সাহিত্য-শিল্পচর্চার পরিসর আরও বাড়াতে চাই
Published: 10th, July 2025 GMT
এই সাহিত্য পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান শুধু একটি সাংস্কৃতিক আয়োজনই নয়, এটি আমাদের সামাজিক দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে একটি শুভ উদ্যোগ। দেখতে দেখতে ১৩ বছর পূর্ণ করল ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কারের এই আয়োজন। এই পথচলায় আমরা অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত। যারা এই পুরস্কারের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন– তাদের প্রতি জানাই আমার শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ক্ষেত্রে বরেণ্য। বিপুলসংখ্যক উৎকৃষ্ট বইয়ের ভেতর থেকে নির্বাচিত ১৮টি বই তাদের বিচারের জন্য পাঠানো হয়। সেখান থেকে তিনটি বই নির্বাচিত হয়। গোটা প্রক্রিয়া অত্যন্ত কঠিন। সেই কঠিন কাজ সমাধা হয়েছে। সত্যিকারের মূল্যায়নের ভিত্তিতে এই স্বীকৃতি এসেছে– এ এক প্রাপ্তি, যা গৌরবের এবং ভবিষ্যতের জন্য অনুপ্রেরণার।
এখানে আজ যাদের নাম উচ্চারিত হচ্ছে না, তাদের ভেতরও যোগ্য ব্যক্তিত্ব রয়েছেন আমরা নিশ্চিত। পরবর্তী সময়ে ক্রমানুসারে নিশ্চয়ই তাদেরও আমরা বরণ করে নিতে পারব।
আমি সকল উপস্থিত অতিথি, সাংবাদিক, সাহিত্যপ্রেমী ও শুভানুধ্যায়ীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই– আপনারা এসেছেন বলেই এই অনুষ্ঠান প্রাণ পেয়েছে। আমাদের এ অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষক ব্র্যাক ব্যাংক পিএলসির প্রতি রইল বিশেষ কৃতজ্ঞতা। একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যখন শিল্প-সাহিত্যের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশ করে, তা সমাজে সুস্থতা ও ভারসাম্যের বার্তা বহন করে। ব্র্যাক ব্যাংক এ দায়িত্ব বরাবরই পালন করে চলেছে।
সমকাল বরাবরই বাংলাদেশে শিল্প ও সাহিত্য চর্চার একটি শক্ত ভিত রচনা করে এসেছে। শুধু তথ্যের নয়, মনের চাহিদার ওপরও আলোকপাত করে এসেছে। পত্রিকার জন্য প্রথমটি তার সামর্থ্যের প্রকাশ, দ্বিতীয়টি তার রুচি ও মননের প্রকাশ। আমরা বিশ্বাস করি, সমকাল আগামী দিনেও এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে পারবে।
সমকালের সাহিত্য প্রকাশনা কালের খেয়া এ দেশের শিল্প-সাহিত্যের সবচেয়ে বড় ও গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। আমরা একে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছি। বিবেকী মানুষ সমাজের সবচেয়ে বড় শক্তি। এ জন্য প্রয়োজন সাহিত্য-শিল্পের অবারিত চর্চা। সমকাল থেকে আমরা সাহিত্য-শিল্পচর্চার পরিসর আরও বাড়াতে চাই। আপনাদের অংশগ্রহণ আমাদের সমৃদ্ধ করবে।
আমরা এখন এমন একটি সময় অতিক্রম করছি, যখন দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক মন্দা মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে। শিল্পী পাবলো পিকাসোর একটি কথা এখানে বলতে পারি। পিকাসো বলতেন, শিল্প মানুষের জীবন থেকে দৈনন্দিনতার দাগগুলো পরিষ্কার করে। এ কথা সত্যি। যে কারণে শিল্প-সাহিত্য এত গুরুত্বপূর্ণ। শিল্প-সাহিত্য চলমান সময়ে অন্যতম পথিকৃতের ভূমিকায় আছে ও থাকবে। সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সত্য উচ্চারণে, সঠিক ও সর্বজনীন সিদ্ধান্ত গ্রহণে শক্তি দেবে। ভবিষ্যতের পথ দেখাবে।
আজ যারা পুরস্কৃত ও সম্মানিত হলেন, তাদের প্রত্যেকের জন্য আমার শুভকামনা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রস ক র প রস ক র জন য প রক শ সমক ল
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি