মাদারীপুর জেলা থেকে মানব পাচারের ঘটনা থামছেই না। সাম্প্রতিক ঘটনায় দুবাই হয়ে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করে ১৪ তরুণ পাঁচ মাস ধরে নিখোঁজ। স্বজনদের অভিযোগ, দালালের প্রলোভনে পড়ে মুক্তিপণ দেওয়ার পরও তাঁদের কোনো খোঁজ মিলছে না। এই অনিশ্চয়তা পরিবারগুলোকে এক চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। এখন প্রশ্ন, এসব তরুণের পরিণতি কি আমরা জানতে পারব? মানব পাচারকারীদের রুখবে কে?

ইউরোপে গেলে সচ্ছলতা আসবে—এমন ভ্রান্ত ধারণায় প্রতিবছর মাদারীপুর থেকে অসংখ্য তরুণ অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু এই অবৈধ যাত্রার পরিণতি প্রায়ই হয় মর্মান্তিক। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যানুসারে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত মাদারীপুর জেলার ৪৫ জন তরুণ লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে প্রাণ হারিয়েছেন। একই সময়ে অন্তত ৩৫০ জন তরুণ নির্যাতনের শিকার হয়ে লিবিয়া থেকে দেশে ফিরতে পেরেছেন, কিন্তু তিন শতাধিক এখনো নিখোঁজ। সর্বশেষ নিখোঁজ ১৪ জন তরুণ গত ফেব্রুয়ারি মাসে দালালের হাত ধরে দেশ ছাড়েন। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি নিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও ফেব্রুয়ারি মাসের পর থেকে তাঁদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর অভিযোগ, মানব পাচার চক্রের সদস্যরা এই তরুণদের ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রথমে প্রতিটি পরিবারের কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা করে নেন। এরপর লিবিয়ায় তাঁদের বন্দী করে আরও ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ হিসেবে আদায় করেন। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জমিজমা বিক্রি করে, এমনকি চড়া সুদে ঋণ নিয়ে দালালের হাতে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ তুলে দিয়েছে। এরপরও সন্তানদের খোঁজ পায়নি তারা। মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরাও ধরাছোঁয়ার বাইরে।

রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ খান জানান, রাজৈরে লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়া, নিখোঁজ বা মৃত্যু নতুন কিছু নয়। পুলিশ দালালদের বিষয়ে খোঁজখবর রাখছে। কিন্তু এই অবৈধ যাত্রা বন্ধ করা যাচ্ছে না। এখনো থানার ৪০০ থেকে ৫০০ তরুণ ও যুবক লিবিয়ায় বন্দী। এই সমস্যা নির্মূল করতে না পারলে আরও অনেক তরুণ এমন ভয়াবহ পরিণতির শিকার হবেন।

মাদারীপুর, শরীয়তপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ইতালি যাওয়ার এমন ঝুঁকিপূর্ণ প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। এসব জেলা থেকে মানব পাচার বন্ধে আলাদাভাবে মনোযোগ দেওয়া উচিত। দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা তো নিতেই হবে, সেই সঙ্গে তরুণদের বেকারত্ব নিরসনে ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। অবৈধ পথে কেউ যাতে বিদেশ গমন না করেন, সে ব্যাপারে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। মানব পাচারের কারণে বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তরুণদের সম্ভাবনাময় জীবন করুণ পরিণতি বরণ করছে। যেভাবেই হোক মানব পাচার রোধ করতেই হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম নব প চ র পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

দেশের জন্য যা যা করা দরকার, সব করেছেন আহমদ ছফা

আহমদ ছফাকে বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই সহ্য করতে পারতেন না। কিন্তু তাঁর বেশির ভাগ কথা এখন সত্যে পরিণত হয়েছে। দেশের সঙ্গে তিনি প্রাণকে যুক্ত করেছিলেন। দেশকে ভালোবেসে যা যা করা দরকার, তার সবকিছু করেছেন।

শুক্রবার বিকেলে আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতায় সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান এসব কথা বলেন। এশীয় শিল্পী ও সংস্কৃতি সভা জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘আহমদ ছফা স্মৃতি বক্তৃতা-২০২৫’ আয়োজন করে। ‘আহমদ ছফার রাষ্ট্র বাসনা এবং জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পরিচয়’ শীর্ষক স্মৃতি বক্তৃতা দেন বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ফারুক ওয়াসিফ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এশীয় শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সভার সভাপতি জহিরুল ইসলাম। আহমদ ছফা (১৯৪৩–২০০১) ছিলেন লেখক, প্রগতিশীল সাহিত্যকর্মী ও রাজনৈতিক চিন্তক।

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আহমদ ছফা ছিলেন মূলত সাহিত্যিক। তবে তিনি সাহিত্যের গণ্ডি পেরিয়ে চিন্তাকে রাষ্ট্রভাবনা বিষয়ে প্রসারিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন অনেক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন। তিনি এমন বিষয় নিয়ে চিন্তা করেছিলেন, তা অনেক সময় আমরা বুঝতে পারি না।’ ছফা বলেছিলেন, ‘বিপ্লবের একটি নতুন ভাষা থাকতে হবে। মানুষের রাষ্ট্রের বাসনা বুঝতে হবে। দেশটা আমার নিজের বলে মনে করলে তার সমস্যার সমাধানও আমার নিজের মতো করেই ভাবতে হবে।’

স্মৃতি বক্তৃতায় ফারুক ওয়াসিফ বলেন, আহমদ ছফা রাষ্ট্র নিয়ে গভীরভাবে ভেবেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যে ধরনের দেশ সেই বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করার মতো কোনো তাত্ত্বিক রাজনৈতিক রূপরেখা নেই। কোনো রাজনৈতিক দলও নেই।

ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পূর্বপরিকল্পনা ছিল না। একাত্তর ছিল অপরিকল্পিত। একইভাবে জুলাই অভ্যুত্থানও হয়েছে অপ্রস্তুতভাবে। এখন জুলাইয়ের নেতারা প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত হয়েছেন। বড় দলের যে সামর্থ্য আছে, সেই শক্তি–সামর্থ্য তাদের নেই। তারা মিত্রহীন হয়ে পড়েছে।’

আহমদ ছফার বন্ধু ব্যবসায়ী আবদুল হক বলেন, জনগণ রাষ্ট্রের পরিবর্তন চেয়েছিল। বাংলাদেশের নবীন প্রজন্ম সেই পরিবর্তন ঘটিয়েছে। সারা বিশ্ব দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবাদ করতে জানে। এখন একটি নতুন রাজনীতি দরকার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ