প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন এ সপ্তাহে ভারতকে রাশিয়ার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ তেল কেনার জন্য দায়ী করে বসেন এবং বিদ্যমান ২৫ শতাংশ শুল্কের ওপর আরও ‘শাস্তিমূলক’ কর বসানোর হুমকি দেন; বিষয়টি তখন বজ্রাঘাতের মতো আসে।

ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে রাশিয়ার জ্বালানি কেনায় ভারতের সক্রিয় ও দৃশ্যমান উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। অথচ সে সময় অধিকাংশ পশ্চিমা দেশ মস্কোর কাছ থেকে তেল কেনা কমায় বা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নেতৃত্বে রাশিয়ার অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে শাস্তি দেওয়ার উদ্যোগে বিশ্ববাজারে তেলের দাম পড়ে যায়। ভারত এ সুযোগকে মূল্যছাড়ে তেল কেনার সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখে তা লুফে নেয়।

ট্রাম্প ভারতের বাণিজ্যিক নীতির নানা দিক নিয়ে যদিও ক্ষোভ পোষণ করে এসেছেন কিন্তু রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা নিয়ে আগে কখনো অভিযোগ তোলেননি। ভারতের ধারণা ছিল, ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার জন্য জো বাইডেন ও পশ্চিমা দেশগুলোর যে চাপ, তা থেকে তিনি কিছুটা স্বস্তি দেবেন।

ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। এর মধ্যে জ্বালানি বাণিজ্য সহজ জায়গা করে নেয়। রাশিয়ার রয়েছে বিপুল জ্বালানি। আর ভারত তা আমদানিতে দেশটির ওপর নির্ভরশীল।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আগ্রাসনের পরপরই রাশিয়ার তেল ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ওই বছরের শুরুর দিকে ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানিতে রাশিয়ার অংশ ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু রাশিয়ার ইউরোপীয় বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সমুদ্রপথে ভারতের কাছে মস্কোর তেল রপ্তানি দ্রুত বাড়তে থাকে। ২০২৩ সালের মে মাস নাগাদ রাশিয়া প্রতিদিন ভারতকে ২০ লাখ ব্যারেল তেল দিচ্ছিল। এটি ভারতের মোট আমদানির প্রায় ৪৫ শতাংশ; যা চীনের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নেতৃত্বে রাশিয়ার অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টির চেষ্টা এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে শাস্তি দেওয়ার উদ্যোগে বিশ্ববাজারে তেলের দাম পড়ে যায়। ভারত এ সুযোগকে মূল্যছাড়ে তেল কেনার সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে দেখে তা লুফে নেয়।

দুই বছর ধরেই ভারত নিয়মিত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনছে। মূল্য ওঠানামা করলেও প্রতিবছর ভারত যে পরিমাণ তেল কিনেছে, তার মোট মূল্য প্রায় ২৭৫ বিলিয়ন (২৭ হাজার ৫০০ কোটি) ডলার। ফলে আগে ভারতের জ্বালানির প্রধান জোগানদাতা ইরাক ও সৌদি আরব অনেকটাই পেছনে পড়ে গেছে।

ভারত-রাশিয়ার এই বাণিজ্য দুই পক্ষের জন্যই লাভজনক ছিল। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্ধারিত ৬০ ডলার ব্যারেল দরের সীমা রাশিয়ার মানার কথা থাকলেও, দেশটি ছাড়ে তেল বিক্রি করতে পেরেছে। আর ভারত সেই ছাড়ে তেল কিনেছে। দেশটির তেল কোম্পানিগুলো একাংশ নিজস্ব ব্যবহারের জন্য পরিশোধন করেছে, আর বাকিটা ডিজেলসহ অন্যান্য পণ্য হিসেবে রপ্তানি করেছে। এর কিছু ইউরোপেও গেছে।

বিদেশি জ্বালানি পণ্য আমদানিতে কম খরচ ভারতের অর্থনীতির জন্য ভালো হয়েছে, টিকিয়ে রেখেছে রুপির মান। ভারতের পশ্চিম উপকূলে মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স গ্রুপের বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল পরিশোধনাগার রয়েছে। গ্রুপটি এই তেল বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য মুনাফা করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রিলায়েন্সের শেয়ারের দর বেড়েছে ৩৪ শতাংশ। অথচ মার্কিন কোম্পানি এক্সন মোবিলের শেয়ারে কোনো বড় পরিবর্তন হয়নি।

ভারত রাশিয়ার সঙ্গে কী করছে, আমি তার পরোয়া করি না। তারা চাইলে একত্রে নিজেদের মৃত অর্থনীতি নিচে নামিয়ে নিতে পারে, আমার কিছু আসে যায় না।-ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট

কিন্তু ট্রাম্পের হঠাৎ করে রাশিয়ার তেল কেনা নিয়ে ভারতকে আক্রমণ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য নতুন জটিলতা তৈরি করেছে। ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৪৪ বিলিয়ন (৪ হাজার ৪০০ কোটি) ডলারের সামগ্রিক বাণিজ্যঘাটতি মেটাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। মোদির প্রতিনিধিদল ভেবেছিল, ভারত যদি যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাস কেনা শুরু করে, তবে এ ঘাটতি কমানো সম্ভব।

কিন্তু মোদির জন্য এটি একটি কঠিন পরিস্থিতি। গত জুন থেকে ট্রাম্প তাঁকে খাটো করে দেখাতে শুরু করেছেন, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব নিজের বলে দাবি করেছেন। আর মোদির ট্রাম্পবিরোধী প্রকাশ্য অবস্থান না নেওয়াকে কেন্দ্র করে ভারতের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও কড়া সমালোচনা করছে। গত বুধবার রাতে, ট্রাম্প আরও দুটি মন্তব্য করে ভারতের প্রতি অপমানসূচক বার্তা দেন। এটি জ্বালানি প্রসঙ্গেই ছিল।

আরও পড়ুনভারত কেন ট্রাম্পের নিশানায়৫ ঘণ্টা আগে

‘ভারত রাশিয়ার সঙ্গে কী করছে, আমি তার পরোয়া করি না’, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন ট্রাম্প। আরও লেখেন, ‘তারা চাইলে একত্রে নিজেদের মৃত অর্থনীতি নিচে নামিয়ে নিতে পারে, আমার কিছু আসে যায় না।’

দুই বছর ধরেই ভারত নিয়মিত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনছে। মূল্য ওঠানামা করলেও প্রতিবছর ভারত যে পরিমাণ তেল কিনেছে, তার মোট মূল্য প্রায় ২৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। ফলে আগে ভারতের জ্বালানির প্রধান জোগানদাতা ইরাক ও সৌদি আরব অনেকটাই পেছনে পড়ে গেছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ শতাংশ নতুন পাল্টা শুল্ক ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ধাক্কা দিতে পারে; যদিও দেশটি বিশ্বের দ্রুত বিকাশমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অধিকারী দেশগুলোর একটি।

ট্রাম্প আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গে একটি চুক্তি করছে। এর আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো পাকিস্তানের তেল রিজার্ভ ব্যবহার করতে পারবে। এরপর ট্রাম্প ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে মন্তব্য করেন, ‘হয়তো একদিন তারা (পাকিস্তান) ভারতে তেল বিক্রি করবে!’

আরও পড়ুনপাকিস্তানের শুল্কহার দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন, ট্রাম্পকে শাহবাজের ‘গভীর কৃতজ্ঞতা’৩ ঘণ্টা আগে

ভারতের কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে চার মাস ধরে চলা আলোচনায় একবারও রাশিয়ার তেলের প্রসঙ্গ ওঠেনি।

নয়াদিল্লিভিত্তিক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা এবং সাবেক বাণিজ্য কর্মকর্তা অজয় শ্রীবাস্তব ট্রাম্পের ভারত সমালোচনার বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেন, ‘ছাড়ে পাওয়া রাশিয়ার তেল বৈশ্বিক অস্থিরতার সময় ভারতের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করেছে।’ তিনি মনে করেন, ট্রাম্পের শাস্তিমূলক শুল্ক দর–কষাকষির আরেকটি কৌশল মাত্র।

‘ভারত একতরফা চুক্তির ফাঁদে পা দেয়নি’, টেক্সট মেসেজে বলেন শ্রীবাস্তব। তাঁর দাবি, ‘এটাই বড় সাফল্য।’

আরও পড়ুনভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা, ইরানের পণ্যের বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ ৩১ জুলাই ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র র জন য আমদ ন ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

১১ নাটক নিয়ে শিল্পকলায় চলছে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্যোৎসব’

জুলাই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত ১১ দলের ১১টি নতুন প্রযোজনা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ নাট্যোৎসব’। জাতীয় নাট্যশালায় গত ৩১ জুলাই শুরু হওয়া এই নাট্যোৎসব চলবে ৮ আগস্ট পর্যন্ত। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে আয়োজিত এ উৎসবে নাট্যরূপে উঠে আসছে ইতিহাস, আন্দোলন ও সময়ের গল্প।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন গতকাল শুক্রবার জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় ‘শুভঙ্কর হাত ধরতে চেয়েছিল’। তীরন্দাজ রেপার্টরি প্রযোজিত নাটকটির রচনা ও নির্দেশনায় দীপক সুমন। গতকালই ছিল এ নাটকের উদ্বোধনী প্রদর্শনী। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মঞ্চস্থ নতুন এ নাটক নিয়ে আলোচনা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে উল্লেখযোগ্য দর্শকের উপস্থিতি ছিল। দর্শকদের অনেকেই বলছেন, এই নাটকে যেন এক নাগরিকের নির্জনতা, এক প্রেমিকের না-পাওয়া, এক বিপ্লবীর বিষণ্নতা আর এক সাধারণ মানুষের অসহায়তা একসূত্রে বাঁধা পড়েছে।

জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে শুক্রবার ‘শুভঙ্কর হাত ধরতে চেয়েছিল’ নাটকের উদ্বোধনী মঞ্চায়ন ছিল। ছবি:শিল্পকলা একাডেমি

সম্পর্কিত নিবন্ধ