আড়াই শ ফুট উঁচু থেকে ঝরনার পানি আছড়ে পড়ছে পাথরের ওপর। এক দল তরুণ-তরুণী গোসল করছিলেন সেখানে। সুন্দর সময়টির ভিডিও ধারণ করেন একজন। সে ভিডিওতে ধারণ করা হলো পাথরের ওপর লাফালাফি করতে থাকা একটি ব্যাঙের ছবিও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে ভিডিওটি নজরে আসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের। ভিডিওতে যে ব্যাঙটি ধারণ করেছেন তরুণ-তরুণীরা, তা কোনো সাধারণ ব্যাঙ ছিল না। বাংলাদেশে এই প্রজাতির ব্যাঙ একেবারে নতুন বলে রায় দিলেন গবেষকেরা।
গত জুন মাসে রাঙামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের এগুজ্যাছড়ি ঝরনায় ভিডিওটি ধারণ করা হয়। ব্যাঙের এই ভিডিও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলের হাতে পৌঁছানোর আগেই এই প্রজাতি নিয়ে গবেষণা করছিলেন তাঁরা। ফেব্রুয়ারি মাসে রাঙামাটি সদর উপজেলার বালুখালী ইউনিয়নের কাইন্দে গ্রামের একটি পাহাড়ি ছড়া থেকে এই প্রজাতির একটি ব্যাঙ সংগ্রহ করেছিলেন গবেষকেরা। জুন মাসে এগুজ্যাছড়ি ঝরনায় পাওয়া ব্যাঙটির ভিডিও দেখে তাঁরা নিশ্চিত হন, দুটি ব্যাঙই একই প্রজাতির। রাঙামাটির মগবান ইউনিয়নের এগুজ্যাছড়ি ও বালুখালী ইউনিয়নের কাইন্দে গ্রামেই কেবল দেখা গেছে ব্যাঙের এই প্রজাতি।
ব্যাঙটির সন্ধান পাওয়ার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম এ আজিজের নেতৃত্বে গবেষক দল এটির ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য দক্ষিণ কোরিয়া পাঠায়। ফলাফল আসার পর তাঁরা নিশ্চিত হন দেশে জীববৈচিত্র্যের তালিকায় যুক্ত হয়েছে নতুন প্রজাতির ব্যাঙ।
নতুন এই ব্যাঙের ইংরেজি নাম ‘ইন্দোবার্মান টরেন্ট ফ্রগ’। বৈজ্ঞানিক নাম amolops indoburmanensis। আর বাংলা নাম দেওয়া হয় ‘ইন্দো-বার্মিজ ঝিরি ব্যাঙ’। ব্যাঙটি চিহ্নিত করতে কাজ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এ আজিজ, অধ্যাপক মো.
নতুন আবিষ্কৃত ব্যাঙটি বাদামি বা জলপাই-সবুজ বর্ণের এবং আকারে ছোট। পরিবেশের সঙ্গে এমনভাবে মিশে থাকে যে সহজে চোখে পড়ে না। শরীরের দানাদার ভাব নেই। ঊরুর পেছনের অংশটি ঘন বাদামি।
নতুন ব্যাঙ নিয়ে এই গবেষণা রেপটাইলস অ্যান্ড অ্যাম্ফিবিয়ান নামের আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। জার্নালটি ‘ইন্টারন্যাশনাল রেপটাইল কনজারভেশন ফাউন্ডেশন’ নামের আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রকাশ করে থাকে।
ব্যাঙটির আবাসস্থল খুবই সীমিত বলে জানান গবেষকেরা। তাঁরা বলেন, ভারতের মিজোরাম ও মিয়ানমারের চিন রাজ্যে এই ব্যাঙ পাওয়া যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামের দুই জায়গায় দেখা গেছে। এ ছাড়া সিলেট, মৌলভীবাজারের পাহাড়ি বনের ঝরনায়ও এই ব্যাঙ থাকতে পারে।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৪৯ ধরনের উভচর প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ৪৭টি ব্যাঙ প্রজাতি। নতুন ব্যাঙ আবিষ্কারের পর এই তালিকায় আরও একটি সংখ্যা যুক্ত হবে বলে জানান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম এ আজিজ।
প্রথম আলোকে এম এ আজিজ বলেন, ‘আমরা নতুন একটি উভচর প্রাণী ব্যাঙের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছি। দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস নতুন ব্যাঙটি নিয়ে কাজ করেছি। আমরা প্রথমে ব্যাঙটি মাপজোখ করে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের তথ্য নিই। কিন্তু এতেও এটির প্রজাতি চিহ্নিত করতে না পেরে ডিএনএ অ্যানালাইসিস করি। এর ফলে ব্যাঙের প্রজাতি চিহ্নিত করতে সমর্থ হই।’
অধ্যাপক এম এ আজিজ আরও বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এই বর্গের ১৪ প্রজাতির ব্যাঙ পাওয়া যায়। সেখানে বাংলাদেশে মাত্র ১টি প্রজাতি রেকর্ড করা হলো। তাই নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো খবর। এ ছাড়া এই ব্যাঙের বৈশ্বিক মানচিত্রে বাংলাদেশের নাম যুক্ত হলো।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাজকীয় ভোজে ট্রাম্প–মেলানিয়াকে কী কী খাওয়ালেন রাজা চার্লস
জমকালো সাজে সেজেছে যুক্তরাজ্যের উইন্ডসর ক্যাসলের সেন্ট জর্জেস হল। উপলক্ষটাও অনন্য, রাজকীয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সস্ত্রীক যুক্তরাজ্য সফর উপলক্ষে এখানে রাজকীয় নৈশ্যভোজ আয়োজন করেন রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা।
বুধবার রাতের রাজকীয় এ আয়োজনে কূটনীতি, খাবার, ঐতিহ্য, সংগীত আর আভিজাত্য একসুতোয় বাঁধা পড়েছিল। ট্রাম্প–মেলানিয়াসহ রাজার অতিথি হয়েছিলেন বিশ্বের ১৬০ জন গণমান্য ব্যক্তি।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্মানে রাজা তৃতীয় চার্লসের আয়োজন করা রাজকীয় ভোজের টেবিল। যুক্তরাজ্যের উইন্ডসর ক্যাসলের সেন্ট জর্জেস হল, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫