প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে আরও বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করেছে এবং উন্নত বিনিয়োগ পরিবেশে আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়াতে প্রস্তুত। সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে বৈঠকে এ কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম অধ্যাপক ইউনূসের বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। খবর বাসসের। 

শফিকুল আলম বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে ড.

ইউনূস একাধিক সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং বিভিন্ন বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের উপযোগী পরিবেশের কথা তুলে ধরে বিনিয়োগ করার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, চীনসহ বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছেন এবং আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন, বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত। এ ছাড়া বিপুলসংখ্যক তরুণ জনগোষ্ঠীর কারণে বাংলাদেশ একটি রপ্তানি কেন্দ্র হয়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনের ফাঁকে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আন্না বিয়ার্দে। এ সময় তিনি বাংলাদেশ পুনর্গঠনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বৈশ্বিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটির সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।

বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ইউনূসকে উদ্দেশে করে বলেন, ‘আমি আমাদের সমর্থন প্রকাশ করতে চাই। আপনারা যে কোনো সহায়তার জন্য আমাদের ওপর নির্ভর করতে পারেন।’ বিশ্বের দুই বৃহত্তম বন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ডিপি ওয়ার্ল্ড ও এ পি মোলার-মেয়ার্স্ক বাংলাদেশের শিপিং শিল্পে বড় আকারের বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা বঙ্গোপসাগরের উপকূলজুড়ে নতুন বন্দর নির্মাণে সহায়তা করতে এবং বাংলাদেশকে একটি প্রধান বৈশ্বিক রপ্তানি কেন্দ্রে পরিণত করতে চায়। 

প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, দাভোসে ডিপি ওয়ার্ল্ডের গ্রুপ চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ বিন সুলাইম এবং এ পি মোলার-মেয়ার্স্ক চেয়ারম্যান রবার্ট মোলার উগলা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠককালে এই প্রস্তাব দেন। 

সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স প্রেসিডেন্ট নিক ক্লেগ। অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশে ফেসবুকের মাধ্যমে ভুয়া তথ্য ও গুজব ছড়ানো বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। এদিন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড সাক্ষাৎ করেন। 

ড. ইউনূস বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের তৃতীয় দিন বৃহস্পতিবার ব্যস্ত সময় পার করেন। তিনি মোট ১৪টি ইভেন্টে অংশ নেন। এর আগে গত বুধবার সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ডের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের সময় বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া বিলিয়ন ডলারের অর্থ ফিরিয়ে আনতে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের সহায়তা চেয়েছেন। লাগার্ড অন্তর্বর্তী সরকারের পাচার হওয়া অর্থ পুনরুদ্ধার উদ্যোগে সমর্থন জানান। 

এদিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিখ্যাত ইতালীয় সংগীতশিল্পী আন্দ্রেয়া বোচেলি। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী অপেরা গায়ক বোচেলি অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে অভিনন্দন জানান। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো বলেছেন, তিনি আগামী দুই মাসের মধ্যে বাংলাদেশ সফর করতে চান এবং দেশের নারী ফুটবলের জন্য অর্থায়নের আশা করছেন। 

সুইস ফেডারেল কাউন্সিলর ইগনাজিও ক্যাসিসের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে কার্বন ধরে রাখার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে সহায়তা করতে সুইজারল্যান্ডের প্রতি আহ্বান জানান। এদিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জার্মান ফেডারেল মন্ত্রী ওলফগ্যাং শ্মিটও বৈঠক করেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সরক র র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ফতুল্লায় প্রয়াসের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

ফতুল্লার লামাপাড়ায় মাদকাসক্ত পূনর্বাসন ও সহায়তা কেন্দ্র প্রয়াসের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রয়াসের ২২তম প্রতিষ্ঠাবাষির্কী উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা, কোর্স সমাপনী সনদ প্রদান, বিভিন্ন মেয়াদে সুস্থতার বর্ষপূর্তি ও খেলাধূলার আয়োজন করা হয়।

বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে প্রয়াসের জেনারেল ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করা হয়।

মাদকাসক্ত পূনর্বাসন ও সহায়তা কেন্দ্র প্রয়াসের জেনারেল ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলায় মাদকাসক্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে প্রয়াস বিগত ২২ বছর যাবত নিরবিচ্ছিন্নভাবে সেবা করে যাচ্ছে।

সব ধরনের আইন ও বিধি-বিধান মেনে সেবার মানোন্নয়ন প্রয়াসের বর্তমান লক্ষ্য। শুধু চিকিৎসা সেবা প্রদান নয়, বরং মানসম্পন্ন টেকসই সেবা নিশ্চিত করার জন্য চিকিৎসা পরবর্তী বিভিন্ন কার্যক্রম কেন্দ্রটি পরিচালনা করে থাকে।

জেনারেল ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রয়াসে চিকিৎসা কোর্স সম্পন্নকারীদের সার্টিফিকেট প্রদান, প্রাক্তন সদস্যদের মনিটরিং, বিভিন্ন মেয়াদে সুস্থ থাকার স্বীকৃতি ও জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারনায় অংশগ্রহণ প্রয়াসের টেকসই চিকিৎসা পরিকল্পনার অংশ।

তিনি আরো বলেন, আমরাই প্রথম নারায়ণগঞ্জে ৪০ বেডে লাইসেন্স প্রাপ্ত মাদকাসক্ত চিকিৎসা কেন্দ্র। প্রয়াসের প্রতিষ্ঠা ২০০৩ সালে হলেও আমরা লাইসেন্স পেয়েছি ২০০৬ সালে। গত ২০২১ সাল থেকে আমরা প্রতিবছর সরকারি অনুদানের জন্য নির্বাচিত হয়ে আসছি।

এসময় তিনি অভিভাবক প্রতিনিধি ও প্রাক্তন সদস্যদের প্রয়াসের সামগ্রিক কার্যক্রমে সংযুক্ত থাকার জন্য ধন্যবাদ জানান।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, মাদকাসক্ত পূনর্বাসন ও সহায়তা কেন্দ্র প্রয়াসের কাউন্সিলর মোঃ সাইফুল ইসলাম, অফিসার এডমিন সাজ্জাদ হোসেন, প্রোগ্রাম অফিসার শেখ ফরিদ উদ্দিন ও মেডিকেল অফিসার ডা. রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ। অন্যান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, শওকত হোসেন, লিটন, আমজাদ, বাবুসহ  রিকোভারীবৃন্দ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ