দল ডুবিয়ে পলাতক নেতারা ভোগান্তিতে সাধারণ কর্মীরা
Published: 25th, January 2025 GMT
মৌলভীবাজারের রাজনৈতিক দৃশ্যপট পাল্টেছে। ৫ মাস আগেও যাদের হুকুমের হেরফের হতো না, তারা আজ লাপাত্তা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অনেকে বিদেশ পাড়ি জমিয়েছেন। অনেকে আবার দল ডুবিয়ে আত্মগোপনে রয়েছেন।
এদিকে নেতারা গা-ঢাকা দিলেও জেলার তৃণমূল নেতাকর্মী পড়েছেন হয়রানির মুখে। মামলা, হামলা ও নির্যাতনে জর্জরিত তারা। অন্যদিকে দেড় দশক রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের বাইরে থাকা বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে চলছে প্রশাসনিকসহ বিভিন্ন কার্যক্রম।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয় গত বছরের ৫ আগস্ট। এর পরপরই মৌলভীবাজার জেলার দুর্দান্ত প্রভাবশালী নেতারা অন্তরালে চলে যান। দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা একসময়ের আওয়ামী নেতারা ক্ষমতার মোহে জেলার রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছিলেন। জেলাজুড়ে গড়ে তুলেছিলেন রাজনৈতিক বলয়। সাধারণ নেতাকর্মীরা সুবিধাভোগীদের কাতারে না থাকলেও এখন তাদেরই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
তৃণমূল আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, সুসময়ে মধু খেয়ে উড়ে যাওয়া নেতাদের মধ্যে মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি আকিল আহমদ, সদস্য ও একাধিকবারের সিআইপি এম এ রহিম শহীদ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালিক তরফদার, আব্দুল মোহিত টুটু, জেলা যুবলীগ সভাপতি সৈয়দ রেজাউর রহমান সুমন, রাজনগর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান খান, ইউপি চেয়ারম্যান টিপু খান, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রীর ছেলে জাকির হোসেন জুমনের নাম উল্লেখযোগ্য। তারা ক্ষমতায় থাকতে দল বাণিজ্যে সবার আগে ছিলেন। পালানোর ক্ষেত্রেও সবার আগে।
জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বিদেশে অবস্থান করা সাইফুর রহমান বাবুল মোবাইল ফোনে জানান, গত বছরের ১২ জুলাই পারিবারিক কাজে যুক্তরাজ্যে আসতে হয়েছে। সুবিধাভোগী অনেক নেতা নৌকা ডুবিয়ে ৫ আগস্টের পর বিদেশে এসেছেন। গুঞ্জন রয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাবেক পৌর মেয়র ফজলুর রহমান প্রমুখ ভারতে অবস্থান করছেন।
জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নেছার আহমদ, সাধারণ সম্পাদক মিছবাউর রহমান, সহসভাপতি আজমল মিয়া, মসুদ আহমদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নওশের আলী খোকন, সদ্য সাবেক এমপি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অর্ধেন্দু দেব, সাবেক কৃষিমন্ত্রীর ভাই কমলগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ আহমদ বুলবুল, লাউয়াছড়া সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মোসাদ্দেক আহমেদ মানিক, মৌলভীবাজার-২ আসনের সাবেক এমপি শফিউল আলম নাদেল, কুলাউড়া উপজেলা কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম রেণু, সাধারণ সম্পাদক আ স ম কামরুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শফি আহমদ সলমান আত্মগোপনে আছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদমর্যাদার এক নেতা জানান, মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ও জেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতারা আইনিভাবে মামলা মোকাবিলা করলে নিরীহ নেতাকর্মীরা হয়রানি থেকে রেহাই পেতেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ র রহম ন র জন ত মন ত র উপজ ল আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
হিন্দুদের ভাগ্যোন্নয়নে প্রয়োজন ইসলামি সরকার: গোলাম পরওয়ার
স্বাধীনতার পর যারাই দেশ চালিয়েছে, তারা সবাই হিন্দুদের ব্যবহার করে শুধু নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেছেন, হিন্দুদের ভাগ্যোন্নয়ন ও অবকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজন ইসলামি সরকার।
আজ শুক্রবার খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাধীনতা চত্বরে উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর হিন্দু কমিটির উদ্যোগে হিন্দু সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গোলাম পরওয়ার এ কথা বলেন। তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাগ্যোন্নয়ন ও ডুমুরিয়া-ফুলতলাসহ দেশের সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়নে এখন প্রয়োজন ইসলামি সরকার। যাঁরা দাঁড়িপাল্লার জোয়ার দেখে ভয়-হুমকি দিচ্ছে, তাদের হুমকিতে হিন্দুরা আর ভয় পাবে না। হিন্দুদের বাধা দিলে জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ৫৪ বছর যারা দেশ চালিয়েছে তারা সন্ত্রাস, দখলদারি ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে হিন্দুদের শোষণ করেছে। জামায়াত রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে দেশ থেকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও দখলদারদের নির্মূল করা হবে। তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়, আমরা সেই পরিবর্তন আনতে চাই। লাঙলের শাসন দেখেছি, ধানের শীষের শাসন দেখেছি, নৌকার শাসনও দেখেছি। একটি দলই বাকি—জামায়াতে ইসলামী, তার প্রতীক দাঁড়িপাল্লা।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ছাত্রশিবিরের জয়ের বিষয়টি তুলে ধরে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরিবর্তনের বার্তা দিয়েছে, আগামীতেও সেই বার্তা জনগণ দেবে।’
চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে দেড় হাজার শহীদ ও ৪০ হাজার আহতের কথা উল্লেখ করে জামায়াতের এই নেতা বলেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নভেম্বরে গণভোট দিয়েই ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে।
উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি বাবু কৃষ্ণ নন্দীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি দেব প্রসাদ মন্ডলের সঞ্চালনায় সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সহসভাপতি আবুল খায়ের, শোভনা ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি মো. মোসলেম উদ্দিন, শরাফপুর সর্বজনীন পূজা মন্দিরের গোঁসাই সাধু প্রমথ গাইন, ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সহসভাপতি হরিদাস মন্ডল, কানাই লাল কর্মকার ও প্রশান্ত কুমার মন্ডল, কোষাধ্যক্ষ গৌতম কুমার মন্ডল, পল্লীশ্রী মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সুভাষ সরদার, মাগুরখালী ইউনিয়ন সহসভাপতি সুজিৎ কুমার সরকার, ধামালিয়া ইউনিয়ন সভাপতি গোবিন্দ কুন্ডু, রুদাঘয়া ইউনিয়ন সভাপতি বিপ্লব সরকার, রঘুনাথপুর ইউনিয়ন সভাপতি কার্তিক চন্দ্র সরকার, খর্ণিয়া ইউনিয়ন সভাপতি নারায়ণ রাহা, মাগুরঘোনা ইউনিয়ন সভাপতি বিশ্বনাথ দাস, সাহস ইউনিয়ন সভাপতি তন্ময় মন্ডল, ভান্ডারপাড়া ইউনিয়ন সভাপতি নিরঞ্জন রায়, রংপুর ইউনিয়ন সভাপতি তরুন কুমার মন্ডল, শোভনা ইউনিয়ন হিন্দু কমিটির মহিলা সম্পাদক প্রিয়ংকা মন্ডল, মাগুরখালী ইউনিয়ন সভাপতি প্রদীপ কুমার সরকার, আটলিয়া ইউনিয়ন সভাপতি অনিমেষ মন্ডল, গুটুদিয়া ইউনিয়ন সভাপতি মনোরঞ্জন মন্ডল, শরাফপুর ইউনিয়ন সভাপতি গোবিন্দ কুমার বিশ্বাস, শোভনা ইউনিয়ন সভাপতি স্বদেশ হালদার, ডুমুরিয়া ইউনিয়ন সভাপতি অরুন কুমার আচার্য প্রমুখ।
হিন্দু সম্মেলন ঘিরে ডুমুরিয়ার ১৪টি ইউনিয়ন থেকে বর্ণিল মিছিল এসে জমায়েত হয়। সমাবেশ শেষে একটি গণমিছিল ডুমুরিয়া সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
হিন্দু সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, নতুন প্রজন্মের প্রথম ভোট দাঁড়িপাল্লার পক্ষে হোক। আগামী নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ারকে সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত করতে সবার প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
মতুয়া সংঘের সভাপতি সুদীপ্ত কুমার সুন্দর মন্ডল বলেন, ‘আমরা আর সংখ্যালঘু বলে পরিচয় শুনতে চাই না। আমরা সবাই বাংলাদেশি। স্বাধীনতার পর কোনো সরকার হিন্দুদের দাবিতে কাজ করেনি। এবার প্রমাণ হবে, হিন্দু মানেই একটি নির্দিষ্ট দল নয়।’