরিবারের সবাইকে নিয়ে আনন্দ করছি, ছবি তুলছি, বিচ বাইক ও ঘোড়ায় চড়েছি।’
কক্সবাজার শহরের পাঁচতারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ নুর সোমেল সাংবাদিকদের বলেন, শুক্রবার পর্যন্ত তাদের হোটেলের ৭০-৮৫ শতাংশ রুম বুকিং রয়েছে। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক হোটেল ব্যবসায়ী জানান, ১৩ জুন পর্যন্ত অধিকাংশ আবাসিক হোটেল সম্পূর্ণ বুকিং হয়ে গেছে। তবে প্রশাসন, কর ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের ফাঁকি দিতে তারা বিষয়টি স্বীকার করতে চান না।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের এএসপি নিত্যানন্দ দাস বলেন, এবার কোরবানির ঈদের পর গত সাত দিনে আট লাখের বেশি মানুষ কক্সবাজার ভ্রমণ করেছেন। তিনি বলেন, অতীতের মতো এবারও শহর ও সমুদ্রসৈকতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া সৈকতের প্রতিটি গোলঘরে সার্বক্ষণিক পুলিশের অবস্থান এবং মোবাইল টিমসহ কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পর্যটন স্পটগুলোতে সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা।
আবাসিক হোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে এএসপি জানান, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গত কয়েকদিন এমন পাঁচটি অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুল আলম বলেন, পর্যটকদের হয়রানি রোধে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত মাইকিং করা হচ্ছে।