তাহিরপুর উপজেলাসংলগ্ন মাটিয়ান হাওরের পাঁচটি ক্লোজারের কাজ শুরু করা হয়নি এখনও। এর কোনোটিতে ফেলা হয়নি এক টুকরি মাটিও। এসব ক্লোজারের কাজ বিলম্বিত হওয়ায় আতঙ্কিত স্থানীয় কৃষকসহ সাধারণ মানুষ। অথচ ফসল রক্ষা বাঁধের এই গুরুত্বপূর্ণ কাজের ব্যাপারে দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে পরিষ্কার কোনো জবাব পাওয়া যাচ্ছে না।  
হাওরাঞ্চলে ক্লোজার বলতে বোঝায় নদীর মাঝখানে আড়াআড়িভাবে বা খালের মুখে মাটির অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে বন্ধ করা। বাঁধের কোনো অংশ দিয়ে পানি ঢুকে ভাঙনের কারণে এসব ক্লোজার সৃষ্টি হয়। এসব ক্লোজারকে গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে করা হয় বাঁধের কাজ।
মাটিয়ান হাওরের ওই পাঁচটি ক্লোজার হলো, ধরুন্দ’র ক্লোজার, জামলাবাজ নদীর বাঁধ, বড়দল বাগবাড়ি কুড়ের খাল, চতুর্ভুজ ক্লোজার ও পুটিমারা ক্লোজার। হাওরের এসব খালে অবস্থিত ক্লোজারগুলোর কাজ কবে নাগাদ শুরু হবে এবং কোন প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেগুলো যথাযথভাবে শেষ করা হবে, সেসব প্রশ্নের পরিষ্কার কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে। ক্লোজারের কাজ দ্রুত শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি জোরালো আবেদন জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
মাটিয়ান হাওরের এসব ক্লোজারের মধ্যে কয়েকটির কাজ কীভাবে আর কার মাধ্যমে করানো  হবে, এখনও সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ। ক্লোজারের কাজ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে করাবে। নাকি ঠিকাদার দিয়ে নির্ধারিত কাজ করানো হবে, পাউবো নিজেই যেন নিশ্চিত নয়! তাই বারবার সিদ্ধান্ত বদলের ফেরে পড়ে বিলম্বিত হচ্ছে একাধিক ক্লোজারের কাজ।  
এমন সংকট সৃষ্টি হয়েছে বড়দল বাগবাড়ি কুড়ের খাল ও পুটিমারা খালের ক্লোজারের ক্ষেত্রে। পাউবো কর্তৃপক্ষ ঠিকাদার দিয়ে এ দুটি ক্লোজারে কাজ করাবে, নাকি নির্ধারিত অংশের বাঁধের কাজের জন্য গঠিত পিআইসি দিয়ে সেটা করাবে, দ্বিধায় রয়েছে পাউবো। বড়দল বাগবাড়ি কুড়ের খালটি প্রথমে পাউবো দায়িত্ব দিয়েছিল সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের সভাপতি জুয়েল মিয়াকে। পরে আবার পাউবো জুয়েল মিয়াকে জানায়, বাঁধটি ঠিকাদার দিয়ে করানো হবে। এখন আবার জানানো হয়, এই ক্লোজারের কাজ প্রকল্প পিআইসি চেয়ারম্যানের মাধ্যমেই করানো হবে। স্থানীয় কৃষক নেতাদের অভিযোগ, পাউবোর এমন সিদ্ধান্ত বদলের কারণেই বড়দল বাগবাড়ি কুড়ের খালের কাজ দেরি হচ্ছে।
মাটিয়ান হাওর উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বড়দল গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম জানান, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের নীতিমালা অনুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারি বাঁধের কাজ শেষ হওয়ার কথা। পাউবো তাহিরপুর উপজেলার ৭৪টি প্রকল্পের মধ্যে অধিকাংশ প্রকল্পের কাজ শুরু করলেও উপজেলার বৃহৎ বোরো ফসলি এলাকা মাটিয়ান হাওরের ৫টি ক্লোজারের কাজ শুরু না করায় তারা হতাশা ও উদ্বিগ্ন। একইভাবে পুটিমারা ক্লোজারের কাজ পাউবো ঠিকাদার দিয়ে করাবে না প্রকল্প কমিটি দিয়ে– এ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। বাঁধের কাজ করার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। পাউবো কবে সিদ্ধান্ত নেবে আর কাজ শুরু করবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে কৃষকদের।
এর আগে ২০১৭ সালে ঠিকাদাররা বাঁধের কাজের টেন্ডার পেলেও কাজ না করায় ধান পাকার আগেই মেঘালয় থেকে আসা পানি যাদুকাটা পাটলাই ও বৌলাই হয়ে কোনো বাধা ছাড়াই হাওরে ঢুকে পড়ে। এতে কপাল পুড়েছে ২৫ গ্রামের ৫০ হাজার কৃষকের।
জামলাবাজ গ্রামের কৃষক আক্তার মিয়া জানান, জামলাবাজ নদীর বাঁধটি বিগত বছরগুলোতে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহেই বাঁধে মাটি ফেলানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ফেব্রুয়ারির শুরুতে বাঁধের উভয় পাশে বাঁশ ও চাটাই দিয়ে সেটিং-এর কাজ করা হয়েছে। এ বছর বাঁধে কাজ শুরু না করায় তারা হাওরের ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
জামলাবাজ নদীর বাঁধের প্রকল্প সভাপতি শামছুজ্জামান জানান, বাঁধ নির্মাণের জন্য এক্সক্যাভেটর মেশিন প্রকল্প এলাকাতে আনা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যেই কাজ শুরু করবেন। এতদিন পরে কেন কাজের সরঞ্জাম জোগাড়ের ব্যস্ততা, তা জানা যায়নি।  
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী মনির হোসেন জানান, বড়দল বাগবাড়ি কুড়ের খালের শুধু ক্লোজারের অংশটি প্রকল্প সভাপতি করবে। বাকি জায়গাটির উভয় দিকে ব্লক সেটিং করবে ঠিকাদার। পুটিমারা ক্লোজারের কাজ করবে শুধু ঠিকাদার। ধরুন্দ ক্লোজার, চতুর্ভুজ ক্লোজার এবং জামলাবাজ নদীর বাঁধের কাজও দু-এক দিনের মধ্যে শুরু করা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এসব ক ল জ র প রকল প ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও

রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।

গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।

পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়। 

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো। 

ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।” 

তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।” 

আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”

রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।” 

উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।

ঢাকা/আমিরুল/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
  • মেসি বনাম ইয়ামাল: ফিনালিসিমার সময়-সূচি ঘোষণা
  • গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও